somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামী আকীদা

১৭ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আকীদা (عقيدة):

ইসলামের বিশ্বাস বিষয়ক সর্বশেষ ও প্রসিদ্ধতম পরিভাষা 'আকীদা'। হিজরি চতুর্থ শতকের পূর্বে এ শব্দটির প্রয়োগ লক্ষ্য করার মত নয়। হিজরী চতুর্থ শতক থেকে এ পরিভাষাটি প্রসিদ্ধি লাভ করে। এর পরবর্তী যুগে এটিই একমাত্র পরিভাষা হয়ে যায়।

আকীদা ও ই'তিকাদ শব্দদ্বয় আরবি এবং উভয়ই 'আকদ' (عقد) ধাতু থেকে গৃহীত। এর মূল অর্থ সন্ধান করা, গিরা দেয়া, চুক্তি করা, জমাট হওয়া, শক্ত হওয়া ইত্যাদি। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন:

وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ

(আশ্রয় গ্রহণ করছি) গ্রন্থিতে ফুৎকার দিয়ে (জাদুকারিণীদের) অনিষ্ট হতে [সূরা ফালাক ১১৩:৪]

وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِي

এবং আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দুর করে দিন। [সূরা তোয়া-হা: ২৭]

'দ্বীনের বিশ্বাস' বুঝাতে আকীদা শব্দের ব্যবহার পরবর্তী যুগে ব্যাপক হলেও প্রাচীন আরবি ভাষায় এর ব্যবহার লক্ষ্য করার মত নয়। বাহ্যত হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে এই পরিভাষার প্রচলন শুরু হয়।

'আকীদা' ও 'ই'তিকাদ' শব্দের ব্যবহার কুরআনুল কারীম ও হাদীস শরিফে দেখা যায় না। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুগ বা তাঁর পূর্বের যুগে আরবি ভাষায় 'বিশ্বাস' অর্থে বা অন্য কোনো অর্থে 'আকীদা' শব্দের ব্যবহার ছিল বলে জানা যায় না। তবে 'দৃঢ় হওয়া' বা 'জমাট হওয়া' অর্থে ই'তিকাদ' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া অন্তরের বিশ্বাস অর্থেও 'ই'তিকাদ' শব্দটির প্রচলন ছিল।

দ্বিতীয় শতাব্দীর কোনো কোনো ইমাম ও আলেমের কথায় ই'তিকাদ বা 'আকীদা' শব্দ সুদৃঢ় ধর্ম বিশ্বাস অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে বলে দেখা যায়। ফিকহুল আকবর-এ ইমাম আবু হানীফা (রহ)-এর বক্তব্যে দৃঢ়বিশ্বাস অর্থে 'ই'তিকাদ' শব্দটি দেখা যায়, যদিও 'আকীদা' শব্দটি তিনি ব্যবহার করেননি। চতুর্থ ও পঞ্চম শতকে লিখিত প্রাচীন আরবি অভিধানগুলোতে 'আকীদা' শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায় না। পরবর্তী সময়ের অভিধানবিশারদরা এই শব্দটির অর্থ ব্যাখ্যা করেছেন। ৮ম শতকের প্রসিদ্ধ অভিধানবেত্তা আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আল-ফাইউমী (মৃত্যু ৭৭০ হিজরী) বলেন, "মানুষ দ্বীন (বিশ্বাস) হিসেবে যা গ্রহণ করে, তাকে 'আকীদা' বলা হয়।"

আধুনিক ভাষাবিদ ড. ইবরাহীম আনীস ও তাঁর সঙ্গীগণ সম্পাদিত 'আল-মু'জামুল ওয়াসীত' গ্রন্থে বলা হয়েছে-

الحكم الذي لا يقبل الشك فيه لدى معتقده

"আকীদা অর্থ এমন বিধান বা নির্দেশ, যার বিশ্বাসীর (আকীদা ধারনকারীর) নিকট কোনোরূপে সন্দেহের অবকাশ থাকে না।"

ইসলামী আকীদা ও শরীয়তের মূল উৎস হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী। ওহীর জ্ঞান থেকেই ইসলামী আকীদার উদ্ভব ও উৎপত্তি ঘটে। ওহীর জ্ঞান ব্যতিরেকে যে কোনো ইলমই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। একারণে আল্লাহ তা'য়ালা যুগে যুগে ওহীসহকারে নবী-রাসূল প্রেরণ করেন।

