somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামাতী আইনজীবি টবি ক্যাডম্যানকে যে কারনে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হয়নিঃ একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

১৫ ই নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইদানীং জামায়াতে ইসলামীর কর্মী,সমর্থক সর্বপোরি তাদের দেশীয় আইনজীবি একটি প্রোপাগান্ডা অনেকটা খেয়ে আর না খেয়ে চালাচ্ছেন। সেটি হলো গত ৫ই অগাস্ট হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকেই জামাতী আইনজীবি টবি ক্যাডম্যানকে বেআইনীভাবে লন্ডনে পত্রপাঠ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।তারা এই “বেআইনী” শব্দটির সাথে আবার কিছু শব্দ ও উপমা যোগ করে ব্যাপারটির গাম্ভীর্য আরো দুই তিন ডীগ্রি সরেস করে ফেলতেও বেশ কারিশমা দেখিয়েছে। তারা বলছে, এতে করে নাকি আইনের শাসন পংগু হয়ে গ্যাছে, দেশে বিচার ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, যুদ্ধাপরাধ বিচারে “বিশেষ” দক্ষ টবি ক্যাডম্যানকে না ঢুকতে দেবার কারনে নাকি অল্পের জন্য সাঈদী, সাকা, নিজামী গংরা কারাগার থেকে মুক্তি পেলো না, টবি ক্যাডম্যান ঢাকায় ঢুকতে পারলে নাকি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশনের আইনজীবিদের আর দেখতে হোতো না, ইত্যাদি...ইত্যাদি...


কিন্তু আসলে কি ঘটনা ঘটেছে এটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা জানতে পারলাম, তাতে আসলেই বিষ্মিত হয়েছি। বিষ্ময়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্যই আসলে খুব কষ্ট হলো। একটা দরিদ্র দেশের উপর সবাই চেপে বসতে চায়। এই দেশ যেন গরীবের বউ। সবাই জোর করে পেতে চায়। যেন ক্ষমতা আর সাদা চামড়ার ছই ঘুরালেই কেল্লা ফতে। অন্তত, জামাত ও ইতাদের দোসররা অন্তত এই-ই মনে করে।


কি ঘটেছিলো আসলে?----

টবি ক্যাডম্যান প্রথমত নিজেকে জামাতের আইনজীবি পরিচয় দিলেও কাগজে কলমে তিনি জামাতের তথা সাঈদী, নিজামী, সাকা কিংবা কারও আইনজীবি নন। স্টিভেন কে কিউসি এবং টবি ক্যাডম্যানের জন্য এবং জামাতের আইনী খরচ চালাবার জন্য লন্ডন থেকে প্রায় ৫ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহ করেছে লন্ডনের জামাতী নেতারা। সেই অর্থেই মূলত টবি ক্যাডম্যান এবং স্টিভেন কে কিউসি মূলত জামাতের আন্তর্জাতিক লবিস্ট হিসেবে কাজ করে। তাদের মূল কাজ হোলো বিভিন্ন টিভি, পত্রিকা, টক শো, জার্নালে তারা বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের হয়ে কাজ করবে এবং বাংলাদেশের সরকার ও আইনের বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য রাখবে।

গত জুলাই মাসের মধ্যভাগে টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের ভিসার জন্য বাংলাদেশ হাই কমিশন,লন্ডন বরাবর একটি আবেদনপত্র দাখিল করেন। এই আবেদনপত্র দাখিলের আগে দুইবার টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশে ঘুরে যান জামাতীদের উদ্যোগে দুইটি সেমিনারে অংশগ্রহন করবার জন্য। টবি ক্যাডম্যানের এইসব কর্মকান্ড জানবার পরেও এবং আওয়ামীলীগের মত এমন একটা ফ্যাসিস্ট দল ক্ষমতায় থাকবার পরেও এই টবি ক্যাডম্যানকে ৩য় বারের মত ভিসা দেয় বাংলাদেশ সরকার। এই ভিসিট ভিসার বিবরণে টবি ক্যাডম্যান লিখিত ভাবে জানান যে, তিনি বাংলাদেশে ঘুরতে যাবেন এবং সেই কারনে তিনি ভিজিট ভিসার জন্য তার আবেদন পেশ করেন।বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডন টবিকে ৩ মাসের মাল্টিপল ভিসা প্রদান করেন।


টবি ক্যাডম্যান ৫ই আগস্ট এমিরেটস এর একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে পৌঁছান। টবিকে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তার বাংলাদেশে আসবার কারন সম্পর্কে জিজ্ঞেশ করেন। এটি একটি প্রথাগত প্রশ্ন। সব দেশের ইমগ্রেশনই এই কমন প্রশ্নটি জিজ্ঞেশ করেন। এই প্রশ্নের উত্তরে টবি ক্যাডম্যান খুব দাম্ভিক ভাবে জানান যে, তিনি বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ আইনে অভিযুক্ত সাঈদী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবি। তাদের আইনী ব্যাপারে তদারকি ও বাংলাদেশের কোর্টে আইনী লড়াই করতেই তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।


ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা টবিকে জানান যে, তিনি ভিজিট ভিসায় বাংলাদেশে এসেছেন, কিন্তু আপনি পেশাগত কারনে বাংলাদেশে এসেছেন এটি আপনার ভিসা আবেদনে বলেন নি। এ কারনে আপনাকে আবার লন্ডন থেকে ওয়ার্ক-পারমিট ভিসা নিয়ে আসতে হবে।ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা টবিকে এও বলেন যে, তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করেছেন, এই ক্ষেত্রে তার এখতিয়ার রয়েছে টবিকে আইনের হাতে সোপর্দ করবার।


এই কথা শুনে টবি ক্যাডম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং সেসময় ইমিগ্রেশন পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রনে নেয় এবং টবিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি কক্ষে নেয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে টবি সাঈদী ও সাকার আইনজীবি বলে নিজেকে পরিচয় দিলে, আবারো ওয়ার্ক পারমিট ভিসার কথা বলে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশের কর্মকর্তারা এবং তারা ইমার্জেন্সি বেসিসে যোগাযোগ করেন বার কাউন্সিলের সাথে। বার কাউন্সিল ইমিগ্রেশন পুলিশকে জানায় যে টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের সদস্য নন, এবং তিনি সাঈদী ও সাকার আইনজীবি, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। সাঈদীর আইনজীবি তাজুল ইসলাম ও বদরুদ্দোজা বাদল বলে তথ্য দেয় বার কাউন্সিল।


এইসব তথ্য দেয়া নেয়ার এক পর্যায়ে খবরটি জানা জানি হয় বাংলাদেশের বৃটিশ হাইকমিশনে এবং তারা বিমানবন্দরে ছুটে যান। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশে আসার জন্য টবি ক্যাডম্যানের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলে, বৃটিশ হাইকমিশনের মধ্যস্থতায় ওই যাত্রা টবি ক্যাডম্যানকে শুধু ডিপোর্ট করে দেয় ইমিগ্রেশন।



পাঠক, আমি জানিনা আপনারা জানেন কি না, ইংল্যান্ডে বসবাসরত শত শত বাঙালি রয়েছেন যারা সেই দেশের পাস করা এবং স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার এট ল করেছেন এবং তারা অনারেবল বিভিন্ন ইনস এর সদস্য। অথচ এরা কেউই বৃটেনে মেইন স্ট্রিমে মামলা লড়তে পারেন না কারন “পিপোলেজ” নামে একটি বাঁধা তৈরী করে এইসব বাঙ্গালীদের ও অন্যান্য দেশী ব্যারিস্টারদের আটকে দেয়া হয়েছে। আর সেখানে একজন বাংলাদেশের আইনজীবি যদি আজকে টবি ক্যাডম্যানের মত একটা গুরুত্ব্বপূর্ণ মামলা লড়তে আসতেন মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে, তাহলে কি হোতো আপনারা কি কল্পনা করতে পারেন?? তাকে কয়েক ঘন্টার ভেতরেই আদালতে প্রেরণ করা হোতো এবং এক মাসের ভেতরেই তাকে শাস্তি দেয়া হোতো এবং ইউ কে তে ১০ বছরের জন্য ব্যান করা হোতো। অথচ, শুধু প্রোপাগান্ডা ছড়াবার জন্যই আজ জামাতিরা টবি ক্যাডম্যানের এই জালিয়াতি চেপে গিয়ে, “তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি”, “আইনের শাষন লংঘিত হয়েছে” ইত্যাদি ভাবে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের নামে দূর্নাম ছড়ানো হচ্ছে।



একজন বিদেশী আইনজীবি কি চাইলেই বাংলাদেশে ওকালতি করতে পারেন? এটা কি সম্ভব?

বাংলাদেশের বার কাউন্সিলে প্রতি ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারীতে লোয়ার কোর্টে পরীক্ষা হয় এবং তারপরে অনুষ্ঠিত হয় ভাইবা। এসব পরীক্ষায় সফল ভাবে উত্তীর্ণ হলেই একজন ব্যাক্তি বাংলাদেশের আদালতে প্র্যাক্টিস করতে পারবেন। এই যে আমি পরীক্ষা আর ভাইবার কথা বললাম, সেটা হোলো লোয়ার কোর্টে প্র্যাক্টিস করবার নিয়ম। এই সার্টিফিকেট পেতেই লেগে যায় এক বছর থেকে দড় বছরের মতন। সেখানে আবার দুই বছর প্র্যাক্টিস করে আসতে হভে আপার কোর্টে। লম্বা প্রসিডিওর। অথচ, যেন বাংলাদেশ টবি ক্যাডম্যানের বাবার সম্পত্তি। উনি চাইলেন আর মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশে আসবার পরেও আদালত তাকে স্যার স্যার বলে সেখানে প্র্যাকটিস করার সুযোগ করে দিলো।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অবশ্য কিছু রুলস এবং রেগুলেশন রয়েছে বিদেশী আইনজীবিদের ক্ষেত্রে তথা আনর্জাতিক লইয়ার লাইসেন্স হোল্ডারের। কিন্তু সেটাও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ওনেক ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ করতে হবে, সেটার জন্য যোগ্য হতে হবে এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে ফরমাল আবেদন করলে তারা সব কিছু ক্ষতিয়ে দেখে উক্ত আইনজীবিকে বাংলাদেশে প্র্যাক্টিস করবার অনুমতি দিতে পারেন। সেটাও সময় সাপেক্ষ। হুট করে আসলাম আর মামলা লড়লাম, ব্যাপারটা তা নয়।


আমরা দরিদ্র দেশ হতে পারি। গরীব হতে পারে। আমাদের হয়ত ইংল্যান্ডের মত উন্নত অবকাঠামো নেই। কিন্তু যারা নিজ দেশে সুবোধ বালকের মত আইন মেনে চলেন, তারা আমাদের মত দরিদ্র দেশে আসলে গলার হাঁকে সব কিছু কিনে নিতে চান। পার পেয়ে যেতে চান।


এখনো এরা মনে করে বাংলাদেশ ওদের সেই রাণীর কলোনী।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫৯
৬০টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×