বন্ধি হাতেও প্রতিবাদের শেষ আশা আর আমাদের উনাকে নিয়ে হাসাহাসি, হীনমন্যতা
আমেনা বেগমের মাথায় একটা চিন্তাই কেবল ঘুরছে।
৩৮০ টাকা।
এই তিনশ আশি টাকা দিয়ে সে অনেক কিছু করতে পারবে। সামনে শীত আসছে। তার ছেলেটার এমনিতেই ঠান্ডার বাতিক আছে। এই টাকা দিয়ে সে তার তিন বছরের বাচ্চার জন্য ঢাকা কলেজের সামনে থেকে অন্তত দুই সেট শীতের জামা কিনতে পারবে। যখন এক টানা অনেক দিন কুয়াশা থাকবে, তখন বাচ্চাদের কয়েক সেট শীতের জামা লাগে। কারন বাচ্চারা বড্ড তাড়াতাড়ি কাপড় নোংরা করে। রোদের দেখা থাকে না বলে, ধুয়ে দিলেও সহজে শুকাতে চায় না। তখন বাড়তি এক সেট জামা অনেক উপকারে দেয়।
কিন্ত সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই তিনশ আশি টাকার ভরসায়, সে অনেকগুলি বাড়তি খরচ করে ফেলেছে। তার এমনিতেই স্বামীবিহীন টানাটানির সংসার, একটা টাকা বাড়তি খরচ করার উপায় নাই।
যেমন প্রথমবার অফিস থেকে ফেরার পথে ফার্মগেইটে সুন্দর সুন্দর লাইট-জ্বলা প্লাস্টিকের খেলনা বল দেখে পছন্দ হয়ে যায় এবং বাচ্চার জন্য একটা কিনেও ফেলে। ভাবে, হাজিরা বোনাস ৩৮০ টাকা তো আছে।
দ্বিতীয়বার লাল বুড়িকে একটা কাপড় কিনে দেয় ২০০ টাকা দিয়ে, ফেরিওয়ালা বাসার সামনে নিয়ে আসছিলো। বুড়ির এমনিতেই ভালো কোন কাপড় নেই, তার উপর কাপড়টা বুড়ির অনেক পছন্দ হয়ে গেছে। কিন্তু টাকার অভাবে বুড়ি কিনতে পারছিল না বলেই সেই কিনে দেয়।
কারন সে যখন অফিসে চলে যায়, পিচ্চিটাকে তো এই বুড়িই দেখে রাখে, এই বুড়ির জন্যই তো সে চাকুরিটা করে খাচ্ছে। না হলে এই অপরিচিত ঢাকায় সে কার কাছে তার তিন বছরের বাচ্চটাকে রেখে চাকুরি করত? রক্তের সম্পর্কহীন এই বুড়ি যে যত্নের সাথে গত একটা বছর ধরে এই পিচ্চিটাকে দেখে রাখছে, সেই ঋণ কোনভাবেই শোধ করার না।
এইসব সাত পাচ ভেবে সে, বুড়িকে কাপড়টা কিনে দেয়। হাজিরা বোনাস থেকে শোধ করে দেয়া যাবে এই ভরসায়।
কিন্তু আজকে মনে হয়, ওর হাজিরা বোনাসটা মিস হবে। বিজয়-সরণির মোড়ে জ্যামে আটকে আছে দশ মিনিট ধরে। কি ঢঙ্গের ভিআইপি যাবে সে জন্য রাস্তা বন্ধ। এইসব ভিআইপি-রা জন দুর্ভোগ বাড়াতে পারে কিন্তু কমাতে পারে না। মাসে ত্রিশ দিনের মধ্যে একদিন এক মিনিট লেইট হলেই হাজিরা বোনাস পুরাটা মাইর।
সবাই আছে খালি গরীম মারার ধান্ধায়।
সার্ক ফোয়ারার সামনে বাস থেকে নেমেই আমেনা বেগমের মনে হলো, সে বড় একটা ভুল করে ফেলেছে। কিন্তু এত টুকু পিছনে গিয়ে ঘুরে আসতে গেলে দেরী হয়ে যাবে।
হাজিরা বোনাস মিস করা যাবে না, মনে মনে এইটা বলেই, আমেনা বেগম দৌড়ে রাস্তা পার হতে শুরু করলো। হঠাত কোথা থেকে যেন দুইজন পুলিশ এসে ওকে থামতে বলে। ও না থেমে দৌড় শুরু করে, অফিসে লেইট হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু একজন মহিলা পুলিশ ওকে ঝাপটে ধরে। সে প্রাণপনে ছোটার চেস্ট্রা করে।হাত আটকে থাকার জন্য তার সব চেস্টা ব্যর্থ হয়। শেষে সে পুলিশের হাত কামড়ে দেয়।
পুলিশের বড়কর্তা আমেনা বেগমের এহেন সাহস দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়।
- এই মহিলা তুমি মানুষ না, বিচ্ছু? ওভার ব্রীজ দিয়ে পার হউ নাই। আবার পুলিশের হাতে কামড়? সাহস তো কম না!
- এখানে কি ওভার ব্রীজ আছে?? কী দিয়ে পার হব??
- কেন এটিএন এর সামনে আন্ডার পাশ আছে না?
সার্ক ফোয়ারার এখানে থেকে আধা মাইলে পিছে গিয়ে, আন্ডার পাশ দিয়ে রাস্তা পার হয়ে আধা মাইল আবার সামনে আসব? মজা করেন? একজন রাস্তা বন্ধ কইরা, অফিসে যাইবো, আরেকজন এক মাইল ফাও হাটাইবো। আর এইসব কারনে দেরি কইরা অফিসে গেলে মালিক আমারে চুমাইবো? আমি কি আপনের বাপের অফিসে চাকুরী করি?
মহিলার এমন কথায় এএসপি সাহেব, বাকরুদ্ধ হয়ে যান। তাদের ভয়ে যেখানে বিএনপির বড় বড় নেতারা এক ঘাটে পানি খায়। সেখানে কিনা এই মহিলা এমন করে কথা বলার সাহস পায়? মহিলার কথা শুনে উনার প্রায় স্ট্রোক হয়েই যাচ্ছিল। অনেক কস্টে স্ট্রোকটা আটকেছেন।
আইন অমান্য, সরকারী কাজে বাধা, দ্বায়িত্বরত পুলিশকে কামড়ানোর অপরাধে তার এক মাস বিনাশ্রম জেল হয়।
এদিকে সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হয়ে যাচ্ছে। মাকে না পেয়ে আমেনা বেগমে ছেলেটার কাদতে কাদতে গলা ভেংগে গেছে।
--
বিঃদ্রঃ ঘটনাটা ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন । পুলিশের হাত কামড়ে এক মধ্যবয়স্ক নারী জেলে গিয়েছেন।
এই খবরটা দেখেই গল্পটা লিখতে ইচ্ছা হলো।বাস্তবটা এতটা খারাপ না হক, এমনটাই আশা করবো।
একজন রাস্তা বন্ধ কইরা, অফিসে যাইবো, আরেকজন এক মাইল ফাও হাটাইবো। আর এইসব কারনে দেরি কইরা অফিসে গেলে মালিক আমারে চুমাইবো?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ
গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন