somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য রচনা : জিলিপি

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বউ বলল, "কালুদার দোকান থেকে গরম জিলিপি নিয়ে এসো না? খুব খেতে ইচ্ছে করছে।"
শনিবারের দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয় হয়।
আমি জামা চড়িয়ে কালুদার দোকানে হাজির হলাম। যেতে যেতেই দেখলাম রেন্টুদা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে। রেন্টুদার বাড়ি একটু দূরে, আমার শ্বশুরবাড়ির পাড়ায়। অথচ আড্ডা মারে আমাদের পাড়ায় এসে। কিছু কিনে নিয়ে যাওয়ার জো নেই। ওকে দিতেই হবে। এক নম্বরের লোভী তো বটেই প্লাস লজ্জা বলেও কিছু নেই। রেন্টুদাকে দেখেই আমার খুব রাগ হল। এখন কালুদার দোকান থেকে যাই কিনি না কেন রেন্টুদাকে তার থেকে দিতে হবে।
.
আমাদের পাড়ায় কালুদার মিষ্টি দোকানের বিক্রিবাটা একদম ছিল না। মিষ্টিগুলো যখন বানানো হত নরম থাকত তারপর ট্রেতে বা গামলায় পড়ে থেকে থেকে কংক্রিটের মতো শক্ত হয়ে যেত তার সঙ্গে বদলে যেত রঙ। রসগোল্লা হলুদ হয়ে যেত। লোকে বলত, "দাদা দুটো কমলাভোগ দিন।"
কালুদা গম্ভীর হয়ে বলত, "ওগুলো কমলাভোগ নয় রসগোল্লা।"
সে যাইহোক কালুদা হঠাৎ একদিন এমন মোক্ষম চাল দিলেন যে তাঁর দোকানে হইহই করে বিক্রি শুরু হয়ে গেল।
দোকানের বাইরে প্রায় রাস্তার ওপরে দোকানের সামনে চাতালে বিকেলবেলা জিলিপি ভাজা শুরু করে দিলেন কালুদা। উফফ জিলিপি ভাজার সে কী গন্ধ! পাড়ার সবাই ছুটতে লাগল জিলিপি কিনতে। দেখতে দেখতে কালুদার দোকান জমে গেল।
.
জিলিপি ভাজছে একজন বুড়ো মতো লোক। সবে বিকেল হচ্ছে। খদ্দের আসা এখনও শুরু হয়নি। জিলিপি এক কড়া নেমেছে, বুড়ো কোথায় উঠে গেল। হঠাৎ দেখি একটা নেড়ি কুকুর এসে ঠ্যাং তুলে জিলিপির ওপর হিসি করে দিয়ে চলে গেল। কালুদা দৌড়ে গিয়ে কুকুরটাকে তাড়িয়ে আমার দিকে তাকাল। আমি কিছুই দেখতে পাইনি এমন ভান করে কাউন্টারে পান্তুয়া, চমচম দেখতে থাকলাম একাগ্র চিত্তে। আর কাঁচে দেখলাম কালুদা গামছা দিয়ে ওপর ওপর মুছে দিল কিন্তু একটা জিলিপিও ফেলল না। কী ডেঞ্জারাস লোকরে বাবা! আমি এখন দৌড়ে পালাতে পারলে বাঁচি কিন্তু এসে পড়েইছি যখন তখন কিছু তো নিতে হবে। চারটা জিবে-গজা দিতে বললাম। কালুদা বলল, "জিলিপি নেবে না?"
আমি না বলতে গিয়েও বললাম, "আচ্ছা চারটা দিয়ে দিন।"
রোজ মিষ্টি নিয়ে গেলেই রেন্টুদাকে ভাগ দিতে হয়, আজ লোভীটাকে কুকুরের হিসি করা জিলিপি খাওয়াব।
.
রেন্টুদাকে জিলিপির ঠোঙাটা দিতে রেন্টুদা ব্যাপক অবাক হয়ে বলল, "আরে সুজ্জু আজ পশ্চিমে উটল নাকি রে? না চাইতেই তুই জিলিপি দিচ্ছিস? তাও চার-চারখানা!"
আমি বললাম, "গরম আছে এক্ষুনি খেয়ে নাও।"
.
বউ বলল, "তুমি জিলিপি না এনে পচা জিবে-গজা নিয়ে এলে?"
আমি বললাম, "আজ জিলিপি ভাজেনি কালুদা।"
তারপরেই আমি বেরিয়ে পড়লাম। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল।
বাড়ি ফিরতে বউ বলল, "তুমি তো আনলে না বাবা কোথা থেকে জিলিপি এনেছিল, কিন্তু ওই জিবে-গজা খেয়ে আমার এমন অ্যাসিড হয়ে গেল যে আর জিলিপি খাইনি, তুমি খাবে?"
জিলিপি আর চা খেলাম।
.
পরদিন সকালে বাজারে যাচ্ছি রেন্টুদার সঙ্গে দেখা হল। দেখা হতেই আমার ভেতর হাসি বুজকুড়ি কাটছে, হাসি চেপে বললাম, "কালকের জিলিপি খুব ভাল ছিল, বলো?"
রেন্টুদা উদাস গলায় বলল, "জানি না রে, খাওয়া হয়নি। খুলতেই কেমন ধক্ করে গন্ধ লাগল নাকে। শালা পচা রস নাকি কে জানে! পাড়ার একজন যাচ্ছিল, নিতে চাইছিল না জোর করে দিয়ে দিয়েছিলাম।"
আমি অবাক হয়ে বললাম, "তোমাদের পাড়ার? কাকে আবার দিলে?"
রেন্টুদা হেসে বলল, "আরে তোর শ্বশুরমশায় কে। কিছুতেই নিতে চাইছিলেন না। অনেক বুজিয়ে সুজিয়ে তবে রাজি করিয়েছিলাম। উনি তো দেখলাম জিলিপির ঠোঙা নিয়ে তোদের ঘরেই ঢুকলেন। সে জিলিপি কে খেয়েছে বলতে পারব না।"
আমার পেটের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল...বমি হয়ে যাবে এক্ষুনি ... শ্বশুরররমশাইইইই!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫৭
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×