ইন্টারনেটে আমরা প্রতিদিনই অনেক কিছু লিখি। ফেসবুক এবং ব্লগ লেখার প্রধান দুটি মাধ্যম। প্রতিদিন লিখতে গিয়ে আমরা প্রায়ই ছোটখাটো কিছু ভুল করি। আমরা যদি কিছুটা সতর্ক হয়ে লিখি বা লেখার পরে আরেকবার কী লিখলাম তা সতর্ক হয়ে পড়ি তাহলে অনেক অনিচ্ছাকৃত ভুল বের হয়ে আসে। এখানে আমি কয়েকটি অতি সাধারণ ভুলের ব্যাপারে লেখার চেষ্টা করেছি যা সচরাচর আমার চোখে পড়ে।
প্রথমেই যেটা বলতে হয় সেটা হলো কিছু অতিপরিচিত বাংলা বানান। স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, স্টোর, ফার্নিচার, সেমিস্টার (শুদ্ধ উচ্চারণ আসলে সিমেস্টার) ইত্যাদি শব্দগুলো ষ্টেশন, বাসষ্ট্যান্ড, ষ্টোর, ফার্ণিচার, সেমিষ্টার এভাবে লেখা হয়। আমার জেলার নামটা প্রায় সকল সরকারি কাগজপত্রে, জেলা পরিষদের সিল, নামফলক ইত্যাদি সব জায়গায়ই লেখা নেত্রকোণা। অথচ বাংলায় কোনা শব্দটি কোণা হওয়ার জো নেই। তবে সংস্কৃত বানানরীতি অনুসারে কোণ (Angle) শব্দটি কোণই হবে। শূন্য বানানটিও বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
আরেকটা অতি সাধারণ ভুল লক্ষ্য করা যায় বাংলা পদাশ্রিত নির্দেশক (Article) ব্যবহারের ক্ষেত্রে। নাম দেখেই বোঝা যায় যে এটা (বাক্যের) পদাশ্রিত (পদ আশ্রিত)। অর্থাৎ টা, টি, খানা, খানি, গুলো, গুলি, গুচ্ছ ইত্যাদি শব্দাংশ মূল শব্দের সাথে কোনো ফাঁক ছাড়াই যুক্ত হবে। যেমন- ঘরটা, একটা, দুটি, কলাগুচ্ছ, টাকাগুলো। ঘর টা, এক টা, দুই টি, টাকা গুলো এভাবে হবে না। সংখ্যার সাথেও এগুলো ফাঁক ছাড়া যুক্ত হবে। যেমন- ১টি, ৬টা ইত্যাদি।
পদাশ্রিত নির্দেশকের মতো বাংলা কিছু বিভক্তি এবং প্রত্যয়ও ফাঁক ছাড়া যুক্ত হয়। যেসব ক্ষেত্রে সরাসরি বিভক্তি যোগ করা যায় না সেসব ক্ষেত্রে হাইফেন (-) চিহ্ন দিয়ে যুক্ত করতে হয়। কে, রে, এ, র, এর ইত্যাদি বহুল প্রচলিত। যেমন- উইন্ডোজ ১০-এ অনেক নতুন ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। Windows-এর পুরোনো সংস্করণগুলোর মধ্যে এক্সপি অনেক জনপ্রিয় ছিলো। রহিমকে আগেই বলেছিলাম (রহিম কে নয়)। এর এবং কে স্বতন্ত্র শব্দ হিসেবেও বাক্যে ব্যবহৃত হয়। এর নাম কী? সে কে?
শেষে অনুস্বার (ং) থাকলে এবং তাতে স্বরচিহ্ন যোগ করার প্রয়োজন হলে দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। এক. অনুস্বারের বদলে উঁয়ো (ঙ) ব্যবহার করা, দুই. য় যোগ করে তার সাথে স্বরচিহ্ন বসানো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- শিলঙের (বা শিলংয়ের) চারপাশেই পাহাড়। রঙের (রংয়ের) ব্যবহার যথাযথ হওয়া চাই। এসব শব্দ যখন কোনো প্রত্যয় বা পদাশ্রিত নির্দেশক ছাড়া বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন শেষে ঙ-র পরিবর্তে ং ব্যবহার করাই প্রমিত প্রথা। যেমন- রং, প্রোগ্রামিং, ইনকামিং ইত্যাদি। ব্যাঙ শব্দটি ব্যতিক্রম হিসেবে ব্যাঙই লেখা হয়, ব্যাং নয়। ইংরেজি Bang শব্দটি বাংলায় ব্যাং লিখতে হবে। ং-যুক্ত ইংরেজি শব্দগুলোর মধ্যে যেগুলোর মাঝে ং আছে সেগুলো ঙ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে পরের বর্ণটির সাথে যুক্তবর্ণ হিসেবে লিখতে হবে। যেমন- লিংক → লিঙ্ক, সিংক → সিঙ্ক, ট্যাংক → ট্যাঙ্ক, র্যাংক → র্যাঙ্ক ইত্যাদি। শেষের ং বহাল তবিয়তে থাকবে; র্যাঙ্কিং, লিঙ্কিং ইত্যাদি।
সংস্কৃত ছাড়া দেশি, বিদেশি সকল শব্দ এবং নাম হ্রস-ই-কার এবং হ্রস-উ-কার দিয়ে হবে। ইংরেজি, জার্মানি, হিন্দি (যদিও হিন্দিতে বানানটি হিন্দী), শ্রেণি, অঞ্জলি। চীন একটি ব্যতিক্রম। কারণ? চীন শব্দটি সরাসরি সংস্কৃত থেকে এসেছে। অবিকৃত সংস্কৃত শব্দের বানান সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসারে হবে।
প্রাণী, মন্ত্রী ইত্যাদি শব্দগুলো এককভাবে এমনই হবে। তবে প্রাণিবিদ্যা, মন্ত্রিপরিষদ, প্রাণিকূল ইত্যাদি। দেয়া ও নেয়া শব্দদুটি হবে যথাক্রমে দেওয়া ও নেওয়া।
লিখা, উপর দুটি বহুল প্রচলিত শব্দ। সাধু হওয়ায় শব্দদুটি বাক্যে ব্যবহার করা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। লেখা, ওপর শব্দদুটির চলিত রূপ। আবার লিখছি, লিখি, লেখ (আদেশ), লিখছিলাম, লিখছিলে ইত্যাদি এরকমই হবে। পিটানো, কিলানো হবে পেটানো, কেলানো। আবার পিটিয়ে, কিলিয়ে।
নয়, নই এবং চায়, চাই নিয়ে অনেকে গণ্ডগোল করে ফেলেন। উত্তম পুরুষের সাথে সব সময় নই/চাই; মধ্যম পুরুষের সাথে নও/চাও; নাম পুরুষের ক্ষেত্রে নয়/চায়। আমি/আমরা নই, চাই; তুমি/তোমরা নও/চাও; সে/রহিম/করিম/তারা নয়, চায়। আমি নয়/চায়; তুমি নয়/চায় ভুল। পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা নয়, নই ভুলটি বেশি করেন।
আরো অনেক কিছু লিখবো ভেবে লিখতে বসেছিলাম। অর্ধেক লেখার পরে আর কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। টেনেটুনে এই পর্যন্ত এনেছি। অন্য হিসেবে এসব পোস্ট বড় না হওয়াই ভালো। অপরকে যথেষ্ট জ্ঞান বিতরণ করলেও আমি নিজে অনেক ভুল করি। যখন যা চোখে পড়ে সংশোধনের সুযোগ থাকলে সংশোধন করে নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩২