অর্থনীতি কি ভাবে কাজ করে, তা যত জানবেন, ততই ডিপ্রেসিং লাগবে। যত ঋণ, যত লুটপাট, যত ঋণ খেলাপি, সবই সাধারণ মানুষকে মেটাতে হয়।
টাকার মান কমে যাওয়া মানে হচ্ছে সঞ্চয় কমে যাওয়া। অনেকে সারা জীবন ধরে একটু একটু করে সঞ্চয় করে। টাকা ঠিকই হয়তো ফেরত পায়, তবে তার মূল্য থাকে না। এটা হচ্ছে একভাবে অন্যের অন্যায় মেটানো। আরেকটা হচ্ছে ভ্যাট ট্যাক্স। দিন দিন ভ্যাট ট্যাক্স বাড়বে। উন্নয়নের জন্য ভ্যাট ট্যাক্স দিবেন, তা বেতন আর ঋণ মেটাতেই শেষ হয়ে যাবে।
এমন সিস্টেমে কেউ সৎ ভাবে ব্যবসা করতে পারে না। কোন না কোন ভাবে তাকেও অন্যায়ের মধ্যে জড়াতে হবে। আর অন্যায় না করতে চাইলে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। এমন ঘটেছেও। সানোফি ফার্মাসিউটিক্যাল বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছিল। কারণ হিসেবে দেখিয়েছে এই দেশে দুর্নীতি ছাড়া ব্যবসা করা যায় না। এরপর Glaxo Smith Kline (GSK) ও বাংলাদেশে তাদের ফার্মাসিউটিক্যাল সেকশন বন্ধ করে দিয়েছিল।
আমরা বয়েলিং ফ্রগের ঐ ফ্রগটা। একটা সময় আর কোন কিছুই করার থাকবে না। নাকি এখনই ঐ অবস্থায় আছি? কিছু কি করতে পারছি?
একটা ব্যাঙ কে যদি আপনি একটি পানি ভর্তি পাত্রে রাখেন এবং পাত্রটিকে উত্তপ্ত করতে থাকেন তবে ব্যাঙটি পানির তাপমাত্রার সাথে সাথে নিজের শরীরের তাপমাত্রা ভারসাম্যে রাখতে থাকে। সে পানির উত্তাপ সহ্য করতে থাকে, লাফ দিয়ে বেরোনোর পরিবর্তে।
কিন্তু একসময় পানির প্রচন্ড তাপমাত্রা ব্যাঙের শরীর আর মানিয়ে নিতে পারে না। যখন সে আর পানির প্রচন্ড তাপমাত্রা তার শরীরের তাপমাত্রার সমতায় আসতে পারে না, তখন ব্যাঙটি ফুটন্ত পানির পাত্র থেকে লাফ দেয়ার স্বীদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু হায়! সে লাফ দিতে পারে না তখন, কারন সে তার সমস্ত শক্তি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে ব্যায় করে ফেলেছে। অত:পর সে পানিতে সেদ্ধ হতে থাকে।
তার মৃত্যুর কারনটা আসলে গরম পানি না, বিপদজনক পরিস্থিতির শুরুতে সেই পরিস্থিতি অস্বীকার করে লাফ না দেয়াটা তার মৃত্যুর কারন। সব কিছু সহ্য করে নেবার মত বড় ভুল তার মৃত্যুর কারন। মানিয়ে নেবার, পাত্রের পানি গরম কেন তার প্রতিবাদ না করে বরং তার সাথে সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়াই তার জীবন্ত সেদ্ধ হবার কারন। সঠিক স্বীদ্ধান্ত সঠিক সময়ে না নেয়াই তার মৃত্যুর কারন।
হঠাৎ করে সেই সিদ্ধ হওয়া ব্যাঙের কথা মনে পড়লো। খুব সম্ভবত আমরাও ঐ ব্যাঙের মত আমাদেরকে মানিয়ে নিচ্ছি আমাদের চারপাশের সাথে। সহ্য করছি সব, আর ভাবছি টিকে আছি, টিকে থাকবো। আসলে আমরা সেই বয়লিং ফ্রগ সিনড্রোমে আক্রান্ত। যখন বুঝবো, তখন ডিসিশান মেকিং এর কোন শক্তিই আর শরীরে অবশিষ্ট থাকবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ৭:১৯