ঢাকা, আগস্ট ০২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মামলায় মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতে ইসলামীর চার শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্ত যথাযথ আইনগত ভিত্তি ছাড়াই হয়েছে বলে মনে করছেন একজন আইন বিশেষজ্ঞ।
অপরাধ বিষয়ে দেশের শীর্ষ আইনজ্ঞ আনিসুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইন অনুযায়ী এই ট্রাইব্যুনাল 'অভিযোগ গঠনের পরই' কেবল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এবং দুুই সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে সোমবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই চার জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে এখনো কোনো অভিযোগ গঠন করে নি।
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ জুলাই এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সরকার পক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হকের দেওয়া আইনের এ ব্যাখ্যা যদি সঠিক হয়, তাহলে এই ট্রাইব্যুনাল প্রথম শুনানিতেই হয়তো এক গুরুতর ভুল করেছে।
এছাড়া যে আইনের আওতায় চার জামায়াত নেতার বিচার হচ্ছে, তা ট্রাইব্যুনালের কোনো সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ট্রাইব্যুনালের বাইরে অন্য কোনো আদালতে আপিলের সুযোগ দেয় না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
গত ২৬ জুলাই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক এক আদেশে বলেন, "কার্যকর ও যথাযথ তদন্তের স্বার্থে এই চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা উচিত।"
শুনানিতে প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালের কার্যপ্রণালী বিধিমালার বিধি ৯ উদ্ধৃত করেন, যাতে বলা হয়েছে- কার্যকর ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে, তদন্তকারী কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে তদন্তের যে কোনো পর্যায়ে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার জন্য প্রসিকিউটরের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের কাছ থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সংগ্রহ করতে পারবেন।
তবে আনিসুল হকের যুক্তি হচ্ছে, ১৯৭৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট এর ধারা ১১(৫) এর আলোকে এই বিধি পড়া উচিত।
তিনি জানান, ১৯৭৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট এর ধারা ১১(৫) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ক্ষমতা দিয়েছে।
এই ধারায় বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালের কেবলমাত্র 'ধারা ৩ এ বর্ণিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির' বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ক্ষমতা রয়েছে।
ধারা ৩ এ মানতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধ রয়েছে।
আনিসুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করার পরই কেবল এসব অপরাধের ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ক্ষমতা প্রাপ্ত হবে।"
জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী আরো বলেন, কার্যপ্রণালী বিধিমালার বিধি ৯ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না। এই বিধি ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতার কার্যপরিধি পরিবর্তনে ব্যবহৃত হতে পারে না।
"বিধিমালা অ্যাক্টের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে না। অ্যাক্ট অনুযায়ী বিধিমালা প্রণীত হয়, এর অন্যথা হতে পারে না", বলেন তিনি।
আনিসুল হক উল্লেখ করেন যে, অ্যাক্টের ধারা ২২ ট্রাইব্যুনালকে তার নিজস্ব কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দিয়েছে। অর্থাৎ, নিজস্ব কার্যপ্রণালী বিধিমালা প্রকাশের ক্ষমতা, তবে তা হবে অবশ্যই এই আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।