কেন টার্গেট করা হলো কাতার কে
এক নজরে দেখে নিন
--------------------------------
সৈয়দ শামছুল হুদা
জঙ্গীবাদের দোহাই দিয়ে একসময় আমেরিকা যেভাবে মুসলিম দেশগুলো ধ্বংসে মেতে উঠেছিল, সেই দায়িত্ব এখন পড়েছে সৌদী আরবের ঘাড়ে। মাতাল ট্রাম্প সৌদী আসার পর এখন মধ্যপ্রাচ্যে তার রাজনৈতিক এজেন্ট সৌদী আরব সেই দায়িত্ব পালনে প্রথমেই টার্গেট করেছে কাতারকে।
* কাতারের দোষ হলো- কাতার কেন ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের আশ্রয় দেয়। তাদের বেতন-ভাতা দেয়। তাদের সাহায্য-সহযোাগিতা করে।
* কাতারের দোষ হলো তারা কেন আফগানকে দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধ থেকে কিভাবে বের হয়ে আসা যায়, তার সংলাপের জন্য আফগানিস্তানের তালেবানদের আহবান জানায়, তাদের অফিস খুলবার দেয়। সেখানে সংলাপ হয় বড় বড় শক্তির সাথে। আলোচনার মাধ্যমে আফগান সমস্যার একটি সমাধান বের হয়ে আসার চেষ্টা হয়।
* কাতারের দোষ হলো সিসি’র অত্যাচারে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা মিসরের ব্রাদারহুডে’র নির্যাতিত মজলুমদের কেন আশ্রয় দেয়।
* কাতারের দোষ হলো- কাতার কেন বিশ্ব বরেণ্য আলেমে দ্বীন ইউসুফ আল কারজাভীকে আশ্রয় দেয়, সম্মান জানায়।
* কাতারের দোষ হলো- কাতার কেন বিবিসি, ভুয়াকে চ্যালেঞ্জ করে অপ্রতিদ্বন্ধি একটি মিডিয়া জগত সৃষ্টি করলো। যার সংবাদের মান, বিশ্বস্ততা সব দিক থেকে উন্নত।
* কাতারের দোষ হলো আল জাজিরা। যে মিডিয়ার কা্ছে মুসলমানরা বারবার মার খাচ্ছে, সেই মিডিয়া মোঘল সেজে বসেছে কাতার। বিপদগামী কিছু আরব শাসকদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে এই আলজাজিরা। কখন কোথায় কার বিরুদ্ধে কী সত্য বের করে দেয় সে চিন্তায় তারা অস্থির।
* কাতারের দোষ হলো- সে পরবর্তী বিশ্বকাপ ফুঠবলের আয়োজনকারী দেশ। সে জন্য এমন পদক্ষেপ কাতার নিয়েছে যার ফলে একদিকে বিশ্বকাপ সেখানে অনুষ্ঠিত হবে, অথচ সেখানে বেশ্যাদের বাজার বসবে না। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো আয়োজন হবে, অথচ সেখানে থাকবে না অণৈতিকতার ছুঁয়া, সেই চেষ্টা তারা করছে।
* কাতারের দোষ হলো মুসলিম বিশ্ব থেকে ভালো মানের হাফেজ-আলেমদের নিজ দেশে স্বাগত জানায়। তাদের উন্নত ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করে।
* কাতারের দোষ হলো- একটি ছোট্ট রাষ্ট্র হয়েও বিভিন্ন বড় বড় ঘটনায় লিয়াজো করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে।
* কাতারের দোষ হলো- আগামী দিনে বিশ্ব নেতৃত্ব যেই শক্তির হাতে আসছে, সেটা হলো তুরস্ক। তুরস্কের সাথে কাতারের গভীর সম্পর্ক। কাতার আরব বিশ্বে তুরস্কের ভূমিকাকে সুদৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
* কাতারের দোষ হলো- একটি ছোট্ট দেশ হয়েও বিশ্বের বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্যে যে অংশ গ্রহন করছে।
