somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবদুল মান্নান সৈয়দ চলে গেলেন

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবদুল মান্নান সৈয়দ আর নেই। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, কাব্যনাট্য, প্রবন্ধ-গবেষণা, সমালোচনা—সব দিকে জীবনের অন্তিমপর্ব পর্যন্ত সমান সচল এই লেখকের জীবনের অবসান হলো। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

২৭ আগস্ট ঢাকার একটি টিভি চ্যানেলে কবি নজরুল বিষয়ে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে মান্নান সৈয়দ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরদিন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তাঁকে তাঁর গ্রিন রোডের বাসায় নিয়ে আসা হয়। তাঁর ভাই সৈয়দ মাসুদ জানান, তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় আবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাঁকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি স্ত্রী সায়রা সৈয়দ, একমাত্র মেয়ে জিনান সৈয়দ, ভাই, বোন, বন্ধু, অসংখ্য পাঠক ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

আবদুল মান্নান সৈয়দের জন্ম ৩ আগস্ট ১৯৪৩-এ, পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনায়। বাবা সৈয়দ এ এম বদরুদ্দোজা ও মা কাজী আনোয়ারা মজিদ। দাঙ্গা ও দেশভাগের ডামাডোলে তাঁর পরিবারের সদস্যদের এই বাংলায় আসা-যাওয়া শুরু হয়েছিল। ১৯৫০-এ তাঁদের পরিবার স্থায়ীভাবে পূর্ববাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশে চলে আসে।

মান্নান সৈয়দ পড়াশোনা করেছেন ঢাকায়। নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক (১৯৫৮), ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (১৯৬০) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ (সম্মান) ও এমএ (১৯৬৪) করেন। দীর্ঘদিন জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।

গত শতকের ষাটের দশকে উন্মাতাল রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোড়নের মধ্যে বাংলাদেশে প্রতিভাবান একদল লেখক-শিল্পীর আত্মপ্রকাশ ঘটে। আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ (১৯৬৭) পাঠকমহলে ও সমালোচকদের বিপুল প্রশংসা পায়। শুধু কবিতা নয়, পরবর্তীকালে গল্প-উপন্যাসের জন্যও তিনি আলোচিত হন। অন্যদিকে প্রবন্ধ-গবেষণায়ও তিনি তাঁর স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষর রাখেন। বিশেষ করে নিভৃতচারী কবি জীবনানন্দ দাশ বিষয়ে তিনি বিরতিহীন লিখে গেছেন। জীবনানন্দ বিষয়ে তাঁর শুদ্ধতম কবি (১৯৭০) বইটি উভয় বাংলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের মর্যাদা লাভ করে। তাঁর গবেষণার আরেকটি বড় ক্ষেত্র কাজী নজরুল ইসলাম। ঈশ্বর গুপ্ত থেকে আবিদ আজাদ—অসংখ্য কবি ও কথাশিল্পীকে নিয়ে তিনি লিখেছেন। এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ, মধুসূদন, জীবনানন্দ দাশ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিষয়ে তাঁর বিশেষ পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তিনি বেশ কিছু সাহিত্যপত্র সম্পাদনা করেছেন।

আবদুল মান্নান সৈয়দের গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে—কবিতা: জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ, জ্যোৎস্না রৌদ্রের চিকিৎসা, পার্ক স্ট্রীটে এক রাত্রি, কবিতা কোম্পানী প্রাইভেট লিমিটেড, মাছ সিরিজ ইত্যাদি। গল্প: সত্যের মতো বদমাশ, চলো যাই পরোক্ষে, উপন্যাস: পরিপ্রেক্ষিতের দাসদাসী, কলকাতা, অ-তে অজগর। প্রবন্ধ: শুদ্ধতম কবি, দশ দিগন্তের দ্রষ্টা, নজরুল ইসলাম: কালজ কালোত্তর, ছন্দ, রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি। তিনি নাটক লিখেছেন, অনুবাদ করেছেন, সম্পাদনা করেছেন পঞ্চাশের বেশি বই। সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন পদক ও পুরস্কার পেয়েছেন।

প্রথম আলোতে আজ সোমবারও আবদুল মান্নান সৈয়দের লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে প্রথম আলোর বিশেষ ক্রোড়পত্র ‘ঈদ উপহার’-এ তিনি তাঁর একটি কবিতা প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘যে-আমি কবিতা লিখি’। প্রথম আলোর নিয়মিত লেখক ছিলেন তিনি। এ ছাড়া প্রথম আলোর বর্ষসেরা বইয়ের বিচারকমণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন।

মান্নান সৈয়দের মৃত্যুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মুঠোফোনে। তাঁর গ্রিন রোডের বাসায় ভিড় জমে পাঠক, লেখক ও শুভানুধ্যায়ীদের। বাবার জন্য তাঁর মেয়ের হাহাকারে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মান্নান সৈয়দের অগ্রজ বন্ধু ও বহুদিনের সঙ্গী বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ গতকাল এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আবদুল মান্নান সৈয়দ একজন বহুমুখী প্রতিভান্বিত লেখক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, কাব্যনাট্য, প্রবন্ধ, সমালোচনা—সব দিকে তাঁর উজ্জ্বলতা অসামান্য। আমাদের দেশে এই মানের মানুষ একে একে শূন্য হচ্ছে, যাঁদের কোনো বিকল্প পাচ্ছি না। মান্নানের মৃতুতে বিশাল শূন্যতা হলো—এটা পূরণ হবার নয়।’

মান্নান সৈয়দের কবিবন্ধু সিকদার আমিনুল হক, যিনি মান্নান সৈয়দের আগেই চলে গেছেন—একদা ‘আবদুল মান্নান সৈয়দ’ শিরোনামে এক কবিতায় লিখেছিলেন, ‘র্যাঁবোকে দেখিনি। তবে মান্নান সৈয়দ একা একা/ হাঁটতেন অপরাহ্নে কিংবা রাত্রিবেলা। সারাদিন/ পর চেনা গ্রিন রোড আর নেই।’ হ্যাঁ, গ্রিন রোডে হাঁটতেন মান্নান সৈয়দ। আর হাঁটবেন না।

জানাজা: আজ সোমবার সকাল ১০টায় তাঁর মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে রাখা হবে। বাদ জোহর তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরে। তাঁকে দাফন করা হবে আজিমপুর কবরস্থানে।

শোক: কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দের মৃত্যুতে বিএনপির চেয়ারপারসন ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, তথ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১০

http://www.gunijan.org.bd
http://www.biplobiderkotha.com
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×