ওহীর প্রকারভেদ - কুরআন ও সুন্নাহ : রাসুলুল্লাহ (সা)-এর প্রতি দুই প্রকারের ওহী প্রেরণ করা হয়েছে। এক. ওহীয়ে মাতলু তথা কুরআন মাজিদ; দুই. ওহীয়ে গায়ের মাতলু তথা রাসুল (সা)-এর হাদীস।

ক. কুরআন মাজিদ: কুরআনুল কারিম মানব জাতির কাছে প্রেরিত আল্লাহর সর্বশেষ বাণী। এর প্রতিটি অক্ষর, শব্দ ও বাক্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত।

খ. হাদীস: আল্লাহ তা'য়ালা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট যে ওহী পাঠাতেন, তা ছিল দু'প্রকারের। প্রথম প্রকার ওহী কুরআন, যা তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো শব্দ ও অর্থসহ আক্ষরিকভাবে মুখস্থ করতেন। সাহাবীদেরকে মুখস্থ করাতেন ও লিখাতেন। দ্বিতীয় প্রকার ওহী তিনি নিজের ভাষায় সাহাবীদেরকে বলতেন, শিক্ষা দিতেন, মুখস্থ করাতেন এবং কখনো কখনো লিখাতেন। এই দ্বিতীয় প্রকারের ওহী 'হাদীস' বা 'সুন্নত' নামে পৃথকভাবে সংকলিত ও সংরক্ষিত হয়েছে।

হাদীস শব্দের আভিধানিক অর্থ সংবাদ, কথা বা নতুন বিষয়। (ইবনে মানযূর, লিসানুল আরব ২/১৩১-১৩৪; ফাইউমী, মুখতারুস সিহাহ ১/১৫৩)।

ইসলামী পরিভাষায় হাদীস বলতে সাধারণত রাসুলুল্লাহ (সা) যা বলেছেন, করেছেন বা অনুমোদন দিয়েছেন, তাকে হাদীস বলা হয়। মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায়, যে কথা, কর্ম ও অনুমোদনকে রাসুলুল্লাহ (সা)-এর বলে প্রচার বা দাবি করা হয়েছে তাই 'হাদীস' বলে পরিচিত। এছাড়া সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণের কথা, কর্ম ও অনুমোদনকেও হাদিস বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা)-এর কর্ম, কথা বা অনুমোদন হিসেবে বর্ণিত হাদীসকে 'মারফু' হাদীস বলা হয়। সাহাবীগণের কর্ম, কথা বা অনুমোদন হিসেবে বর্ণিত হাদিসকে 'মাওকুফ হাদীস' বলা হয়। আর তাবেয়ীগণের কর্ম, কথা বা অনুমোদন হিসেবে বর্ণিত হাদীসকে 'মাকতু' হাদীস বলা হয়।

বস্তুত কুরআনুল কারিমের ব্যাখ্যা ও বাস্তব প্রয়োগই হাদীস নামে অভিহিত। কুরআনের পাশাপাশি অতিরিক্ত যে ওহীর জ্ঞান বা প্রজ্ঞা মহান আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সা)-কে প্রদান করেছিলেন, তার ভিত্তিতে তিনি কুরআনের বিভিন্ন বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন এবং বাস্তব জীবনের র্সবক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করেছেন। কুরআন ও হাদীসই আমাদের সকল জ্ঞান ও কর্মের মূল উৎস। ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেন- "আমি তোমাদের মধ্যে যা রেখে যাচ্ছি, তা যদি তোমরা আঁকড়ে ধরে থাকো, তাহলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না; তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নত।"

বর্ণনাকরীদের সংখ্যার দিক থেকে মুহাদ্দিসগণ বিশুদ্ধ বা সহীহ হাদীসকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-

