somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের কাছে খোলা চিঠি: গাজা বাঁচান, মানুষ বাঁচান, মনুষ্যত্ব বাঁচান

১৫ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় বান কি মুন,

আপনি যখন জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তখন নিতান্তই আঞ্চলিকতা দোষে আনন্দিত হয়েছিলাম। এশিয়া মহাদেশের একটি দেশের নাগরিক জাতিসংঘের মহাসচিব হচ্ছেন, আমাদের মতো আশাবাদী মানুষের জন্য এ এক বিরাট খবর। একজন বঞ্চিতের বেদনা আরেকজন বঞ্চিতই উপলব্ধি করতে পারে যথাযথভাবে। একজন এশীয় হিসেবে অন্য এশীয় মানুষের এবং সম-আর্থিক অবস্থার আফ্রিকা বা অন্য মহাদেশের তৃতীয়, অনুন্নত বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মানুষের দুঃখবেদনা সম্পর্কে আপনি ভালোভাবেই জ্ঞাত।

প্রিয় মুন,

আপনি এখন সারা বিশ্বের মানুষের প্রতিনিধি, অভিভাবক। তারপরও আপনার নিশ্চয়ই একটা পক্ষপাতিত্ব থাকবে সেইসব মানুষদের প্রতি যারা সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কিংবা মনোদৈহিক জগতে সুবিধাবঞ্চিত, প্রতারিত, নিপীড়িত। যাদের প্রচুর আছে, তাদের অভিভাবক না হলেও চলে; বস্তুত অভিভাকত্বে তাদের কোনো আস্থাই নেই। কিন্তু যাদের নেই, উপরন্তু নেই বলেই যারা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হচ্ছে, এবং নেই বলেই যাদের জীবনের কোনো মূ্ল্য ওইসব ‘প্রচুর সম্পদ ও ক্ষমতাবান’দের কাছে নেই, আপনি তাদের ‘প্রবল অভিভাবক’। আপনি নিজে সেটি মনে করেন কিনা জানি না, কিন্তু আমরা, আমাদের যাদের প্রচুর বিত্ত ও ক্ষমতা নেই, আপনাকেই এই 'প্রবল অভিভাবক' হিসেবে মনে করি।

প্রিয় অভিভাবক,

আপনার দেশ কোন যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে, কোন ধরনের আর্থিক অবস্থা থেকে উঠে এসেছে আপনি জানেন। আপনি এটাও ভালো করে জানেন, আজকের দিনে আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকলে কোনো দেশ বৈশ্বিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারে না। আপনি জানেন, যাদের কোনো বৈশ্বিক ক্ষমতা নেই, তাদেরকে নিয়ে ক্ষমতাশালী দেশগুলো প্রতিনিয়ত উপহাস করে চলে।

আমি বাংলাদেশের নাগরিক। এই বাংলাদেশ জন্ম ও তার বিকাশের ইতিহাসও আপনি জানেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে কোটি কোটি সাধারণ নাগরিকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথাও আপনার অজানা নয়। অজানা নয় এদেশের খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষের সেই বীরত্বগাঁথাও।

প্রিয় বান কি মুন,

আজকে প্যালেস্টাইনের মানুষ, গাজার মানুষ যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; বাংলাদেশের মানুষ সেই একই অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলো ১৯৭১ সালে। কিন্তু বাংলাদেশর মানুষকে দমিয়ে রাখা যায় নি। গাজার মানুষদেরও দমিয়ে রাখা যাবে না। সত্যের ইতিহাস, ন্যায়ের ইতিহাস ঘুরিফিরে আসে। গাজার মানুষদের অর্থ নেই, বিত্ত নেই বলে ক্ষমতা নেই; গাজার মানুষরা যদি আজকে জাপান, ইংল্যান্ড বা কানাডার মতো বিত্তশালী হতো, তাহলে কি আজকে ইসরায়েল এবং তার প্রভু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অমানবিক কর্মকাণ্ডগুলো চালাতে পারতো? বিত্ত এবং ক্ষমতা মানুষের মনুষ্যত্ব নষ্ট করে দেয়। যে বিত্ত এবং ক্ষমতার কারণে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এবং মার্কিন প্রশাসন গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে, সেটি ধ্বসে পড়তে কিন্তু আর বেশিদিন দেরি নেই।

প্রিয় মুন,

তবে এই আশা নিয়ে যদি ততোদিন অপেক্ষা করি, তাহলে গাজায় আমরা ভগ্নহৃদয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু দালানকোঠা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবো না। ইতোমধ্যে সেখানে নিহতের সংখ্যা হাজারের কোঠা ছাড়িয়েছে। আর কতো? স্বাধীনতার জন্য একটা দেশ আর কতোভাবে নিজেকে দিয়ে পরিশোধ করবে?

প্রিয় মুন,

যে কারণে এই চিঠিটি লেখা- সংবাদমাধ্যমে শুনেছি আপনি মধ্যপ্রাচ্য আসছেন গাজা আক্রমণের সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে। আমি আপনাকে করজোড়ে অনুরোধ করতে চাই- এই আক্রমণের সময়ে আপনার উচিত হবে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো নিরাপদ স্থানে নয়, ঠিক ইসরায়েলি জল্লাদবাহিনীর সামনে গিয়ে দাঁড়ানো; বুক ফুলিয়ে দাঁড়ানো গাজাবাসীর পাশে, যাতে আপনি থাকাকালীন কোনো ইসরায়েলি গোলা আর গাজার ওপর না পড়ে। আপনার উচিত হবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্টকে বার্তা পাঠানো- যতোদিন এই আক্রমণ বন্ধ না হয়, ততোদিন আপনি গাজায় থাকবেন সাধারণ মানুষের পাশে, যে ভবনগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে সেগুলোর কোনো একটিতে। মধ্যপ্রাচ্যের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোনো কক্ষে নয়, গোলাবারুদের উগ্র গন্ধবেষ্টিতে গাজার ভূমিতে আপনি যদি একবারের জন্য গিয়ে দাঁড়ান, তাহলে কি এই আক্রমণ বন্ধ হবে না? অবশ্যই হবে। কারণ আপনি গাজায় গিয়ে দাঁড়ানোর অর্থ হবে সারা বিশ্বের মানুষের গাজায় গিয়ে দাঁড়ানো। আপনার উপস্থিতিকে অগ্রাহ্য করার অর্থ হবে সারা বিশ্বের মানুষকে অগ্রাহ্য করা। আপনি গাজায় থাকাকালীন কোনো আক্রমণের অর্থ হবে সারা বিশ্বের মানুষের ওপর আক্রমণ। ইসরায়েলি জল্লাদবাহিনীর এই সাহস কোনোদিনও হবে না। গাজাবাসীর পাশে থাকার সময় যদি আপনার ওপর আক্রমণ হয়, তাহলে সারা বিশ্ববাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে তাদের।

প্রিয় বান কি মুন,

এখন আর আলোচনার সময় নেই। প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। এখন দরকার তড়িৎ সমাধান। একমাত্র আপনি গাজা সফর করলে প্যালেস্টাইনের মানুষ ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে পারে। মানুষের এখন বেঁচে থাকাটা দরকার, খুব দরকার। বিশ্ববাসীর পক্ষ থেকে, একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত কিন্তু পরে সগৌরবে মাথা উঁচু করা জাতির পক্ষ থেকে, সারা বিশ্বের নিপীড়িত, লাঞ্ছিত মানুষের পক্ষ থেকে আপনাকে কাতর আহ্বান জানাই গাজা সফর করার জন্য। মানুষ রক্ষার জন্য। মনুষ্যত্ব রক্ষার জন্য। এই আপাত সমাধানের পর আপনি সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসুন, এই সমস্যার সমাধান করুন।

মানুষের ক্ষমতা গণ্ডীবদ্ধ কিন্তু প্রয়োজনের সময় সেটি বিশাল হয়ে উঠে। আপনি এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আপনার বিশাল ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাতে পারেন, তাতে বেঁচে যাবে হাজার হাজার মানুষ। জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে মানুষকে বাঁচানো আপনার প্রধান কাজ নয় কি?

ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। মানুষকে ভালো রাখবেন, সুস্থ রাখবেন।

ইতি
আপনার অভিভাবকত্বে বিশ্বাসী গাজার একজন মানুষ
১৫টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×