somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকায় একজন সম্ভাব্য কংগ্রেসম্যান বাংলাদশী বংশোদ্ভূত---আমরা কি খুশী হমু, না খুশী হমুনা??

০৫ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খবর: "যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান হয়ে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত হেনসেন ক্লার্ক"

প্রথমের কথা প্রথমে---আম্রিকান কংগ্রেসম্যান জিনিসটা কী?? খায়, না মাথায় দেয়?

সোজা হিসাব--আম্রিকার সংসদ সদস্য। ঐ দেশে সংসদ ২ কক্ষ বিশিষ্ট, সেইটার নিচের কক্ষের সদস্য।

বাংলাদেশী বংশদ্ভূত মানে কী? ---এনার বাবা ছিলেন বাংলাদেশী, মৌলভীবাজার থেকে আমেরিকা পাড়ি জমান, ছেলের ৮ বছর বয়সে মারা যান। মা আফ্রিকান আমেরিকান(কালো আমেরিকান), ছেলেকে বড় করেন, ছেলে স্কলারশিপ পেয়ে বড় জায়গায় পড়তে যায়, (কর্নেল ইউনিভার্সিটি), রাজনীতিতে আগ্রহ জন্মে, ল' স্কুল পাশ করে রাজনীতিতে।

এখন আসি আমার পোস্টের আসল কথায়---এই লোকটা নির্বাচিত হইলে কি আমাদের খুশী হওয়া উচিত, না, উচিত না?

মনে রাখতে হবে, লোকটার নামে কিন্তু কোন বাংলাদেশী পরিচয় নাই, খুব সম্ভব মায়ের পরিচয়ই আছে।

আমার উত্তর: বাংলাদেশী হিসাবে খুশী হওয়া উচিত।

কেনো?
বড় জায়গায় গেছে, আম্রিকার এলেবেলে হইছে, এইজন্যই খালি? নাহ, আরো কারণ আছে।

আম্রিকায় আইসা একট জিনিস বেশ চোখে পড়ে--এই দেশের মানুষজনের রাজনৈতিক সচেতনতা। সচেতনতা বলতে কিন্তু খালি "কোন একটা পার্টিরে সাপোর্ট করে"---শুধু এইটা না। বলা যায়, রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের বড় একটা "অংশগ্রহণ" আছে। কিভাবে? ধরেন গিয়া, আপনার বাসার পাশে একটা বড় রাস্তা বানানোর ডিসিশান নিলো, কিন্তু আপনে ভাবলেন, এত বড় রাস্তায় বড় বড় গাড়ি চললে গাড়ির শব্দে আপনার খামারের গরুগুলা দুধ দেয়া কমায়া দিবে। আপনে তখন করবেন কি, সোজা মেয়রের অফিসে গিয়া হাজির হইতে পারেন, ঐ অফিসে গিয়া আপনার সমস্যা তুইলা ধরতে পারেন, চাইকি একটা ছোট খাট গ্রুপ বানায়া ফেলেন, বানায়া মেয়র অফিসে যান, তারা আপনার সমস্যা শোনার জন্য হিয়ারিং এর টাইমও ফিক্স কইরা দিবে।

এইদেশে সবকিছু অনেক বিকেন্দ্রীকরণ এত বেশী, যে আপনের সমস্যার জন্য ওবামা পর্যন্ত দৌড়াইতে হয় না। মানুষজনও তাই শুধু গালাগালি না কইরা তার এরিয়ার পলিটিশিয়ানরে পাকড়াও করে। কাজ হয় অনেকসময়, অনেকসময় হয়না, বলাবাহুল্য। এইদেশে রাজনৈতিক নেতারাও মানুষের সাথে মেলামেশা করতে হয় আরো অনেক বেশী।

এই হেনসেন ক্লার্ক মিয়া ডেট্রয়েটের যে এলাকা থেকে আসছেন, আমি ঐ জায়গায় একবার বেড়াইতে গেছিলাম। এক দোকানে ঢুইকা যখন দেখলাম সবাই সিলেটি ভাষায় কথা বলতেছেন, টাস্কি খাইলাম। বললাম--এইখানি কি প্রচুর বাংলাদশী? উনি বললেন, সঠিক সংখ্যা জানিনা, তবে এক মৌলভীবাজার থেকেই হাজার পাঁচেক আছেন এখানে :)। বাইর হয়া দেখলাম, বাংলাদেশী চা-সিঙ্গারার দোকান, বাংলাদেশী শাড়ির দোকান, বাংলায় সাইনবোর্ড লেখা। আশে পাশের নেইবারহুডের প্রায় সবাই বাংলাদেশী, তাও জানলাম।

এই বাংলাদেশীদের অধিকাংশই দেশে টাকা পাঠান, "রেমিট্যান্স" নামক একটা যোগফলে তাদের কথা ছোট্ট করে লেখা থাকে।

এদের সবাই চিন্তায় থাকেন--কি করে দেশের বেকার শ্যালক বা ছোটভাইকে এখানে এনে একটা ব্যাবসায় ঢুকিয়ে দেয়া যায়।

এনারা সবাই দেশের জন্য চিন্তা করেন---কেউ কেউ ভাবেন বিশাল বড় আকারে, রাজনীতিবিদদের নিয়ে, দেশের ভবিষ্যত নিয়ে। আবার কেউ কেউ ভাবেন দেশে ফেলে আসা ছোট্ট এক টুকরা জমি জমা নিয়ে।

কিন্তু সবাই দেশ নিয়ে ভাবেন।

এদের অনেকেরই হয়তো আমেরিকান পাসপোর্ট হয়ে গেছে, তবে এনারা কিন্তু বাংলাদেশেরই অংশ---অস্বীকার করার কোন উপায়ই নাই।

এবং এই লোকগুলারও কিন্তু অনেক সমস্যা আছে, উপরের গল্পের খামার মালিকের মতই।

ঐখানে হয়ত ক্রাইম বেশী, তাই ব্যাবসা কম হয় একটু। রাস্তাঘাট হয়ত ভাঙা আছে বেশ কিছু জায়গায়, তাই লোকজন আসতে চায়না।

হেনসেন ক্লার্ক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। স্বভাবতই তার কাছে এদের অনেকেই অনেক বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। নেট ঘাঁটালেই পাইবেন, ঐখানকার বাংলাদেশী কম্যুনিটি অনেক লোকই তাকে পছন্দ করেন, কারণ,তাদের ভাষায় , তিনি "এক্সেসিবল" অর্থাৎ তাকে সহজেই পাওয়া যায়।

এই লোক কিন্তু বাংলাদেশে আসছে, ২০০৭ সালে। তার বাপের গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজারের শ্রীধারাতে গেছে, তার দাদা-চাচাদের কবরে গিয়ে শ্রদ্ধা প্রকাশ করে আসছে। পলিটিশিয়ানের মত যথারীতি ভাষণও দিয়া আসছে "আমার বাবা আমাকে যেসব মূল্যবোধ শিখাইছেন, তা তিনি শিখেছেন এই শ্রীধারা থেকেই"।

এখন আমাকে বলেন, আমার বাংলাদেশের হাজার দশেক লোকের জন্য যদি তিনি কোন সুবিধা নিয়া আসেন, তাদের দাবী-দাওয়া শোনেন, তাদের সমস্যা মিটাইতে উদ্যোগী হন, তাদের ব্যাবসা দুই টাকা বাড়াইতে সাহায্য করেন, তাইলে কি আমি খুশী হমু, না হমু না?

আমি কিন্তু হমু।
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×