গতকাল ট্রেনিং ক্লাস ছিল। সকাল বেলায় জাম-জুম পার হয়ে ট্রেনিং করতে গিয়েছিলাম।
ক্লাসে গিয়ে দেখি অনেক মানুষ। সবাই ট্রেনিং করবে। আমি হলরুমের একদম পিছনের সীটে গিয়ে বসেছিলাম।
টাক মাথার এক লোক সে টীচার। কম্পিউটার আর প্রোজেক্টর মেশিন দিয়ে পড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ একসুরে অতিজঘন্য কবিতা পাঠ করছে। ক্লাসে সে ঘুমাতে মানা করেছে। কারণ সে নাকি ট্রেনিং শেষে পরীক্ষা নিবে। সবাই এইটা শুনে নড়েচড়ে বসেছে। একমাত্র আমি নড়িচড়ি নাই।
টীচারের চোখের দৃষ্টি মনে হয় খারাপ। সে খালি মহিলাদের দিকে তাকায় কথা বলে। মহিলাদেরকে প্রশ্ন করে। ছেলেদের দিকে তার কোন দৃষ্টি নাই।
আমি একদম পিছনের কোণার সীটে বসেছি। টীচার আমাকে দেখতে পায়নাই। ট্রেনিং ক্লাসে এমন ঘুম পায়। ওরে বাবা। চোখ টেনে খুলে রাখতে পারিনা। মোবাইল টিপি। ফেসবুকে সবার ছবি দেখি, ভিডিও দেখি, টিকটক দেখি। কিন্তু ঘুম কাটেনা। এই ঘুমের ঠেলায় আমি পাশের সীটের একজনের উপরে পড়ে গেলাম। লজ্জার বিষয়। সে আমাকে প্রশ্ন করেছে, আমি কালকে রাতে ঘুমাই নাই ঠিক মতোন? অত্যন্ত লজ্জার বিষয়।
ট্রেনিং ক্লাসে দেখি কিছু ছাত্র খুব সিরিয়াস। তারা হাত তুলে। কঠিন কঠিন প্রশ্ন করে। টীচার পর্যন্ত টাশকি খেয়ে গেল। সবার কতো নলেজ। ট্রেনিং ক্লাসে এসি নাই। গরম। গরমে ঘুম ভালো আসে আমার।
তারপর কিছুক্ষণ পর দেখি আমি একটা সুন্দর জায়গায় বেড়াতে গিয়েছি। জায়গাটা পরিচিত নয়। কিছুমানুষ আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। একজন এসে আমাকে বললো, তোমার হাত সুন্দর। তোমার হাতের ঘড়িটা আরও সুন্দর। দাও, তোমার ঘড়িটা পড়বো। আমি বললাম, না দিবোনা। এরপর সেই ভয়ঙ্কর মানুষটা একটা আম কাটার চাকু বের করে আমাকে দেখালো। আমি ভয়ে ঘড়িটা খুলে দিলাম।
এরপর চোখ খুলে গেল। টীচারের কবিতা শুনতে শুনতে কখন যে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি, খেয়াল নাই। চোখ খুলে দেখি সেই ভয়ঙ্কর মানুষটা আমার চোখের সামনে দাঁড়ায় আছে। সে আর কেউনা। টিচার। আমাকে বললো, ক্লাসে সবার সামনে এসে একটা জোকস বলো। আমিতো অবাক। জোকস বলবো? কী জোকস বলবো, মাথায় আসেনা।
এরপর অনেক কষ্টে একটা জোকস মনে পড়লো।
মন্টু মিয়া গেছে ড্রাইভারির চাকরী নিতে। ইন্টারভিউতে মালিক বললো
তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। চাকরিটা পাকা। স্টার্টিং বেতন দেওয়া হবে দুই হাজার টাকা। কোনো সমস্যা নাই তো?
মন্টু বললো, না না স্যার, আমার কোনো সমস্যা নাই। স্টার্টিং বেতন ঠিক আছে, কিন্তু ড্রাইভিং বেতনটা কত?
জোকস বলে আমি নিজেই হাত তালি দিয়ে হাসতে ছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বুঝলাম এক আমি ছাড়া ওই ট্রেনিং ক্লাসের সবাই চুপ। সবাই শক্তমুখ করে বসে আছে। কেউ হাসেনাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৩১