somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকঃ বিশ্ব-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতিসংঘ, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক এই তিন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এবং একই ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে তাদের জন্ম, জন্মের কারণ নিয়ে বিচার করতে দেখা যায় না বললেই চলে। ওদিকে আমাদের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির হালের কারণে বিশ্বব্যাংক নিয়ে যত আলোচনা আমাদের দেশে হয় সে তুলনায় আবার আইএমএফ নিয়ে আলোচনা হয় খুবই কম। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক নামের দুই প্রতিষ্ঠানকে কাছাকাছি গোত্রের বলে একটা ভাসা ভাসা ধারণা থাকলেও এদের সাথে আবার জাতিসংঘ নামের প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক কি, আদৌও কোন সম্পর্ক আছে কি না বা থাকলে কেমন সেসব মিলিয়ে দেখে আলোচনাও তেমন নাই। ধারণা আমাদের যাই হোক, তথ্য হলো, প্রতিষ্ঠান তিনটার জন্ম দেবার তাগিদ একই ভাবনা ও একই উদ্যোগ থেকে। তাদের জন্মের উৎস একই জায়গায় চিহ্নিত করা যায়। সেই সব দিকে কিছু আলোকপাত করব এখানে।
তথ্য হিসাবে International Monetary Fund (IMF) বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১-২২ জুলাই আমেরিকার নিউ হ্যাম্পসায়ারের ব্রেটনউড শহরের মাউন্ট ওয়াশিংটন হোটেলে, ২২ দিন ব্যাপী জারি এক কনফারেন্সের ফলাফলের মধ্য থেকে। রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব ছিল সেখানে ৪৪টা। আর ঐ কনফারেন্সের আয়োজক উদ্যোক্তা সংগঠন ছিল জাতিসংঘ অর্থাৎ জাতিসংঘ নিজের নামেই ঐ সভা ডেকেছিল। নিজের নামে আয়োজনটা আহ্বান করলেও সেসময় জাতিসংঘ নিজেই ছিল একটা ফরমেটিভ অবস্থায়। একটা ঘোষণা (Declaration by United Nations, ১৯৪২) ইতোমধ্যে জারি হয়ে গিয়েছিল, নিজের জন্মের পক্ষে তখন পর্যন্ত এটাই ছিল তার একমাত্র চিহ্নসূত্র। জাতিসংঘ তখন অনেকটা গর্ভাবস্থার আকার নিচ্ছে এমন এক ভ্রূণস্থ শিশু। জন্মালে ওর হাতপা, আকার, সাইজ কেমন কি হবে সম্ভাব্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো যারা হবে তাদের মধ্যে সেসব কথাবার্তা দরকষাকষি নিয়ে কিছুই তখন চুড়ান্ত হয় নাই। তবে গর্ভাবস্থায় যে এসেছে তারই ঘোষণা যেন ১৯৪২ সালের ঐ ডিক্লারেশন। এই অবস্থায় নিজের নামে ব্রেটনউড সভা ডেকে আর এক প্রতিষ্ঠানের জন্মদাতা সাজার কথা এখন জানলে আজব লাগতে পারে হয়ত। কিন্তু আমাদের এখানকার জন্য আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক এর সাথে জাতিসংঘের জন্ম কাহিনীর এই যোগসূত্র আছে, একই উদ্যোগ থেকে তাদের আবির্ভাব - এটুকু আন্দাজ করতে পারলেই আপাতত চলবে। ব্রেটনউড শহরে ডাকা ঐ সভার নামটা ছিল এরকম: United Nations Monetary and Financial Conference at Bretton Woods – এটা তাই Bretton Woods Conference নামেও খ্যাত। অনেকে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংককে বুঝাতেও এদেরকে ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠান বলে থাকেন। এছাড়াও গুরুত্বপুর্ণ তথ্য হলো, ঐ একই সভা থেকে একইসাথে, আইএমএফ এর উদ্দেশ্যের সাথে আনুষঙ্গিক আরও কিছু করণীয় হিসাবে আরও একটা প্রতিষ্ঠান IBRD (International Bank for Reconstruction and Development) বা সংক্ষেপে World Bank এর জন্ম দেয়া হয়। চলতে শুরু করার পর IBRD বা বিশ্বব্যাংক নিজের অধীনে আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয়। এমন পাঁচটা প্রতিষ্ঠান কে নিয়ে একসাথে ওয়ার্ল্ডব্যাংক গ্রুপ বলবারও চল আছে। যেমন, International Bank for Reconstruction and Development (IBRD) and the International Development Association (IDA) এদুটো মুল ঋণ বিতরণের প্রতিষ্ঠান যেখানে দ্বিতীয়টা অর্থাৎ IDA ছোট অর্থনীতির সদস্য রাষ্ট্রকে (LDC) বিনা সুদে (কেবল ১% এর নীচে সার্ভিস চার্জ ০.৫% থেকে ০.৭৫%) ঋণ অথবা কোন খারাপ বা দুর্যোগের সময় লিল্লাহায় অনুদান বা গ্রান্ট দিয়ে থাকে। ওদিকে International Finance Corporation (IFC) প্রাইভেট কোম্পানীকে বড় বাণিজ্যিক প্রজেক্টে বাণিজ্যিক বিনিয়োগের সুদ হারে লোন দিয়ে থাকে তবে সেখানে রাষ্ট্রকে গ্রারান্টার বা বন্দক থাকতে হয়। এছাড়া বাকি দুটো প্রতিষ্ঠান Multilateral Investment Guarantee Agency (MIGA), ও International Centre for Settlement of Investment Disputes (ICSID) এদের কাজ ঋণ দেয়া বা নেয়ার আইনগত দিক কাজ করা। বিশেষ করে শেষেরটা দায়দায়িত্বের ভাগাভাগি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে বিচার সালিশ মিমাংসা করে থাকে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শৃংখলা আনবার জন্য এই সময় (GATT, ১৯৪৮-৯৫) গ্যাটেরও জন্ম হয়। পরবর্তীতে (১৯৯৫) যা বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা বা World Trade Organisation (WTO) হিশাবে নতুন ভাবে পরিগঠিত হয়। তবে আলোচনার সুবিধার জন্য এখানে আমরা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফেই আপাতত সীমাবদ্ধ থাকব।

