somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'ত্রয়ীর দুঃখ'

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের রাতে ত্রয়ীর সাথে আমার বেশ কথা কাটাকাটি হয়েছিল। সে রাতে আমি খুব মাথা গরম করে ফেলছিলাম। শেষমেশ আমরা সম্পর্ক চুকিয়ে দিলাম। আমরা কেউই কাউকে আর কখনও ফোন করবো না বলে ফোন রেখে দিলাম। সে কেঁদেছিল কিনা আমি জানি না। তবে ফোন রাখার পর আমি খুব কান্না করেছিলাম। একপর্যায় আমার ঘুম চলে এল।

পরদিন সকাল ৯ টায় একটি ফোন পেয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গে। আমি চোখ মুছতে মুছতে ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে ত্রয়ীর কণ্ঠ ভেসে আসল। ত্রয়ী জানতো, তার নাম্বার থেকে ফোন করলে আমি ফোন পিক করবো না। তাই আননোউন নাম্বার থেকে ফোন দিল। সে আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলল, ‘তোমার সাথে আমার কিছু ইম্পরট্যান্ট কথা আছে। তোমার সাথে দেখা করা দরকার। এই মুহূর্তেই!’ আমি সোজা জানিয়ে দিলাম ‘পারবো না। আমি ব্যস্ত আছি।’ শেষ অবধি আমি তার কথা ফেলতে পারলাম না।

আমাদের চিরাচরিত দেখা করার স্থান পাবলিক লাইব্রেরিতে গেলাম। গিয়ে দেখি ত্রয়ী বসে আছে। অন্যদিনের মত আজও সে কালো বোরকা পরেছে। কিন্তু ম্যাজেন্ডা কালারের হিজাব পরাতে তাকে সাক্ষাৎ রাঙ্গাপরী লাগছে। আমি তাকে নিয়ে পাবলিক লাইব্রেরির পেছনের ক্যান্টিনের সামনে বসলাম। সে আমার মুখোমুখি বসল। এক দৃষ্টিতে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি বললাম, ‘কেন ডেকেছ বল?’ আমার কথা শুনে সে আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন আমি তার কাছ থেকে কিডনি ধার চেয়েছি। সে হেসে দিল। আমি না হাসার ভান করে থাকতে পারলাম না। ত্রয়ী আমার জীবনে একমাত্র মানুষ যার সামনে গেলে আমি মন খারাপ করে থাকতে পারি না। স্রষ্টা তার মধ্যে সব ধরণের গুণ ঢেলে দিয়েছেন। তবে বড্ড রাগী একটা মেয়ে। সেজন্যই তার সাথে আমার অযথা ঝগড়া লাগে।

অসারতা ভেঙ্গে ত্রয়ী বলল, ‘তুমি আমার সম্বন্ধে কতটুকু জানো?’ আমি সাফ জানিয়ে দিলাম, ‘তুমি একটা ফাজিল, বদের হাড্ডি, কাইল্লা, ডঙ্গিলা।’ সে বোধহয় আমার উত্তর শুনে খুশী হতে পারলো না। সে আমার হাতের মুঠি চেপে ধরল। তারপর বলল, ‘তুমি কি কখনও সিরিয়াস হবা না?’ আমি হেসে বললাম, ‘কে বলল, আমি সিরিয়াস না। এই যে তোমার সাথে সিরিয়াসলি প্রেম করছি, সিরিয়াসলি ঝগড়া করছি, সিরিয়াসলি দেখা করতে এসেছি। এর চেয়ে বেশি আর কি সিরিয়াসনেস চাও?’ বিরক্তি ভরা কণ্ঠে সে বলল, ‘উফ, তুমি না...............!’

সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তার দিকে। আমদের দৃষ্টি জুড়ে মাদকতা স্পষ্ট। চারপাশে শুনশান নীরবতা। হঠাৎ তার চোখের কোণে জল দেখতে পেলাম। তাহলে কি সে কাঁদছে? কিন্তু কেন? আমি তো তাকে সেরকম কিছুই বলি নি। সে মাটির দিকে তাকিয়ে কান্না করছে। তাকে কান্না করার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। সে কিছুই বলল না। ডান হাত দিয়ে তার থুতনি স্পর্শ করলাম। সে আমার চোখে চোখ রাখল। তখনও কান্না করে যাচ্ছে। সে মুহূর্তে সে বলল, ‘বর্ণ, আই এম ম্যারিড।’

তার কথা শুনে আমি হেসে দিলাম। নির্ঘাত সে আমার সাথে মজা করছে। হাউ ফানি, ছয় মাসের রিলেশন আমাদের। আর এখন বলে সে নাকি ম্যারিড! সে বলতে শুরু করল, ‘হ্যাঁ বর্ণ,আই এম ম্যারিড।’ এবার আমার মাথায় রক্ত খেলে গেল। ঝাঁঝালো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মানে কি?’ ত্রয়ী আমার কথা কোন উত্তর দেয় নি। সে মুহূর্তে ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করল। তখন বুঝতে পারলাম তার হাজব্যান্ড মালয়শিয়াতে থাকে। দুই দিন বাদেই সে হাজব্যান্ডের কাছে যাবে। তাহলে আমি কে ছিলাম? আমার অস্তিত্ব কি? সত্যিই কি আমি কেউ ছিলাম?

তার পর তিন বছর কেটে গেল। কাল রাতে সে আমাকে মালয়শিয়া থেকে ফোন করেছে। ‘তার হাজব্যান্ড নাকি তার আগে অন্য একজনকে বিয়ে করেছিলেন। আগের ঘরে তাদের দুইটি বেবি আছে। ত্রয়ীর অবশ্য কোন সন্তান হয় নি। ডাক্তার বলেছে, সে নাকি বেবি পারসিভ করতে পারবে না।’ বলেই সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। আমি একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ফোন রেখে দিলাম। ত্রয়ীর জন্য আমার খারাপ লাগলো। কিন্তু কেন যেন আমার মনে হল, ‘মানুষ তাই পায়, যা সে করে।’

তারপর থেকে অনেকেই আমার জীবনে অনেকেই আসতে চেয়েছে। কিন্তু কাউকে আমি গ্রহণ করতে পারি নি। কারণ
ত্রয়ীর মত করে কাউকে যে ভালবাসতে পারবো না।! আমি বর্ণ ছিলাম, বর্ণই আছি। বর্ণের ছোঁয়ার মাধ্যমে গল্প লিখে বেড়াই। বর্ণ ছড়িয়ে বেড়াই। বর্ণ খুঁজে বেড়াই। লিখে যাই জীবনের গল্প! লিখে যাই গল্পের জীবন! দুই আঙ্গুলে নির্ণয় করি কিছু মানুষের নিয়তি!!!


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×