বেশি দামে জ্বালানী তেল কেনা প্রথম সাড়ির দেশগুলোর একটা আমাদের বাংলাদেশ। তাও পরিবহনখাতে বাংলাদেশে বিকল্প শক্তির অবকাঠামো তৈরি করা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোন মেগাপ্রজেক্ট নাই।
অনেক দেশেই এখন (জীবাশ্ম) জ্বালানী খাতগুলো কৃত্তিমভাবে টিকিয়ে রেখেছে সরকারি প্রণোদনা। তার উপর গ্লোবাল ওয়ার্মিং ইস্যুর কারণে উন্নত দেশগুলো চাপে থাকে। মানে হচ্ছে ভবিষ্যতে তেলের দাম বাড়তেই থাকবে এটা অনিবার্য।
পরিবেশরক্ষা, নৈতিকতা এইসবকে সাইডে রেখে আমি এখন শুধু বলব একটা " স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি" র জন্য আমাদের কি দরকার?
এখন সমাধান হিসেবে অনেকে ব্যাটারির কথা বলতে পারেন। কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ এনার্জি ইনফ্রাস্ট্রাকচার হিসেব করলে জীবাশ্ম জ্বালানী আর ব্যাটারির মধ্যে মোটাদাগে কোন পার্থক্য নাই।
কেন?
যেকোন জীবাশ্ম জ্বালানী ক্রুড বা অপরিশুদ্ধ হিসেবে থাকে অন্য কোন দেশে। আমাদের কপাল খারাপ এইসব প্রাকৃতিক সম্পদ কিছুই নাই। যা গ্যাস আছে তা কয়েক দশকের মধ্যে ফুঁড়িয়ে যাবে। পরিশোধন বা রিফাইনারিতেও যদি ভাল হতাম তাহলে কমপক্ষে তেলের বাজারে একটা পাওয়ার থাকতো আমাদের; তাও নাই
ব্যাটারির লিথিয়াম আসে দক্ষিন আমেরিকার লিথিয়াম ট্রাইয়েঙ্গেন (বলিভিয়া, চিলি, আর্জেন্টিনা) থেকে। গ্রাফাইন, নিকেল, কোবাল্ট আসে আফ্রিকার খুবই সেন্সেটিভ জায়গা থেকে। বিশ্বের এনার্জি ইকোসিস্টেম নতুন স্ট্যান্ডার্ড পাইতে পাইতে এইসব "নতুন তেল" হয়ে যাবে। উন্নত ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলো যেভাবে পারে ভক্ষণ শুরু করবে। আমাগো এখানে ভাত নাই।
ব্যাটারির উপর আমাদের পরিবহনঘাত দাড়ায় গেলে ২০৪০/৫০ সালে একই অবস্থা হবে যা আজকে ডিজেলের জন্য হচ্ছে।
তাহলে উপায়?
এমন কিছু যা সঠিক পদ্ধতি জানলে আপনি নিজের ঘরেই বানাতে পারবেন। ঘরের উপাদান দিয়েই বানাতে পারবেন। এমন কিছু যা ব্যাটারির থেকে বেশি এনার্জি ডেন্স তো বটেই, জেট পেট্রোল (যা দিয়ে প্লেন চলে) তার থেকেও শতগুন বেশি এনার্জি দিতে পারে। এমন কিছু যা একবার গাড়িতে ঢুকালে এক মাস জ্বালানী নিয়ে আর চিন্তা করা লাগবে না।
এর নাম হচ্ছে হাইড্রোজেন ফিউল। ইলেক্ট্রসিস এর মাধ্যমে পানি থেকেই সম্ভব এই জ্বালানী তৈরি করা। গাড়িতে দিলে পাইপ দিয়ে কালো ধুয়া না বরং পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ পানি বের হবে। ব্যাটারি গাড়ির মত চার্জ হওয়ার জন্য অপেক্ষা না, বরং একবার ফিউল নাও এক মাস চালাও।
আমরা একটা হাইড্রজেন ইকোনমি হলে তেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ুক বা ১৫০০; সমস্যা নাই। আমাদের "তেল" আমরা নিজেরাই বানাতে পারব। বিশ্ব রাজনীতির কাবাডিতে আমাদের মাথা ঘামায় লাভ নাই, টাইমও নাই।
হাইড্রোজেন এর বেশ কিছু লিমিটেশন ছিল। খুব এনার্জি ডেন্স হওয়ায় এটা আক্ষরিকভাবে বোমা বলা যায়। একই লিমিটেশন ডিজেলেরও ছিল। এখন কেউ কি ডিজেল গাড়ি সামনে দিয়ে গেলে ব্লাস্ট হবার ভয়ে আত্না কেপে উঠে? হাইড্রজেনেও সেই নিরাপত্তা আছে। শক্তির চাহিদা বাড়লে শক্তির উৎসের ডেন্সিটি বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। নাহলে এখনো আমরা শুকনা কাঠ দিয়েই রান্না করতাম। আমাদের বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।
জাপান ইতোমধ্যেই সংকল্প করেছে নিজেদের হাইড্রোজেন সোসাইটি বানানোর। তাদের হাইড্রোজেন গাড়ি, বাস, ট্রাক সবই আছে। আমাদের মত ওয়েল প্রাইস-সেন্সিটিভ দেশের জন্য হাইড্রোজেন আশীর্বাদ হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:০৮