১. মুতাওয়াতির ২. আহাদ।

১. যে হাদীস সাহাবগীণের যুগ থেকে সংকলন পর্যন্ত সব স্তরে অনেক সংখ্যক রাবি বর্ণনা করেছেন তাকে মুতওয়াতির বা অতি-প্রসিদ্ধ হাদীস বলে। অর্থাৎ যে হাদীস রাসুলুল্লাহ (সা) অন্তত পাঁচজন সাহাবী বর্ণনা করেছেন, প্রত্যেক সাহাবী থেকে অনেক তাবে'য়ী বর্ণনা করেছেন এবং প্রত্যেক তাবে'য়ী থেকে অনেক তাবে-তাবে'য়ী বর্ণনা করেছেন, এভাবে রাসুলুল্লাহ (সা) থেকে সংকলন পর্যন্ত প্রত্যেক পর্যায়ে বহু সংখ্যক ব্যক্তি যে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাকে মুতাওয়াতির হাদীস বলা হয়। প্রতি স্তরে রাবিদের সংখ্যা এত বেশি হওয়া যে, তারা সকলে একত্রিত হয়ে মিথ্যা কথা বানানোর কোনো সম্ভাবনা থাকে না। যেমন - সালাতের ওয়াক্ত ও রাকা'য়াত সংখ্যা, যাকাতের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয় বর্ণনা সম্পর্কিত হাদীসের রাবি সংখ্যা।

২. যে হাদীসকে পাঁচজনের কম সংখ্যক সাহাবী বর্ণনা করেছেন, তাকে 'আহাদ' বা খবরে ওয়াহিদ হাদীস বলা হয়। খবরে ওয়াহিদ হাদীসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-

ক. গরীব: যে হাদীসের সনদের মধ্যে কোনো এক পর্যায়ে মাত্র একজন রাবি বা বর্ণনাকারী রয়েছেন, তাকে গরীব হাদীস বলা হয়।
খ. আযীয: যে হাদীসের সনদের মধ্যে কোনো পর্যায়ে মাত্র দুজন রাবি রয়েছেন, সে হাদীসকে আযীয হাদিস বলা হয়।
গ. মুসতাফিয: যে হাদীসের রাবির সংখ্যা সব পর্যায়ে দুজনের বেশি, তবে অনেক নয় সে হাদীসকে মুসতাফীয হাদীস বলা হয়।

এছাড়াও, বিভিন্ন মুহাদ্দিসের মতে, যে হাদীস সাহাবীগণের যুগে আহাদ বর্ণনা ছিল, কিন্তু তাবে'য়ীগণের যুগ থেকে তা মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছেছে তাকে মাশহুর হাদীস বলা হয়।

মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা সুনিশ্চিত জ্ঞান (ইলম কাত'য়ী) এবং দৃঢ় বিশ্বাস (ইয়াকীন) লাভ করা যায়। কুরআনুল কারীমের পাশাপাশি এই প্রকারের হাদীসই মূলত 'আকীদা'র ভিত্তি। এই প্রকারের হাদীস দ্বারা প্রমাণিত তথ্য অস্বীকার করলে তা ধর্মত্যাগ বা অবিশ্বাস (কুফরী) বলে বিবেচিত হয়।

খবরে ওয়াহিদ বা একক বর্ণনার সহিহ হাদীস আকীদার ফুরু’ এর ক্ষেত্রে গৃহীত। তবে সাধারণভাবে ফকীহগণের নিকট খবরে ওয়াহিদ সুনিশ্চিত জ্ঞান প্রদান করে না। বরং তা কার্যকর ধারণা প্রদান করে। কর্মের ক্ষেত্রে বা কর্ম বিষয়ক হালাল, হারাম ইত্যাদি বিধিবিধানের ক্ষেত্রে এরূপ হাদীসের ওপরে নির্ভর করা হয়। আকীদার মূল বিষয় প্রমাণের জন্য সাধারণত এরূপ হাদীসের ওপর নির্ভর করা হয় না। তবে মূল বিষয়ের ব্যাখ্যায় ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তা উল্লেখ করা হয়। [আল্লামা রাহমাতুল্লাহ কিরানবী, ইযহারুল হাক্ব, ৩/৯২০]

সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সবই আমরা সহজ ও স্বাভাবিক অর্থে গ্রহণ করি এবং বিশ্বাস করি। পার্থক্য এই যে, কুরআনে উল্লিখিত বা মুতাওয়াতির হাদীসের মাধ্যমে পরিজ্ঞাত কোনে বিষয় অস্বীকার করলে তা কুফরি বলে গণ্য হয়। আর খবরে ওয়াহিদের মাধ্যমে পরিজ্ঞাত বিষয় অস্বীকার করলে তা বিভ্রান্তি (ফাসেকী) বলে গণ্য হয়।

