গাইনি ডাক্তার তিনদিন আগে ডেট দিয়ে ছিলেন। আমরা গেলাম তিন দিন পর।
ভাবলাম, নয় মাস গেল গা তিন দিনে এমন আর কি হবে!
ডাক্তার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "তোমাদের তো তিন দিন আগে আসতে বলেছিলাম। এত লেট করলে কেন?"
কাচুমাচু করে বললাম, "ম্যাডাম এটাই আমার প্রথম বিবাহ আর প্রথম সন্তানও বটে। বাচ্চ-কাচ্চা হওনের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই তো তাই তেমন গুরুত্ব দেই নি। ভাবলম, তিন দিন কী এমন লেট!"
ম্যাডাম ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, " কথা বার্তায় তো মনে হচ্ছে বড় ত্যাদড় তুমি। সব বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। এটা কোন কোম্পানির চাকরি না যে পূর্ব অভিজ্ঞতা লাগবে।"
মুখের ভাব যথা সম্ভব শুকনো করে বললাম, "জি ম্যাডাম। নেক্সট টাইম আর হবে না।"
"শোন, লেট করে বিষয়টিকে বড় জটিল করে ফেলছ তোমরা। বাচ্চা এতদিনে পেটের ভেতর পায়খান-টায়খান করে অবস্থা খারাপ করে ফেলছে। পায়খানা করে সেই পায়খানা সে আজ ক'দিন ধরে খাচ্ছে।"
মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। বাহিরে কতো ভালো-মন্দ খাচ্ছি আমরা। আর আমাদের বাচ্চা পেটের ভেতর কি-না পায়খানা খাচ্ছে!
বললাম ম্যাডাম এখন উপায়?
"চিন্তা কইরো না আধ-ঘণ্টার ভেতর সব ব্যবস্থা করতেছি।"
প্রায় পয়ত্রিশ মিনিট পর একটি টাওয়াল প্যাছিয়ে ছেলেকে আমার কোলে তুলে দিলেন একজন নার্স। কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
মনে হলো যেন একখণ্ড চাঁদের টুকরো হাতে নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি। আমার ঠোঁট কাঁপতে লাগলো। চোখ দুটো টলমল করে উঠলো।
সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
দেখতে দেখতে সেই চাঁদের টুকরোটার বয়স পাঁচ হয়ে গেল আজ।
সেদিন সে জিজ্ঞেস করলো, "আব্বু আমি কবে বড় হবো?"
"আর বেশি দিন বাকি নেই আব্বু। জানালার শিক ধরে ঝুলো তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাবা।"
"বড় হয়ে আমি কী হবো আব্বু?"
কপালে চুমু খেয়ে বললাম, "তুমি বড় হয়ে ভালো মানুষ হবে। দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করবে।"
এরপর থেকে 'বড় হয়ে কী হবে' এ কথা কেউ তাকে জিজ্ঞেস করলেই বলে. "ভালো মানুষ হবো। দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করবো।"
সবাই দোয়া করবেন বড় হয়ে ছেলে যেন আমার ভালো মানুষ হতে পারে। দেশ ও জনগনের জন্য কাজ করে যেতে পারে...।
কারো কারো না দোয়া অবশ্যই কবুল করবেন মহান আল্লাহ পাক।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:৫২