somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা বাসা , একটা ঠিকানা শুধু নয় কল্পনাও ।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কয়েকটা নির্মানাধীন এ্যাপার্টমেন্টের কাছে গিয়ে গিয়ে দেখেছে সুষমা এ ক'দিনে । অনেক ক'টাই ভাল মনে হল । নামকরা বিশ্বস্থ ডেভলপার কিনা সেটাই আগে দেখছে । শেষ প্লটটার কাছে গিয়ে একটু দ্রুত নামল গাড়ি থেকে ; চমৎকার লোকেশন । দক্ষিণ পূর্ব দিকে রাস্তা , কর্ণার প্লট । এটাই , এমন একটা প্লটে বাড়ি চাই । নাহ্ , নিজের জন্য নয় । প্রবাসী বাদলের জন্য ।

বাদল ফোনে বলেছে একটা এ্যাপার্টমেন্ট নিতে চায় সুষমারা যেখানে আছে সেখানে । সে নাকি ওয়েব সার্চ করেও খোঁজ নিয়েছে এই এলাকার । যখন দেশে আসবে পরিবার নিয়ে উঠবে সেখানে । বাদলের ইচ্ছা পূরনের জন্য উৎসাহে শুরু করেছে মনমত বাড়ী খোঁজা ।

সুষমা বাদলের এমন সিদ্ধান্তে পুলকিত ! আবার বিস্মিতও । বাদল থাকবে দেশে এসে তার আশে পাশে কোথাও , কাছাকাছি ! তারপর বুড়ো বয়সে অনেক অনেক গল্প হবে , ইচ্ছেমত বাদলের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মন খুলে বলতে পারবে । বাদলও না জানি কত কিছু জমিয়ে রাখছে বলবার জন্য । দু'জন শুধু সঞ্চয়ে বিশ্বাসী । কোন কথা , কাতরতা কিছু খরচ করে না । কেবল জমায় ।
সুষমা ক'দিন ধরে কল্পনায় দেখে মর্নিং ওয়াকের সময় বাদলের সাথে দেখা হবে রোজ । বাদলের বাসায় দরজার পাশে লতানো গোলাপ , বেলী ঝাড় । ফুটলে প্রথম ঘ্রান নেবে সুষমা । বাদলের বউ শিলা মজার মজার ডিস তৈরী করে ডাকবে ওদের । রাতে খাবার পর হাটতে বেরিয়ে বাদল হঠাৎ হানা দেবে সুষমার ঘরে । বুড়ো বয়সে শিলা আর সুষমার বর হাবিবের মনে কোন মেঘ থাকবে না । ছোটখাট খোঁচা যে দেবে না তারা কথায় কথায় সেটা বলা যায় না । এমন স্বাভাবিক অনেক কিছু কল্পনায় আসে । সুষমার অসুস্থতায় বাদল তার বিছানার পাশে চেয়ারে বসে আছে , এমন একটা দৃশ্য ভেবেও সুষমার সুখ । নাহ্ , বাদলের অসুখে নয় , তার কেন অসুখ করবে ? বাদলের আনন্দ সুখ কানায় কানায় উপচে পড়ছে সেটা দেখে যেতে চায় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সুষমা ।

কাছাকাছি থাকবে ওরা , যখন তখন আসা যাওয়া । একরাতে সুষমা দরজা খুলতেই ঢুকে না ভেতরে বাদল , অপলক চেয়ে থাকা দু'জনের । সেই ছাত্রজীবনে যেমন করে দু'চোখে দেখার গভীরতা নিয়ে চেয়ে থাকতো সুষমার চোখে তেমনি বাদলের দৃষ্টি ।
বাইরে বৃষ্টি , বাদল ভিজে গেছে। ওকে ভিতরে এনে দরজা বন্ধ করে সুষমা । তোয়ালে আনতে গিয়ে সময় একটু বেশী নেয় সে , কেন আজ বাদলের চোখে ঘোর লেগেছে । মাঝ বয়স পেরিয়ে এসে ওরা দু'জন কেন ভুল করে ফিরে যায় অনেক পুরোন সেই পথের মোড়ে । হাবিব টিভিতে খেলা দেখছিল বেডরুমে , বাদল এসেছে শুনে বলল পাঠিয়ে দিতে সেখানে ।
দেখে বাদল বারান্দায় দাড়িয়ে আছে , বাইরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে মাঝে মাঝে , বৃষ্টির তেজ বেড়েছে । কাছে গিয়ে তোয়ালে হাতে দিতে গিয়ে টের পেল বাদল তার হাত ধরেছে , সুষমা বুঝতে পারছে না সে কোথায় ! বাদল তাকে টেনে নিল কাছে , দুই হাতে মুখটা তুলে নিয়ে দেখল । সুষমার কপালে দু'ঠোট ছুঁয়ে কি যেন বলে গেল , দিয়ে দিল । সুষমা পেয়ে গেল , ওরা জানল কি জানল না বোঝা গেল না । বিদ্যুৎ বয়ে গেল সুষমার শরীরে ঝড়ের রাতে । সুষমাকে সজোরে বুকে জড়িয়ে রাখে বাদল , সুষমাও শক্তিহীন । পরম নির্ভরতায় তার বুকে আশ্রয় খোঁজে যার জন্য ছুটে চলা তার এতটি বছর । ভাল লাগার চরম বোধে অশ্রুর বাঁধ ভেঙ্গে যায় । বাইরে বৃষ্টি , ঘরেও বৃষ্টি । ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে । বাদলকে বারান্দায় রেখে ড্রইং রুমে বসে পড়ে চেয়ারে , নিজেকে স্বাভাবিক করতে সময় নেয় ।