কাজের ধরণের দিক থেকে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংককে বুঝবার জন্য এদুটোর প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ভাগের দিক থেকে কথা তুলব। প্রাতিষ্ঠানিক ভাগের কথা তুলব কিন্তু মনে রাখতে হবে উভয় প্রতিষ্ঠানের মুল উদ্দেশ্য একই। সেই কমন উদ্দেশ্য হলো, কলোনী লুটপাট শোষণকে যদি পুঁজির আদিম পুঞ্জিভবন, উদ্বৃত্ব সম্পদের কেন্দ্রীভবন এই প্রথম পর্যায় বলি তবে এ
এবার সেই পুঞ্জিভুত পুঁজিকে দুনিয়াব্যাপী পুঁজির বিচরণ সর্বগামী সর্বত্র করে তোলার আয়োজনে পরিকল্পিত প্রাতিষ্ঠানিকতা গড়ে তোলার কাজটা ঘটেছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক গড়ার মাধ্যমে। এটাই ছিল দ্বিতীয় পর্যায় আর সময়টা হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি। এর আগে পুঁজি না হয় পুঞ্জিভুত সঞ্চিত হয়েছিল পশ্চিমের হাতে কিন্তু একে আবার বিনিয়োগে না নিয়ে গেলে এতদিনের পুঁজি জমানোর কোন মানে হয় না। পুঁজি আর পুঁজি থাকে না। অন্যদিকে আমাদের মত দেশ থেকে কলোনীর মাধ্যমে স্থানীয় উতপাদনের উদ্বৃত লুটে তুলে নিয়ে যাবার কারণে আমাদের অর্থনীতিগুলো হয়ে পড়েছিল বিনিয়োগ আকাঙ্খী। বলা বাহুল্য এখন যাকে পশ্চিম থেকে আশা করা বিনিয়োগ বলছি, যা আমাদের অর্থনীতি আকাঙ্খা করছে এটাই গত কয়েক শত বছর ধরে আমাদের অর্থনীতি থেকে জবরদস্তিতে সরিয়ে ফেলা উতপাদনের উদ্বৃত্ত, উতপাদনের ফলে তৈরি বাড়তি সম্পদ অথবা আমাদের মাটির নিচের তেল খনিজ ধরণের সম্পদ বা কাচামাল হিসাবে এর মুল্য। ফলে পরিস্থিতিটা একদিকে বিনিয়োগে আকাঙ্খায় ব্যাকুল পশ্চিম আর অন্যদিকে বিনিয়োগ অভাবী আমাদের ছোট ছেচড়ে চলা অর্থনীতি। তবে কি শর্ত ও পরিস্থিতিতে সে বিনিয়োগ ফিরে আসতে পারে তা সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ও নির্ধারক প্রশ্ন। তবে গ্রহিতা আমাদের চেয়েও পুঁজি বিনিয়োগ কি করে আমাদের মত দেশে নিয়ে যাওয়া যায়, দুনিয়ার কোনায় কোনায় জুড়ে পুঁজিকে ছড়িয়ে তা এক পুঁজিতান্ত্রিক গ্লোবাল বিশ্বব্যবস্থায় কিভাবে হাজির করা যায় এই তাগিদ হয়ে পড়েছিল সবচেয়ে প্রকট। যদিও প্রকট এই সমস্যাটা প্রথম যে বয়ানে হাজির হয়েছিল সে বয়ান 'বিনিয়োগে যেতে হবে' এটা নয়। কথাটা ঊঠেছিল ঘুরিয়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর (১৯১৪) থেকেই আগের কলোনী শাসনের দুনিয়ার যুগে পণ্য বিশ্ববাণিজ্য যতটুকু সীমিত বিকশিত হতে পেরেছিল তাও আর টিকে থাকতে পারেনি। পরের প্রায় ত্রিশ বছর তা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছিল। আর আন্তর্জাতিক বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থা মানেই এর পুর্বশর্ত হলো একটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা, আন্তর্জাতিক পণ্য-বাণিজ্য বিনিময় ব্যবস্থার মুদ্রা। এই ত্রিশ বছরে যুদ্ধের খরচ মিটানোর সহজ পথ হিসাবে পশ্চিমের প্রত্যেক দেশের মুদ্রা অবমুল্যায়নের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়ে পারেনি। ফলে সবার মুদ্রাই বিশ্বাসযোগ্যতা সীমাহীনভাবে হারিয়েছিল। ফলে জলন্ত প্রশ্নটা উঠেছিল ঘুরিয়ে; বিনিয়োগ কি করে ভিন রাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া যায় সেটা নয়। একটা বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা পাওয়া এবং গুরুত্বপুর্ণ সেই মুদ্রার মান ধরে রাখা, সে মুদ্রার প্রেক্ষিতে অপরাপর মুদ্রাগুলোর বিনিময় হার নির্ধারণ - এককথায় একটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা গ্রহণ ও তার ভিত্তিতে একটা আন্তর্জাতিক মুদ্রাব্যবস্থা খাড়া করা যাতে সেই মুদ্রার সাপেক্ষে প্রত্যেকে মুদ্রার বিনিময় মান সবার গ্রহণযোগ্য একটা ফর্মুলায় নির্ধারণ করা যায়; ফলাফলে একটা ফাংশনাল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা খাড়া করা সম্ভব হয়। এই ছিল সেই জলন্ত প্রশ্ন। আবার একটা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা খাড়া হলে তবেই পুঁজি বিনিয়োগ দুনিয়াব্যাপী সচল হতে পারে। এই প্রয়োজনের মারাত্মক তাগিদেই ব্রেটনউড শহরের ঐ সভা। আর সভার ফলাফলের ভিত্তিতে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক নামের প্রতিষ্ঠান গড়া। ফলে বলতে পারি এটা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক গড়ার পিছনের কমন উদ্দেশ্যে। এবার প্রতিষ্ঠান দুটোর ফাংশনাল কাজের দিক আলাদা করে বলার উছিলায় এদের মৌলিক তফাতগুলো বলব।

