ফিচারটি আজকের (25 জানুয়ারী 2007) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লিখেছেন আশ্রাফ আবির নামক জনৈক সংস্কৃতি কর্মী। ফিচারটি নীচে হুবহু উপস্থাপন করলাম এবং লিংক দিলাম। তাঁর লেখা ফিচারটির 4নং বক্তব্যের সাথে আমি দ্্বিমত পোষন করলেও ভদ্রলোক মোটামুটি ভালোই বলেছেন। বিশেষ করে 3নং প্যারার বক্তব্যটি আমার বেশী ভালো লেগেছে। তাহলে আপনারা পড়ুন এবং কমেন্ট করুন।
--------------------------------------------------------
[গাঢ়]রা জ নী তি: আগে দেশের উন্নতি তারপর ক্ষমতা [/গাঢ়]
1.
কোন দল সাপোর্ট করো? এ জাতীয় প্রশ্ন করলে আজকালকার ছেলেমেয়েরা উত্তর দেয়-কোনো দল সাপোর্ট করি না। সত্যিই, আজকাল আধুনিক সচেতন ছেলেমেয়েরা রাজনীতি করে না। করবেই বা কেন? রাজনীতি করলে লগি-বৈঠা অথবা কাস্তে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। 'নৌকা নৌকা' অথবা 'ধানের শীষ ধানের শীষ' চিৎকার করে মুখের ফেণা তুলে ফেলতে হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী মানুষদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে হয়। সহিংস, আজগুবি কাজকারবার করতে হয়। তাহলে কেন আধুনিক সচেতন তরুণ-তরুণীরা রাজনীতি করবে? তারা এখন আর বিশ্বাস করে না বড় দল দলকে সমর্থন করা 'রাজনীতি'।করবেইবা কেন? তারা তো 'প্রযুক্তি' যুগের তরুণ! তাদের কাজকারবার সব কমপিউটার নিয়ে। ইন্টারনেট এখন তাদের ঘরে ঘরে। তারা চিন্তা করে টেরাবাইট, গিগাবাইট সিসটেমে। নৌকা, ধানের শীষ, চার দল, চৌদ্দ দল নিয়ে তাদের চিন্তা করার সময় নেই। যত তাড়াতাড়ি নিজেকে সাফল্যের চূড়ায় দেখা যাবে, সেই চিন্তায় তারা অস্থির থাকে। বড় নেতাদের ছবি তারা আজকাল বিভিন্ন জাদুঘরেই দেখতে পছন্দ করে।
2.
গত পাঁচ বছরে যাদের বোঝার মতো বয়স হয়েছে, যারা নতুন ভোটার হয়েছে-তারা এরই মধ্যে বেশ কিছু শব্দের সঙ্গে দারুণভাবে পরিচিত হয়েছে। চারদল, চৌদ্দ দল, নির্বাচন কমিশন, ভুয়া ভোটার, ভোটার তালিকা, ব্যালট, অবরোধ, সংবিধান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, উপদেষ্টা ইত্যাদি ইত্যাদি। এই শব্দগুলো আমাদের প্রতিদিন এতবার শুনতে অথবা পড়তে হয় যে শব্দগুলো মুখস্থ না হয়ে উপায় নেই। সবই সম্ভব হয়েছে কিছু তরুণ-তরুণীর জন্যই। এরা বিভিন্ন বেসরকারি ও সরকারি টিভি চ্যানেলের জন্য নিরলসভাবে সংবাদ প্রচারের কাজ করে অথবা খবরের কাগজগুলোতে ক্ষুরধার কলম চালায়। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সাংবাদিক তরুণ-তরুণী পরিচিত হয়ে উঠেছেন। টাটকা খবর দেওয়ার জন্য তারা বঙ্গভবনের সামনে দিন নেই রাত নেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকেন অথবা বিভিন্ন সহিংসতাপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রাজপথ থেকে সংগ্রহ করেন, প্রচার করেন। আজকাল বাসায় বলতে শোনা যায়, ওই যে লম্বা করে ভারি গলার ছেলেটা-ওর চ্যানেলের খবরটা একটু দেখি অথবা গতকালকের মারামারির সময় যে মেয়েটা লাইভ কাভারেজ করেছিল, ওর চ্যানেলটা দেখি। এই যে এতগুলো ছেলেমেয়ে হঠাৎ করে পরিচিত হয়ে উঠল রাজনীতি, নির্বাচনকে ঘিরে, তারা কি আদৌ কোনো দিন সরাসরি নির্বাচন করবে? এরা সবাই বয়সে তরুণ। রাজনৈতিক অঙ্গন, রাজনীতিবিদদের এরা প্রতিদিন খুব কাছ থেকে দেখে। তাদের প্রশ্নবাণে রাজনীতিবিদেরাও গলদঘর্ম হন। রাজনীতিকে এত কাছে রেখেও তাদের চোখে বর্তমান রাজনীতির লিশুসা দেখা যায় না। তারা কিন্তু নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ার কাজটিই করে যাচ্ছেন প্রতিদিন। এখন 'রাজনীতি' একটি ইসু্য, তারা সেটাকেই নিজের মেধা দিয়ে, নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে, নিজের ক্যারিয়ারকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
3.
