ইসরাইলের ওপর আমেরিকার ১৬টি গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত স্টাডি কমিশনের এক প্রতিবেদনে ইসরাইলের টিকে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। সম্ভবত সে কারণেই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইরানের আণবিক শক্তি অর্জনের বিষয়ে আতঙ্কিত। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণ প্রদানের সময় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বারবার ইরানের পারমাণবিক শক্তি অর্জনের কর্মকা-ের ওপর বিধি-নিষেধের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়ার কথা বলেছেন। নেতানিয়াহু বলেছেন এক বছরের মধ্যে ইরান পারমাণবিক বোমার অধিকারী হবে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বারবার এ কথাও বলেছেন যে প্রয়োজনে তারা ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করার জন্য ইরান আক্রমণ করবে। অথচ ইসরাইলের নিজেরই পারমাণবিক বোমা রয়েছে। ইসরাইল পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন পাচ্ছে না। আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থন প্রদান করলে সম্ভবত নেতানিহু এতদিনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের উদ্যোগ নিতেন। সাদ্দাম হোসেনও ইরাকে পারমাণবিক স্থাপনা তৈরি করে বোমা বানানোর চেষ্টা করেছিলেন, ইসরাইল আকস্মিক আক্রমণ করে তা গুঁড়িয়েছিল। ইসরাইল ইরান থেকে ১২শ' কিলোমিটার দূরে_ এ দূরত্বই ইসরাইলের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। না হয় ইসরাইল কাকেও তোয়াক্কা করত না_ এতদিনে ইরান আক্রমণ করে ছাড়ত।
ইরান আক্রমণ করতে হলে ইসরাইলকে আকাশ পথে গিয়ে আক্রমণ করতে হবে_ স্থলপথে ইরান আক্রমণের কোনো উপায় নেই। দীর্ঘ ১২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে যেতে আসতে বিমানের রিফুয়েলিংয়ের প্রয়োজন হবে_ মাঝপথে সবই বৈরী রাষ্ট্র রিফুয়েলিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের মাখামাখি কম_ আমেরিকা আক্রমণের পক্ষে থাকলে সৌদিকে রিফুয়েলিং ফ্যাসিলিটি প্রদানে সম্মত করাতে হয়ত উদ্যোগ নেয়া যেত। জিম্মি উদ্ধার প্রচেষ্টায় আমেরিকা যে উদ্যোগ নিয়েছিল তার আয়োজনের সবকিছুতে সহায়তা দিয়েছিল মিশর ও সৌদি আরব। তখন মুসলিম বিশ্ব দ্বিধা-বিভক্ত ছিল। আমেরিকার ৫২ জন জিম্মির জন্যও অনেক মুসলিম দেশের সহানুভূতি ছিল। কিন্তু এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আরব বসন্ত সব উলট-পালট করে দিয়েছে। ইসলামিক পুনর্জাগণের একটা আবহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে বিরাজ করছে এবং কোনো কোনো দেশে ইসলামিক শক্তি নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসেছে। সুতরাং ইরান আক্রমণে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ আমেরিকার কথায় সম্মত হবে বলে মনে হয় না। ইরাকে শিয়াপন্থীরা সরকার গঠন করেছে। ইরাক পুনর্গঠনে আমেরিকার চেয়েও বেশি অর্থ প্রদান করেছে ইরান। মালেকীর সঙ্গে ইরানের মধুর সম্পর্ক। সর্বোপরি ইরাকে আল-কায়দার তৎপরতা খুবই বেশি। আত্মহননে তাদের কোনো দ্বিধা নেই। তুরস্কের সঙ্গে আমেরিকাসহ পশ্চিমাদের বন্ধুত্ব খুবই মজবুত। এরদোগান তিনবার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী হলেন। তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ সামরিক বাহিনীর কোটারি ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন। তিনি সবই করেছেন ইসলামের নামে। তার দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি