
ব্লগে সিংগেল মাদারদের নিয়ে এক উদ্ভট ও অদ্ভুত পোস্ট চোখে পড়েছিল কিছুদিন আগে। তার পোস্টে আমি, রানার ব্লগ, নতুন ভাই সম্ভবত তার সাথে সহমত ভাই পোষণ করিনি। ঠিক মনে পড়ছেনা কে কে মন্তব্য করেছিলেন। খুব সম্ভবত (ভুল ও হতে পারে) সাসুম ভাই আর নতুন ভাই এর মন্তব্য স্বাভাবিক ভাবে দিলেও আমি এবং রানার ব্লগ ভাই এর মন্তব্য ব্যাকা ভাবে দিয়েছিলেন। ওনার মন্তব্যের জবাব দেখে বুঝেছিলাম ভিন্নমত গ্রহণ করার মতো শিক্ষা তিনি অর্জন করেননি তাই প্রতিমন্তব্যে কটাক্ষ করেছিলেন হালকা। তখনই প্ল্যান করে রেখেছিলাম বাঁধনের জন্মদিনে এই পোস্টটি লিখবো।
সিনিয়র আপুর প্রতি অনেকেই ক্রাশ খান।আমাদের দেশে এই চর্চা শুরু হয়েছে। এখনো সিংহভাগ সিনিয়য় আপু জুনিয়রদের সাথে প্রেম করার কথা চিন্তা পর্যন্ত করতে পারে না। আমাদের পরিবার ও সমাজ বিষয়টাকে সহজ ভাবে নিতে পারেনা। কোটি কোটি ছেলে আছে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র আপুর প্রেমে পড়ে। একটি জুনিয়র মেয়ের প্রেমে পড়া স্বাভাবিক ভাবে বিবেচনা করা হয় সিনিয়রদের প্রেমে পড়লে অস্বাভাবিক ভাবা হয়। অনেক সিনিয়র আপু আছেন জুনিয়র পোলা প্রপোজ করলে একসেপ্ট করা তো দূরের কথা উল্টো মাইর দিবে। উহা ঠিক নয়। প্রেমের কোন বয়স নেই।
ইদানীং বেশ কিছু নাটক আসছে যা নতুন প্রজন্মের কাছে উপভোগ্য। অনেক আগে একটা নাটক দেখছিলাম।নাটকের নাম ত্রিকোণমিতি। নাটকের মূল কাহিনী হইল, একটি ছোট ছেলে সিনিয়র আপুর উপর ক্রাশ খায়।চেলেটির বাসার জানালা আর মৌটুসীর জানালা লাগানো। তাই ছেলেটি আইয়ুব বাচ্চুর বিভিন্ন প্রেমের গান ফুল ভলিউমে প্লে করে ইমপ্রেস করে। মৌটুসী ইমপ্রেসও হয়। প্রেমও করে হালকা পাতলা। পরে মারজুক আসলে জুনিয়র স্কুল বয়টিকে ইগনোর করে। পরে স্কুল বয় আরেকটা স্কুল গার্ল এর সাথে প্রেম করে। নাটক শেষ হয় এক রিক্সায় মারজুক ভাই আর মৌটুসী ঘুরে অন্য রিক্সায় স্কুল বয় আর স্কুল গার্ল।দেখার মতো একটি নাটক।
যাই হোক আমার জীবনে দুইজন সিনিয়র ক্রাশ আছেন। তার মধ্যে একজন বাঁধন। আমি যাদের খুবই পছন্দ করি তাদের সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হবে।আমার অসুন্দর ও জটিল মানসিকতার কোন বন্ধু নেই।রেহেনা মারিয়াম নুর মুক্তি পেয়ে বাঁধন বিখ্যাত হওয়ার আগে কতো স্ট্রাগল করেছেন তার সাক্ষী যারা আমি তাদের মধ্যে একজন। ২০২১ এ চট্টগ্রাম ক্লাবে আমার শোতে বাঁধন এটেন্ট করেছিল শ্যুটিং এর শিডিউল ক্যানসেল করে। ব্যবসা/প্রফেশন/টাকার চেয়েও প্রকৃত সম্পর্ক ও বন্ধুত্বগুলোকে বেশী মূল্যায়ন করে বাঁধন তাদের মধ্যে অন্যতম। ২০০৬ সালে যখন বাঁধন লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারে রানার্স আপ হয়েছিল তখন থেকেই আমার ক্রাশ। চমৎকার পারসোনালিটি ৩৭ বছর বয়সী এই অসাধারণ মাল্টিট্যালেন্টেড মডেল ও অভিনেত্রীর। তার যে দিকটা সে আমার ক্রাস তা হলোঃ পুরুষতান্ত্রিকদের যম বাঁধন। পাত্তাই দেয়না ওদেত ডার্টি মানসিকতা ও কালচারকে।
ওপার বাংলার সুমন ভট্টাচার্য নামে একজন লিখেনঃ