আকীদার ক্ষেত্রে 'মুতাওয়াতির' হাদীসের ওপর গুরুত্ব প্রদানের দ্বিবিধ কারণ রয়েছে -

আক্বীদা অবশ্যই নিশ্চিত জ্ঞান হতে হবে। নিশ্চিত জ্ঞান ছাড়া কোনো বিষয়কে দৃঢ় বিশ্বাস হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন,
যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে যার ব্যাপারে তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে। নিশ্চয়ই কাফেররা সফলকাম হবে না। [২৩:১১৭]

প্রত্যেকে সম্প্রদায় থেকে আমি একজন সাক্ষী আলাদা করব; অতঃপর বলব, তোমাদের প্রমাণ আন। তখন তারা জানতে পারবে যে সত্য আল্লাহর এবং তারা যা গড়ত, তা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে যাবে। [২৮:৭৫]

রেওয়ায়াতের যথার্থতার দিক থেকে বর্ণনা দু ধরনের হতে পারে। সুনিশ্চিত (কাত'ঈ) ও অনিশ্চিত (যন্নী)। সুনিশ্চিত ও কাত'ঈ বর্ণনা পাওয়া যায় কুরআন ও মুতাওয়াতির হাদীস হতে। যেসব আহাদ হাদীস বর্ণনার দিক হতে মুতাওয়াতির পর্যন্ত পৌছায় না তা আক্বীদার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন,

আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের অনুসরণ করেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সর্ম্পূণ অনুমানভিত্তিক কথার্বাতা বলে থাকে। [আন’আম:১১৬]

বস্তুতঃ তাদের অধিকাংশই শুধু আন্দাজ-অনুমানের উপর চলে, অথচ আন্দাজ-অনুমান সত্যের বেলায় কোনো কাজেই আসে না। আল্লাহ ভাল করইে জানেন, তারা যা কিছু করে। [ইউনুস:৩৬]

যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তারাই ফেরেশতাদের নারীবাচক নাম দিয়ে থাকে অথচ এ বিষয়ে তাদের কেনো জ্ঞান নইে। তারা কেবল অনুমানের উপর চলে অথচ সত্যরে ব্যাপারে অনুমান মোটেই ফলপ্রসূ নয়। [নাজম:২৭-২৮]

সুতরাং, আকীদা অনিশ্চিত (যন্নী) উৎস থেকে গ্রহণ করা যাবে না। তবে যেকোনো অ-মুতাওয়াতির প্রমানিত গ্রহনযোগ্য হাদীসকে সত্যায়ন (তাসদীক) করা হবে তবে নিশ্চিত সত্যায়ন (তাসদীক যাজিম) করা হবে না। অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য হাদীসের বক্তব্যে বিশ্বাস করা হবে তবে আকীদার ভিত্তি হিসেবে শুধুমাত্র সুনিশ্চিত (কাত'ঈ) জ্ঞান গ্রহণ করা হবে।

হাদীসের এই শ্রেণীবিভাগ বুঝতে নিচের উদাহরণটি আলোচনা করা যায়। তা হলো যে কোনো বিচারালয়ে উত্থাপিত মামলার প্রদত্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে বিচারক একটি 'ধারণা' লাভ করেন। তিনি মোটামুটি বুঝতে পারেন যে, এ সম্পদটি সত্যি সত্যি এই লোকের বলে মনে হচ্ছে, অথবা এ লোকটি সত্যই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে বুঝা যাচ্ছে। তিনি এও জানেন যে, তার এই 'ধারণা'র মধ্যে ভুল হতে পারে। সকল বিচারকেরই কিছু রায় ভুল হয়। সামগ্রিকভাবে সনদ ও অর্থ যাচাইয়েরর পর 'এককভাবে বর্ণিত' সহীহ হাদিসের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিস অনুরূপ 'কার্যকর ধারণা' লাভ করেন যে, কথাটি সত্যিই রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন। তবে বর্ণনার মধ্যে সামান্য হেরফের থাকার ক্ষীণ সম্ভাবনা তিনি অস্বীকার করেন না। তবে সম্ভাবনা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত একে কার্যত নির্ভুল বলে গণ্য করা হয়। যখন এরূপ বর্ণনা মুতাওয়াতির পর্যায়ের হয়, তখন ভুল-ভ্রান্তির সামান্য সম্ভাবনাও রহিত হয়।

