somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাউয়া

০৭ ই জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
স্কুলের কোরিডোর দিয়ে হাটঁছি। উল্টা দিক থেকে আসছে কাউয়া। দেখেই ফেললাম হেসে। জানি স্যার আমাকে দেখা মাত্র খুব চেষ্টা করবে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকতে কারন আমার সাথে আছেন রাবেয়া খালা, কিন্তু পারবে না একটু পর পর তাকাবে, আর মুখের হাসিটাকে সযত্নে লুকিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করবে। স্যার আজ আমাদের ড্রইং ক্লাশে কাকের ছবি আঁকাবেন। ওয়াও!!!!!!!!!!! কি মজা??????

মাথায় দুষ্টামী বুদ্ধি খেলে গেল। স্যার কে দেখে স্যারের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম মুখে হাসি ঝুলিয়ে। স্যারের কাহাকাছি আসাতেই একটা লম্বা সালাম দিয়ে বললাম ---------''ভাল আছেন স্যার''
স্যারের অবস্থা সঙ্গীন। আমি একটা রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর ভাজতে ভাজতে ওয়াস রুমে চলে গেলাম।

স্যার দৃষ্টি সীমার বাইরে যাবার সাথে সাথে এক দৌঁড় দিয়ে ক্লাশে। ক্লাশে এসে ফ্রেন্ডদের বললাম ''এই শুন সবাই, আমি না কাউয়া কে দেখে একটা হাসি দিয়ে এলাম।'' কথা শুনে তো একে বারে হাসাহাসি পড়ে গেল। এ জিজ্ঞাস করে কেমন হাসি দিয়েছিস। ও বলে মুচকি নাকি ফুচকি হাসি।

হাসাহাসি শেষ হতে না হতেই ইংরেজী পড়াতে হাজির অকে স্যার। স্যার পড়া বুঝানোর সময় কিছুটা বুঝানোর পর, কোন এক জনের দিকে তাকিয়ে বলবেন অকে। আমরা সাথে সাথে কেউ একজন উত্তর দেই------- ''ও শাবনুর স্যার'' আর যদি কোন ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে, তবে বলি--------- ''ওঋত্ত্বিক স্যার'' । এই কাজটা ছাত্ররা বেশী করে। স্যার যাতে ''ওকে'' বলে সেজন্য আমরা প্রায়ই স্যার অকে বলার সাথে সাথে বলতাম ওকে স্যার। স্যারের কোন ভাবান্তর নাই।

কাউয়া স্যার আমাদের ড্রইং স্যার। তার নাম আসলে কাওসার। কাউ মানে গরু + স্যার= গরুস্যার।
একদিন সেফা বলল,'' এই দেখ স্যার না তোর দিকে কেমন করে তাকায়?!!!!!!!!!!!!!! সবাই মিলে শুরু হল, এই কই কই দেখি দেখি,!! কেমন করে তাকায়??????
আরে সত্যি তো; কেমন যেন???????
হায়রে কাউয়া ,-------

আমি এই স্কুলে নতুন সবে মাত্র ক্লাশ সেভেনে এই বছরের মাঝামাঝি ভর্তী হয়েছি। ব্যাপারটা প্রথমে বুঝতে পারিনি। আমারতো রাগে গা গেল জ্বলে। ওরা বলল স্যার হল বিশ্ব প্রেমিক। এখন ও বিয়ে করে নি আর নতুন কোন মেয়ে আসলে তিনি তার দিকে বিশেষ নজর দেন।

আমি বাসায় এসে মাকে বললাম। আর মা শুনেই ফিক করে হেসে দিল। বলল, শুরু হল তোমার জীবনে প্রেমিকদের আনাগোনা। তার মানে কিন্তু তোমার প্রেমে পরা যাবে না, তুমি প্রেমে পরে গেলেই সমস্যা, সারাটা জীবন পরে আছে তখন কি করবে এখনই প্রেমে পরলে।আর মনে রেখ এখন যা করবে তা ভুল করবে। এখন সব কিছুই আবেগের উপর চলছে।