"রেহানা মারিয়ম নুর থেকে মুসকান জাবেরী। ঢাকা থেকে কলকাতা আপাতত আপ্লুত এক বাংলাদেশি অভিনেত্রীর অভিনীত বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে। কান এ তাঁর অভিনয় নিয়ে নিয়ে হইচই শুরু হওয়ার পর থেকে আজমেরি হক বাঁধনকে নিয়ে যে আগ্রহ এপার বাংলা দেখাচ্ছে, স্মরণাতীত কালের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি 'মুসলিম মহিলা'কে নিয়ে সেই উচ্ছ্বাস চোখে পড়েনি।
আমি আজমেরি হক বাঁধন সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে অভিনেত্রীর আগে বাংলাদেশের 'মুসলিম মহিলা' শব্দবন্ধটি ইচ্ছে করে ব্যবহার করেছি। আমাদের এই ভট্টাচার্য, ব্যানার্জি, চ্যাটার্জি প্রভাবিত কলকাতার বাঙালি সমাজে একজন মুসলিম মহিলার স্বীকৃতি পেতে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়, তারপরে সেই মহিলা বাংলাদেশি হলে আরও কি কি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়, সেই সম্পর্কে একটু ধারণা আছে বলেই কথাগুলো লিখেছি। বাঁধন যে গুরুত্ব পাচ্ছেন, তসলিমা নাসরিনের পরে আমি কোনো বাংলাদেশি মহিলাকে এপার বাংলায় সেই গুরুত্ব পেতে দেখিনি। এবং ধর্মকে কেন্দ্র করে বিতর্ককে বাদ দিলে তসলিমা আর আজমেরি হক বাঁধনের মধ্যে আশ্চর্য মিল। দুজনেই ডাক্তার, ঘোষিত সিঙ্গল এবং পুরুষতন্ত্রকে 'বাপি বাড়ি যা' র মতো করে মাঠের বাইরে ফেলে দিতে অভ্যস্ত।
বাংলাদেশের প্রথম কোনো সিনেমা হিসেবে সাদ পরিচালিত রেহানা মারিয়ম নুর কান ফেস্টিভাল এ দেখানো এবং সেই প্রদর্শনীর পরে দর্শকদের স্ট্যান্ডিং ওভেশন, তার সঙ্গে কানের প্রতিক্রিয়ায় আপ্লুত বাঁধনের কান্নায় ভেঙে পড়ার ছবি ভাইরাল হওয়া আজমেরি হক বাঁধনকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে। এক সিঙ্গল মাদারের ভূমিকায় আরেক সিঙ্গল মাদারের অভিনয় চলচ্চিত্র বিশ্বকে যতটা আলোড়িত করেছে, তার তুলনা মেলা ভার। হলিউড রিপোর্টার বা স্ক্রিন এর উচ্ছ্বসিত রিভিউ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে যতটা সম্মানিত করেছে, ততটাই অভিনেত্রী হিসেবে, শুধুমাত্র অভিনেত্রী হিসেবে আজমেরি হক বাঁধনের জায়গাকে পোক্ত করেছে। এখানেও আমি ইচ্ছে করেই অভিনেত্রী শব্দটার উপরে যোগ দিলাম। কারণ কান চলচ্চিত্রোৎসবে এই বাঙালি অভিনেত্রীকে নিয়ে তুমুল চর্চা শুরু হওয়ার পর অন্য যে সব বাঙালি নায়িকারা হঠাৎই কানের সমুদ্রসৈকতে রোদ পোয়ানোর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন, তাঁদের খেয়াল রাখতে হবে তুলনাটা অভিনয় নিয়ে হচ্ছে, কে কি পোষাক পরলেন সেটা মুখ্য বিষয় নয়। "
আজমেরী হক 'রেহেনা মারিয়াম নূরের ' আগে তেমন কোন কাজ পায়নি কেন জানেন, কারণ সে ভিষণ স্ট্রেট ফরওয়ার্ড। কারও পা চাটেনা। নিজ যোগ্যতার উপর চরম আস্থাশীল। এই কারণে সে আমার এতো প্রিয়। একেবারে ভেতর থেকে সুন্দর একজন মানুষ। ক্রাশ হলেও প্রচন্ড শ্রদ্ধা করি তাঁকে।
জন্মদিনে বাঁধনকে পোস্টটি উৎস্বর্গ করা হলো।
বাঁধনের চমৎকার একটা অভিনয় দেখুনঃ
পোস্টের শিরোনাম - শিরোনাম হীনের হাসিমুখ গান থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