একটি মোবাইল ফোন কোমপানি সমপ্রতি তাদের পুরোনো লোগো পরিবর্তন করেছে। একদিন ঘুম থেকে জেগে দেশবাসী ওই কোমপানির পুরনো লোগোর চিহপ্ত কোথাও দেখতে পেল না। পুরোপুরি অদৃশ্য! একটা জং-ধরা টিনশপ সাইনবোর্ডেও পুরোনো লোগো নেই। একটা দুটো নয়, সারা দেশে লক্ষাধিক সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, পোসটার বদলে গেল নতুন লোগো দিয়ে রাতারাতি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি এই কাণ্ড ঘটাতে পারে, সেই দেশের সরকারকে এক শ রকম চিন্তা করতে হয় একটা নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করতে! ভোটার তালিকা নিয়ে কী কাণ্ডগুলোই না ঘটল কয় দিন ধরে, আজ অবরোধ তো কাল মহাসমাবেশ। শেষ পর্যন্ত রাস্তায় সেনাবাহিনীই নামাতে হলো। অনেক সময় অনেক রকম সরকারি ছুটিই তো থাকে। নতুন ভোটার তালিকা করার জন্যও কিন্তু সরকার বর্তমান প্রযুক্তিতে বুদ্ধিদীপ্ত তরুণদের কাজে লাগাতে পারে। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবঃ 'সারা দেশে একদিন ছুটি থাকবে। পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় একটা-দুটো করে বুথ থাকবে। সেখানে কমপিউটার, ডিজিটাল ক্যামেরা থাকবে। সেই ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা হবে, কমপিউটারের ডেটাবেইজে তথ্য পরিচয় এন্ট্রি করা হবে। প্রিন্ট আউট দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে আইডি কার্ড বানিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিজনের জন্য পুরো প্রক্রিয়াটার জন্য পাঁচ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। মানুষ মহাউৎসাহে নিজেদের তালিকা নিজেরাই করবে। আর সরকার করবে তদারকি-কাজটি ঠিকমতো হচ্ছে কি-না।' আশা করি নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
4.
দুর্নীতি, জালিয়াতি-এই শব্দগুলো সচেতন যেকোনো তরুণ-তরুণী এখন সত্যিকার অর্থেই ঘৃণা করে। বাবা, চাচার বয়সী কেউ যদি ঘুষ চায়, তাহলে আমাদের মাথা সত্যিই নিচু হয়ে যায়। বর্তমান শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা কি তাহলে রাজনীতিতে আসবে না? অবশ্যই আসবে। তারা নিজস্ব একটা চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে খুব শিগগির। নতুন প্রজন্ন শুধু নিজস্ব মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে সত্যিই অন্য রকম বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে। তারা নিজেরাই এখন প্রস্তুত হচ্ছে সংঘাতময় রাজনীতির বাইরে কী করে একটা সুন্দর দেশ গড়া যায়! সবাই নিজস্ব এক একটা পরিকল্পনা তৈরি করছে। আগে দেশের উন্নতি তারপর ক্ষমতা। সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতিকে একদম শীর্ষে পেঁৗছে দেওয়া যায়। তারা নিজেদের চিন্তা ও আদর্শকে বিশ্বাস করে। আগামী 20 বছরের মধ্যেই এর প্রকাশ ঘটবে, নিশ্চিত করে বলা যায়। আজকের তরুণেরা আর রাজনীতিবিদদের কোনো কথাই বিশ্বাস করে না। যে দেশ শান্তিতে 'নোবেল' বিজয় করতে পারে, সেই দেশের তরুণেরা কেন অশান্তিকে প্রশ্রয় দেবে? আজকের তরুণদের পরিকল্পনাগুলো অনেক গোছানো। চিন্তাভাবনা আধুনিক। আমরা স্বপ্ন দেখি একটা আধুনিক দেশের- যে দেশে মঙ্গা, দুর্নীতি, হরতাল, অবরোধ, সহিংসতা, বেকার বলে কোনো শব্দ থাকবে না। এই বাংলাদেশ গড়তে পারে, স্বপ্ন দেখতে পারে আজকের তরুণরাই। সাধারণ মানুষেরাও আশায় বুক বেঁধে আছে, তরুণেরা এগিয়ে আসছে, তরুণেরা এগিয়ে আসবে।
[গাঢ়]আশ্রাফ আবির ([email protected])[/গাঢ়]
[link|http://www.prothom-alo.org/mcat.news.details.php?nid=MjI1MzE=&mid=Mw==|Rbve Avk

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



