সেই দিন পাড়ার সাধনবাবু তাঁর ছেলেকে নিয়ে চেম্বারে এলেন।বেচারী সবে পক্স থেকে উঠেছে। বাসববাবু তাকে দেখে পথ্য ঠিক করে দিলেন, আর দিনের বেলা একটি করে ডাব খেতে বললেন।
সাধনবাবু বললেন,"আচ্ছা দিনের বেলা মানে কি জাস্ট সূর্য উঠছে?নাকি সূর্য ওঠার একটু পরে? দুপুরের আগে?নাকি দুপুরে?কিম্বা দুপুরের পর? বিকেল বেলায়?নাকি সূর্য ডোবার একটু আগে? হেঁ হেঁ,আসলে পুরোটাই তো দিন তাই জিজ্ঞাসা করছি আর কি।"
বাসববাবু পোড় খাওয়া লোক,বললেন,"সকালে দশটা নাগাদ খেলেই হবে।"
"আচ্ছা ডাক্তারবাবু,খাবার খেয়ে খাবে,না খাবার খাওয়ার আগে খাবে?"
"যখন ইচ্ছে খেতে পারে।"
এইবার সাধনবাবু সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।কিন্তু একটু পরেই আবার দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে বললেন,"ডাক্তারবাবু, আপনি ডাব খাওয়াতে বললেন,মানে ডাবের জলটা তো?"
বাসববাবু গম্ভীর মুখে বললেন,"হ্যাঁ।"
সাধনবাবু আবার খুব চিন্তিত মুখে বললেন, "আচ্ছা শাঁসওয়ালা ডাবের জল খাবে,নাকি শাঁস ছাড়া যে ডাব তার জল খাবে?"
বাসববাবু ভীষণরকম গম্ভীর হয়ে বরফ শীতল গলায় বললেন,"যে কোনও ডাবের জল খাওয়াতে পারেন।"
এইবার ভদ্রলোক ভারি বিচলিত হয়ে বলে উঠলেন,"আচ্ছা শাঁসওয়ালা ডাবের জল খাবার পর কি শাঁসটা খেতে পারে?"
বাসববাবু এবার একটি ছোট্ট "হুঁ" বলে কাজ সারলেন।
"আচ্ছা ডাক্তারবাবু,ডাবের জল কি ডাইরেক্ট ডাব থেকে খাওয়া ভালো,নাকি গ্লাসে ঢেলে খাওয়া ভাল?"
এখনও তাঁর পায়ের রক্ত কেন মাথায় উঠছে না, বাসববাবু ভীষণ রকম অবাক হয়ে এইটে ভাবতে ভাবতেই বললেন,"দুটোর কোনোটাতেই অসুবিধা নেই।"
সাধনবাবুর পরের প্রশ্ন হল,"ডাক্তারবাবু,আপনার চেম্বারের বাইরে যে ডাবওয়ালাটি ক'দিন হল বসছে,তার ডাব ভাল তো?সেই ডাব নেব কি?"
বাসববাবু এইবার টের পেলেন কেটলিতে জল ফুটতে শুরু করলে যে রকম একটা শোঁ শোঁ আওয়াজ হয়,ঠিক সেইরকম একটি আওয়াজ তাঁর মাথার ভিতরেও হচ্ছে।তবু তিনি কোনও রকমে মাথা নাড়িয়ে "হ্যাঁ" বললেন।
সাধনবাবু অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলেন। কিন্তু একটু পরে তাঁর আবার আর্বিভাব হল। বললেন,"ডাক্তারবাবু,ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি,এটাই আমার শেষ প্রশ্ন।আর আপনাকে জ্বালাতন করবো না।ও তো সবে পক্স থেকে উঠেছে, বাড়িতে তো খাবার জল ফুটিয়ে খাচ্ছে,ডাবের জলটাও কি ফুটিয়ে খাওয়াবো?"
সাধনবাবু এখন বাড়িতে মাথায় দশটি সেলাই নিয়ে শয্যাশায়ী। বাসববাবু আপাতত জামিনে মুক্ত।
![:-P](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_60.gif)