ডেরেক রেডমন্ডের নাম শুনেছেন?
১৯৯২ সালের অলিম্পিক আসর টা হয়েছিল বার্সেলোনাতে। ডেরেকরেডমন্ড ছিলেন দৌড়বিদ। সে আসরে ৪০০ মিটার দৌড়ের হিটে সেরা টাইমিং করে সেমিফাইনালে উঠেছিলেন তিনি। ছিলেন সোনার পদকের অন্যতম দাবিদার। শুরুটা একটু পিছিয়ে থেকে করলেও ২৫০ মিটারে গিয়ে শুরু করেন গতির ঝড়। হঠাৎ ডান পায়ের পেশিতে পড়ল টান। রেডমন্ড গতি কমাতে বাধ্য হলেন। থমকে বসে বসলেন ট্র্যাকে। ততক্ষণে শেষ হয়ে গেছে দৌড়। শেষ হয়ে গেছে স্বপ্ন।
কিন্তু রেডমন্ড আবারো উঠে দাঁড়ালেন। ওই অবস্থায় হাঁটাই সম্ভব না, তবুও এক পায়েই লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন। এই চেষ্টার তো কোনো মানেই হয় না। একজন কর্মকর্তা এগিয়ে এলেন সাহায্য করতে, ট্র্যাক থেকে নিয়ে যেতে। কিন্তু তিনি নাছোড় বান্দা, দৌড় শেষ করবেনই রেডমন্ড! সে সময় সাদা টি-শার্ট, ক্যাপ পরা মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক গ্যালারি থেকে ছুটে এলেন। নিরাপত্তাকর্মীরা আটকাতে চাইলে সেই ভদ্রলোক কী যেন একটা বলতেই পেয়ে গেলেন ছাড়। হঠাৎ রেডমন্ড শুনলেন পাশ থেকে চেনা এক কণ্ঠস্বর, ‘ডেরেক ভয় নেই, আমি আছি তোমার পাশে!’ সাদা টি-শার্ট পরা ওই ভদ্রলোক ছিলেন রেডমন্ডের বাবা। বাবাকে পেয়ে কান্নার দমক আর আটকে রাখতে পারলেন না রেডমন্ড!
নিজেকে কিছুটা সামলে বাবার এক কাঁধে ভর দিয়ে বললেন, ‘আমাকে দ্রুত ৫ নম্বর লেনে নিয়ে যাও, আমি দৌড়টা শেষ করব বাবা, দ্রুত দ্রুত।’ কয়েকজন কর্মকর্তা এগিয়ে এলেন পিতা-পুত্রকে এই ‘অর্থহীন’ দৌড় থামানোর জন্য। কিন্তু তাঁরা হাল ছাড়লেন না।
ডেরেক, এভাবেই ছুঁয়ে ফেললেন ফিনিশিং লাইন, খোঁড়াতে খোঁড়াতেই। বাইরের কারও সাহায্য নিয়ে দৌড়ানোয় ওই দৌড়ে তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই ‘অযোগ্য’ দৌড়টাই অলিম্পিক ইতিহাসের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি হয়ে আছে। সেদিন পুরো গ্যালারি উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান আর অভিবাদন জানিয়েছিল তাঁকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেবার ৪০০ মিটার দৌড়ে কে সোনা জিতেছিল, কে পেয়েছিল রুপা বা কে ব্রোঞ্জ জিতেছিলএসব কি কেউ মনে রেখেছে? উঁহু, রাখে নি। সবাই মনে রেখেছে ‘বাতিল’, ‘অযোগ্য’ সেইরেডমন্ডকেই!
যে তোমাকে মূল্য দিতে চায় না কিংবা যার কাছে তোমার নুন্নতম মূল্য নেই, তার সাথে কথা বলা কি খুব বেশি জরুরী? কখনোই নয়। তুমি তোমার মত করে চল। তোমার স্বপ্নের পথে চল। জীবনটা দাবা খেলার মত। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে রয়েছে এর রহস্য। আমি বলি কি, মানুষ সে রহস্যগুলো জানার জন্যই বেঁচে থাকে। মানুষ যে কোন কিছুর শেষ দেখতে চায়। মানুষের নিরন্তর ছুটে চলা শেষ দেখার জন্যই।
ডু সামথিং ডিফারেন্ট ম্যান! নট নেসেসারি, যে তোমাকে সবসময়ই সেরা হতে হবে। তবে তোমাকে নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তোমার স্বপ্নের সাথে লেগে থাকতে হবে। রিড ইউর মাইন্ড। টাচ ইউর ইমোশন। ক্যাচ ইউর ড্রিম। নিজে জিততে না পারো, অন্তত এমন কিছু করে যাও, যেন অন্য হাজার টা মানুষ তোমার কাছ থেকে বিজয়ী হওয়ার শিক্ষা টা নিতে পারে। মাঝে মধ্যেকাউকে বুঝিয়ে দিতে হয়, ‘বর্ণ টা না হয় আমি আর আপনি মিলে সাজাই, বাকিরা দেখবেন ঠিকই বাক্য রচনা করবে।’
এরকম বেশ কিছু অনুপ্রেরণার গল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে আমার প্রথম বই 'স্বপ্নের চিলেকোঠা'। যা আপনার জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবাবে, নতুন করে বেঁচে থাকার সাহস যোগাবে। বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণ এখন পাওয়া যাচ্ছে 'নওরোজ কিতাবিস্তানের' '১১২-১১৩-১১৪' নং স্টলে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১২