somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু পুরোনো প্রশ্ন এবং বর্তমান পরিস্থিতি : মিল নেই স্বপ্ন এবং বাস্তবের

১৬ ই জুন, ২০১১ রাত ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কি দেখব? কি পড়ব? যখনই পত্রিকা দেখি, যখনই খবর পড়ি, যখন যেখানেই যাই সেখানেই এমন কিছু খবর দিয়ে ভরা থাকে যেটা আসলে আমি মেনে নিতে পারিনা। এড়িয়ে যাওয়ার রাজনীতি, বিচাবহির্ভূত হত্যাকান্ড, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, আন্দোলনের হুমকি, একে-অপরের দোষারপের রাজনীতি, হত্যা করার পরও দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার স্বভাব.. সবকিছু মিলিয়ে মনে হয় বাংলাদেশ পিছিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের কি বয়স পাড়ছে নাকি কমছে? নাকি আমাদের বয়েস এতটাই বেশি হয়ে গেছে যে আর কাঁধ তুলে দাঁড়াতে পারছেনা (বৃদ্ধ বয়সে দাদীমারা যেভাবে লাঠি হাতে ভর দিয়ে হাঁটতন), নাকি আমাদের দেশ এতটাই শিশু-বয়স্ক যেন আমরা কোন কিছুই বুঝিনা। আসলে এই প্রশ্নগুলো যদি বাংলাদেশের পলিসি মেকারদের কাছে করা যেত তাহলে হয় সা.ই.ব –এর থেকেও মূল্যবান মতামত পাওয়া যেত। কি আর বলব ভাই, আমি নিজেইতো তাদের থেকেও অনেক শিক্ষিত। অনার্স পড়তেছি মানে হচ্ছে সভ্য সমাজে চলার যোগ্যতা অর্জন করছি। ভালই লাগে যখন আমাদের বাবা-মায়েরা অন্যদের সাথে বলতেন “ছেলে আমার বউ আনবে তাদের পছন্দমত, কারণ তারাতো শিক্ষিত হচ্ছে, আর শিক্ষিত মানুষতো আর ভূল করতে পারেনা।“ এমন কথা শুনে নিজের খুব ভালো লাগতো, নিজেকে অনেক ম্যাচিউরড মনে হত।

হঠাৎ একটু আগে কিছু খবর পড়তে যেয়ে মাথাই অনেক ধরনের ধাধা কাজ করলো। কি হচ্ছে আসলে এই দেশে, মনে হলো কাউকে মোবাইল করে জিজ্ঞেস করি যে আমরা কোন দেশে বাস করছি। তবুও এতটা করিনি কারণ আমি বাঙ্গালী, আমার জাতীয়তাবোধের উপর যথেষ্ট আস্থা আছে। কিন্তু প্রতিরাতে স্বপ্ন দেখিয়ে এভাবে আমাদের স্বপ্নকে মলিন করে দেবার জন্য কিন্ত আর যাই হোক আমাদের দেশকে স্বাধীন করা হয়নি। হমম... সেটা হতো যদি এমন কোন ঔষুধ থাকতো যেটা মানুষকে স্বপ্ন দেখাবে না.. তাহলে হত। কিন্তু আমরাতো আজও আমাদের দেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখি প্রতিনিয়ত।

আজ আমি বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এ দুইটা সংবাদ দেখে খুব চমকে উঠলাম। একটি ছিল নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-সন্ত্রাসী সংঘর্ষ, স্কুলছাত্র নিহত, অপরটি হচ্ছে রুমানার স্বামী সাইদ গ্রেপ্তার। প্রথম খবরটি আমি সম্পূর্ণই জানতামনা কিন্তু দ্বিতীয় সংবাদটির ব্যাপারে সম্প্রতি পড়েছিলাম বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। যে র‍্যাব-কে বানানো হয়েছে পুলিশের অক্ষমতাকে আড়াল করার জন্য একটি দেয়াল হিসাবে সন্ত্রাসী ধরার জন্য, হাহা.. তারাই আজ স্কুল ছাত্র পর্যন্ত মেরে ফেলল। আরেহ সমাজ, বসে আছেন কেন? কেউ একজন বলল যে ' আবাসিক এলাকায় র‍্যাবকে অস্ত্র ব্যবহারে সতর্ক থাকতে সুপারিশ করা হয়েছে..' আর সব ঠিক হয়ে গেল? ঐ যে ছাত্র মারা গেল তার জীবনের বিনিময় একটি সুপারিশ-ই যথেষ্ট? আমরা সবচেয়ে অলস জাতি, দেয়ালে পিঠ না ঠিকলে আমরা নিজেদেরকে সামনে আনিনা। ব্যস্‌ মেনে নিলাম। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে এখণো সেই দেয়াল কতদূর, নাকি আমরা বাঙ্গালী জাতিরা পোর্টেবল দেয়াল দিয়ে ঘর বানিয়েছি.. কোনটা?

