গোপেনবাবুর বউ তার স্বভাব জানে, তাই তার ওপর কড়া নজর রাখার চেষ্টা করে। ছেলেও ঠারেঠোরে তার দিকে চোখ রাখে, তাও তিনি জানেন। রাখবে না? হতচ্ছাড়া ছেলেগুলো যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মায়ের চামচা হয়!
কিন্তু প্রতিবারেই এই অভিসারের পর তিনি সবচেয়ে ভয় পান তার মেয়েকে। ছোট হলে কি হবে? অসাধারণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা তাঁর মেয়ের! কতবার যে বাড়ি ফিরে মেয়ের হাতে ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়েছেন, তা বলার নয়!...
তিনি দিব্যি কাজকর্ম সেরে নিপাট ভালোমানুষের মতো ঘরে ঢুকে দেখেছেন, মেয়ে তাঁর দিকে একটা অদ্ভূত দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে! সে দৃষ্টি এতই তীক্ষ্ণ, যে অনেক সময়ে গোপেনবাবু তার চোখে চোখ পর্যন্ত রাখতে পারেননা!...
তারপর মনে মনে বহু সাহস টাহস জোগাড় করে, গলা টলা ঝেড়ে যতদূর পারেন স্বাভাবিক গলায় মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন, "কিরে, কিছু বলবি?"
মেয়ে কোনো উত্তর দেয় না, আবার চোখও সরিয়ে নেয় না। শুধু একভাবে তাকিয়ে একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এই ব্যাপারটাকেই তিনি বড্ড ভয় পান! হাঁটু দুর্বল হতে থাকে! মনে হয় ও সব বুঝে ফেলেছে!
সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে যা হোক তা হোক, অফিস ফেরত প্রেয়সীর ওখান থেকে অল্প ঢুঁ মেরে আসা যায়। সমস্যাটা হয় ছুটির দিনে, শনি আর রবিবারে। শনিবার'টা তা'ও কোনো রকমে কাটিয়ে দেন, কিন্তু রবিবার আর পারেন না! যেকোনো ছুতোয় ওখানে গিয়ে লম্বা সময় উপভোগের জন্যে মন উশখুশ করতে থাকে!
আজও বহু বায়নাক্কা করে, সকাল থেকে গুটির পর গুটি সাজিয়ে রবিবারের বিকেলে গোপেনবাবু এসে পৌঁছলেন বড় রাস্তার মোড়ে গাড়ি রেখে সাড়ে তিন মিনিট হেঁটে বাঁদিকে চার নম্বর গলির সেই গোলাপী রঙের বাড়িটার সামনে...
মনটা খুশিতে ভরে গেল! এই তো জীবন! একটা ভর ভরন্ত সংসার, নিশ্চিন্ত রোজগারের পর আর এই একটাই জিনিস তো চান তিনি জীবনে... বয়স যত বাড়ছে, ততো বাড়ছে এই টান!... এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিয়ে টুক করে ঢুকে পড়লেন তিনি!
প্রচুর লোকজন চারিদিকে। তার মধ্যেই একটা টেবিল দখল করে বসে হাঁক পাড়লেন, "কই দেখি, এক প্লেট হিংয়ের কচুরি, দুটো সিঙাড়া, আর চারটে ছানার জিলিপি এদিকে..!!!"
আসলে, গোপেনবাবুর বয়স হয়েছে, তাই প্রেশার, সুগার, ইত্যাদি বেড়ে যাওয়ার ভয়ে বাড়িতে খাওয়া দাওয়া ভীষণ রেস্ট্রিক্টেড, ভালো খাবার বিশেষ কিছুই জোটে না। বাড়ির লোকের কঠোর নজর তার খাওয়া দাওয়ার দিকে!
এ জীবনে গোপেনবাবু বেঁচে আছেন এই প্রেয়সীর জন্যেই...
"প্রেয়সী মিষ্টান্ন ভান্ডার" -
সকল প্রকার মিষ্টান্ন ও মুখরোচকের বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান।
(অনুপ্রেরণা : রিংকু পাল)