হচ্ছে ইসলামপন্থী দল। এরদোগান বলেছেন ইসরাইল ইরানের আণবিক স্থাপনা আক্রমণ করলে মুসলিম বিশ্বে মহাপ্রলয় ঘটে যাবে। এরদোগান এরই মাঝে তেল আবিব থেকে তুরস্কের কূটনৈতিক মিশন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। অনেকে মনে করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ হলে হয়তো বা আমেরিকা ইসরাইলকে ইরানের আণবিক স্থাপনা আক্রমণের সহায়তা প্রদান করবেন। প্রশ্ন হচ্ছে কে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হচ্ছেন? ওবামা না মিট রমনি। ওবামা মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েছেন। সম্ভবত রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য কনভার্টেট হয়ে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছেন। ওবামার বাবা আমেরিকায় এসে আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
ওবামার আমেরিকান হওয়ার আয়ু মাত্র এক পোস্তা, রিপাবলিকান পার্টির বুশের শাসনে আমেরিকানরা এত বিরক্ত হয়েছিল যে বারাক হোসেন ওবামা নামক এক নাও খ্রিস্টানকে বিপুল ভোটে জিতিয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট করতে আমেরিকানরা কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেননি। বুশের সময়ে আমেরিকা দুই দুইটা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। কোনো যুদ্ধেই আমেরিকার কোনো ফায়দা হয়নি। বরঞ্চ ১২ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণের বোঝা বর্তমানে তার মাথার ওপর ঝুলছে। বহু বড় বড় ব্যাংক আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে গেছে। বেকারত্বের হার বেড়েছে অসহনীয়ভাবে। করের কষাঘাতে আমেরিকানবাসী জর্জরিত। এসবই বুশের কুশাসনের ফল। আমেরিকানদের স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে তবে ওবামাই পুনঃরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। কারণ আমেরিকার অর্থনীতি আর কোনো যুদ্ধেও বোঝা বইবার ক্ষমতা নেই। রমনির কথাবার্তায় বুশের সুর ধ্বনিত হয়। বড় বড় কথা বলার দিন যে শেষ হয়ে গেছে সে উপলব্ধি এখনো রিপাবলিকানদের মাঝে অনুপস্থিত। সৌদি আরব, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া আর চীনের কথা থাক সিঙ্গাপুরের মতো রাষ্ট্রের কাছেও আমেরিকা ঋণের জন্য হাত পেতেছে। ১৯৩০ সালেও একবার আমেরিকা মহা-মন্দার কবলে পড়েছিল। তাও ছিল রিপাবলিকানদের আর্ত-উৎসাহী পদক্ষেপের কারণে। কিন্তু ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট বহু পরিশ্রম করে আমেরিকাকে তখন আর্থিক মন্দা থেকে উদ্ধার করেছিলেন। তিনি যখন দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেছিলেন তখন তার আবেদনগুলো অর্থনীতিকে আরো বেগবান করার জন্য "আমাকে পুনরায় ভোট দিন।" এবারো মনে হয় আমেরিকানরা ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী বারাক হোসেন ওবামাকেই পুনঃনির্বাচিত করবেন। ওবামা যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলে তার গত চার বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সম্ভবত সে সিদ্ধান্ত ইসরাইলকে ইরান আক্রমণের অনুপ্রেরণা জোগাবে না। বারাক ওবামা যখন গতবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন সর্বপ্রথম কায়রো এসে মুসলিম নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন এবং ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে খোলামেলা তার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল রাষ্ট্র