somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেজাজ কতটা খারাপ হয়েছিলো...

০৫ ই জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেবল পৃষ্ঠা নম্বর বসানো বাকি। এমন সময় বুয়া বললো, বাজার করতে হবে।

কল্যাণদা বাসায় নেই, রিপন ভাইও নেই। ফলে আমাকেই বাজার করতে হবে। আবার সন্ধ্যের মধ্যে পৃষ্ঠা নম্বর বসিয়ে ১০০ পৃষ্ঠারও বেশি প্রিন্ট করতে হবে বাইরে থেকে। এ সময় বাজারে যাওয়া ঠিক হবে না। বুয়াকে বললাম- যা আছে, তাই দিয়ে চালান।

বাসায় সবই ছিলো, একটু একটু। রাতের খাবারটা হয়ে যেতো। কেবল ঘাটতি পড়লো লবণে। ফলে বাজারে যাওয়ার জন্য নামতেই হলো। নেমে ভাবলাম- এক কাপ চা খেয়েই যাই!

নামগোত্রহীন এক লবণের প্যাকেট কিনে যখন বাসায় আসলাম, তখন অলরেডি কল্যাণদা-রিপন ভাই সবাই এসে গেছে। আমি বুয়ার হাতে লবণ দিয়ে কম্পিউটার চালু করলাম। তখন বাজে বিকেল চারটা।

ওই বসা অবস্থা থেকে উঠলাম রাত দুটায়। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, হতাশাগ্রস্ত। পরদিন থিসিসের ড্রাফট পেপার জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু হার্ড ডিস্কে গণ্ডগোল লাগায় সে সম্ভাবনা শেষ। বিকাল চারটা থেকে রাত দুটা বাজলো সেটা ঠিক করতে করতে। হার্ড ডিস্ক তো ঠিক হলো, কিন্তু ফাইলপত্র সব গায়েব! এতো রাতে ম্যাডামকে ফোন করা কি ঠিক হবে?

অনুনয়-বিনয় করে এবং হার্ড ডিস্ক দেখিয়ে (ম্যাডাম বিশ্বাস করবেন না বলে হার্ড ডিস্ক খুলে নিয়ে গিয়েছিলাম সত্যি সত্যিই। তিনি কী বুঝলেন কে জানে! বললেন আসলেই তো হার্ড ডিস্কের অবস্থা খারাপ। তখন অবশ্য হার্ড ডিস্ক পুরোপুরি ঠিক ছিলো :) ) ১৫টা দিন সময় বাড়ালাম।

পুরো ডেটাসেট তৈরি করে এসপিএসএসে অ্যানালাইসিস করে তাড়াহুড়া করে ১৪ দিনের দিন মাস্টার্সের যে থিসিসটা দাঁড় করালাম, এর চাইতে বাজে প্রডাক্ট পৃথিবীতে আর কেউ তৈরি করতে পারবে না। কিন্তু উপায় নেই! কালকের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ড্রাফট না, ফাইন্যাল। কঠোর সংকল্প নিয়ে চেয়ার বসলাম, বাসায় কিছু না থাকলেও আমি বাইরে যাবো না। দেখি আমার কম্পিউটারে কে এসে বসে গুতাগুতি করে!

সন্ধ্যার দিকে ভাবলাম- গোসলটা সেরেই ফেলি। বুয়া রান্না করছে। আমি বললাম- খালা, কেউ যেন কম্পিউটারে না বসে খেয়াল রাইখেন তো!

গোসল সেরে বেরুলাম। বুয়া ততক্ষণে রান্না করে চলে গেছে। দরজা পুরোপুরি খোলা। রুমে গিয়ে চুলটুল আঁচড়িয়ে জামাকাপড় পড়ার সময় খেয়াল করলাম ঘড়িটি নেই; জাস্ট মিনিটখানেকের মধ্যে অসম্ভব তীব্রভাবে জানলাম- সিপিইউটিও নেই। তারগুলো পড়ে আছে টেবিলের নিচে, মনিটরটিও আছে যথাস্থানে, আছে মাউস এবং কিবোর্ডটিও।

নিজেকে কেমন যেন খুব খালি মনে হলো। মোবাইলটা বের করে ম্যাডামকে বললাম- আপা, আমার পক্ষে এ বছর থিসিস জমা দেওয়া সম্ভব না। আগামী আগামী বছর কোর্স কমপ্লিট করবো।

ম্যাডামকে সত্যিকার অর্থে জানলাম তারপর দিন। নিজে সমস্ত রিস্ক নিয়ে, ডিরেক্টরের সাথে দেখা করে, ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার জন্য, শুধু আমার জন্যই আরো ১৫টা দিন সময় বের করলেন। ঠিক করলেন স্পেশাল ভাইবার ব্যবস্থাও!

আর আমি? ১৫টা দিন একই কাজ আবার করলাম তৃতীয়বারের মতো- এমএসঅ্যাকসিসে ডেটা ইনপুট, সেখান থেকে এসপিএসএসে কনভার্ট, লিটারেচার রিভিউ, ডেটা অ্যানালাইসিস, রিপোর্ট রাইটিং এবং প্রিন্ট আউট। বোধশক্তিহীন আমি অন্তত ১৬-১৭ ঘণ্টা করে বসে ছিলাম কাঠের ওই শক্ত চেয়ারটিতে।

এতো বেশি কষ্ট করে আমার মতো এতো বাজে মাস্টার্স থিসিস করতে পারে নি আর কেউ।

***
আজ ওই ঘটনা মনে করে শক্তি পাই। পুরো দুনিয়া প্রতিকূলে গেলেও ভেঙ্গে পড়বো না- এই আত্মবিশ্বাস অনুভব করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:৫১
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×