somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আচ্ছা, একটি বইয়ের প্রকৃত মালিক কে?

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আচ্ছা, একটি বইয়ের প্রকৃত মালিক কে?

যে লেখক টানা কয়েক মাস দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটি বই লিখেন তিনি কি সেই বইয়ের প্রকৃত মালিক? যে প্রকাশক অর্থ লগ্নি করে বইটি ছাপেন তিনিও কি বইয়ের প্রকৃত মালিক? তাহলে বইয়ের প্রকৃত মালিক কে? যার নামে গ্রন্থস্বত্ব দেওয়া হয় তবে কি তিনি প্রকৃত মালিক? না তাদের কেউই তো প্রকৃত মালিক নন। তবে বইয়ের প্রকৃত মালিক কে? তাহলে যিনি নিজের পকেটের টাকা খরচ করে বইটি কেনেন তিনি বোধহয় বইটির প্রকৃত মালিক। সত্যিই কি তিনি বইয়ের প্রকৃত মালিক? না। তিনিও বইয়ের প্রকৃত মালিক নন। লেখক, প্রকাশক, স্বত্বাধিকার কিংবা ক্রেতা কেউই যদি বইয়ের প্রকৃত মালিক না হয়ে থাকেন তবে বইয়ের প্রকৃত মালিক কে?

সাধারণত আমরা জানি, যে কোন বইয়ের মালিক হল সে বইয়ের লেখক। কারণ তার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে বইটি বইয়ের রূপ পেয়েছে। তারপর প্রকাশক তা ছাপিয়েছেন। ভুলে গেলে চলবে না, আমরা এখানে বইয়ের মালিকের কথা বলছি না। আমরা বলছি বইয়ের প্রকৃত মালিকের কথা। মানে, বইটির শেষ আশ্রয়স্থল কোথায় কিংবা কার কাছে পৌঁছানোর জন্য বইটিকে ছাপা হয়। আর যার কাছে বইয়ের শেষ আশ্রয়স্থল তিনিই হলেন বইয়ের প্রকৃত মালিক।

হ্যাঁ, যে কোন বইয়ের প্রকৃত মালিক হল সে বইয়ের পাঠক। একমাত্র পাঠকই পারে যে কোন বইকে আশ্রয় দিতে। এত কষ্ট করে লেখক বইটি লিখেন এবং প্রকাশক তা ছাপেন। তারা কেন এত কষ্ট করেন? কেবলই একটি বই ছাপানোর জন্য? উঁহু। তারা এত কষ্ট করেন বইটি পাঠকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

যখন বইটি পাঠকের হাতে পৌঁছে যায় তখন বইটি আর লেখকের থাকে না। বরং তখন বইটি হয়ে ওঠে কেবলই পাঠকের নিজের। বইটি লেখার সময় লেখক যে ভাবনা নিয়ে লিখেছেন পাঠকের হাতে বইটি পৌঁছানোর পর লেখকের ভাবনা নিতে পাঠক দায়বদ্ধ নয়। এমনকি বইয়ের লেখা প্রতিটি শব্দ কিংবা প্রতিটি বাক্য পাঠক তার নিজের অনুভূতির সাথে মিশিয়ে নেয়। বইটি পড়া শেষ করে হয়তো পাঠক হাসে, কাঁদে, ভাবে কিংবা স্তব্ধ হয়ে থাকে এ সবই হয়ে থাকে পাঠকের একান্ত নিজের অনুভূতির জায়গা থেকে। এটাকে ‘ডেথ অফ অথর’ ও বলা যেতে পারে। তারমানে পাঠকের হাতে বইটি পৌঁছানোর পর লেখকের বইটি হয়ে যায় পাঠকের ব্যক্তি অনুভূতির জায়গা। যার কারণে বইটির প্রকৃত মালিক এর পাঠক।

আচ্ছা, পাঠক যদি বইয়ের প্রকৃত মালিক হয়েই থাকে তাহলে উক্ত বইয়ের জন্য তার কি কোন দায় নেই? একটুও দায় নেই? সে কেবলই পাঠক? এইটুকুই তার দায়? কেবল এইটুকুই?

সঙ্গত কারণেই আমাকে বইয়ের প্রচারণা সম্পর্কিত কিছু কথা বলতে হচ্ছে।

কয়েকদিন ধরে বইয়ের প্রচারণা নিয়ে অনেকের মাঝে বিভ্রান্তি দেখতে পেলাম। তাদের ধারনা, বই প্রচারনার জিনিস নয়। সাহিত্য প্রচার করে কি হবে? আমি অবাক হয়ে ভাবলাম, সত্যিই কি বই প্রচারনার জিনিস নয়? সাহিত্য কি প্রচারনার জিনিস নয়? যদি তা হয়ে থাকে তবে কেন বই প্রচারনার জিনিস নয়? এটা কি আমাদের গোঁড়ামি নয়?

টেলিভিশনে সুন্দর নাটক কিংবা মুভি দেখলে আমরা তো ঠিকই রিভিউ দিয়ে অন্যকে তা দেখতে বলি। শ্রুতিমধুর কোন গান শুনলে অন্যকে তা শুনতে বলি। কোন রেস্টুরেন্টের খাবার ভালো লাগলে তা নিয়ে হইচই ফেলে দেই। দর্শনীয় কোথাও ঘুরতে গেলে সাথে সাথে চেক ইন দিয়ে নিজের অস্তিত্বের কথা জানান দেই। এসব কি প্রচারনা নয়? এতসব জিনিস নিয়ে প্রচারনা করলে তো কারো কোন মাথাব্যথা দেখা যায় না। তাহলে বই নিয়ে প্রচারনা করলেই কেন তা মানুষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দেয়? এটা কি আমাদের হীনমন্যতা নয়?

আমি মনে করি, এটা আমাদের যতটা না হীনমন্যতা তার চেয়ে বেশি হল আমরা আউট অফ দ্যা বক্স ভাবতে পারি না। এমনকি কেউ তা ভাবতে গেলে তাকে থামিয়ে দেবার চেষ্টা করি। কিন্তু কেন রে ভাই? বইয়ের প্রচারনা কি খারাপ? আমাদের দেশের পাঠক গোষ্ঠী অনেক বড়। অনেক অনেক বড়। সকল পাঠকের চাহিদা এক নয়। তারা নানান ধরনের বই চায়। অনেকক্ষেত্রে তারা যে ধরনের বই চায় সে ধরনের বই খুঁজেই পায় না। এক্ষেত্রে বইয়ের প্রচারনা পাঠককে তার চাহিদা অনুযায়ী বই খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

একটা কথা বলে রাখা দরকার, বইয়ের প্রচারনা মানে এটা নয় যে বই নিয়ে কেবল ভালো ভালো কথা বলতে হবে। কোন সমালোচনা করা যাবে না। বরং বই নিয়ে প্রচারনা বলতে আমি বুঝি, ‘বই নিয়ে কথা বলা।’ সেটা যে কোন ধরনের হতে পারে। সেটা হতে পারে বইয়ের প্রিয় একটি লাইন নিয়ে কথা বলা, সেটা হতে পারে বইয়ের প্রিয় ক্যারেক্টার নিয়ে কথা বলা, সেটা হতে পারে গল্পের প্লট নিয়ে কথা বলা কিংবা সেটা হতে পারে লেখকের গঠনমূলক সমালোচনা করা। যেন লেখক নিজের ভুলগুলো শুধরে নিতে পারেন। মোদ্দা কথা, বইয়ের প্রচারনা বলতে বইয়ের অস্তিত্বের কথা জানান দেওয়া।

অনেকেই হয়তো বলবেন, কোন বই সুখপাঠ্য না হলেও কি প্রচারনা করার প্রয়োজন আছে? সেক্ষেত্রে আমি বলবো, দেখুন কোন বই সুখপাঠ্য হবে, কোন বই সুখপাঠ্য হবে না তা নির্ধারণ করবে পাঠক। আবার কোন বই কালের সাক্ষী হবে কিংবা কোন বই কেউই মনে রাখবে না তা বলে দেবে সময়। তবে আগে তো পাঠকের কাছে বই পৌঁছাতে হবে। বইটি সম্বন্ধে পাঠককে জানতে হবে। কোন বই সম্বন্ধে পাঠক যদি না’ই জানে তবে সে কিভাবে বই সংগ্রহ করবে?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, লেখকেরা নিজেদের মধ্যে নিজেদের বইয়ের প্রচারনা করেন। অন্য কেউ সেই অর্থে প্রচারনায় এগিয়ে আসে না। কারণ তারা মনে করেন, বইয়ের প্রচারনা করার দায়িত্ব কেবলই লেখকের। আচ্ছা, বইয়ের প্রচারনা কি কেবল লেখকের একার দায়? আর কারো দায় নেই? বিশেষ করে পাঠকদেরও কি কোন দায় নেই?

