দাবিকৃত দুই হাজার টাকা না দেওয়ায় একদিন দুপুর বেলা এলাকার একজন নেতা এসে আমার ফ্যাক্টরি ম্যানেজারকে ডেকে গালাগাল করতে শুরু করলেন।
নেতা বললেন, "ব্যবসা তোমাগো জায়গা মতো ঢুকায় দিমু। মিয়া মানুষ চিনো না?"
জবাবে বেচারা ম্যানেজার শুধু "জি জি" বলে যেতে লাগলেন।
লোক জমে গেল।
নেতা চিৎকার করতে লাগলেন। উঁচু স্বরে বললেন, "তোমগো মালিক রে আমার লগে দেখা করতে কইবা। না কইলে তোমারে দেইখা লমু। কোন জায়গায় ব্যবসা করতাছো টের পাও না মিয়া?"
ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আমাকে জানানোর পর বললাম, "ঠিক আছে দেখতেছি কী করা যায়।"
........
পরের দিন দুপুর বেলা গভীর এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে খুব বেদনাত্মক মন নিয়ে আমি সেই নেতার সাথে দেখা করতে গেলাম। যাবার আগে অফিসে ভালো মতো ওযু করে নিলাম। তার পর টেবিলের ওপর রাখা কোরআন শরীফের পাশ থেকে সাদা টুপিটা হাতে নিায়ে মাথায় দিলাম।
আমার ম্যানেজার মুখ অন্ধকার করে দাঁড়িয়ে আছেন। বললাম, "চলুন আপনিও সাথে চলুন।"
ম্যানেজারের বুকের ভেতর থেকে আমারই মতো গভীর এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
আমরা দুজন দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলাম। আমাদের সাথে একে একে আরো কিছু মানুষ সামিল হলেন। সবার মাথায় সাদা টুপি। কারো কারো গায়ে পাঞ্জাবিও রয়েছে।
আমরা সবাই হাঁটতে লাগলাম নেতার জানাজা পড়তে। শেষরাতে নেতার মৃত্যু হয়েছে....। জানাজা শেষে নেতার জন্য দোয়া করলাম। তার গুনাহ সমূহ মাপ করে দেবার জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে আকুতি জানালাম।
আকাশ ফেটে অগ্নিতাপ ছড়িয়ে পড়ছে যেন।
আগের দিন দুপুর বেলা যে নেতা দাম্ভিকতা নিয়ে আমাকে তার সাথে দেখা করতে বলে ছিলেন। পরের দিন দুপুর বেলা তার নিথর নিস্তব্ধ দেহখানার সামনে আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। অথচ তিনি নিশ্চুপ নিশ্চল। কিছুই বলা তো দূরের কথা সামান্য অঙ্গুলির ইশারা দেবার ক্ষমতাও নেই তার।
নেতার মৃতদেহ বহনকারী ট্রাকটি আস্তে আস্তে বড় রাস্তার দিকে এগুতে লাগলো...।
মৃত্যু বড় নিষ্ঠুর। সে নেতা চিনে না। আমীর ফকির চিনে না। মেম্বার চেয়ারম্যান চিনে না। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী চিনে না। সে কিছু চেনে না কিছু জানে না। শুধু জানে কখন কাকে বিনা নোটিশে নিয়ে যেতে হবে, কার দাম্ভিকতা সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে চিরতরে চাপা দিতে হবে.....
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ১১:০২