somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কি আসলেই রহস্যময়?

২৭ শে জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি এই ব্লগে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময়তা নিয়ে একটি পোস্ট প্রকাশিত হয়েছে। যেহেতু রহস্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ সীমাহীন, তাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে লেখা কাহিনীগুলো সবসময় মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে লেখা বইগুলোতেও আগ্রহজাগানিয়া কিছু কৌতুহলোদ্দীপক কাহিনী রয়েছে, যেগুলো দ্বারা দাবি করা হয়- বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পৃথিবীর রহস্যময় স্থানগুলোর অন্যতম। কিন্তু ইতোমধ্যেই যে প্রমাণিত হয়েছে, কিছু প্রকৃতিগত ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য ছাড়া এই ট্রায়াঙ্গল অন্য সব এলাকার মতোই স্বাভাবিক- সেই খবর বোধকরি খুব বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেনি।

এটা ঠিক, পৃথিবীর সবচাইতে অভিশপ্ত স্থানগুলোর মধ্যে বারমুডা টায়াঙ্গল বা ত্রিভুজকে চ্যাম্পিয়ন বলে মনে করা হয়। কারণ এ যাবৎ এখানে যতো রহস্যময় ও কারণহীন দুর্ঘটনা ঘটার কথা শোনা গিয়েছে, অন্য কোথাও এতো বেশি এরকম দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করা হয়। এ জন্যে স্থানীয় অধিবাসীরা এ এলাকাটির নামকরণ করেছে পাপাত্মাদের ত্রিভুজ।

বারমুডা ত্রিভুজের অবস্থান হচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগরে। মোট তিনটি প্রান্ত দ্বারা এ অঞ্চলটি সীমাবদ্ধ বলে এর নামকরণ করা হয়েছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বা বারমুডা ত্রিভুজ। এ অঞ্চলটি যে তিনটি প্রান্ত দ্বারা সীমাবদ্ধ তার এক প্রান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোরিডা, একপ্রান্তে পুয়ের্টো রিকো এবং অপর প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুদা দ্বীপ অবস্থিত। ত্রিভুজাকার এই অঞ্চলটির মোট আয়তন ১১৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার বা ৪৪ লাখ বর্গ মাইল। এটি ২৫-৪০ ডিগ্রি উত্তর আংশ এবং ৫৫-৫৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।

এ অঞ্চলের রহস্যময়তার একটি দিক হলো, কোনো জাহাজ এই ত্রিভুজ এলাকায় প্রবেশ করার কিছুণের মধ্যেই তা বেতার তরঙ্গ প্রেরণে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং এর ফলে জাহাজটি উপকূলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়। একসময় তা দিক নির্ণয় করতে না পেরে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। মার্কিন নেভির সূত্র অনুযায়ী, গত ২০০ বছরে এ এলাকায় কমপে ৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং ২০টি বিমান চিরতরে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯৬৮ সালের মে মাসে হারিয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ডুবোজাহাজের ঘটনাটি সারা বিশ্বে সবচাইতে বেশি আলোড়ন তুলে।

১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই পাচটি বোমারু বিমান প্রশিক্ষণ চলাকালীন হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাবার মুহূর্তে বৈমানিকদের একজন অতি নিম্ন বেতার তরঙ্গ পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার এই বেতার বার্তাতে বারবার একটি কথাই বলা হচ্ছিলো, ‘সামনে প্রচণ্ড কুয়াশা। আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় যে যাচ্ছি তাও বুঝতে পারছি না। আমাদেরকে উদ্ধার কর।’ এ বার্তা পাওয়ার পরপরই মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি উদ্ধারকারী টিম এ অঞ্চলের দিকে রওয়ানা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তারাও নিখোঁজ হয়ে যায়। এভাবে এ এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ লোক প্রাণ হারিয়েছে বলে মনে করা হয়। সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় হলো, হারিয়ে যাওয়া এসব যানগুলোর কোনো ধ্বংসাবশেষ পরবর্তীকালে অনেক খুঁজেও পাওয়া যায় নি।

এর রহস্য উদঘাটনে বিভিন্ন সময়ে বেতার তরঙ্গের অনুপস্থিতির কথা বলা হলেও এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। মার্কিন সামরিক বাহিনী এ এলাকায় বেশ কিছু গবেষণা চালিয়েও তেমন কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। অনেকে মনে করেন, নাবিকদের ভাষ্য অনুযায়ী এ এলাকায় মাঝে মাঝে বেতার তরঙ্গ হয়তো হারিয়ে যায়, তবে তা সবসময়ের জন্য নয়। কারণ পৃথিবীর কোনো এলাকায় স্বাভাবিক বেতার তরঙ্গের প্রবাহ হারিয়ে যেতে বা নিশ্চিহ্ন হতে পারে না। তা হলে সারা পৃথিবীর বেতার সিস্টেমই ধ্বংস হয়ে যাবে।

