somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জব পাওয়া ও তার পিছের কিছু গল্প

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[অনেকদিন পর লিখলাম, লেখার অবস্থা বেগতিক, কিন্তু কিছু জিনিস শেয়ার না করে পারলাম না, এই মুহুর্তটা আমি শেয়ার করতে চাই]

জব পেলাম।
মনের মত জব। যেটা করে আমি সুখি হতে পারব।
অনেক অপমান, অনেক কষ্ট, অনেক বঞ্চনা, আত্মীয়স্বজনের টিটকিরি সহ্য করেছি।

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিলাম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের প্রথম সারির।
আবেদন করেছিলাম যত জায়গায় পারি। কয়েক জায়গায় আমি ফাইনাল ভাইবা থেকে বাদ পড়েছিলাম।

সরকারি/ বিসিএস এর প্রতি আগ্রহ ছিল না। ছিল কর্পোরেট এবং প্রাইভেট জবের প্রতি।
বিডিজবস এ মোটামুটি যত জায়গায় যোগ্যতার সাথে মিল পেয়েছি সব জায়গায় এপ্লাই করেছি । কিন্তু কল আসে নি।
ব্যাচমেট রা ওইদিকে বসুন্ধরাগ্রুপ, এনার্জিপ্যাক, বাংলালিংক, নেসলে তে জব পাচ্ছিল। অবশ্যই তাদের ভালো রেফারেন্স ছিল। এটা তারা নিজেরাই বলেছে।
আমার অনেক ভার্সিটির বড়ভাই আমাকে তার কোম্পানিতে নিবে বলে সিভি নিছিল। পরে তাদেরকে নক করেও পাওয়া যায় নি। এখন দেখা হলে বলে,"কি রে !!!! এখনো চাকরি বাকরি পাস নাই?"

আমারো ভালো রেফারেন্স ছিল। আমারো মামা, চাচা, ফুফা-ফুফু ছিল। আমার আত্মীয় স্বজনের ইন্ডাস্ট্রি ছিল।
অনেক আত্মীয় তো তাদের কোম্পানির ডিপার্ট্মেন্ট এর হেড ছিল।
তাদের কোম্পানিতে ভ্যাকেন্সি থাকলে সিভি টা নেওয়া যায় কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তারা মুখের উপর বলে দেয়,"সম্ভব না"।
অথচ একি ফ্যামিলি এর অন্য মেম্বার পড়াশোনা শেষের আগেই তার জব রেডি হয়ে যায়।

কারন আমি মফস্বল থেকে আসছি আর ও ঢাকার বলে?

আমার বড়লোক আত্মীয়রা আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ব বলে বলেছিল,"এত উচ্চাশা থাকা ভালো না"
মফস্বল এর ট্যাগ থাকা ইন্ট্রোভার্ট ছেলেগুলার কপাল ভালো থাকে না। ভার্সিটির একটা ক্লাসমেট এর বিয়েতেও দাওয়াত পাইনি। এদের একজন তো আমার সাথে থিসিস ও করেছিল। এবং আমাদের পেপারও পাবলিশ হয়েছিল।
একে তো বেকার, তার উপর আত্মীয়ের খোঁচা মারা কথা। "বলেছিলাম তো ইঞ্জিনিয়ারিং পইড় না। এখন বোঝ?" [ নিজের মেয়েরে ঠিক ই নিজের পরিচিত কোম্পানিতে ঢুকাইছে]

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পাশাপাশি আমার কিছু এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিস ছিল।
যেমন মিউজিক করা ( আমার ব্যাণ্ড আছে ), গ্রাফিক ডিজাইন করা (অনেকের ফ্রি গ্রাফিক ডিজাইন করে দিছি)
তো চিন্তা করলাম আমি এইদিকে ক্যারিয়ার করব, ক্রিয়েটিভ লাইনে যাব। এডভার্টাইজিং এ যাব।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি বলে এই লাইনে যেতে পারব না এমন কোন কিছু সংবিধানে নাই। রোয়ান এটকিনসন অক্সফোর্ড এর কুইন্স কলেজ থেকে ইইই তে মাস্টার্স করা সত্ত্বেও তিনি ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন অভিনয়, যার অমর সৃষ্টি "মিস্টার বিন"।

