ইরানি চলচ্চিত্র রেনেসাঁ যুগের অন্যতম অগ্রপথিক আব্বাস কিয়রোস্তামির বিখ্যাত কোকের ট্রিলজির প্রথম চলচ্চিত্র ‘হোয়ার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম’ [১৯৮৭]।
চলচ্চিত্র সমালোচকরা কিয়রোস্তামির হোয়ার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম, অ্যান্ড লাইফ গোস অন (১৯৯২) এবং থ্রু দি অলিভ ট্রিস (১৯৯৪) এই চলচ্চিত্র তিনটিকে কোকের ত্রয়ী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ সবগুলো সিনেমায় উত্তর ইরানের কোকের নামক একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে।
হোয়ার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম সিনেমার কাহিনী সাদামাটা । মূল চরিত্র একটি আট বছর বয়সের স্কুল ছাত্র আহমেদ যাকে তার বন্ধুর বই ফিরিয়ে দিতে হবে। স্কুল থেকে ভুলে সে এটা নিয়ে এসেছে এবং আগামী কালের স্কুলের আগে ফেরত দিতে না পারলে তার বন্ধু বাড়ির কাজ করতে পারবে না এবং তাকে স্কুল থেকে বের করেও দেয়া হতে পারে। আহমেদ কোকের গ্রামে থাকে। বন্ধুর বাড়ি পাশের গ্রামে, কিন্তু বাড়িটি সে চেনে না। একেক জনের কাছে জিজ্ঞেস করে সে বইটি নিয়ে বাড়ি বাড়ি খুঁজতে থাকে। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়, কিন্তু সে খুঁজে পায়না তার বন্ধুর বাড়ি। পরেরদিন যথারীতি স্কুল শুরু হয়। বই হারানো বালক মোহাম্মদ রেজা ভীত হয়ে শাস্তির অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু শেষ দৃশ্যে দেখা যায়- আহমেদ তার বন্ধুকে শাস্তির হাত থেকে রক্ষা করতে তার জন্য হোমওয়ার্ক করে এনেছে।
এতে ইরানের গ্রাম্য মানুষের চিন্তাধারা এবং সমাজ বাস্তবতাকে তুলে ধরা হয়েছে। বাস্তবতা এই ছবির মূল বৈশিষ্ট্য, একে কিয়রোস্তামির সিনেমার প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায়। এছাড়া সিনেমাটি নির্মীত হয়েছে পুরোপুরি একজন বালকের দৃষ্টিকোণ থেকে, শিশুতোষ অনেক সিনেমায় যেমন বড়দের প্রভাব ফুটে উঠে এতে তেমনটা হয়নি। চলচ্চিত্রে শিশুরা ছিল অনেক মানবিক, সহানুভূতিশীল এবং সাহায্যকারী। বন্ধুর বাড়িটি খুঁজতে আহমেদকে বড়রা যত সহায়তা করেছে, শিশুরা করেছে তার চেয়ে অনেক বেশি।
আপাত সাদামাটা চিত্রনাট্যে এটি আসলে আরো বেশি কিছু বলছে। অন্যের ব্যাপারে উদাসীন, মানবিক সাধারন গুনাবলি থেকে বিচ্যুত ইরানের যুবা এবং বৃদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতি করুণাই সঞ্চিত হয় চলচ্চিত্রটির শেষে এসে। আর বন্ধুবৎসল, মানবিকতার সাধারন কিন্তু অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী আহমেদ ছেলেটি যেন বলছে- ‘‘ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা, আধমারদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।’’
আইএমডিবি রেটিং ৮/১০
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৪