* কাতারের দোষ হলো- সে তার নিজ দেশকে সাজিয়েছে মানুষের কল্পনার স্বর্গের মতো। সেখানে নেই অরাজকতা, মানুষের উপর অযথা হয়রানী। নেই মানুষে মানুষে কোন বিভেদ। কল্পনার স্বর্গের মতোই সাজানো দেশ কাতার। অথচ সেখানে অশ্লীলতা এত ব্যাপক নয়। রাষ্ট্র কোন প্রকার অশ্লীলতাকে ঢালাওভাবে সমর্থন করে না।
* এককভাবে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজন করে বিশ্বে সে আলোচনায় আসবে। কাতারের উন্নতি দেখে পশ্চিমা শক্তির মাথা নষ্ট হয়ে যাবে, এটা ইহুদী অপশক্তি আগে থেকেই সহ্য করতে পারছিল না। এখন আরবদেশের পক্ষ থেকে এই অবরোধের ফলে হয়তো বিশ্বকাপ আয়োজন ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে। তারা বিশ্বে প্রচার করবে, কাতারকে কোন আরবদেশ সমর্থন করছে না, সুতরাং সেখানে বিশ্বকাপ হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
* কাতারের দোষ হলো -ছোট্ট দেশ হওয়া সত্তেও আগামী দিনে বৃহত্তর জাতির নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন দেখে।
* কাতারের দোষ হলো- কাতার বাগাড়ম্বর করে না। কাতার নির্যাতিত সব মুসলিমকে সাহায্য করে। কী সিরিয়ায়, কী ফিলিস্তিনে, কী মিশরে।
* কাতারের দোষ হলো কাতার কেন আরব আমিরাতের একচেটিয়া পোর্টের ব্যবসায় হাত দিয়ে বসলো। আমিরাত সেই হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছে।
এভাবে নানা কারনে যখন কাতারকে আটকিয়ে রাখা যাচ্ছিল না, তখন জঙ্গীদের আশ্রয় দেওয়ার আমেরেকীয় স্টাইলে সৌদী আরব অহেতুক ইহুদীবাদীদের মিথ্যা প্রচারণার ফাঁদে পড়ে। ধ্বংসলিলার দায়িত্বটা অহেতুক সৌদি আরব নিজ কাঁধে তুলে নেয়। সিসি’র মতো একজন বিখ্যাত অপরাধীকে তাদের পাশে নেয়।
এটা রাজতান্ত্রিক শাসকদের ভ্রান্তিবিলাস। এর মাধ্যমে সৌদী আরবের কোনই লাভ নেই। মাঝখান দিয়ে একটি উন্নত রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্থ করার কৃতিত্বটা তারা নিয়ে নিলো। ইতিমধ্যেই ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, কাতারকে একঘরে করার কৃতিত্ব তারই।
সৌদীর শাসকেরা ভুলে যায় তারা মক্কা-মদীনার খাদেম। তাদের ভুল সিদ্ধান্ত অনেক মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণের কারন হয়।
কী দরকার ছিল কাতারকে এক ঘরে করার এমন ঘোষণার? এর মাধ্যমে সৌদী আরবের কোন লাভ নেই।বরং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভেদকে উস্কে দিবে। ইতিমধ্যেই কিছু দেশ সৌদীর পক্ষে, কিছু দেশ নিরপেক্ষ, কিছু দেশ কাতারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আরবরাষ্ট্রগুলোকে বিভক্ত করার কৃতিত্বটা সৌদী আরব নিজ কাঁধে তুলে নিলো। আফসোস।
কাতার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার দ্বারা লাভ ইসরাইল আর আমেরিকার। যারা সবসময় মুসলমানদের ধ্বংস কামনা করে আসছে। এতে মুসলমানদের কোন লাভ নেই। অহেতুক, অকারনে, বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হলো। মুসলমানদের নতুন পেরেশানীতে ফেলে দেওয়া হলো।
09.58সকাল
007.06.2017
রুফাকা টাওয়ার