তো এম বি এর ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করা শুরু করলাম। ৩ মাস পড়ে সরকারি একটা ভার্সিটির এম বি এ তে টিকলাম [ ডি ইউ এর সান্ধকালিন এম বি এ নয়]
আত্মীয় স্বজন থেকে কথা আসে,"ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এম বি এ কেন?" আমি হাসি।
ফ্যামিলি মিটিং এর সময়,"আমার ওই বন্ধুর ছেলে এই করছে, সেই করছে, কানাডা গেছে আর তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এম বি এ করতেছ?"
"আমার বন্ধুর মেয়ে অমুক কোম্পানির এইচ আর। ওই কোম্পানি তে এপ্লাই কর। এপ্লাই না করলে হবে কি করে?"
"আমার পরিচিত একছেলের কানাডা গেছে, মাসে এত টাকা বাসায় পাঠায়, তুমিও কানাডা যাও, এই সব এম বি এ করে কিছু হবে না, ভ্যালু নেই এইগুলোর"


এমন কি আমার আত্মীয় স্বজন রা কখনো ডেকে বলে নি "আজকে এইটা রান্না করেছি, চলে আয় দুপুরে খাবি" [ খুব ই আপন আত্মীয়]
কাজিন রা যে সব বড় জায়গায় আছে, বাংলাদেশের অনেক লোক ওই জায়গায় যাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখতেও ভয় পায়। এরা কখনো ফোন দিয়ে কেমন আছি জিজ্ঞেস করে নি। অথচ ফ্যামিলি মিটিং এ দেখা হলেই আমাকে বলে"আমারে তো ফোন দিস না, আমি কেমন আছি তা তো তুই জানতে চাস না"

অথচ আমি বেকার, অনেক দিন আছে পকেটে ১৫ টাকা নিয়ে ঘুরছি। রাতে ১০ টাকা দিয়ে ১ টা বাসি সিঙ্গারা, আর ১ টা চা খেয়ে দিন কাটিয়েছি। কেউ কোন খোঁজ নেয় নি। তবে ভার্সিটির এক বড় ভাই তার কথা না বললে আমার পাপ হবে। সেই ভাইয়ের কাছে যখনি টাকা চেয়েছি ৫০০, ১০০০, ১৫০০, ২০০০, ৩০০০ কখনোই দেরি করেন নাই। চাওয়ার দশ মিনিটের মধ্যে তিনি বিকাশ করে পাঠিয়েছেন।

এম বি এ তে ভর্তি হওয়ার পর আমি ৩ মাসের ইন্টার্নশিপে ঢুকলাম একটা এন জি ও তে । সেখানে বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট বানাতে হত বিভিন্ন প্রজেক্ট এর জন্য। এই ইন্টার্নশিপ কিন্তু এম বি এর সাথে সম্পর্ক যুক্ত না। তবে এই ইন্টার্নশিপে মাসে দশ হাজার টাকা দয়িত।
৩ মাস হওয়ার পর আমি আবার পথে বসলাম। হাতে আবার অর্থ সংকটে পড়লাম। কারন মেসের দুই জন মেস ছেড়ে দিচ্ছে। একজন কানাডা যাচ্ছে আরেকজন চাকরির সুবাদে হবিগঞ্জ যাচ্ছে। জন প্রতি ৩৫০০ টাকার মেস ভাড়া হয়ে গেলে ৬৫০০ টাকা। আমি হন্য হয়ে জব খোঁজা শুরু করলাম । রানিং এম বি এ স্টুডেন্ট হওয়ায় কল আসল না কোন জায়গা থেকে।

এমন সময় একটা অদ্ভুত প্রস্তাব আসল জব এর। সেটা হল একটা দোকানের ডিজিটাল মার্কেটিং দেখতে হবে। ফেসবুক দেখতে হবে। বেতন মাসে ১২০০০ টাকা। আমার হাতে আর অপশন নাই। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে দোকানে বসতে হবে? লজ্জার মাথা খেয়ে ২০১৮ এর জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে কাজ করা শুরু করলাম।
যেয়ে আবিষ্কার করলাম যে দোকানের ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে অর্ডার নেওয়া, মাল ডেলিভারি, বিল আদায় করাটাও করতে হবে। বিভিন্ন কর্পোরেট অফিসের অর্ডার নিতে হবে। মনে মনে বললাম, যা আছে কপালে। শুধু আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া, আমার ব্যাচমেট যেন আমাকে এই অবস্থায় না দেখে। আমার গ্রামের মানুষ যেন আমাকে এই অবস্থায় না দেখে। তাদের মনের অনেক আশা আমি ঢাকায় পড়তে গেছি, অবশ্যই ভালো কিছু করব, যা নিয়ে তারা গর্ব করবে। দোকানদারি করার জন্য আসিনি।