প্রথমে বিশ্বব্যাংকঃ বড় বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ বা বৈদেশিক পুঁজির চাহিদা যাতে আমাদের মত দেশের অর্থনীতিতে তৈরি হয় সেই উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠান কাজ করা। এটা ঠিক নিজেই বিনিয়োগ করে সুদ কামানোর প্রতিষ্ঠান নয়। তবে বাণিজ্যিক প্রাইভেট বিনিয়োগ পুঁজি আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য করা। আর এর জন্য গোড়ার প্রাথমিক শর্ত তৈরির কাজ হলো, স্থানীয় অবকাঠামোগত খাতে বিনিয়োগ। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে তা স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় বিনিয়োগ পাবার আকাঙ্খা, চাহিদা তৈরি করে, অর্থনীতি বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগের বাজার হয়ে উঠে। যেমন, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে তা আবার মাটির নীচে নিজের সম্পদ বা তেল আছে কিনা খুঁজে দেখা ও তোলার চাহিদা , বিদ্যুৎ প্লান্ট গড়ে তোলার চাহিদা ইত্যাদি মিটানোর জন্য বিভিন্ন বিদেশী কোম্পানীর বাজার তৈরি; ফর্মাল বা সরকারি ভাষায় একে ‘ইফেকটিভ ডিমান্ড’ বা আসল চাহিদা তৈরি করা বলা হয়। কোন দেশের মানুষের নানান চাহিদা থাকতে পারে তবে তা যদি বাস্তবায়নযোগ্য না হয় বা সেই চাহিদা উসুল করা না যায় তাহলে সেটা আসল চাহিদা নয়। ‘ইফেকটিভ ডিমান্ড’ তৈরি হলে ওয়াল ষ্ট্রিটের মত বিনিয়োগ কেন্দ্রগুলো বাংলাদেশের কথা ভেবে নড়েচড়ে বসতে চাইতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের ছোট অর্থনীতির নিজস্ব সক্ষমতা এমন নয় যে রাজস্ব আয় থেকে এমন উদ্বৃত্ত সঞ্চিত করা যায় যাতে অবকাঠামো খাত নির্মানে নিজেই এই ব্যয়-বিনিয়োগ করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ছোট থেকে যাওয়া আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট কাজ সৃষ্টি করতে না পেরে যত না ধুঁকে মরে তার চেয়ে বড় দিক হচ্ছে বৈদেশিক পুঁজির চাহিদা বাংলাদেশে তৈরী না হওয়ায় পশ্চিমের বিপদ। আমরা তো মরেই আছি, এই বিপদ বৈদেশিক পুঁজির জন্যই মারাত্মক। এই সুত্রে বৈদেশিক পুঁজির সম্ভাব্য বাজার না পাবার কষ্টের হাল করতে আমাদের মত ছোট অর্থনীতির দেশে (লিষ্ট ডেভেলবমেন্ট কান্ট্রি বা LDC) অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ দেবার প্রতিষ্ঠান হিশাবে বিশ্বব্যাংকের এগিয়ে আসা। এধরণের অবকাঠামো খাতের ঋণ বলেই তা সুদহীন কেবল সার্ভিস চার্জে দেয়া ঋণ। আর সুদ ধরলে তা বইবার ক্ষমতা এই ছোট অর্থনীতির নাই। আবার অবকাঠামো ঋণের কারবার বলতে বিশ্বব্যাংকের কেবল রাস্তাঘাট, ব্রিজ, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো অথবা সরকারের সক্ষমতা দক্ষতা বাড়াতে প্রশাসনিক সংস্কার জাতীয় কাজে লোন দেয়া তাই শুধু নয়, একই সাথে মানব সম্পদ অবকাঠামো গড়ে উঠার প্রাথমিক কাজও এর অন্তর্ভূক্ত। যেমন, শিক্ষা ‘স্বাস্থ্য’, কারিগরী প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। ক্ষুদ্রঋণ খাতে লোন, এমনকি একেবারেই দুঃস্থ মানুষদের জন্য ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ ধরণের খাতেও অনুদান দিয়ে থাকে; (দুঃস্থ মানুষ কথার আসল মানে হলো, দেশে চালু অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যাদেরকে অংশ করে নিতে ব্যর্থ।) অর্থাৎ মেটেরিয়াল রিসোর্স আর হিউম্যান রিসোর্স উভয় খাতেই বিশ্বব্যাংক অবকাঠামোগত বিনিয়োগ করে থাকে। সার কথায়, বাংলাদেশের মত দেশে অবকাঠামোগত অবস্থা ভাল থাকলে তা বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগকে আকর্ষণ করে, তার একটা স্থানীয় কার্যকর চাহিদা তৈরি– এর সুযোগ পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই বিশ্বব্যাংকের মুল লক্ষ্য। তাই অবকাঠামো খাতে প্রায় বিনা সুদে (কেবল ০.৫-০.৭৫% সার্ভিস চার্জ ধরণের সুদ আর লোন পরিশোধের লম্বা সময়, প্রায় চল্লিশ বছর) বিনিয়োগ ঋণ দেয়া, প্রজেক্ট নেয়া, বিশ্বব্যাংকের মুল কাজ বা ম্যান্ডেট। যদিও ভিতরের এসব কথা আড়ালে ফেলে,বিশ্বব্যাংকের কাজের লক্ষ্য “দারিদ্র দূরিকরণ” - এই ধরণের কথা তারা বলে থাকে। অন্য আরেক বয়ানে একাজগুলোকে আমরা ‘উন্নয়ন’ প্রজেক্ট বলতেও শুনে থাকি। আবার এই ‘উন্নয়ন’ শব্দের প্রাবল্য ও ভাবের আধিপত্য এতই যে আমাদের প্রধান ধারার রাজনৈতিক দলের আজকালের শ্লোগান কর্মসুচীর নাম হয়ে গেছে ‘উন্নয়নের রাজনীতি”। অর্থাৎ তারা বিশ্বব্যাংকের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকেই তাদের রাজনীতির অঙ্গীভূত করে নিয়েছে। ঘোষণা দিয়ে বলতে তারা শরমিন্দা বোধ করে না। অমুক দল ক্ষমতায় আসলে ‘উন্নয়ন” হবে বেশি, অথবা অমুক দলের আমলে ‘উন্নয়ন’ বেশি হয়েছে – এরকম কথাবার্তা আমরা হরদমই শুনি। এতে মুল ধারার রাজনৈতিক দলের নিজ রাজনৈতিক ভাবনা থেকে উৎসারিত নিজ কর্মসুচী বলতে কিছুই তাতে আর অবশিষ্ট নাই।