মনে রেখ এখন সবাই তোমার প্রেমিক। রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে সব, কাকে বাদ দেব। তুমি কারও সাথে কথাও বলবে না আর কারও সাথে খারাপ ব্যাবহারও করবে না। স্যার যদি তোমাকে কিছু বলে আমাদের বলো আমরা ব্যাবস্থা নেব। এমন কি ক্লাশের কোন ছেলে বা কলেজের কোন ছেলে কিছু বললেও আমাদের বলবে, তোমার কাউকে ভাল লাগলেও সে কথা আমাদের বলবে।

হঠাৎ করে মা হা হা করে হাসতে শুরু করল। হাসি থামিয়ে বলল ---------শেষ পর্যন্ত ক্লাশ সেভেনে থাকতেই স্কুল মাষ্টার। এই মাষ্টারের কোন কমন সেন্স নাই। এই ধরনের বহু গাধা চারদিকে কিলবিল করছে। ওদের কাজ প্রেমে পড়া আর তোমার কাজ এগুলকে ধুলার মত ঝেরে ফেলে শুধু পড়াশুনা করা আর তোমার পথে এগিয়ে চলা।------------------------- শুরু হল তার লেকচার।
আমি মরি আমার জ্বালায়। আর এটা একটা কথা হল আমার প্রথম প্রেমিকের কমন সেন্স নাই এই কথা মা বলবে কেন, আমার একটা প্রেস্টিজ আছে না। যেই বললাম তুমি কেন বললে স্যারের কমন সেন্স নাই। মা আবার হেসে উঠে বলল -------------ওই গাধাতো এলিভেন বা টুয়েলভ ক্লাশের কারও প্রেমে পরতে পারত তাই গাধা বলছি।
মা আবার হেসে উঠল। এই পরিস্থিতিতে তোমাকে মোটামুটি সারা জীবন পরতে হবে। সব মেয়েদের পরতে হয় । কিচ্ছু করার নাই। আমি মাকে বললাম----------------'' আমরা নাকি খালি হাসি কোন চিন্তা করি না, কেউ কারো কথা শুনি না, সবাই কথা বলি আর হাসি, এখন তো দেখি তুমি বেশি হাস।''

খুব ক্ষেপেছি মার উপর। মা বলল -----------------''কাউকে যদি তোর ভাল লাগে তবে তার নাম ঠীকানা আগে আমাকে দিস আমি তার সাথে মিশে তার পর তোকে বলব তুই তার সাথে মশতে পারিস কিনা।''
ক্ষেপে যেয়ে বললাম--------------- ''হ্যা আমি তার বাবার ঠিকানা এনে দেব।''
মা হাসতে হাসতে বলল ---------''আমার কাছে তো তোর বাবাই আছে।''
আমি ও দিলাম ফিক করে হেসে। আমি বললাম -------''তুমি বল আমি কি করব?' স্যার, তো সমস্যা না -সমস্যা তো ক্লাশের ফ্রেন্ডরা।'' মা বলল --''এটাও সমস্যা না; তুমি নিজেই এটা নিয়ে সবার সাথে হাসাহাসি করো দেখবে তোমাদের সবার টার্গেট স্যার হয়ে, যাবে তুমি না।''
আসলেই মা যে সবসময় বলে আমি আর তোমার বাবা তোমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু এই কথাটা ঠিক।

তবুও ভাবতেই মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে। প্রেমিক জুটবে তো সিনিয়র কোন ভাইয়া। তা না বুইড়া স্যার। কত ছেলে আমাদের স্কুলে। আর আমার জীবনের প্রথম প্রেমিক কিনা এই বুইড়া।

পর দিন স্কুলেও ওই একই ইস্যু। খেপে বললাম -------------''কাউসার তো রে কাউ না, কাউয়া।'' আর যায় কোথায়, সাথে চালু হয়ে গেল কাউয়া, সারা স্কুল কিভাবে যে জেনে গেল ------গরু স্যার হয়ে গেল কাউয়া। আমরা আর স্যার ও বলি না।

