somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এয়ারপোর্ট কথনঃ আদ্দিস আবাবা

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে ফিরছি।
ট্রানজিট ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা (ওলে) ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট।
স্থানীয় সময় রাত ১২টা ২০ মিনিট। হাত ঘড়িটা মিলিয়ে নিলাম-যেটা আমি প্রত্যেকবার ভুলে যাই।
আট ঘন্টার ট্রানজিট। আমার জন্য অনেক সময়। অনেকেকেই দেখেছি ট্রানজিট পিরিয়ডের পুরোটা ডিউটি ফ্রি শপে ঘুরে বেড়ান। কিছু না কিনলেও ঘুড়ে বেড়ান। আমার এই অভ্যাসটা নাই। আগ থেকেই কেনাকাটার প্রতি আমার তেমন কোন আগ্রহ নাই। তাই ট্রানজিট পিরিয়ড আমার কাছে বোরিং, বিরক্তকর। এজন্য সবসবময় যা করি--নির্ধারিত ডিপার্চার গেটের কাছাকাছি কোন ডিপার্চার লাউঞ্জে অলসের মত বসে থাকি বা ঝিমাতে থাকি। আর বসে বসে অলসভাবে বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন সংস্কুতির মানুষদের দেখি। বেশ মজা লাগে। এবারও বোর্ডিং পাসের ছোট্ট ছেঁড়া অংশ দেখে ডিপার্চার গেটের কাছাকাছি বসে পড়লাম। হ্যাভারস্যাক থেকে ল্যাপটপটা বের করে ওয়াইফাইটা চালু করলাম। যথারীতি অসংখ্য ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক পেলাম। আজকাল এই এক সুবিধা । বড় বড় এয়ারপোর্টগুলোতে ওয়াইফাই ইন্টারনেট থাকে। তবে প্রায় সবগুলোতেই কি-ওয়ার্ড/পাসওয়ার্ড চায়। একটা "ফ্রি" লেখা দেখে তাতে ক্লিক করলাম এবং ভাগ্যক্রমে কানেক্টেড হয়ে গেলাম! ফেসবুকে লগ ইন করে দেশে ফোন করব ভাবছি এমন সময় পাশে এক ভদ্রলোক এসে বসলেন। ইন্ডিয়ান/পাকিস্তানী হবে মনে হয়। আমাকে দেখে হেসে হিন্দিতে জিজ্ঞেস করল "আমি ইন্ডিয়ান কিনা?"
ইন্ডিয়ানদের এই এক সমস্যা। ভারতের বাইরে যেখানেই এই উপমহাদেশের চামড়াওয়ালা লোক দেখবে ধরেই নেয় সে ভারতীয়। আর আমাদের দূর্ভাগ্য যে দুনিয়ার যে জায়গাতেই যাই না কেন সেখানেই কোন না কোন ইন্ডিয়ান পাব।
যাহোক হিন্দি বুঝলেও ভাব করলাম কিছু বুঝিনি। বললাম "সরি?"
এবার ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল। বললাম, বাংলাদেশি।
এবার একগাল হেসে গোঁফওয়ালা ভদ্রলোক বলল, "আরে দাদা, আমিও বাঙালি! কলকাতা বাড়ি!"
কথাপ্রসঙগে সে জানাল সেও আমার ফ্লাইটে যাচ্ছে। আমি বললাম "এই ফ্লাইট তো কলকাতা যাচ্ছে না।"
জানাল সেও ঢাকা যাচ্ছে। তার পিসি বা মাসীর বাড়ি।
কিছুক্ষণ পরই বুঝলাম প্রচন্ড বাচাল লোকটা। বিভিন্ন কথা বলে যাচ্ছে। বেশিরভাগই হ্যাঁ-না দিয়ে জবাব দিচ্ছি। এরই মধ্যে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন। এমনকি মীরাক্কেল এর প্রসংগও চলে আসল। বলল,আজকাল নাকি বাংলাদেশের প্রতিযোগীরাও নাকি মীরাক্কেলে আসছে। বুঝলাম এসব কথার মাধ্যমে সে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান সেটা বোঝাতে চাচ্ছে।
ল্যাপটপ গুছিয়ে উঠে পড়লাম। আর থাকা যাবে না। এর কাছে থাকলে মাথা ধরিয়ে দেবে। বললাম "চলুন, কিছু খেয়ে আসি।"
উনি ধন্যবাদ জানালেন। বললেন এয়ারক্রাফট থেকে ডিনার করে এসেছেন, এখন কিছু খাবেন না। চট করে কেন যেন "দাদা কি খেয়ে এসেছেন নাকি গিয়ে খাবেন" এবং "দাদা, অর্ধেকটা ডিমের পুরোটা খেয়ে যাবেন" টাইপ কথা মনে পড়ল। ;)
আমি ডিউটি ফ্রি শপের দিকে পা বাড়ালাম। কসমেটিকস-পারফিউমের একটা দোকান পরেই বড়সড় লিকারের দোকান। থরে থরে সাজানো অ্যালকোহলের বোতল। মনে পড়ল দেশের এক সিনিয়র কলিগের কথা। বলেছিল সম্ভব হলে এক বোতল এলকোহল নিয়ে যেতে। দোকান ঘুরে এক লিটারের এবস্যুলেট ভদকা (নীল) কিনলাম। এই ভদকাটা এখানে পাব-ভাবিনি। কেনার সময় দোকানী মেয়ে (সম্ভবত ফিলিপিনো) জিজ্ঞেস করল আমার দেশ কোনটা। বললাম। সে বলল, "যতদূর জানি তোমাদের দেশে এয়ারপোর্টে অ্যালকোহল নিয়ে ঢোকা নিষেধ আছে।"
আমি মৃদু হেসে বললাম "অসুবিধা নাই। আমি মনে হয় ঢুকতে পারব।" বিল দিলাম। ১৮ ডলার। হ্যাভারস্যাকে বোতলটা ঢুকিয়ে বেরিয়ে এলাম দোকান থেকে।
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×