এর মধ্যে সবচাইতে বিজ্ঞানসম্মত যে ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে তা হলো, এলাকাটির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে স্বাভাবিকের চাইতে কুয়াশা অনেক বেশি এবং এর ঘনত্বও তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে নাবিকেরা প্রবেশের পরই দিক হারিয়ে ফেলে এবং তাদের মধ্যে একপ্রকার বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। হয়তো এ বিভ্রান্তির ফলেই তারা যথাযথভাবে বেতার তরঙ্গ পাঠাতে পারে না। প্রমাণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, আধুনিককালে যে সমস্ত জাহাজ জিএসএম প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে, তাদের একটিও এ সমস্যায় পড়েনি। সমাজমনস্তত্ববিদদের মতে, অশিক্ষার ফলে কুসংস্কারে আবদ্ধ আশেপাশের মানুষেরা বিভিন্ন কল্পকাহিনী তৈরি করছে ও বিশ্বাস করছে। এর মধ্যে অস্বাভাবিকতা কিছুই নেই, যা আছে তা হলো কল্পনা। যে সংখ্যক জাহাজ ও বিমান হারিয়ে গেছে বলে দাবি করা হয়, তা হিসেব করলে দেখা যাবে পৃথিবীর অন্যান্য অনেক অঞ্চলে বিমান বা জাহাজ হারানোর সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়, বরং কোথাও কোথাও বেশি। কিন্তু প্রথম থেকেই জায়গাটি অতিপ্রাকৃত বলে আখ্যা পাওয়ায় এখানকার হারানোর ঘটনাগুলো সহজেই আলোচনায় উঠে আসে। মরুভূমিতে, আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরে কিংবা আমাজন এলাকায় প্রতি বছর যতো সংখ্যক হারানোর ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়, তার সংখ্যা কিন্তু বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে হারানোর সংখ্যার চাইতে অনেক বেশি। তার চাইতে বড় কথা হলো, আধুনিক প্রযুক্তি আসার ফলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে এসব নিখোঁজ সংবাদ দিন দিন বিরল খবরে পরিণত হয়েছে। এখন প্রতিদিন শত শত জাহাজ এই এলাকা দিয়ে চলাচল করে কিন্তু কোনো ধরনের রহস্যময়তার খবর পাওয়া যায় না। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল যদি সত্যিই রহস্যময় হয়েও থাকে, তবে তার সব রহস্য পরাজিত হয়েছে প্রযুক্তির কাছে।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতো আরেকটি আগ্রহ-উদ্দীপক কাহিনী হচ্ছে- ফ্লাইং সসারের আগমন। অনেকে মনে করেন, এ এলাকাটি উন্নত গ্রহের প্রাণীদের পৃথিবীতে অবতরণ স্থান। এ ধারণার কারণ হিসেবে তারা কিছু নাবিকের কথা বলে থাকেন যারা নাকি এ এলাকায় মাঝে মাঝে উড়ন্ত সসারের আনাগোনা দেখতে পান। তবে এটি এখনো নিছক কল্পনা হিসেবেই চিহ্নিত। এর কোনো সত্যতা এখনো পাওয়া যায় নি।

তবে গবেষকরা হারিয়ে যাওয়া যানের ধ্বংসাবশেষ না পাওয়ার যে ব্যাখ্যাটি তারা দিয়ে থাকেন সেটি হলো, আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে একটি অন্যতম গভীর স্থান হচ্ছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এমনকি আধুনিক ও প্রশিক্ষিত ডুবুরি সরঞ্জাম দিয়ে এই অঞ্চলে উদ্ধার কাজ চালানো এখনো দুরূহ। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির কারণে ধ্বংসাবশেষ কোথায় আছে তা হয়তো জানা সম্ভব, কিন্তু সেগুলো উদ্ধার করা ততোটাই কঠিন। ফলে এ এলাকায় কোনো ধ্বংসাবশেষ নাও পাওয়া যেতে পারে।

তাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে লেখা কাহিনীগুলো পড়ে উত্তেজিত, চমৎকৃত বা রহস্যাবৃত হওয়ার কিছু নেই। প্রতিটি ঘটনারই জাগতিক ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে একদিক দিয়ে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কাহিনী আমাদের কাছে মূল্যবান বলে বিবেচিত হতে পারে। রূপকথার রাজারাণীদের দিন কবে ফুরিয়েছে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কিংবা ফ্লাইং সসার বা একেবারেই সাম্প্রতিক মঙ্গলগ্রহে নারীর ছবি বিষয়ক কাহিনীগুলো সে জায়গা নিতে পারে।
৩৭টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×