এবার আইএমএফঃ বিশ্বব্যাংকের মত কোন ‘উন্নয়ন’ প্রজেক্ট নেয়া বা ঋণ দেয়া আইএমএফ এর কাজ বা ম্যান্ডেট নয়। যদিও অন্য এক ধরণের ঋণ এই প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের মত দেশের ক্ষেত্রে বার্ষিক বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও ব্যয়ের মধ্যে আয়ের চেয়ে ব্যয় প্রায়ই বেশি হয়ে থাকে। এটা স্থানীয় মূদ্রায় রাষ্ট্রের বার্ষিক আয়ব্যয় নয়। বেশির ভাগ সময় ব্যবস্থাপনা ও কর্মদক্ষতার অভাবে সরকার আয়ব্যয়ে সামঞ্জস্য বা ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না। ছোট ঘাটতি পুঞ্জিভুত হতে হতে কোন কোন বছরে প্রকট হয়ে ওঠে। অথবা চুরি, বেকুবি নীতি, সিদ্ধান্ত বা চরম অদক্ষতার কারণে এই ঘাটতি মারাত্মক হয়ে দেখা দেয়। আয়ব্যয়ের এই ঘাটতিকে অর্থনৈতিক পরিভাষায় “ব্যালেন্স অব পেমেন্ট’ এর ঘাটতি বলা হয়। এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে কেবল “ব্যালেন্স অব পেমেন্ট’ এর ঘাটতি পুরণ করতে ঋণ দেবার কাজটা আইএমএফের। যদিও এটা আইএমএফের মুল কাজ নয়, আনুষঙ্গিক কাজ। মুল কাজ আইএমএফের মুদ্রা-র [ নামSDR] সাপেক্ষে প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের মুদ্রার মান নির্ধারণ করে দেয়া। প্রতিদিনের ডলার, ইউরো, পাউন্ড ও ইয়েন এই চারটার গড় বিনিময় হার, ডলারে প্রকাশ করলে সেটাই হয় ঐদিনের SDR এর মুল্যমান। আইএমএফের ওয়েব সাইটের প্রথম পাতায় ডলারে প্রকাশিত প্রতিদিনের SDR এর মান প্রকাশ করে থাকে। উপরে মুদ্রার মান নির্ধারণ করে দেয়াকে আইএমএফ এর কাজ বলেছি বটে তবে ব্যাপারটা ঘটে বাধ্যতামুলক শর্ত হিসাবে। “ব্যালেন্স অব পেমেন্ট’ এ ঘাটতি দেখা দিলে কোন দেশের আইএমএফের কাছে যাওয়া ছাড়া গতি থাকে না। কারণ, ঘাটতি মানে আমদানীতে স্থবিরতা, এর প্রভাবে রপ্তানিতে স্থবিরতা, ডলার সঙ্কট, ফলাফলে স্থানীয় মুদ্রায় আভ্যন্তরীণ বিনিময় বাণিজ্যের মুখ থুবড়ে পরা– এমনি একটা চেন রিএকশন ঘটে। এসব চেইন রিএকশান বা ঘটনা পরম্পরার পরিণতি এড়াতে ঘাটতি মোকাবিলার জন্য আইএমএফ থেকে যে ঋণ পাওয়া যায় তা পাবার ক্ষেত্রে শর্ত হয় – ঐ দেশের স্থানীয় মুদ্রার অবমুল্যায়ন ঘোষণা করা। উলটা করে বললে, রাষ্ট্রের অর্থনীতি দক্ষতার সঙ্গে ম্যানেজ করতে পারলে, “ব্যালেন্স অব পেমেন্ট’ এ ঘাটতি না ফেলে আইএমএফের কাছে যাবার প্রয়োজন এড়ানো সম্ভব।
এই হলো, মোটা দাগে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠান দুটোর প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ভাগ অথবা মৌলিক তফাত। উপরে কমন উদ্দেশ্যের কথা বলেছি। এবার প্রতিষ্ঠান দুটোর কাজের মিলিত ফল, উভয়ের তাৎপর্য এবং মর্মের দিকটাও নজরে রাখা দরকার। এককথায় বললে সে তাৎপর্য হোল , পুঁজি কে সঞ্চিত শ্রম, উদ্বৃত মুল্য, সঞ্চিত সম্পদ যে নামেই ডাকি না বা যেভাবেই চিহ্নিত করি না কেন , এই পুঁজির দুনিয়াব্যাপী বিচলনকে মসৃণ করা, কেন্দ্র থেকে প্রান্তে আনাচে কানাচে পুঁজির ছড়িয়ে পড়া বা পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কের বিস্তার ঘটিয়ে আরো পুঞ্জিভবনের ভিতর দিয়ে গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের এক নিয়ম শৃঙ্খলা কায়েম করা –ইত্যাদি। সর্বসাকুল্যে নতুন এক গ্লোবাল অর্থনৈতিক অর্ডার সাজানো যাতে পুঁজির পুঞ্জিভন ও আত্মস্ফীতি মসৃণ ও নিশ্চিত করা যায়। বিশ্ব পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ১৯৪৪ সাল থেকেই এভাবে সাজানো শুরু হয়েছিল। এই ব্যবস্থাকে কার্যকর করার মৌলিক ভিত্তিমুলক প্রতিষ্ঠান আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিনিময় সচল রাখবার জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা গড়ে উঠলেও মূদ্রা ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার অসাম্য ও একপক্ষীয় প্রাধান্য বহাল রাখার প্রধান প্রতিষ্ঠান আইএমএফ। আর অন্যান্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত রাখে বিশ্বব্যাংক। এই বিশ্বব্যবস্থা বা সুনির্দিষ্টভাবে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক এর মত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মত দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে এই উদ্দেশ্যে তা গঠন হয়েছে তা ভাববার কোন কারন নাই। তবে পশ্চিমের স্বার্থ রক্ষার পর অপ্রত্যক্ষে আমাদের অর্থনীতি তাদের শর্তে প্রাধান্যে বিনিয়োগ ফিরে পাবার ক্ষেত্রে পড়ে পাওয়া কিছু হাল অবশ্যই হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তারা আসলে মুলত সহায়ক হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় এটা ভাবা আহাম্মকি ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। যেমন, প্রতিষ্ঠান দুটোর পরিচালন সিদ্ধান্ত কারা কিসের ভিত্তিতে নেয়? এই বিচারে আইএমএফের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভিত্তি হলো, যার অর্থনীতি যত বড় কোটা বা SDR ভোট তার তত বেশি। [কোটা বা SDR ভোট ব্যাপারটা এক করেছি পরে।] ফলে সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করার ক্ষমতা তারই তত বেশি। ওদিকে বিশ্বব্যাংক -এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াও একই। বাণিজ্যিক শেয়ার হোল্ডার মালিকানা ব্যাংকের মতই। যার যত বেশি শেয়ার মালিকানা তার তত ভোট অর্থাৎ ক্ষমতা। বলা বাহুল্য, এই ক্ষমতা বা প্রভাব রাজনৈতিক ক্ষমতা হিসাবে রূপান্তরিত করে নেবার সুযোগ আছে। তবে বাংলাদেশের মত ছোট অর্থনীতির দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য প্রতিষ্ঠান দুটো সহায়ক এটা ভাববার সুযোগ না থাকলেও কোন রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিনিময়ে অংশগ্রহণ করে টিকে থাকতে চাইলে আইএমএফের সদস্য না হয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে তা অসম্ভবও বটে। এর অন্যথা হচ্ছে, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বা বিচ্ছিন্ন অর্থনীতির দেশ হয়ে ধুঁকে মরার রাস্তা।
তাই, প্রশ্ন এটা নয় আমরা কি চাই, বরং প্রশ্ন হোল কি কি অপশন আমাদের জন্য খোলা আছে। এটা অসম্ভব নয় যে, প্রদত্ত গ্লোবাল অর্থনৈতিক অর্ডার এর ভিতরে ঘটা এর গ্লোবাল শ্রম বিভাজন এর মধ্যে ভুভাগে আমাদের জন্য কি কি তুলনামুলক সুবিধা হাজির হচ্ছে তার ষ্টাডি, অধ্যাবসায়ের সাথে তা খোঁজ করে বের করে তার সুবিধা আমরা নিতে পারি। আর সংগঠিত জনগণের রাষ্ট্রক্ষমতার মাপে ক্ষমতায় তা ব্যবহার করবার সুযোগ থাকে না সেটা বলা যাবে না। থাকে, কিন্তু দরকষাকষির শক্তিতে তা কাজে লাগানো -একাজকে লক্ষ্য বানানো সম্ভব। সেটা রাজনৈতিক কাজ। সেই রাজনৈতিক সচেতনতা থাকলে একেবারেই প্রাথমিক কাজ হলো, গ্লোবাল অর্থনৈতিক অর্ডারটাকে একেবারে সঠিকভাবে বুঝা, এর ফাংশনাল দিক কি জানা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবস্থাটা কিভাবে দাঁড়াচ্ছে ও কাজ করছে তার নাটবল্টুর খোঁজ খবর নেওয়া। তাছাড়া সবচেয়ে বেশী বোঝা দরকার পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার মৌলিক সঙ্কটগুলো কি, সেই সঙ্কট আমাদের জন্য নতুন কোন সুযোগ তৈরী করছে কিনা ইত্যাদি। আবার বুঝাবুঝি বা কাজের দিক হচ্ছে ব্যবস্থাটা কি এবং কিভাবে তা গ্লোবাল রাজনৈতিক ক্ষমতা তৈরি করছে, এর দুর্বল দিক কি, এই ক্ষমতার আবার ভাঙ্গনের দিক ও শক্তিশালী হবার দিক কি - কিভাবে ক্রিয়াশীল আর সবশেষে ব্যবস্থাটি নিজের ভারসাম্য তৈরি করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে কিভাবে – ইত্যাদি। এই ক্ষেত্রে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক নিপাত যাক একটা কৌশলগত শ্লোগান হতে পারে, কিন্তু বিশ্বব্যবস্থা টিকিয়ে রাখবার ক্ষেত্রে এই দুইটি প্রতিষ্ঠানের সবল ও দুর্বল দিক সমভাবে না বুঝলে এবং তা মোকাবিলার কার্যকর নীতি ছাড়া কোন দেশের সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতির গুণগত রূপান্তর অসম্ভব।

ব্রেটনউড শহরে টানা ২২ দিন ব্যাপী চলা দরকষাকষি শেষে ১৯৪৪ সালের ২২ জুলাই সিদ্ধান্ত হয় যে নতুন এক গ্লোবাল পুঁজিতান্ত্রিক অর্ডার খাঁড়া করতে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক নামে দুটো প্রতিষ্ঠান চালু করা হবে। ঐ ২২ জুলাই ছিল নানান সিদ্ধান্তে সম্মিলিত ৪৪ রাষ্ট্রের একটা চুক্তিতে উপস্থিত প্রতিনিধিদের স্বাক্ষরের দিন। কিন্তু তবু ২২ জুলাই আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক এর জন্মদিন নয়। কারণ ঐ চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করলেই কোন রাষ্ট্র আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক নামে প্রতিষ্ঠান দুটোর সদস্য হয়ে যাবে না। সদস্য হতে হলে আগে চাঁদা দিতে তা হতে হবে ইত্যাদি। ফলে ঐ চুক্তিনামার একটা শর্ত ছিল যে পরের বছরের শেষ দিনে মানে ১৯৪৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্ভাব্য সদস্যদের ৬৫ ভাগ ‘কোটা’পুরণ বা চাঁদা জমা পড়লে তবেই ২২ জুলাইয়ের ঐ সিদ্ধান্ত কার্যকর বলে মনে করা হবে। এখানে গুরুত্বপুর্ণ ‘কোটা’ - শব্দটা ব্যাখ্যা করে নেই। এক এক রাষ্ট্রের অর্থনীতির সাইজ এক এক রকম – মুলত জিডিপি(গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট) এর সাইজের একটা নির্দিষ্ট অনুপাত বা একটা‘কোটা ফর্মুলা’ দিয়ে কোটার পরিমাণ নির্ধারিত হয়। যে রাষ্ট্রের জিডিপি যেমন তার একটা নির্দিষ্ট অনুপাতকে ৬০% গুরুত্ব, আর তুলনামুলক ক্রয়ক্ষমতার (PPP বা purchasing power parity) ৪০% গুরুত্ব - এভাবে মিলিয়ে বিবেচনার ভিত্তিতে কোটা হিসাব করা হয়। এই ৪০% এর ভিতর আবার ৫% ঐ দেশের হাতে থাকা মোট বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ দ্বারা নির্ধারিত, বাকিটা ঐ দেশের অর্থনীতির নানা সূচক] এভাবে নির্ধারিত বা সাব্যস্ত হওয়া কোটার কমপক্ষে ২৫ ভাগ SDR এ (অর্থাৎ SDR মুদ্রা যেমন আনুপাতিক ডলার, ইয়েন, পাউন্ড অথবা ইউরো – এই চারটার কোন একটাতে) শোধ করতে হবে। আর কোটার বাকি অংশ নিজ নিজ স্থানীয় মুদ্রায়। এভাবে কোটার পুরা অংশ আইএমএফের ঘরে জমা দেবার পর কোন রাষ্ট্র আইএমএফের সদস্যপদ লাভের যোগ্য হয়।
