
ইভানা। ২০/২১ বছরের একটি মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। দেখতে খুবই সুন্দর স্মার্ট আধুনিক কিন্তু সারাক্ষণ অফ মুডে থাকে। মুখের উপর মন খারাপের ছায়া ভাসে সারাক্ষণ। ভিষণ রিজার্ভ। কারো সাথে মিশে না, কথা বলেনা। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি ছেলে তাকে খুব পছন্দ করে। খুব করে এটেনশান পাওয়ার চেষ্টা করে। অনেক ভাবে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করে, কিন্তু মেয়ে এগুলো পাত্তাই দেয়না। ইগনোর করে।ছেলে চিরকুট পাঠায়, টেক্সট করে, নো রেসপন্স। একদিন নিরুপায় হয়ে ছেলেটি মেয়েটির পথ আগড়ে দাঁড়ায়। বলে, 'এক্সকিউজ মি, দেখুন আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমি মেয়েদের রাস্তাঘাটে বিরক্ত করার ছেলে নই, ইভেন এটা আমার পারসোনালিটির সাথে যায়ওনা, আমি আপনাকে প্রপোজ করেছি, আমার ঠিক কোন অযোগ্যতার জন্য একসেপ্ট করছেন না জানতে পারি প্লিজ? '
মেয়েটি বলা শুরু করলো - কিসের প্রপোজ কিসের প্রেম! যত্তসব ফেক! সব ছেলে ফেক, না থেমেই বলা শুরু করল- আমার বয়ফ্রেন্ড, ৩ বছরের সম্পর্ক। একদিন সে আমাকে তার এক ফ্রেন্ডের মেসে নিয়ে গেসে, সেখানের এনভায়রনমেন্ট দেখে মেয়েটি বললো - এখানে কেন? আমরা তো কোন কফি শপ বা রেস্তোরাঁয় মিট করতে পারতাম। বিএফ জবাব দিলো - 'তুমি আমাকে ভালোবাসো তা প্রুভ করতে হবে, তোমাকে আমার সাথে সেক্স করতে হবে!' মেয়ে শাউট করলো। অনেক করে বের হওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু কোন লাভ হলোনা। পশুর মতো ঝাপিয়ে পড়লো বি এফ। ৩ বার রেফ করলো"
ঠিক এই কারণে ইউনিভার্সিটির ছেলেটি ভালো হওয়া স্বত্বেও প্রপোজ এক্সেপ্ট করেনি ইভানা। সম্মান করার মতো বিষয় হলো - ছেলেটি রেপড জানার পরও মেয়েটিকে বিয়ে করেছে।
উপরের কথা গুলো একটি নাটকের কাহিনী হলেও আমাদের সমাজে এই চিত্র ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বয় ফ্রেন্ডের মুখোশ পরা অসংখ্য ধর্ষক ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ একটা আউটডোর শ্যুট ছিল। শ্যুট শেষে চট্টগ্রামের সি আর বি তে সিরিশ তলে চা বিড়ি খাচ্ছিলাম আমি আর সাবরিন। পাশে ৫/৬ টা ছেলে আড্ডা দিচ্ছলো, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে হয়তো। হঠাৎ কানে আসলো - ঐ তর জিএফ মাল ব্যাটা, তাড়াতাড়ি খে** দে, না হলে অন্য পোলার লগে ভাগবে! বি এফ এর জবাবঃ সময় লাগবে দোস্ত! দেখুন কাণ্ড! ঐ মেয়ে আপোসে রাজী না হলে নাটকের ইভানার ভাগ্য বরন করতে হবে।
খারাপ লাগলো। ছোট ছোট ছেলে গুলোর নোংরা কনভার্সেশন শুনে। প্রেম আমিও করছি। কোন দিন জি এফ কে নিয়ে এমন নোংরা চিন্তা আসেনি ব্রেনে। ভালোবাসার প্রধান শর্তটাই হইল রেসপেক্ট।কাউকে রেসপেক্ট করলে তাকে নিয়ে নোংরা চিন্তা মাথায় আসার প্রশ্নই আসেনা। যদি আসে তবে সেখানে প্রেম নেই।
প্রেম আমিও করছি। আমারও জি এফ ছিল। বেশ সুন্দরী ছিল সে। কোনদিন এমন নোংরা চিন্তা মাথায় পর্যন্ত আসেনি। একডজন মেয়ে সহকর্মী আমার সাথে কাজ করে। একেবারে টপ লেভেলের সুন্দরী। জীবনে কোনদিন এভাবে চিন্তা করিনি ওদের নিয়ে। আসলে আমার আশে পাশে কিংবা ঘনিষ্ঠ বন্ধু গুলোর প্রাই সবাই শিল্পী। শিল্পীদের মনে ক্রিয়েটিভিটি ছাড়া আর কিছু নেই।তাই হয়তো অন্য কিছু ব্রেনে স্থান পায়না।।কিন্তু চিন্তার বিষয় হইলো এ কোন প্রজন্ম বড় হচ্ছে! এরাই আমাদের ফিউচার জেনারেশন! এখনের ইউনি ছেলে মেয়েরা এমন গেট আপ নিয়ে ইউনিতে যায় মনে হয় - ফটোশ্যুট করতে আসছে। পড়ালেখা যে করেনা তা বুঝতে বেশি সময় লাগার কথা না।।
সত্যি চিন্তিত - আমাদের নিজস্ব কালচার রক্ষণশীল। আমাদের দেশে বিয়ে না করে প্রেমের অভিনয় করে একটি মেয়ের সাথে সেক্স করা এখনো অশালীন।ফাস্ট আর স্মার্ট হওয়া মানেই কিন্তু প্রেমের ফাঁদে ফেলে কাউকে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বেডে নিতে না পারলে রেপ বা ব্লেকমেল করা আমাদের দেশে আইনত অপরাধ। এগুলো বন্ধে প্রশাসনকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে।
আমাদের কিছু বাবা মা অনেক কিছুই বুঝেন না। এই যুগেও ছেলে মেয়েদের প্রেমের সম্পর্ক মেনে নেয়না। নিজ ছেলে মেয়ের জন্য যোগ্য পাত্র/পাত্রী খুঁজে বের করার হিড়িকের ফলে অনেক সম্পর্ক বিবাহে রূপ নেয়না। ফলে বিচ্ছেদ থেকেও অনেক ছেলে মেয়ে প্রেমের নামে দেহ ভোগ করার অভিনয় করে অনেক ছেলে/মেয়ের সাথে। এগুলো ঠিক নয়। ৬ ডিজিট বেতনের যোগ্যতায় নির্বাচিত পাত্রে স্বচ্চলতা থাকলেও সুখ খুব কম ক্ষেত্রে পায়। আমাদের দেশে সব উল্টো সিস্টেম। আমাদের জেনারেশন ক্রাশকে ডেডিকেট করতো- জেমসের গানের লাইন * আমি তারাই তারাই রটিয়ে দেবো - তুমি আমার, এখনের পোলাপান এমন সব গান ডেডিকেট করে - লিরিক্স কোনটা সুর কোনটা, ইনস্ট্রোমেন্ট মিউজিক কোনটা আইডেন্টিফাইও করা যায়না।
ফালতু।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