একটি স্কুল ছাত্র মারা গেল ডালপুরী কিনে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে আর আমরাতো সবাই এখন মুরগী-পোলাও দিয়ে ডিনার করবো। এটাই স্বাভাবিক। জানি আমার লেখার এই জায়গাটা নিয়ে দুইটা মতামত আসতে পারে। ১. এক ধরনের মানুষ ভাববে আসলে কি করা যায়, আমরা আমাদের দ্বায়িত্ব-কর্তব্য থেকে কত দূরে সরে গেছি.. ২. আরেক ধরনের মানুষ বলবে যে, আরে ওটা গেছে লোকের ছেলে, তাই চিন্তা করে নিজের সব কাজ ফেলে রাখবো? পাঠকরাই ঠিক করবেন কোনটা কোন ধরনের।

র‍্যাব কি জানতোনা যে, যে শিশুটি আজ মারা গেল সে একদিন জাতিসংঘের মহাসচিব-ও হতে পারতো, সে হতে পারতো বিল-গেটসের মতো এমন কোন মানুষ যে বাংলাদেশকে অর্থ সহযোগিতা করার যোগ্যতা রাখে, সে শিশুটি হতে পারতো আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কোন বিচারক যাদের কাছে র‍্যাব-এর কোন পাত্তাই নেই। আমরা ভাবিনা। সংসারে চাউল আছে কি না আছে সেটা না ভেবে কেন আমরা ভাববো যে, কোন ছেলে কেমনে মারা গেল। আসলেই ঠিক ভাই, আমরাতো বাঙ্গালী।

প্লিজ আমার এই লেখাটি তখনই সফল হবে যখন অন্তত ১০ সেকেন্ড হলেও র‍্যাবের গুলিতে মৃত ছাত্রশিশুটির কথা আমরা ভাবতে পারি। এটাই হবে আমার সার্থকতা। হয়ত আমি ঐ শিশুটির জন্য কিছুই করতে পারবোনা কিন্তু এই লেখাটির মাধ্যমে হয়ত কিছু মানুষের মনের মধ্যে তাকে নিয়ে কোন ভাবনার জন্ম দিতে পারবো। ক্ষুদ্র মানুষের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসই-তো অনেক বৃহৎ মানুষের বৃহৎ কোন প্রয়াসের থেকেও বড় হবে।

তারপরের সংবাদের কথা ভাবি যেটা কিনা আমাদের দুইধরনের মানবতাবোধকে জাগিয়ে তোলে। এক. তিনি একজন শিক্ষিকা, একজন শিক্ষিকার উপর এমন অত্যাচার শিক্ষিত সমাজের জন্য লজ্জাজনক, দুই. তিনি একজন নারী, একজন সচেতন পুরুষ কর্তৃক কিভাবে একটি বাঙ্গালী নারীর অবস্থা এমন হয়। শিরোনামটি হচ্ছে এমন " রুমানার স্বামী সাইদ গ্রেপ্তার"।
রুমানা হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা যাকে অমানুষিক নির্যাতন করেছেন তার স্বামী। হে পুরুষ সমাজ!! আমরা কোথাই? হয়ত আজ রুমানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা, তাই খবরটি পত্রিকা এবং মিডিয়াগুলোতে স্থান পাচ্ছে.. কিন্তু বাংলার আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা আরো নির্যাতিত নারীদের কথা আমরা ক'জনইবা জানি? আমরা পুরুষ সমাজ এতটাই করতে পারি। আসলে এই খবরটি যখন পড়ি তখন মনে হচ্ছিল রেসলিং শো'র কথা। হাহাহা... আমরা কি রেসলিং-এর রক, আন্ডারটেকার, ট্রিপল এইচ, জন সিনহা হওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের এই সমাজ এখনো মনে হয় পুরুষ-শাসিত সমাজ (মনে হয় ব্যবহার করলাম কারণ আমি আসলে আধুনিক সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে এত বেশি জ্ঞান রাখিনা, আমি বিজ্ঞানের ছাত্র)।
সুতরাং আমাদেরকে যদি আমাদের জায়গা ধরে রাখতে হয় তাহলে আমাদেরকে কিন্তু নমনীয় থাকতেই হবে। এটা মনে হয় আধুনিক দখল-ব্যবস্থার (?) একটা মূলনীতি। যাই হোক, বেশী কিছু বলার অপেক্ষা রাখেনা। শুধু এটুকু বলবো, একজন পুরুষের জন্য আমরা কোন পু্রো পুরুষ জাতি কলঙ্কিত হবো? সুতরাং আমাদের আরও কঠিন ধৈয্যের পরিচয় দিতে হবে।

যা বললাম সবইতো বাংলাদেশের ঘটনা, সুতরাং বাঙলাদেশ কোথায় আছে সেটা আমি আর নতুন করে বলবোনা, কারণ বলতে গেলে হয়তো মুখে রুমাল বেধে বলতে হবে। আমরা সভ্য জাতি, সভ্যতা গড়ার সব উপকরণ আমাদের কাছে আছে। সবকিছুর বয়স বাড়ে, সাথে সাথে তার উচ্চতাও বৃদ্ধি পাই, সুতরাং একটি সংগ্রামশীল জাতি হিসাবে আমাদের উচ্চতাও আমাদেরকেই বৃদ্ধি করাতে হবে। জয় বাংলাদেশ, জয়োধ্বনি বাজুক সবার কন্ঠনালীতে।!!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১১ রাত ২:০৬
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×