কোটা ফর্মুলা মেনে ১৯৪৪ সালের ব্রেটনউডের সভার হিসাবে ৪৪ সদস্য রাষ্ট্রের কোটা যোগ করলে মোট হয়েছিল $৮,৮00,000,000 । তবে আজকের ডলার না সে সময়ের ডলার, যখন এক আউন্স সোনার মুল্য সাব্যস্ত ছিল ৩৫ ডলার। আজকের দিনে এক আউন্স সোনার মুল্য প্রায় ১৮০০ ডলার। ফলে উপরের ডলার সংখ্যাকে প্রায় ৫১ গুণ করলে তা আজকের ডলারে প্রকাশিত হবে। শর্ত মোতাবেক ১৯৪৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্ভাব্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কোটা বা চাঁদা জমা দেবার পরিমাণ মোট কোটার ৬৫ ভাগের বেশি হয়েছিল।
এখানে একটা কথা মনে রাখা দরকার। আজ রাষ্ট্রগুলোর কেউ স্ব স্ব কেন্দ্রিয় ব্যাংকে সোনা রিজার্ভ বা জমা রেখে বিপরীতে সমতুল্য পরিমাণ কাগুজে মুদ্রা ছাপায় না। বরং কত টাকা ছাপবে তা ঠিক করা হয় সরকারের হুকুমনামা জারী করে। এজন্য এখনকার যে কোন দেশের মুদ্রা আসলে fiat money, যা কাগুজে বাঘের মতই কাগুজে মুদ্রা; সরকারী ডিক্রি জারি করা মুদ্রা। অথচ দুনিয়াতে কাগুজে মুদ্রা চালু হবার শুরু থেকে প্রত্যেক দেশের নোট ইস্যু করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যাংক সমপরিমাণ সোনা জমা না রেখে কাগুজে নোট ছাপাতে পারত না। এধরণের আসল মুদ্রাকে তাই ‘গোল্ড ব্যাকড কারেন্সী’ বলা হত। তবে দুনিয়ায় অর্থনীতিতে মুদ্রাপ্রবাহ ও মুদ্রা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী ব্যাংকের [বাংলাদেশ ব্যাংকের মত কেন্দ্রীয় ব্যাংক] ধারণা প্রথম চালু হয় ১৯৩৬-৪৫ সালের মধ্যে (একমাত্র আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক একটু ব্যাতিক্রমীভাবে আগে, ১৯১৩ সালে)। এর আগে্র দুনিয়াতে ব্যাংক মানেই প্রাইভেট ব্যাংক। আর সেকালে সম্রাট বা রাষ্ট্রের কোষাগারে সমতুল্য পরিমাণ সোনা রাখলে তবেই প্রাইভেট ব্যাংক নোট ইস্যু করার ক্ষমতা অনুমতি পেত। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড ১৬৯৪ সালের ২৭ জুলাই ১.২ মিলিয়ন পাঊন্ডের সমপরিমাণ সোনা রাণীর কোষাগারে জমা রেখে প্রাইভেট ব্যাংক ব্যবসা শুরু করেছিল এবং কাগুজে নোট ইস্যু করার অনুমতি তার ছিল। এভাবে ২৫২ বছর ব্যবসা করার পর ১৯৪৬ সালে সরকার এই ব্যাংক নিজ মালিকানা নিয়ে নেয়, আর সেই থেকে এটাই ইংল্যান্ড সরকারের সেন্টাল ব্যাংক। ফলে উপরে আইএমএফের সদস্যপদ লাভের জন্য উপরে ২৫% SDR বা কাগুজে মুদ্রার যে কথা বলেছি, এটা ১৯৭৩ সালে আইএমএফের বদলানো ম্যান্ডেট অনুসারে। আইএমএফের জন্মের সময় ১৯৪৪ সালের সময়কালে শর্ত ছিল সদস্যপদ লাভের ২৫% কাগুজে ফিয়াট মানিতে নয়, নগদ সোনায় পরিশোধ করা। আইএমএফের জন্মের সময় এক আউন্স সোনার মুল্য সাব্যস্ত হয়েছিল ৩৫ ডলার এবং এটা ছিল চিরস্থায়ী স্থির মুদ্রামান; ১৯৭৩ সালে ম্যান্ডেট বদলানোর আগে পর্যন্ত এটা এমন স্থির ছিল। ৩৫ ডলারে এক আউন্স সোনা – এই মান গ্রহণ করে নিয়েছিল এই ৪৪ রাষ্ট্র সকলে। ৩৫ ডলারে এটা সাব্যস্ত হবার কারণ, এটা ছিল ১৯২৯-৩০ সালের দুনিয়াব্যাপী মহামন্দা আর তা থেকে ইউরোপের সবদেশের মুদ্রা অবমুল্যায়ন প্রতিযোগিতা শেষ করা এরপর, ১৯৩৩ সালে প্রথমবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর্‌ রুজভেল্টের হাতে ডলারের অবমুল্যায়নের পর এই প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটে। আগের এক আউন্স সোনার মুল্য ছিল প্রায় ২২ আমেরিকান ডলার। তিনি অবমুল্যায়নে তা সাব্যস্ত করেছিলেন ৩৫ ডলার। আইএমএফ প্রতিষ্ঠান গড়ার সময় শর্ত সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একমাত্র মুদ্রা আমেরিকান ডলার [কাগুজে ডলার তবে ‘গোল্ড ব্যাকড কারেন্সী’] বলে মেনে সিদ্ধান্তে সবাই একমত হয়েছিল। তবে শর্ত ছিল – ১. এক আউন্স সোনার মুল্য হবে চিরস্থায়ী ৩৫ ডলার, ২. আমেরিকান রাষ্ট্র অপর কোন রাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় ব্যাংক ছাড়া কোন দেশের কোন ব্যক্তি বা কোম্পানীর কাছে সোনা কেনাবেচায় জড়িত হতে পারবে না।
আবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একমাত্র মুদ্রা হিসাবে আমেরিকান ডলারকে বাকি সবাই মেনে নিয়েছিল বা বলা ভাল, বাধ্য হয়েছিল। কারণ, যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউরোপের কোন রাষ্ট্রের আয়-ব্যয় বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত ছিল না, সকলে যুদ্ধের খরচে, ফলে প্রত্যেকে নিজ রাষ্ট্র দেনার দায়ে ডুবে গিয়েছিল। যুদ্ধশেষে একমাত্র আমেরিকা বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত ছিল ফলে তার মুদ্রাই একমাত্র মান সম্পন্ন ফলে গ্রহণযোগ্য ছিল। শুধু তাই নয় সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সবাইকে দেনা দেয়া রাষ্ট্রটা ছিল একমাত্র আমেরিকা।
তবে এসবের চেয়ে আরও বড় ঘটনা হলো, ইউরোপের সব রাষ্ট্র অন্য এক বিরাট চাপের মুখে ছিল। সেটা হলো, আগে উল্লেখ করেছি ১৯১৪-১৯৪৪ সাল অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরু থেকে পরবর্তী এই ত্রিশ বছর সময়টা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলতে কার্যকর কিছুই ছিল না। অর্থাৎ সারা ইউরোপসহ ৪৪ রাষ্ট্র ব্রেটনউডে টানা ২২ দিনের দরকষাকষিতে যখন বসছে তখন সবার মাথায় টিক টিক করে যে মাথাব্যাথা কাজ করছে তাহলো একটা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ব্যবস্থা কিভাবে চালু করা যায়। উপরে ব্রেটনউডের সভা থেকে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠান গড়ার সিদ্ধান্তের তাৎপর্য বুঝতে বলেছিলাম। এসব সেই তাতপর্য। আবার এটা আসলে একটা নতুন "গ্লোবাল পুঁজিতান্ত্রিক অর্ডার" সাজিয়ে গুছিয়ে দাড় করানো। সেই কাজ করবার দুয়ার খুলে গিয়েছিল এই দুইটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবার মধ্য দিয়ে। এই তাৎপর্যের কথাটাই এখন আরেকভাবে বলব।
গ্লোবাল পুঁজিতান্ত্রিক অর্ডার বলতে আসলে এর গোড়ায় ধরে নেয়া আছে একটা আন্তর্জাতিক বিনিময় বাণিজ্যের ব্যবস্থা, একটা কার্যকর ইন্টারনাশনাল ট্রেড ঘটবার ব্যবস্থাদি আছে। আর ইন্টারনাশনাল ট্রেড ঘটা তখনই সম্ভব যখন আগাম ধরে নেয়া আছে যে সবার আস্থাশীল একটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা আছে। এমনিতেই কোন কিছুকে মুদ্রা হিসাবে গৃহিত করাতে চাইলে তিন শর্ত একে পুরণ করতে হয় – যথেষ্ট লিকিউডিটি বা গ্রহণযোগ্যতা মানে কেউ তা নিতে দ্বিধা করে না, প্রয়োজনে তা যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়াও সম্ভব এবং মুদ্রাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন বিধিবদ্ধ একটা কার্যকর ব্যবস্থাপনা – আর সর্বোপরি সব পক্ষের আস্থা। তাহলে কথা দাড়াচ্ছে নতুন গ্লোবাল পুঁজিতান্ত্রিক অর্ডার মানে একটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা খুঁজে পাওয়া। মুদ্রা এই গ্লোবাল ব্যবস্থার কেন্দ্র। ইউরোপের সব রাষ্ট্রেরই আগের মুদ্রা এই বিচারে ব্যর্থ হয়ে পড়েছিল। এর এক নম্বর কারণ যুদ্ধের খরচ যোগানোর মত উদ্বৃত্ত ইংল্যান্ড ফ্রান্সসহ কারও ছিল না। এমনিতেই ১৯১৪ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে লন্ডন কেন্দ্রিক মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণে যে সীমিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা তৎকালে গড়ে বিকশিত হয়েই ছিল তা যুদ্ধের প্রথম ধাক্কাতেই ভেঙ্গে পড়েছিল। মনে রাখতে হবে তখনকার অর্থনীতির মুল বৈশিষ্ট হলো, ১। তখনকার দুনিয়া এক কলোনী শাসন ব্যবস্থার অধীন যার অর্থনীতি কলোনী দখল আর তা ধরে রাখার লড়াই অভিমুখি, ২। সম্রাট বা মর্ডান ষ্টেট আছে হয়ত ঠিকই কিন্তু এর কোনটাই তৎকালীন ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রক বা মালিক নয়, ৩। তবে মুদ্রা মানেই তা কাগুজে মুদ্রা হওয়া সত্বেও তা ‘গোল্ড ব্যাকড কারেন্সী’, ৪। সীমিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হলেও মুদ্রা বিনিময় হার ব্যক্তিগত - Mayer Amschel Rothschild, ব্যাংকারের House of Rothschild ধরণের। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাজার এই মুদ্রা মহাজনদের ম্যানেজমেন্ট দক্ষতার উপর প্রচন্ড আস্থাশীল। Rothschild সাহেব পারিবারিক ব্যবসায় তিনি সন্তানদের দিয়ে পাচ শহরে বসে নিয়মিত মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করে গেছেন। এসব কিছু মিলিয়ে, ঐ পরিস্থিতিতে ডিক্রি জারির জোরে কাগুজে নোট ছাপিয়ে যুদ্ধের খরচ সামাল দেয়া সুযোগ সম্ভাবনা কোনটাই ছিল না। তাই ১৯১৪ সালের পর থেকে পুরানো সীমিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থা আর টিকে নাই। এবং পরবর্তি ত্রিশ বছর কার্যকর কোন ব্যবস্থা ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভুমিতে ১৯৪৪ সালে যে গ্লোবাল পুঁজিতান্ত্রিক অর্ডার এর কথা বলেছি এর সাথে সামনে একটা ‘নতুন’ শব্দ একারনেই যোগ করা আছে। এটা নতুন বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।
