somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভবিষ্যতের ইতিহাসঃ সুর্য্য (আষাঢ়ে গল্প!)

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাকে চিনতে পারছেন? আমি মোস্তাফিজুরুদ্দিনুজ্জামানিয়া। গোমস্তা ট্রাভেলসের কর্নধার। আজ ২৩ জানুয়ারী ৩০২০ সাল। আমার ছোটমেয়ের জন্মদিন। আর মেয়ের জন্মদিন পালন উপলক্ষ্যে দারুন একটা প্লান করেছি আমি। এ প্লান বাস্তবায়নের জন্য আমি পাঁচশত রোবট ভাড়া করেছি। প্লানটা অনেকের কাছে পাগলামী মনে হতে পারে - আর তাছাড়া এটা অনেক খয়খরচার ব্যাপার তো বটেই। তবে বাপ দাদার কাছ থেকে যে সম্পত্তি আমি পেয়েছি তা আগামী এক শতাব্দী শুয়ে বসে খরচ করলেও ফুরোবে না। মেয়ের জন্য খরচের ব্যাপারে আমি অকৃপণ!

আর আপনাদের তো আগেই আমাদের বংশের লোকদের পাগলামি সম্পর্কে বলেছিলাম। আমি ইদানীং লক্ষ করেছি আমার মেয়ের মধ্যেও আমাদের বংশের পাগলামী প্রকাশ পাচ্ছে। জন্মদিন উপলক্ষে আমার মেয়ে কি আব্দার করেছে শুনবেন?

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। তার কি ইচ্ছা জানতে চেয়েছি। সে উত্তর দিলো- ’আব্বু আমি সুর্য দেখব।’ এখন মেয়ের আব্দার কি করে রক্ষা করি? এদিকে রোবটগুলো ভাড়া করেছি সেগুলোরই বা কি হবে? কোনভাবেই মেয়েকে অন্য কিছু রাজী করানো গেল না। সে সুর্য দেখবেই।

কি করা যায় ভাবতে বসলাম। আপনারা বোধহয় জানেন না আমরা এখন আর সুর্য দেখিনা। সুর্যটা সবসময় মেঘে ঢাকা থাকে। এর কারনটা জানেন কি? না জেনে থাকলে বলি। ২৮০০ সালের দিকে যখন পৃথিবীর মেরুপ্রান্তের বরফ অতি দ্রুত গলতে শুরু করে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর আরো অনেক নীচু অঞ্চল ডুবে যাবার আশংকা দেখা দেয় তখন আমার পুর্বপুরুষদের একজন বিজ্ঞানী বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর অনেক অংশকেই ডুবে যাওয়ার হাত থেকে বাচিয়েছিলেন অদ্ভুত এক কৌশলের মাধ্যমে।

তিনি হিসাব নিকাশ করে পুথিবীর এক চতুর্থাংশ পানিকে মেঘ করে আকাশে পাঠিয়ে দেন। এতে করে পৃথিবী পৃষ্ঠের মোট জলরাশির পরিমান কমে যায় আর নীচু এলাকাগুলোর বিভিন্ন স্থানে চর জেগে উঠে। এর ফলে নতুন বসতি সৃস্টি হয়ে বাসস্থান সমস্যাও দুর হয় অনেকটা। আমিও তেমনি আমার নিজের নামে পৈতৃক সুত্রে পেয়েছি মোস্তার চর যার আয়তন প্রায় দশ হাজার বর্গমাইল। ওটার বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ট্যাক্সের ৫% আমার একাউন্টে জমা হয় প্রতিবছর!

যা বলছিলাম, মেঘ বানানোতে কিছু অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছিল, যা কৃত্রিম উপায়েই দুর করা হয়। যেমন যে সকল দেশের তাপমাত্রা এমনিতেই কম ছিল সেসব দেশের আকাশে অপেক্ষাকৃত কম ঘন মেঘ রাখা হয়। আর বাংলাদেশ সহ গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোর আকাশে বেশীরভাগ ঘন মেঘ রেখে দেয়া হয়। যে কারনে সুর্যের চেহারা সরাসরি দেখা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় আমাদের।

যাই হোক, এমুহুর্তে মেয়েকে সুর্য দেখানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে দেশের সবচেয়ে উচু আম্রেলাটাওয়ার এ নিয়ে যাওয়া। আমি অবশ্য ওটাকে সবসময় ছাতামিনার বলে থাকি। বাংলা নাম সবসময় আমার প্রিয়! সবচেয়ে উচু এই ছাতামিনারের নাম ’শলাকা’। দেশের সব বিত্তবানদের বাস এই টাওয়ারে। মাত্র ৪০টা বাড়ি নিয়ে এই শলাকা গঠিত।

যেখানে আমার সবচেয়ে ছোট ছাতামিনারের বাড়ির সংখ্যা ৫৩৪টি সেখানে চল্লিশটি বাড়ি নিয়ে এই শলাকা টাওয়ারের গঠন একটু বিলাসিতাই বটে। বিশাল বিশাল এই টাওয়ারের বাড়িগুলো। গড়ে এক একটার আয়তন ৫০,০০০ বর্গফুট করে! এই টাওয়ারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এই যে, বাড়ির মালিকগন যখন তখন তাদের অবস্থান বদলাতে পারেন। আজ যদি মাটির কাছাকাছি থাকে তো পরদিনই দেখা যায় বাড়ি নিয়ে চলে গেছে কয়েক হাজার ফুট উচুতে!

শলাকা বঙ্গোপসাগরথেকে প্রায় একশত কিলোমিটার দক্ষিনে। সাগরপারে দাড়ালে শলাকা নামের তাৎপর্য বোঝা যায়। মনে হয় বড় একটি শলাকা গেথে রাখা হয়েছে আকাশ থেকে পানির মধ্যে। আমার বড় ইচ্ছে ছিল এই টাওয়ারে একটা বাড়ি নেবার। কিন্তু টাকায় কুলায় নি। তবে শলাকা টাওয়ারে আমার এক বন্ধুর বাড়ি আছে, যেকিনা টুমারু গ্রহে গতিতত্ত্ববিদ হিসাবে কাজ করে। ভাবলাম মেয়েকে নিয়ে ওর আকাশবাড়িতেই যাব আজ সুর্য দেখতে।

যাই হোক শলাকায় যাওয়া মানেই সারা দিনের মামলা। অর্থ্যাৎ মেয়ে আমার প্লান মোতাবেক কোনকিছু হতে দেবে না।

আমি আর দেরি না করে আমার প্রাইভেট ড্রােন নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম মেয়েকে নিয়ে। কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌছে গেলাম শলাকাটাওয়ারের নিচে। আমি আমার সেলফোন দিয়ে বন্ধুর দেয়া প্রবেশের অনুমতি দিয়ে যোগাযাগ করলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই মাটিতে নেমে এলো আকাশ বাড়ি। আমরা টুপ করে বাপ বেটি ঢুকে পড়লাম আকাশ বাড়িতে!

কিছুক্ষনের মধ্যেই তীব্র গতিতে উপরের দিকে উঠতে শুরু করলো ’আকাশবাড়ি’। বারান্দায় এসে বাইরে তাকিয়ে আছি আমরা বাপ বেটি। ইতিহাস বইয়ের পড়া একটা বিষয় মনে পড়ে গেল। আজ থেকে হাজার বছর আগের মানুষগুলো লিফট তৈরী করেছিল উচু বাড়িগুলোতে যাতায়াত করতে। এখানেও প্রায় একই - তফাৎটা এখানে পুরো বাড়িটাই উঠে চলেছে উপরে! আরো হাজার বছর পওে মানুষ কি তৈরী করবে সে শুধু সৃষ্টিকর্তাই জানেন।

"বাবা দেখ। সুর্য। কি সুন্দর সুর্য!" মেয়ের কথায় হঠাত সংবিত ফিরে পেলাম!

হ্যা তাই। হঠাৎই মেঘের আড়াল থেকে বের হয়ে এসেছে আকাশবাড়ি। সুর্যের আলোয় ঝলমল করছে চারপাশ। বিশাল এক শুন্যতা বিরাজ করছে চারিদিকে!

"কি সুন্দর কি সুন্দর!"- আমার মেয়ে সুর্য দেখে হাততালি দিয়ে উঠল।

আমি সুর্যের দিকে তাকালাম। হ্যা, সত্যিই সুন্দর। অনেকদিন পর দেখছি বলেই আজ এত সুন্দর লাগছে। সবসময় দেখতে হলে হয়তো এই সৌন্দর্য চোখে পড়ত না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:০৬
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×