বেডরুমের দরজায় গিয়ে হাবিবকে জানিয়ে আসে বাদল ভিজে গেছে , ড্রইং রুমে বসছে । রান্নাঘরে বুয়াকে বলে কফি করে দিতে তিনকাপ । তারপর ওয়াশ রুমে ঢুকে চোখে মুখে পানি দেয় ।
বেরিয়ে এসে দেখে বাদল হাবিব কফি কাপে চুমুক দিচ্ছে । সুষমা কফিটা ফিরিয়ে দেয় , খায় না । বাদল ঝটপট উঠে পড়ে , হাবিবের কাছ থেকে বিদায় নেয় ভেজা শরীরে তাড়াতাড়ি ফিরবে বলে ।
সুষমা শুয়ে পড়ে , আজ অনেক কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে । অনেকসময় ধরে । তারপর ঘুমিয়ে পড়ে । ঘুম ভেঙ্গে দেখে সে এক স্বপ্নের থেকে ফিরে এসেছে বাস্তবে । কাল রাতে অনেকক্ষন ভেবেছে বাদলের এ্যপার্টমেন্ট কেনার বিষয়টা ।


আজ পছন্দমত লোকেশনে পছন্দমত ডেভেলপারের এ্যাপার্টমেন্ট পেয়ে তাদের মেইল এ্যাড্রেস নিয়ে ফিরল ঠিকই । তবে দ্বিধা কাটছে না । কেমন কেমন স্বপ্ন , কল্পনা তাকে প্রভাবিত করছে । এতকাল বাদল আচ্ছন্ন করে আছে তাকে তবু এতটা কাতর হয় নি সে ।
তারপর শিলার কথা মনে হতে অপরাধবোধ পেয়ে বসে তাকে । সত্য গোপন থাকে না , আর কোনদিন যদি শিলা জানতে পারে সুষমার পছন্দে তাদের কাছাকাছি ঠিকানা গড়েছে বাদল । শিলা কি করে সহ্য করবে ! একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের এতটুকু দু:খ বুঝবে না সুষমা তা হয় না । বারবার শিলার মুখ ভেসে উঠতে লাগল , যে বিয়ের পর থেকে জেনেছে তার বর মনের মধ্যে এক মেয়েকে লুকিয়ে রেখেছে দীর্ঘদিন , অবোধ অবুঝ এক মেয়ে তার বরের বুকের মধ্যে জায়গা দখল করে আছে ।শিলার জন্য কষ্ট হয় ।
সুষমা মেইল করে বাদলকে , এ্যাপার্টমেন্টের বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে।
শেষে লিখে দেয় , " সবকিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নেবে " ।
জানে বাদল অত্যন্ত বুদ্ধিমান , বুঝে নেবে কি বলতে চেয়েছে ।

মেইল পাঠানোর পর শূণ্যতায় পেয়ে বসে তাকে , বিকেলে বার বার চোখে পানি আসে । কল্পনায় দেখে সকালের আলোয় পছন্দের লোকেশনের বাড়ীর বারান্দায় এসে দাড়িয়েছে বাদল পূর্বদিকে ফিরে , পাশে বেলী আর লতানো গোলাপ । শীত পড়ে গেছে , নিজহাতে বোনা ছাইরঙ মাফলার দিতে এসেছে সুষমা হাবিবের সাথে হাটতে হাটতে । এগিয়ে আসতে থাকে বাদল । বেগুনী তাত শাড়ির আঁচল জড়িয়ে নেয় সুষমা । এগিয়ে আসতে থাকে বাদল , এগিয়ে আসে নেবে বলে ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৮:৪০
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×