যেসব এলাকা মিশর, জর্দান ও সিরিয়া থেকে দখল করে নিয়েছিল তা ফিলিস্তিনিদের বসতির জন্য ছেড়ে দেবে। কিন্তু ইসরাইলের একগুঁয়েমির কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। কেম্প ডেভিড চুক্তির সময় সিনাই মিসরকে প্রত্যর্পণ করা হলেও গাজা ফেরত দেয়া হয়নি। কথা ছিল গাজা এলাকা ফিলিস্তিনিদের বসতির জন্য ছেড়ে দেয়া হবে। ইহুদিরা জাতিগতভাবে রক্ষণশীল। ছাড় দেয়ার অভ্যাস তাদের নেই। ইহুদিদের ধর্ম কেউ গ্রহণ করে ইহুদি হতে পারে না। জন্মসূত্রে ইহুদি হতে হয়। রক্ষণশীলতার কি ভয়ানক বেড়াজাল। ইরানের হাতে ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে তা ১৬ শত কিলোমিটার দূরে গিয়ে আঘাত হানতে পারে। আইআইএসএসের অস্ত্রবিস্তাররোধ ও নিরস্ত্রীকরণ কর্মসূচির পরিচালক মার্ক ফিটজপ্যাট্রিক বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন সম্ভাব্য ইসরাইলি আক্রমণের মুখে ইরানের প্রতিউত্তরের ক্ষমতা হবে কিছুটা দুর্বল। তবে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের হামাসকে ইরান ব্যবহার করতে পারলে ইরানের দুর্বলতা উত্তরণ করা সহজ হবে। ইরান দীর্ঘদিন ধরে লেবাননের শিয়াপন্থী হিজবুল্লাহকে গড়ে তুলেছে। তার হাতে বর্তমান ১০ হাজারের বেশি রকেট লাঞ্চার রয়েছে। ১০টি স্কাড-ডি ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
ইসরাইল যখন ২০০৬ সালে লেবানন আক্রমণ করে তখন হিজবুল্লার ইসরাইলী সৈন্যকে এক ইঞ্চি লেবাননে প্রবেশ করতে দেয়নি বরঞ্চ হাজার হাজার রকেট লাঞ্চারের আঘাতে ইসরাইলকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। ইসরাইলি পার্লামেন্ট হতভম্ব হয়ে শেষ পর্যন্ত হিজবুল্লাহর হাতে তার সেনাবাহিনীর লাঞ্ছনার কারণ নির্ণয়ের জন্য এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে ইনকোয়ারী কমিশন গঠন করেছিল। চিরদিন কেউ অপ্রতিদ্বন্দ্বী থাকে না। অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিটি যাদের ওপর অত্যাচার করে সেই অত্যাচারীদের থেকেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির উত্থান হয়। হামাসও ইরান সমর্থক। তারাও ইসরাইল ইরান আক্রমণ করলে বসে থাকবে না। তাদের শীর্ষনেতারা এ ব্যাপারে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। হামাসের মুখপাত্র ফোজি বারহুম বলেছেন ইসরাইলীরা যে কোনো মুসলিম দেশ আক্রমণ করলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবেলা করতে হবে। হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নছরুল্লাহ বলেছেন ইসরাইল যদি ইরান আক্রমণ করে তার দায় আমেরিকাকে বহন করতে হবে। আরব সাগরে তার নৌবাহিনীর উপস্থিতি সহ্য করা হবে না। ইসরাইল ইরান আক্রমণ করলে তাকে তিন ফ্রন্টে যুদ্ধ মোকাবেলা করতে হবে। ইরান, হিজবুল্লাহ ও হামাস একাকার হয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। হামাসকেও ইরান স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে। ইরান, হিজবুল্লাহ এবং হামাস এই তিন শক্তিই মধ্যপ্রাচ্যের ভূমি থেকে ইসরাইলের অস্তিত্ব মিটিয়ে দিতে একমত ও ঐক্যবদ্ধ। ইরানের প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে একথা বলে বেড়ান। রাষ্ট্রপুঞ্জের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে বলতেও দ্বিধা করেন না। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর আমেরিকার সঙ্গে ইরানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পূর্বে ইরানের সমরাস্ত্র সরবরাহ করতো আমেরিকা। কিন্তু সম্পর্কহীনতার কারণে ইরান তার সমরাস্ত্রের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের অভাবে পড়ে যায় এবং বাধ্য হয়ে সে ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ তৈরিতে মনযোগ দেয়। পরবর্তী সময়ে ইরাকের সঙ্গে দীর্ঘ ৮ বছরের যুদ্ধে তার কারিগরেরা পরিপূর্ণ সমরাস্ত্র তৈরি করতেই সক্ষম হয়। আমেরিকা ও ইসরাইলের গোয়েন্দা ড্রোন বিমান ভূপাতিত করেছিল ইরান। পরবর্তী সময়ে তারা নিজেরাই অনুরূপ ড্রোন বিমান তৈরি করে ফেলে। ইরান ইরাকের সঙ্গে দীর্ঘ ৮ বছর যুদ্ধ করেছে সত্য কিন্তু কখনও সমরাস্ত্রের অভাবে পড়েনি। ইরাককে সৌদি আরব, আমেরিকা, কুয়েত, কাতার, আরব আমিরাত সবাই অর্থ ও সমরাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে কিন্তু ইরানের সুচাগ্র মেদিনী ইরাক দখল করতে পারেনি। আমেরিকার ১৬টি গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত স্টাডি কমিশনের তৈরি করা প্রিপেয়ারিং ফর এ পোস্ট ইসরাইল মিডল ইস্ট নামক প্রতিবেদনে 'ইরানের উত্থান' এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সম্ভবত সমরাস্ত্রের দিকে ইরান যে যথেষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে আমেরিকার সে ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই। ইরানের এরিয়া হচ্ছে সাড়ে ষোল লাখ বর্গকিলোমিটার, ইরান বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাসের মজুদ রয়েছে ইরানে, তার সংস্কৃতি খুবই প্রাচীন তার সাহিত্য বিশ্বের কাছে সমাদৃত, আধুনিক গণতন্ত্রের চর্চা রয়েছে_ তথ্যপ্রযুক্তির সমৃদ্ধি খুবই ঈর্ষণীয়। সাম্প্রতিক সময়ে মিসরের সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাসায়নিক ও ব্যালিস্টিক অস্ত্রশস্ত্র ও এক্সপার্ট বিনিময়ের চুক্তি হয়েছে। আমেরিকা সাহায্য না করলে ইসরাইলের পক্ষে ইরান আক্রমণ কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে পারস্য উপসাগরে মার্কিন নৌবাহিনী ইসরাইলি নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়া শুরু করেছিল। ইরান আক্রমণের বিষয়ে উভয় দেশের মতপার্থক্যের কারণে পেন্টাগন মহড়ার পরিধিকে খুবই ক্ষুদ্র আকৃতির করে ফেলেছে। মিসরের নির্বাচনে ইকওয়ানুল মুসলিমীন ক্ষমতাসীন হয়েছে। মুরসি প্রেসিডেন্ট হয়ে সামরিক বাহিনী থেকে মার্কিনপন্থী জেনারেলদের অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। মার্কিনিরা ইসরাইলের ব্যাপারে হোসনি মোবারককে যেভাবে ব্যবহার করতে পেরেছিল মুরসি থেকে সে সাহায্য সহানুভূতি প্রত্যাশা করে না। গাজা এলাকায় দশ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করে। গাজা হচ্ছে হামাসের নিয়ন্ত্রণে। হোসনি মোবারক এতদিন গাজা মিশরীয় সৈন্য দিয়ে অবরোধ করে রেখেছিল কিন্তু মুরসি সে অবরোধ অব্যাহত রাখবে বলে মনে হয় না। এরই মাঝে হামাস নেতৃবৃন্দ কয়েক দফা মুরসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। মাহামুদ আব্বাস ফাতাহ গ্রুপের নেতা তার সমর্থক ফিলিস্তিনিদের বসবাস জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে।
