তোতান পাখু,
যখন তোকে লিখছি তখন বাহিরে তিব্র রোদের নিঃস্তব্ধ দুপুর। চারি দিকে কোন শব্দ নেই, শুধু সিলিং ফ্যানের বাতাসের ক্রমাগত শো শো আওয়াজ আর বাথরুমের বলতিতে জল পতনের টুপটাপ শব্দ। এমন দুপুরে বুকের ভেতরটা ভীষণ শূন্য লাগে।
তোকে লিখব বলে প্রতিদিন কত কথাই যে গুছিয়ে রাখি, অথচ কথা গুলোকে আর তোর কাছে পৌঁছে দেয়া হয় না শেষ পর্যন্ত।
জানিস আমার ভীষণ আদরের বেড়ালটা হঠাত্ করেই একদিন হারিয়ে গেল। আমি দিনের পর দিন তার ফিরে আসার অপেক্ষায় থেকে থেকে একদিন বুঝে গেলাম ও আর ফিরবেনা। তিব্র ভালোবাসা গুলো বুঝি এভাবেই একা করে দিয়ে একদিন হারিয়ে যায় তাই নারে। এই যেমন তুই ও একদিন এমন করেই হারিয়ে গিয়েছিলি।
এবার শীতে সমুদ্রে গিয়েছিলাম কদিনের জন্যে। সমুদ্রের রাশি রাশি লোনা জলের পাশে বসে আমার সমস্ত লোনা জলগুলো সমুদ্রকে দিয়ে এসেছি। জানিস তোতান পাখু এরপর থেকে আমার চোখে আর লোনাজল নেইরে।
আমি এখন খুব ভালো আছি। ইচ্ছে মত হাসি। মন চাইলেই বেরিয়ে পরি উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যে। ক্লান্ত হলে ফিরে আসি নীড়ে।
তোকে জানান হয়নি এবার টবে লাউ গাছ বুনেছি। গাছ গুলো ভিষণ স্বাস্হ্যবান বাচ্চাদের মত হেলে দুলে বেড়ে উঠছে। এখনো মাচা দেইনি তবে দু একদিনের মধ্যেই হয়ত গাছ গুলোর মাচা লাগবে। এবার আমার গোলাপ গাছে অনেকগুলো গোলাপ ফুটেছিল। ভাবছি সামনের বরষায় একটা মাধবীলতা বুনে দেব।
আজ সকালে ঘুম ভাঙতেই ইচ্ছে করল প্রতিদিনের রুটিন বাঁধা জীবন থেকে বেরিয়ে সকালটাকে অন্যভাবে যাপন করি। তাই পায়ে হেঁটে হেঁটে চলে গিয়েছিলাম শহর থেকে অনেক দূরের একটা গ্রামে। ওখান এক কুমোড় বাড়ীতে বসে অনেকটা সময় নিয়ে ওদের মাটির বাসন কোসন বানান দেখলাম। চায়ের তেষ্টা পাওয়াতে গ্রামের এক টং দোকানের বেঞ্চে বসে খোলা আকাশের নিচে কড়া মিস্টি দেয়া চা খেলাম। ভাল চা মানেই বেশী চিনি দেয়া চা। ফিরে আসার সময় রাস্তার দু ধারে অনাদরে অবহেলায় বেড়ে ওঠা বুনো ফুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে LOUIS ARMSTRON এর what a wonderful world এর গানটা মনে পড়ে গেল।
আসলে এই পৃথিবীটা অনেক সুন্দর! সুন্দর এই বেঁচে থাকা।
এই যে তোর আমাকে ছেড়ে হারিয়ে যাওয়া, এই যে তোকে ভেবে বিষণ্নতায় ভোগা সব কিছুই সুন্দর। ভাল থাকিস।
ইতি তোর অন্তু