দুনিয়াব্যাপী গ্লোবাল পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কে সম্পর্কিত হয়ে পড়া ঘটবার ক্ষেত্রে তাই মুল বিষয় হলো, রাষ্ট্রের সীমানা ছাড়ায়ে এক ব্যাপক পণ্য বিনিময়ের ও মূদ্রা বিচলনের সম্পর্ক ঘটা। এতে মুল কথাটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা বা ইন্টারনাশনাল কারেন্সী শব্দ দিয়ে বলি বটে তবে ওর কেন্দ্রীয় বিষয় বিভিন্ন মুদ্রার তুলনামুলক মুদ্রামান (Relative Exchange rate) এবং গৃহিত সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালার মাধ্যমে সেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা বা মুদ্রাগুলোকে পরিচালন ও নিয়ন্ত্রণ। আমাদের অনেকের মনে ক্যাপিটালিজম নিয়ে নেতি বা কনজারভেটিভ ধারণা আছে। ক্যাপিটালিজমের বিরুদ্ধে জেনুইন ক্রিটিকও আছে। কিন্তু সত্য হলো, ক্যাপিটালিজম বা ষ্টেট ক্যাপিটালিজম যাই চাইনা কেন সাধারণভাবে একটা আন্তর্জাতিক বিনিময়-বাণিজ্য ব্যবস্থা থাকা সবার জন্যই ইতিবাচক, কার্ল মার্কসও প্রাচীন প্রাক-পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কগুলো এর কারনে ভেঙ্গে ও বিলুপ্ত হয়ে বিশ্ব বাজারের মধ্য দিয়ে কংক্রিট অর্থে এক বিশ্ব মানুষের আবির্ভাবের সম্ভাবনা দেখেছিলেন। তবে এর মানে এই নয় যে আজকের বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা খুজে পাবার সমস্যা মিটাতে পেরে গিয়েছে।
তাহলে কথা দাড়ালো এরকম: জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিক সংগঠন হিসাবে ১৯৪৫ সালের ২৫ এপ্রিল জন্মলাভের আগেই কেবল Declaration by United Nations, ১৯৪২ এর উপর ভরসা করে জাতিসংঘের নামে Bretton Woods Conference ডেকে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্কের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৪ সালের জুলাইয়ে। জাতিসংঘের অধীনেই আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান দুটো কাজ করবে – শুরুতে ভাবনা এমনটাই কাজ করেছিল। কিন্তু পরবর্তিতে আভ্যন্তরীণ পরিচালনার নিয়ম কানুন বিধি তৈরির প্রথম দুইবছরে গিয়ে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বেঁকে বসে। যুক্তি হাজির করে যে, জাতিসংঘ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ব্যাঙ্ক, মুদ্রার কারবারি, মুদ্রার মার্কেট (capital market) ইত্যাদি চালাতে রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রভাবের বাইরে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিদ্ধান্তে একে পরিচালনা করা বাজারের আস্থা অর্জনের মত বিস্তর বিষয় আছে – ফলে নিজস্ব সিদ্ধান্তই শেষকথা এর উপর কেউ নাই – এই যুক্তিতে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্ক জাতিসংঘের সাথে সম্পর্ক আলগা করে ফেলে। এনিয়ে বিস্তর ঝগড়া ঝাটির পর শেষে একটা রফা হয়। বিশ্বব্যাঙ্কের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট John Jay McCloy এর আমলে (১৯৪৭-৪৯) ও উদ্যোগে, ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে ঘোষণা করা হয় আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্ক জাতিসংঘের specialized agency তবে, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব বোর্ড অফ গভর্নরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এভাবেই জাতিসংঘের সাথে নামেই কেবল প্রতিষ্ঠান দুটো সম্পর্কিত, বাস্তবে কাজে নয়। আর যদিও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বাইরে রাখার অজুহাত তুলে প্রতিষ্ঠান দুটোকে বাইরে আনা হয়েছে। কিন্তু কোটা মালিকানার ভিত্তিতে সাজানো বোর্ড অফ গভর্নরের পরিচালন ব্যবস্থায় এটা আসলে বড় অর্থনীতির দেশের রামরাজত্বই বটে। ফলে শুরু থেকেই তো উন্নত দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়ে আছে প্রতিষ্ঠান দুটো। ইন্টারনাশনাল ট্রেড সংক্রান্ত দুটো প্রতিষ্ঠান WTO আর UNCTAD– এর একটা তুলনামুলক বিচারে যদি যাই তবে দেখব প্রথমটার চেয়ে ছোট অর্থনীতির দেশের স্বার্থের পক্ষে নীতি সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ দ্বিতীয়টার বেশি, জাতিসংঘ নিজেই সুপার পাওয়ারদের একটা ভেটো ভিত্তিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও। ফলে John Jay McCloy দের যুক্তি চাতুরিপুর্ণ সন্দেহ নাই।

[লেখাটার প্রথম ভার্সন গত পরশু দিন প্রকাশিত নতুন দৈনিক "অর্থনীতি প্রতিদিন" পত্রিকার উদ্বোধনী সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। দ্বিতীয় ভার্সন এখানে আবার সংযোজন বিয়োজন করে প্রকাশিত হল। ]
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:১৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×