somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃতুমি ভুল ছিলে!!!!!!

২৪ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অদ্ভুত ব্যাপার!আমার চেহারা আশ্চর্য রকম বদলে গিয়েছে।নিজের চেহারার দিকে তাকিয়ে আমি চোখ ফেরাতে পারছিনা।কি সুন্দর ফর্সা রং,বড় বড় চোখ,খাড়া নাক।সব মিলিয়ে আমাকে মনে হচ্ছে যেন আমি এই পৃথিবীর কেউ নই।আমি যেন ভুল করে স্বর্গ থেকে মাটিতে নেমে এসেছি।কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব।আমি তো এতটা সুন্দরী ছিলাম না।বরং আমার গায়ের রঙ এতটাই কালো ছিল যে আমার এই রঙ নিয়ে মানুষের সামনে যেতেও লজ্জা হত।যা হোক,আমার বহুদিন ধরে বুকে চেপে থাকা স্বপ্নটা যেভাবেই হোক সত্যি হয়েছে।
আমি অপলক দৃষ্টিতে আয়নার দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখছি আর মনে মনে অদ্ভুত সব চিন্তা করছি।আমি কখনই আমার কালো রঙ থেকে মুক্তি পাবো না,কখনই আমি স্বর্গের অপ্সরীদের মত সুন্দরী হতে পারবনা তা আমি জানি।তবুও আমার এসব ভাবতে ভাল লাগে।মাঝে মাঝে বিকালবেলা আমি বারান্দায় বসে থাকি।ঐ সময় বারান্দায় একটা মিষ্টি রোদ পড়ে,সাহিত্যিকের ভাষায় যাকে বলে কনে দেখা আলো।সেই আলোতে বসে থাকতে থাকতে আমার মনে হয়,এই আলো গায়ে লাগলে হয়তো আমার এই কালো রংটা কাচা-সোনা রঙ জাতীয় কিছু হয়ে যাবে।আবার বৃষ্টিতে ভেজার সময় মনে হয়-হয়তো কোনো দিন অলৌকিক ভাবে বৃষ্টির জল আমার গায়ের কালো রঙ ধুয়ে নিয়ে যাবে!
আমি জানি,আমার এইসব চিন্তাগুলো খুবই অদ্ভুত।সবাই শুনলে আমাকে মানসিক ভাবে অসুস্থ্য ভাববে।আমি এসব অবশ্য কাউকে বলেও বেড়াই না।তবে কেউ কেউ জানে যে,গায়ের রঙ কালো হওয়ার কারণে আমার ভেতরে প্রবল দুঃখবোধ আছে।সুবলদা তাদের একজন।সুবলদা আমাদের পাশের বাড়ির মানুষ।আমার থেকে বছর চারেকের বড়।তাদের বাড়িতে বিশাল একটা পাঠাগার আছে।আমি সময়ে অসময়ে বই আনতে সুবলদার কাছে যাই।বলতে গেলে বই-ই আমার আর সুবলদার মাঝে বয়সের ব্যবধান দূর করে বন্ধুতে পরিণত করেছে।বই আনার ছলে অনেক গল্প হয়।গল্প করি সেটা বললে অবশ্য ভুল হবে।আসলে সুবলদা বলে আর আমি শুনি।সুবলদা জ্ঞানী মানুষ।কথা বলেনও ভারী ভারী।
আমাকে মাঝে মাঝেই আমার গায়ের রঙ নিয়ে কষ্ট পেতে নিষেধ করে।
-বুঝলি মাধবী,গায়ের রঙ আসলে বড্ড গৌন বিষয়।অন্তরটা যদি সুন্দর না হয় তাহলে বাইরের সৌন্দর্য কোনো কাজে আসেনা।
আমি সুবলদার কথা এক মনে শুনি।আমার ভিতর মাঝে মাঝে বিশ্বাস জন্মে আসলেই গায়ের রঙ দিয়ে কিছু হয়না।
সুবলদা আরো বলেন, “শোন্ মাধবী,নিজেকে কাজে-কর্মে স্কিলড কর।জীবনে বড় কিছু যদি হতে পারিস তাহলে দেখবি সবাই তোর গুন নিয়ে কথা বলবে।গায়ের রঙ ধুয়ে জলও খাওয়া যায়না।পড়ালেখা কর।শিমুলতলার শিশির মাসিকে দেখিস না?কত বড় ল’ইয়ার।তার মত বড় হওয়ার চেষ্টা কর।”
আমি সুবলদার কথা মনে প্রাণে মেনে চলি।রাত জেগে পড়তে গিয়ে আমার চোখের নিচটা আরো কালো হয়ে গিয়েছে,মুখে গোটা উঠেছে।আমি এসব নিয়ে ভাবিনা।আমি এখন শুধু বড় কিছু হতে চাই।আমি ইদানীং বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি।আগের মত আর মাথা নিচু করে রাস্তা দিয়ে হাটি না,কথা বলার সময় সংকুচিত হয়ে যাই না।
সুবলদার কারণেই আমার এই পরিবর্তন।মানুষটার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জন্মে।সুবলদার জন্য আমার মনে আরো অনেক ব্যাপারই তৈরী হয়।এই ব্যাপারগুলোর সাথে আমি আসলে আগে পরিচিত ছিলাম না।তারপরেও বুঝি,এগুলোই ভালোবাসা কিংবা প্রেম-যা কিনা আমি শরত-বঙ্কিমের বইতে বহুবার পড়েছি।