কুরআন পুরোপুরিই 'মুতাওয়াতিরভাবে বর্ণিত। যেভাবে রাসুলুল্লাহ (সা)-এর উপরে তা অবতীর্ণ হয়েছে, অবিকল সেভাবেই শতশত সাহাবী তা লিখিত ও মৌখিকভাবে বর্ণনা করেছেন, তাদের থেকে হাজার হাজার তাবেয়ী তা সেভাবে গ্রহণ করেছেন এবং প্রচার করেছেন। কেউ একটি শব্দকে সমার্থক কোনো শব্দ দিয়ে পরিবর্তন করেননি। সহীহ হাদিস তদ্রূপ নয়। হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সাহাবী-তাবেয়ীগণ অর্থের দিকে বেশি লক্ষ্য রাখতেন। আরবি ভাষা ও বর্ণনাশৈলীর বিষয়ে অভিজ্ঞ সাহাবী-তাবেয়ীগণ প্রয়োজনে একটি শব্দের পরিবর্তে সমার্থক অন্য শব্দ ব্যবহার করতেন। মূল হাদীসের অর্থ ঠিক রেখে শব্দ পরিবর্তনের প্রচলন তাদের মধ্যে ছিল।

আকীদা বা দৃঢ় বিশ্বাস মূলত প্রতিটি মুসলমানের ক্ষেত্রে এক ও অভিন্ন, অর্থাৎ আকীদার ভিত্তিসমূহ (উসূল) এর ক্ষেত্রে। এছাড়া আকীদার খুটিনাটির (ফুরু') ক্ষেত্রে কিছু মতবিভেদ থাকতে পারে। উদাহরনসরূপ, মিরাজ-এর খুটিনাটি যেমন এটি দৈহিকভাবে হয়েছে না আত্মিকভাবে হয়েছে এ নিয়ে সাহাবীদের মধ্যে মতবিভেদ ছিল যদিও মিরাজ সংঘটিত হওয়া নিয়ে কোনো মতবিভেদ নেই।

বিশুদ্ধ আকীদা ও আমল শেখাতেই আল্লাহ নবী-রাসূল প্রেরণ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা) তার উম্মতকে বিশুদ্ধতম আকীদা ও আমল শিখিয়ে গিয়েছেন। আমলের ক্ষেত্রে বিকল্প আছে। সব মুসলিমের উপর ফরয কিছু কাজ ব্যতীত বিভিন্ন ফযীলতমূলক নেক কাজে একটি না করলে অন্যটি করা যায়। কিন্তু আকীদার ক্ষেত্রে বিকল্প নেই। আকীদা সবার জন্য একই রূপে সর্বপ্রথম ফরয। আকীদা রাসুলুল্লাহ (সা) সকল সাহাবীকে সমানভাবে শিখিয়েছেন। যে বিষয়টি বিশ্বাস করা মুমিনের জন্য প্রয়োজন, সে বিষয়টি অবশ্যই রাসুলুল্লাহ (সা) তাঁর সকল সাহাবীকে জানিয়েছেন। এতে আমরা বুঝতে পারি যে, আকীদার বিষয়ে হয় কুরআনে স্পষ্ট আয়াত থাকবে অথবা অগণিত সাহাবী থেকে মুতাওয়াতির হাদিস বর্ণিত থাকবে। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আকীদার উৎস হতে জেনে বুঝে সঠিক আকীদা গ্রহণ করা এক অবশ্য কর্তব্য। এক্ষেত্রে ইজতিহাদের কোনো অবকাশ নেই। আকীদার উৎস হতে আকীদা সেভাবেই নিতে হবে যেভাবে দেয়া আছে।

আকীদা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের মধ্যে রয়েছে-

১. ফিকহুল আকবর - ইমাম আবু হানিফা
২. আল আকীদা আল ওয়াসিতয়্যাহ - ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ
৩. উসূল আস সুন্নাহ - ইমাম আহমদ বিন হাম্বল
৪. বায়ানু ই'তিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা'য়াহ - ইমাম আত তাহাবী
৫. আকীদা আন নাসাফী - ইমাম আন নাসাফী
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×