একদিন অফিসের গাড়িতে বাসায় ফিরছিলাম। টঙ্গী কলেজগেটের আশেপাশে কোন এক যায়গায় জ্যামে আটকে আছি। আমাদের গাড়ির পাশে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান জ্যামে আটকা পড়ে আছে। পুলিশের গাড়ি দেখেই আমাদের মার্চেন্ডাইজার শিমুল ভাইয়ের মন্তব্য "ঐগুলা মানুষ না। কুত্তা..!! ঐগুলারে দেখলেই মুখে থুতু চলে আসে। কুত্তা বল্লে কুত্তারও অসম্মান করা হয়" পুরা গাড়ির মানুষ আমরা চুপ হয়ে গেলাম। তার বলাতেই যেন এক প্রচন্ডরকম ঘৃণা প্রকাশ পাচ্ছিল। এরকম আলোচনায় নিজের পরিবারে কেউ পুলিশ আছে এরকম কথা মনে পড়লেই কেমন জানি অস্বস্থিতে পড়ি। কিছুখক্ষণ চুপ থেকে অবশ্য আমিও আলোচনায় যোগ দিলাম। বন্ধু বান্ধবের মধ্যে যাদের বাবা, ভাই বা আত্বীয় স্বজন (ঘনিষ্ঠ) কেউ পুলিশে আছে তারা সবসময়ই এরকম আলোচনার সময় আগেই বলে নেন যে "আমার বাবা সৎ পুলিশ অফিসার"। তার মানে সব পুলিশই খারাপ কিন্তু আমার বাবা/ভাই নন। আজকে রাজশাহীতে শিবিরের পোলাপানরা একপুলিশকে পিটিয়ে আধামরা করছে। মিডিয়াগুলা আর সেই সাথে আওয়ামলীগাররাতো অবশ্যই,শিবিরের এহেন কর্মকান্ডকে ব্যাপক অমানবিক বলে আখ্যায়িত করবেন। ঘটনা যেহেতু রাজশাহীতে আর শালবাগান এলাকায় তাই প্রথমেই আমি বন্ধু সিফাতকে ফোন দিলাম-
-"কিরে খুব নাকি মাইরপিট চলছে তোর বাড়ির সামনে?"
- "আর কইসনা, যে মাইর দিলরে ভাই"
-আমি বল্লাম, কি দিয়া?
-"খালি হাত আর হেলমেট দিয়া" পরে অবশ্য দেখলাম ইট দিয়েও মারছে।"
- যাই হোক সিফাত জানাল যে পরে ও নাকি দৌড় দিয়ে গিয়ে আহত পুলিশকে সাহায্যও করছে। আমি একটু হাসলাম। কারণ সিফাতের চাচা রাজশাহীর সাবেক মেয়র এবং সংসদ সদস্য আর বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। সুতরাং তার অবস্থানে থেকে এরকম পুলিশ সেবা করার বিষয়টা নিয়ে একটু হাসলাম।
-বল্লাম বাহ্ খুব পুলিশ সেবা করছিস তাইলে?
-"আরে না, পুলিশ সেবা না দোস্ত মানুষ সেবা করলাম"
পরে অবশ্য টিভিতে সব ভিডিওতেই সিফাতের ফুটেজ দেখলাম। বিকেল বেলা সিফাতকে আবার ফোন দিলাম। ও জানাল আহত পুলিশ সদস্য আমাদের এক বন্ধু "রনি"-র বাবা আর রনিও ছাত্রদল এবং বিএনপি করে।
এবার হয়ত আওয়ামলীগাররা আর আহত পুলিশ সদস্যকে নিয়ে আগ্রহ হারাবেন, উনি বিএনপি সমর্থক বলে। যাই হোক আজ আহত পুলিশকে সাহায্যে জন্য এখনও কিছু মানুষ সাহায্যের হাত বাড়ায়। কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের এই যে "কুত্তা পুলিশগুলো দশজন বিশজন মিলে একজনকে বুট দিয়ে, লাঠি দিয়ে, শটগান আর চাইনিজ রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে আহত করেই ক্ষান্ত হয়নি, হ্যান্ডকাফ পরানো অবস্থাই পায়ে/মাথায় শটগান লাগিয়ে গুলিও করেছে অসংখ্য যায়গায়" পুলিশ নাকি জন গনের জানমালের নিরাপত্তা দিতেই এমন এ্যাকশানে যায়। বুঝে পায় না যে মানুষগুলোকে গুলি করে হত্যা করা হল তারা জনগণের কাতারে পড়ে কি না??? আর তারা যখন পুলিশের শটগান, চাইনিগ রাইফেল, টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড, গ্যাস গ্রেনেড, জল কামানের বিরুদ্ধে ইট, গুলতি, লাঠি, পটকা সদৃস ককটেল নিয়ে প্রতিরোধে নামে তখনও অবাক হই এই ভেবে যে এরা পাগল কি না"!!??