সুবলদাকে আমার কথাগুলো কিছুই বলা হয় না।আমার ক্ষীণ ধারণা-সুবলদার ভেতরেও হয়তো আমার জন্যে কোনো স্থান তৈরী হয়েছে।তা নাহলে কেন যখন-তখন নিজের লেখা কবিতাগুলো আমাকে শোনাবে?

জমাট বাধা অন্ধকার,
তোর চোখের আগুন,
আর আমার মিথ্যে কল্পনা।
আমি নিঃস্ব হয়ে যাব
দোহাই এভাবে তাকাস না।


আমি বুঝি,আমাকে নিয়েই ওই কবিতা লেখা।তবে আমি সম্ভবত খুব বেশি বুঝে ফেলেছিলাম।তার প্রমাণ পেতে দেরি হল না।সুবলদা নিজেই একদিন হঠাৎ জানালো,সে প্রতিমা নামে এক মেয়ের প্রেমে দিশেহারা।ঘোরলাগা কণ্ঠে সুবলদা প্রতিমার রূপের বর্ণনা দিল।
-মাধবী,তোকে আর কি বলবরে!এত সুন্দর একটা মানুষ কিভাবে হয়?এ যেন এক অপ্সরী!আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি,পৃথিবীর এমন কোনো পুরুষ নেই,যে প্রতিমাকে এক নজর দেখে প্রেমে পরে যাবে না।
আমি অবাক হয়ে সুবলদার কথা শুনলাম।এই মানুষটাই এক সময় বলত-চেহারা বলে কিছু নেই,বাহ্যিক সৌন্দর্য আসলে কিছুই নয়।অথচ,আজ সেই সুবলদা কেবল সৌন্দর্যের কারণে একটা মেয়েকে ভালবেসেছে!

আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে দৌড়ে বাড়ি ফিরে আসি।পুরোনো সেই রোগটা আবার আমার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কল্পনা করতে চাইছি যে আমি স্বর্গের আপ্সরী হয়ে গিয়েছি।অথচ আমি কল্পনা করতে পারছি না।সুবলদা আমার সেই ক্ষমতা ধ্বংস করে দিয়েছে।
“সুবলদা,আমি তোমাকে দোষ দেই না।এই পৃথিবীর সবাই বাইরের রূপটা দেখে।তুমিও তাদের ব্যতিক্রম নও।”
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:২০
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×