somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুর কয়েকমাস আগে হুমায়ূন কবিরের কাছে লেখা জীবনানন্দ দাশের ৩টি চিঠি

২৫ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেষ কয়েকবছর কবি জীবনানন্দ দাশ চরম অর্থকষ্টে ছিলেন। তুচ্ছ কারণে একটার পর একটা চাকরি হারিয়েছেন। কলকাতার ১৮৩ নম্বর ল্যান্সডাউন স্ট্রিটের একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। লাবণ্যগুপ্তর অসুস্থতা সহ পুরো পরিবারের ভার তাকে অস্থির এবং ক্রমশ অসহায় করে তুলেছিলো। নিদারুণ অর্থকষ্টে ভাড়াবাড়ির একটা ঘর সাবলেটও দিয়েছিলেন বেআইনিভাবে একজন নর্তকীর কাছে, যিনি কবি'র লেখা পড়ার পরিবেশ এবং সকল নৈঃশব্দ্য ভেঙে দিয়েছিলেন। টিউশনি করেছেন, এমন কি বিমা কোম্পানির দালালি পর্যন্ত করেছেন। টাকা ধার করেছেন সম্ভব-অসম্ভব যে-কোনও সূত্র থেকে : ভাই-বোন, ভাইয়ের বউ, বিমা কোম্পানি, স্কটিশ ইউনিয়ন, সঞ্জয় ভট্টাচার্য, সত্যপ্রসন্ন দত্ত, বিমলাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বাণী রায়, প্রতিভা বসু সহ আরো অনেকের কাছ থেকে। শোধ করেছেন ভেঙে ভেঙে।
মৃত্যুর কয়েকমাস আগে স্বরাজ পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক হুমায়ূন কবিরের কাছে জীবনানন্দ তিনটি চিঠি লিখেছিলেন পরপর। যে চিঠির কোনো প্রত্যুত্তর পান নি তিনি। হুমায়ূন কবির শেষপর্যন্ত কিছুই করেন নি, বা করতে পারেন নি। অবশ্য জীবনানন্দ বেঘোরে মারে যাওয়ার পর তাকে মরণোত্তর সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারটা পাইয়ে দিয়েছিলেন।
-----------------------------------------------------------------------------

চিঠি-১
১৭.৩.৫৪

আমার প্রিয় মিস্টার কবির,
আপনি এখন একটা খুব প্রভাবশালী জায়গায় আছেন। শিক্ষা, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, সাহিত্য, প্রকাশনা এবং অন্যান্য অনেক বিষয় আপনার সাক্ষাৎ তত্ত্বাবধানে আছে, যাদের মাধ্যমে আপনি আমাকে কোনও একটা উপযুক্ত চাকরিতে বসিয়ে দিতে পারেন। দয়া করে কিছু একটা করুন এক্ষুনি। আশা করে রইলাম তাড়াতাড়ি করে আপনি আমাকে কিছু জানাবেন।

শুভেচ্ছা এবং শ্রদ্ধা নিবেদন-সহ
আপনার জীবনানন্দ দাশ

--------------------------------------------------------------------------
চিঠি-২

১৬.৪.৫৪

আমার প্রিয় অধ্যাপক কবির,
বিশিষ্ট বাঙালিদের ভিতর আমি পড়ি না; আমার বিশ্বাস, জীবিত মহত্তর বাঙালিদের প্রশ্রয় পাওয়ার মতনও কেউ নই আমি। কিন’ আমি সেই মানুষ, যে প্রচুর প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রতিটি দ্রব্যকে সোনা বানিয়ে তুলতে চায় অথবা মহৎ কোনও কিছু – যা শেষ বিচারে একটা কোনও জিনিসের-মতন-জিনিস; – কিন্তু, ভাগ্য এমনই যে, আজ তার পেটের-ভাত জুটছে না। কিন্তু, আশা করি, একটা দিন আসবে, যখন খাঁটি মূল্যের যথার্থ ও উপযুক্ত বিচার হবে; আমার ভয় হয়, সেই ভালো দিন দেখতে আমি বেঁচে থাকব না। আপনার কথা-মতো আমি জ্যোতিবাবুর অথবা বি.সি. রায়’এর সঙ্গে এখনও দেখা করার চেষ্টা করি নি; আমার মনে হয়, আমার মতন মানুষের পক্ষে তাঁরা দূরের মানুষ। আমি যেন অনুভব করি, আপনিই আমাদের মতন লোকের জন্য এক-মাত্র মানুষ; আপনার উপর আমার গভীর আস্থা আছে। আমি সর্বদা বিশ্বাস করি যে, আপনার নিজের পরিপূর্ণ শাসনের ভিতরে আছে, এমন কোনও একটা, আমার পক্ষে মানানসই, জায়গায় আপনি আমাকে বসিয়ে দিতে পারেন; আমাকে একটা উপযুক্ত কাজ দিয়ে দেবার মতন সুযোগ-সুবিধা আপনার খুবই আছে। আমার আর্থিক অবস্থাটা এখন এতটাই শোচনীয় যে, যেকোনো একজন সকর্মক ‘অপর’ মানুষ যে-কাজ করতে পারে, কেন্দ্রীয় সরকার’এর অধীনে সে-কাজ আমারও করতে পারা উচিত। আমি মনে করি, এ-রকম একটা কাজ এক জন মানুষকে সেই সম্মানটা দিয়ে দিতে পারে, যা প্রতিটি মানুষ নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে অর্জন করে নেয়; তার বেশি আমি আর কিছু চাই না। আমার দেশ আমার অস্তিত্বের স-র-মাত্রাটার সাপেক্ষে সেই যথাযোগ্য সুযোগটা আমাকে দিক, যাতে আমি আমার ন্যূনতম জীবনযাপন নিয়ে থেকে যেতে পারি। প্রাইভেট কলেজের অধ্যাপকের কাজ ক্ষুদ্র কাজ : অধিকন্তু অন্যান্য নানা কারণেও ওই কাজটা আমি আর করতে চাই না। আমার খুবই পছন্দ তেমন কোনও একটা মানানসই কাজ, যাতে অনেকটা গবেষণা করতে হয়, লিখতে হয় এবং ভাবনা-চিন্তা করতে হয়।

ইতি
আপনার জীবনানন্দ দাশ

-----------------------------------------------------------------------
চিঠি-৩

২৩.৪.৫৪

প্রিয় মিস্টার কবির,
আশা করি, ভালো আছেন। আপনি এখন খুব একটা উঁচু জায়গায় আছেন, এবং খুব সহজেই আমার জন্য কিছু-একটা করতে পারেন। আপনার নিজের ডিপার্টমেন্ট আছে। খুবই যুক্তিসঙ্গত ভাবে আপনার ডিপার্টমেন্টে কোনো এক জায়গায় আপনি আমার জন্য একটা চাকরি খুঁজে পেতে পারেন, যেমন অল-ইন্ডিয়া রেডিও আছে। আমি আপনাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি, আমাকে সাহায্য করতে এক্ষুনি আপনি যথাসাধ্য করুন, আমি খুবই অসুবিধের ভিতর আছি।

শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ-সহ
আপনার জীবনানন্দ দাশ

------------------------------------------------------------------------------
সূত্র:
শেষ ছ'বছর- ভূমেন্দ্র গুহ
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:১৩
৩৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×