যথারীতি স্যার ক্লাশে এলেন। আমরা সবাই প্রস্তুত। স্যার বললেন, ''তোমাদের সিলাবাস এ আছে কাক আকঁতে হবে । খাতা বের করে আঁক।'' বলেই তিনি বর্ডে আকঁতে গেলেন কাকের ছবি। একজন ডেকে উঠল কা কা কা ।
স্যার ঘাড় ঘুরিয়ে বলল------------ ''কে রে? ''
এপাশ থেকে উত্তর এল --''কেউ না, কাক স্যার।''
পড়ে গেল ক্লাশ জুড়ে হাসির রোল। হাসি আর থামে না । এদিকের হাসি থামান তো ওদিকে হাসি শুরু হয়। স্যার কঠিন মুর্তি ধারন করলে, আমি বলি------ ''আর হাসব না স্যার এবারের মত মাফ করে দেন।''

স্যার আমাকে দাড়ঁ করিয়ে জিজ্ঞাস করলেন -----''এই তুমি কোন স্কুল থেকে এসেছ।'' বললাম ----------''ভিকারুন্নেছা স্কুল থেকে।''
স্যার বললেন -----------''ভিকারুন্নেছা থেকে, ও তোমার বাড়ীর ওই দিকেও ভিখারুন্নেছা স্কুল আছে।''
সারা ক্লাশে আবার ও হা হা হিহি রব উঠল।
---------------''বাবার নাম কি? থাক কোথায়? ম্যাস এ?''
আমি বাবার নামবললাম । আর থাকি বাসায়।
-----------বাসা কোথায়?
উত্তর দেবার আগেই পাশ থেকে একজন বলল ''তোর ঠিকানা নিচ্ছে চামে চামে।''
আমি আমার বাসা কোথায় বললাম এবং অপেক্ষা করছি আমার বাবা কি করেন এই প্রশ্নের জন্য। উত্তর শুনে যে ওনার প্রেমিক প্রেমিক ভাব এখুনি উড়ে যাবে তা দেখার জন্য আধীর আগ্রহে আপেক্ষা করছি। উনি আমার বাবা কি করেন জানতে না চেয়ে আমার ঠিকানা চাইলেন। আমি দিলাম আর বললাম ওখানে যেয়ে বাবার নাম বা আমার নাম বললেই সবাই বাসা দেখিয়ে দেবে।
উনি বললেন --------এখানে আসতে না আসতেই তুমি এত পরিচিত হয়ে গেছ। আমি একটা হাসি মুখে ঝুলিয়ে দিলাম।
------------তোমার বাবা কি করেন ? ছাত্রীতো মনে হয় ভাল বছরের মাঝখানে ভর্তি হয়েছ যখন।
বললাম বাবা কি করেন।

উনি একটু ক্ষন চুপ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন -------বস বস । ও আচ্ছা তুমি ঢাকার ভিখারুন্নেসা স্কুল থেকে এসেছ।
স্যার আবার ঘুরলেন বর্ডের দিকে। কাক আকঁবেন, শুরু হল আবার কা কা আবার হা হা হি হি। স্যার নিজে এবার হাল ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ আকঁলেন কাক। ক্লাশ শেষের ঘন্টা পড়লে উনি কাকটা হোম ওয়ার্ক দিয়ে ক্লাশ থেকে চলে গেলেন। স্যার এর প্রেমময় দৃষ্টি আজ পর্যন্ত আর দেখিনি। তবে বেচারা স্যার কাউয়াই রয়ে গেলে। এখন ও স্যারকে দেখলেই কা কা রব শোনা যায়। এবার স্কুল থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করে চলে যাচ্ছি। আমরা কেউ থাকব না কিন্তু স্যার থাকবেন, স্যারের কাউয়া নাম আর ঘুচবে না।

কাকের ছবি পাই নাই।

বিঃদ্রঃ এই পোস্টটি আগেও আমার ব্লগে আমি পোষ্ট করেছিলাম।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×