somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গরুর গোশতের চাপ আর আমার একটা দুঃখ

০২ রা নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বাংলাদেশে থাকা একজন পেটুক বাঙ্গালী আর বৈদেশে থাকা একজন পেটুক বাঙ্গালীর মধ্যে তফাৎ কী, কন তো দেখি?







আমিই বইলা দেই। ধরেন, হঠাৎ কইরা গরুর চাপ খাওয়ার ইচ্ছা হইল ২ জনেরই। তাইলে দেশী বাঙ্গালী ভাববে এইরকম "আহারে কতদিন গরুর চাপ খাই না! আইজকাই যামু কাদেরের চাপ খাইতে, নাকি মুস্তাকিমে যামু, ঐটাও অনেকদিন যাইনা! শাহবাগ গিয়া মিরপুরের বাসটা ধরতে হৈব। আর ঐদিকে যাইতাছিই যখন, তাইলে বন্ধু হাসানের বাসায়ও ঘুইরা আসি।"

আর প্রবাসী বাঙ্গালী ভাবে "আহারে কতদিন গরুর চাপ খাই না! আইজকাই চাপের মাংস কিনুম ইন্ডোপাক মাংসের দোকান থিকা, নাকি ফুডলায়ন যামু মাংস কিনতে? আর ইন্টারনেটে থিকা রেসিপিটা আবার খুঁজতে হৈব। কি কি জানি লাগবো, দৈ, সরিষার তেল......আর ঐদিকে যাইছিই যখন তাইলে একটা চালের বস্তাও নিয়া আহি, চাইলও শেষের পথে"।

তো এই হইল গিয়া ২ টার পার্থক্য। আমি বৈদেশে থাকি, আমার চাপ খাওয়া তাই ২য় পথে।

চাপ বলতে ছোটোবেলায় যেটা জানতাম, সেইটা দেখলাম বড় হয়া একটু পাল্টাইছে। পুরান ঢাকায় ফুপুদের বাসায় চাপ খাওয়া শিখছি, সেইখানে দেখতাম তারা খাসীর সিনার স্পেশাল বড় টুকরা (২ টা পাঁজরের হাড় আর মেরুদন্ডের হাড্ডি সহ)রে চাপ বলতেন, আর সেইটা দিয়া বানানো ভুনা তরকারীরে বলা হইত "খাসীর চাপ"। সেইরকমই গরুর চাপ-ও ছিল।

পরে বড় হয়া ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলায় দেখলাম চাপ বলতে আরেকটা জিনিস চলে, সেইটার বিশেষত্ব হইল--মাংসের একটা বেশ বড় ছড়ানো কিন্তু পাতলা টুকরা, কিছুটা হাড্ডি সহ, এবং এইটা সিনা-র হইতে হবে এমন কোনো কথা নাই। খাইতে দুর্দান্ত।

তো আমার ঘরে ছিল বোনলেস কিছু মাংস, সেইটারেই ভাবলাম চাপ বানাই। প্রথমেই আস্ত মাংসটারে পাতলা পাতলা কইরা কাটলাম। ঘরে একটা মাংসর হাতুড়ি ছিল, সেইটা দিয়া হালকা বাইড়ায়া মাংস একটু নরম করলাম।

এইখানে আপনারে একটা টিপস দেই। মাংস কাটার সময় একটু হিসাব কইরা কাটলে মাংস অনেক বেশী নরম থাকে, বিশ্বাস করেন আর নাই করেন। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, মাংসের আঁশগুলা কিন্তু সব এক লাইনে সাজানো। আপনে যখন পাতলা স্লাইস কাটবেন, তখন এইসব আঁশের সাথে ৯০ ডিগ্রী কোণ কইরা কাটবেন, তাইলে সেই মাংসের স্লাইস খাইতে অনেক নরম হবে। ছবি দেখেন। বাম দিকেরটা রান্না করলে বেশী নরম হইব।



যাউক গিয়া, কাটা মাংসের স্লাইসে সাথে আচ্ছা কইরা পেঁয়াজ-আদা-রসুন বাটা, কিছু দৈ,একটু গরম মশলা গুঁড়া বা আস্ত, লবণ আর বেশ খানিকটা সরিষার তেল দিয়া ভাল কইরা "হাত দিয়া" মিশায়া দলাই-মলাই দেন।


এই রান্নার তুরুপের তাস হৈল সরিষার তেল, আর ভাল কৈরা হাত দিয়া দলাই-মলাই কইরা মংস মাখানোতে। যারা যারা নতুন সংসারী/নতুন রান্না শিখছেন, যারা দলাই মলাইয়ের কথা শুইনা ভাবতেছেন "এহ্ মাহ্ ছিহ্ , হাত ময়লাহ্ হয়ে যাবেহ্" তারা দূরে থাকেন।

এইমাখা মাংস ফেলে রাখেন কমসেকম ২ ঘন্টা, বা ফ্রীজে সারারাত। এরপর বাইর কইরা চুলায় বেশ কইরা সরিষার তেল ঢাইলা গরম করেন মিডিয়াম আঁচে। মনে রাখবেন, এইটা ডুবা তেলে হবেনা, আবার খুব কম তেলেও হবেনা। মোটামুটি ফ্রাইং প্যানের নিচের দিকটা জাস্ট কভার হয়, এইরকম তেল দেন।


তেল গরম হইলে মাংসগুলা মশলা থিকা তুইলা তেলে দেন। খবরদার মাংস এক লেয়ারেই দিবেন, একটার উপর আরেকটা দিবেননা। এপিঠ ওপিঠ হালকা লালচে কইরা ভাজেন। ভাজা হয়া গেলে এইটার মধ্যে ম্যারিনেডের বাকি মশলা ঢাইলা দেন, আঁচ কম কইরা ঢাকনা দেন। ২০ মিনিটেই রেডি।

এইবার "ইয়া আলী!" বা "জয় মা কালী!" বইলা ঝাঁপায়া পড়েন।




আমার দুঃখ:

এইবার আসি আমার দুঃখের কথায়। আমার এই পুরা রান্নাটা করা হৈছে ওপার বাংলা তথা ভারতীয়-বাঙালি একটা ওয়েবসাইট থিকা নেওয়া একটা রেসিপি দিয়া। এইখান থেকে নেওয়া ।একেবারে খাঁটি বাংলাদেশী খাওন্দাওনের রেসিপি বা আলোচনা আর ভিডিও ইন্টারনেট জগতে দুঃখজনকভাবে কম। আর যা আছে, সেইগুলাও খুবই পুরান স্টাইলে তৈরী করা । আজকালকার রান্নার রেসিপি যে কত আধুনিক কৈরা, কত বিশ্লেষণ কইরা লেখা হয়---সেই টাইপের বাংলা রেসপি নেটে খুব কম।

আমি যদি আজকে "বিরিয়ানী" লিইখা সার্চ দেই, তাইলে হায়দাব্রাদী বিরিয়ানীর গাদাখানেক হাই কোয়ালিটি রেসিপি আর রান্নার ভিডিও পাই সহজেই, কিন্তু আমাদের দেশের খাঁটি, পুরান-ঢাকাই কাচ্চি বিরিয়ানীর সেইরকম বিশ্লেষণী রেসিপি কিন্তু নাই, কিন্তু স্বাদে আর গন্ধে কি আমাদের কাচ্চি কোনো দিক দিয়া কম?

তাই আমি স্বপ্ন দেখি, আজকে যে পোলাপান গুলা সামুতে বাংলা লিখতেছে, তাদের মধ্যে কিছু খাদ্যরসিক হয়ত দেশী চাপ/কাচ্চি/গ্লাসি নিয়া গবেষণা করবে, আর তাদের সেই গবেষণার রেজাল্ট সামুতে বা নেটে তুইলা দিবে। আর সার্চ দিলেই পাওয়া যাইব পুরান ঢাকার কোন কোন জায়গায় মাংসের চাপ দুর্দান্ত, আর হাজীর বিরিয়ানী আর হানিফের বিরিয়ানির তফাতটা ঠিক কোন জায়গায়। এবং সেই জ্ঞান খালি কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবোনা, বরং সামুর কল্যাণে জানবে বিশ্বের প্রতিটি বাঙ্গালী, বিশ্বের প্রতিটি খাদ্যরসিক।


(ব্লগার শিশিরসিন্ধুর ফিরে আসা পোস্ট উপলক্ষ্যে আমার এই পোস্ট :#) )
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৫৫
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×