কেন দায় থাকবে না? পাঠকই যে বইয়ের প্রকৃত মালিক! কেবল পাঠকই পারে যে কোন বইকে তার প্রাপ্য স্থানটুকু বুঝিয়ে দিতে। তবে হ্যাঁ, আশার বাণী এই যে, গত কয়েক বছরে কিছু পাঠক নিজ থেকে বইয়ের প্রচারনা করছে। বই নিয়ে প্রচুর কথা বলছে। ভালো বইকে সকলের সামনে তুলে ধরছে। এটা অনেক বড় ব্যাপার। তবে এই সংখ্যাটা খুবই কম। অধিকাংশ পাঠক বই নিয়ে কথা বলছে না যদিও তারা বই ঠিকই পড়ছে। তারা চাইলেই বই নিয়ে কথা বলতে পারে। তারা চাইলেই সাহিত্যাঙ্গনে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। তারা চাইলেই তাদের চারপাশের লেখকদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে পারে। তারা চাইলেই এদেশের সাংস্কৃতিতে নতুন এক সূর্যোদয় উপহার দিতে পারে। পাঠকদের ক্ষমতা অসীম। তারা সব পারে। সব! কেবল ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে আমাদের পাঠকরা নতুন এক আগামীর স্বপ্ন দেখাতে পারে।

প্রিয় পাঠক, তাহলে চলুন না। এখন থেকে আমরা না হয় নতুন আগামীর জন্য আমাদের পথ চলা শুরু করি। আপনার পাশের যে মানুষগুলো লেখালেখি করছে তাদের লেখা পড়ে ভালো কিংবা খারাপ বলার দায়িত্বটুকু আপনার নিজেরও। তাদেরকে শুধরে দেওয়া কিংবা নতুনদের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্বও কিন্তু আপনারই। তাহলে চলুন না। আমরা নতুন করে আবার শুরু করি। বছরের সবটা সময় জুড়ে না হোক, অন্তত বইমেলার এই মাসটা আমরা বইয়ের প্রচারনা করি। বই নিয়ে কথা বলি। একজন পাঠক হিসেবে আমি আমার চারপাশের দশজন লেখকের বইয়ের প্রচারনার দায়িত্ব নিলাম। আপনি-আপনারা দশজন না পারেন, অন্তত আপনার পাশের লেখকের বইয়ের প্রচারনা দায়িত্ব নেন। সেই লেখক কয়েক মাস যাবত অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটি বই লিখেছেন। কেন লিখেছেন জানেন? কেবল আপনার-আপনাদের কথা ভেবে। যেই লেখক কেবল আপনার কথা ভেবে বই লিখেছেন সেই লেখকের বই নিয়ে কথা বলার একটু দায়িত্বও কি আপনি নিতে পারেন না? তার বই সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কি আপনি এগিয়ে আসতে পারেন না?

তাই চলুন, শুরুটা আমরাই করি। ঠিক এই মুহুর্ত থেকে নতুন এক পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করি। আর ইতিবাচকভাবে পাল্টে দেই এই দেশের সাহিত্যাঙ্গন। যেন মানুষ চায়ের আড্ডায় বই নিয়ে কথা বলে। খেলার ফাঁকে বই নিয়ে কথা বলে। মন কেমনের ক্ষণে বই নিয়ে কথা বলে। সুখ কিংবা দুঃখে বই নিয়ে কথা বলে। জীবনের শ্রেষ্ঠতম অনুভূতির সময়ে বই নিয়ে কথা বলে। ভালোলাগা, ভালোবাসায় বই নিয়ে কথা বলে।

আমরা চাইলেই কিন্তু পারি। আমরা চাইলেই এই দেশের নতুন প্রজন্মকে নতুন এক আগামী উপহার দিতে পারি।
আপনি আপনার জায়গা থেকে, সে তার জায়গা থেকে, আমি আমার জায়গা থেকে, আমরা সকলে আমাদের জায়গা থেকে শুরু করি। দেখবেন আমাদের দেখাদেখি আমাদের পাশের মানুষগুলোও বই নিয়ে কথা বলতে শুরু করবে। এভাবেই বই ছড়িয়ে পড়বে প্রতিটি প্রান্তে। ঠিক এভাবেই!

-গোলাম রাব্বানী
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:২৫
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×