২০০৬ সালে ফিলিস্তিন পার্লামেন্টের যে নির্বাচন হয়েছে তাতে হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়েছে। পশ্চিম তীরেও হামাসের অবস্থান ধীরে ধীরে মজবুত হচ্ছে। পশ্চিমা শক্তি উভয় গ্রুপের মাঝে একটা বিরোধ লাগিয়ে রাখার অব্যাহত চেষ্টা চালিয়েছে এবং মাহামুদ আব্বাসের পেছনে প্রচুর অর্থ ঢেলেছে। মুরসির দল ইকওয়ানুল মুসলিমিন হামাসের সমর্থক। সম্ভবত সবদিক বিবেচনা করে মুরসি উভয় গ্রুপের বিরোধ মিটাবার চেষ্টা করবেন। গাজায় হামাস মিসরের শীতল সমর্থন পেলেও ইসরাইলের জন্য বিপদ আছে। ইসরাইলের জ্বালানির ৭০% গ্যাস সরবরাহ করে মিসর। গ্যাস পাইপ লাইনগুলো সিনাই থেকে গাজার ওপর দিয়ে তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে গেছে। সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলা যায় ইসরাইলের ইরান আক্রমণের কোনো অনুকূল পরিস্থিতি নেই। আমেরিকার দুজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত শতাব্দিতে খুবই খ্যাতিমান ছিলেন। ডালাস আর কিসিঞ্জার। তাদের সময়ে তাদের অনুসৃত নীতিমালাকে ডালাস উড়পঃৎরহ কিসিঞ্জারস উড়পঃৎরহ বলা হতো। ডালাস বেঁচে নেই। কিসিঞ্জার এখনো বেঁচে আছেন। কিসিঞ্জার বলেছেন, 'এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, আগামী ১০ বছর পর ইসরাইল নামে আর কিছু থাকবে না।' এ সম্পর্কে আমেরিকার রাজনৈতিক ভাষ্যকার কেভিন ব্যারেট তার এক প্রবন্ধে ১৬টি গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত স্টাডি কমিশনের তৈরি করা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে কিসিঞ্জারের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। ব্যারেট লিখেছেন কিসিঞ্জার সমাধানের কোনো উপায়ের কথা উল্লেখ না করে শুধু বলেছেন আগামী ২০২২ সালের পর ইসরাইল আর টিকে থাকবে না।
'প্রিপেথারিং ফর এ পোস্ট ইসরাইল মিডল ইস্ট' নামের প্রতিবেতনটি ১৬টি আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে কাজ করে চলতি বছরের প্রথমদিকে প্রণয়ন করেছেন। ব্যারেট তার নিবন্ধে বলেছেন মধ্যপ্রাচ্য ইসলামী জাগরণ, ফিলিস্তিনিদের চূড়ান্ত আত্মত্যাগের মনোবৃত্তি ইরানের উত্থান সবই ইসরাইলের অস্তিত্বের প্রতিকূলে ফলে ভবিষ্যতের দিনগুলোতে ইসরাইল টিকে থাকা খুবই কঠিন হবে। কিসিঞ্জারের বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে ব্যারেট বলেছেন কিসিঞ্জারের মন্তব্য সোজাসাপ্টা ও নিষ্ঠুর। 'তিনি বলছেন না যে, ইসরাইল বিপদে আছে তবে এটা বলছেন যে তাকে রক্ষা করা সম্ভব হতো আমেরিকা যদি আরো কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতো এবং আমেরিকার সৈন্যবাহিনী দিয়ে যদি তার শত্রুদের গুঁড়িয়ে দিতো।' ব্যারেট গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন প্রতিবেদনে নাকি বলা হয়েছে একশত কোটিরও ওপর মুসলমানদের মতামত এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইসরাইলকে অব্যাহত সমর্থন দেয়ার মতো সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি আমেরিকার নেই। এর বিপরীতে মার্কিন সরকারকে তার নিজ স্বার্থও দেখতে হবে এবং ইসরাইলের লাগাম টেনে ধরার পরামর্শও নাকি প্রতিবেদনে রয়েছে। যে সব কারণে ইসরাইলের পতন হবে তার মধ্যে আমেরিকায় বসবাসকারী ইহুদীদের মাঝে ইসরাইল ইস্যুতে অনৈক্যও নাকি অন্যতম। ৯/১১-এর ঘটনায় ইসরাইল জড়িত- এ বিষয়ে আমেরিকানদের ধারণা বদ্ধমূল হওয়া আর ইসরাইলের গোঁড়াবাদী নীতির প্রতি আমেরিকার জনগণের বিরূপ ধারণা উল্লেখযোগ্য বলে ব্যারেট তার নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন। প্রবন্ধের শেষ পর্যায়ে ব্যারেট আমেরিকার নীতি নির্ধারকদের পরামর্শ দিয়ে বলেছেন তাদের উচিত কিসিঞ্জারের বক্তব্য মেনে নেয়া 'ইসরাইল তার আয়ুর শেষ পর্যায়ে পেঁৗছেছে।'
বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী: আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক ।
সূত্রঃ দৈনিক যায় যায় দিন । ১২/১০/২০১২
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:৪০