যাই হোক, একদিকে আমি এম বি এর ক্লাস করি। আরেকদিকে আমি দোকান দেখি। ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্লান করি। ফেসবুকের পেজ তৈরি করি। ওয়েবসাইট বানাই। দোকানের প্রডাক্ট এর ভিডিও প্রোমো বানাই। ছবি তুলি। এই কাজ করতে করতে মোটামোটি ভিডিও এডিটিং, ফটোশপ, ইলুস্ট্রেটর এবং ফটোগ্রাফি তে দক্ষ হয়ে যাই। আমি ধিরে ধিরে বিদেশি কাস্টমারদের সাথেও ডিল করা শুরু করি। আমার ইংলিশ স্পোকেন টাও উন্নত হয়।
কিন্তু এর মাঝে আমার টাইফয়েড হয়। আমি এক আত্মীয়ের বাসায় গেছিলাম থাকার জন্য বেশ কিছু দিন, কারন টাইফয়েড এর কারনে নিজে না পারছিলাম খেতে আর না পারছিলাম উঠতে। ঐ আত্মীয় আমাকে ডাক্তার দেখায় এবং ঐ ডাক্তার হাস্পাতালে ভর্তি করিয়ে নেয়। কপালে একটা এসি কেবিন জোটে। যেটাতে ছিল প্রচুর তেলাপোকার উৎপাত। আব্বা আম্মা আমার মফস্বল থেকে ছুটে আসে। ১০ দিন হাসপাতালে ছিলাম। সরকারি হাসপাতাল এত জঘন্য হয় জানতাম না। ওয়ার্বয় বলে একটা বস্তু আছে কখনো চোখে দেখি নাই। ওদের খাবারের কথা কি বলব।
আত্মীয়র বাসা থেকে খাবার আসত। তিন বেলা আম্মা আমারে খাওয়াই দিছে। আম্মা আব্বা নিচে মেঝেতে শুয়েছে কোন মতে। টাইফয়েড এর কারনে আমি প্রথম ১৫ দিন নিজে হাটতে পারি নি। যাই হোক। বাসায় দুই মাস রেস্ট নিছি। রোজার ঈদের পর আমি আবার ঢাকায় আসি। দোকানের কাজ করি। আর বাসা খুজি। কারন ওই এলাকার জন্য টাইফয়েড হইছে। ঐ এলাকায় আর থাকা যাবেই না। অনেক খুজে নিকুঞ্জে ছবির মত বাসা পাই। আমি আর আমার ফ্রেন্ড ওই বাসার ফ্লাট ভাড়া নিলাম। আমার খাওয়া থাকা বিল হাতখরচ সহ আমার মাসে খরচ হয় প্রায় ১৫০০০ টাকা। বাসা থেকে মাসে আমি ৩০০০ টাকাও নেই।
হঠাত বাসার পাশে একটা টিঊশনি পাই। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের। দোকান থেকে ফিরে পড়াতে যেতাম। চার হাজার টাকা আসত। আমি অপেক্ষা করছিলাম কবে বছর টা শেষ হবে। তাহলে ১ বছরের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে ভালো চাকরি নেওয়া যাবে।



হঠাত একটা জবের সার্কুলার আসল। জাপানি কোম্পানি।
বেতন প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
৬ টা ধাপে রিক্রুটিং প্রসেস হবে।
তারপর জব।

এই জব এর জন্য সিভি বানাতে বসে গেলাম। হাতে মোটামুটি ১৫ দিন সময় আছে।

হঠাৎ আমার কাছে ফোন আসল। আমার আব্বা স্টোক করেছে। তাকে এম্বুলেন্স এ করে পার্শ্ববর্তি বিভাগীয় শহরে নিয়ে যাওয়া হইছে।
আমার কাছে পুরো পৃথিবী যেন ভেঙে পড়তে লাগল। আমি ওই মুহুর্তে সব কিছু ছেড়ে আমি রওনা দিলাম ওই শহরে। আমি বিভাগীয় শহরে কিছুই চিনি না।
রাত ৩ টায় খবর আসল আব্বা সুস্থ আছে তবে পর্যবেক্ষনের জন্য কয়েকদিন হাস্পাতালে থাকতে হবে কিন্তু বিপদ কেটে গেছে। আমার জীবনে শোনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আব্বার সাথে ছিলাম হাস্পাতালে তিনদিন। ওইখানকার অনেক আত্মীয় আসল। দুসম্পর্কের খালা রান্না করে নিয়ে আসত।
বাড়িতে আব্বা কে নিয়ে গেলাম। বেশ কয়েকদিন থেকে চলে আসলাম ঢাকায়। আব্বা সুস্থ আছেন।

এরপর এসে সিভি বানিয়ে দিলাম কোম্পানির ওয়েবসাইটে । চার সপ্তাহ পরে ডাক আসল। ভাইভা ভালোই দিলাম। কিন্তু রানিং স্টুডেন্ট থাকার জন্য বাদ পড়েছি [ ৫ দিন পর ওরা আমাকে মেইল করে জানিয়ে দিয়েছে, এই জন্য আমি ওদের কাছে কৃতজ্ঞ ]

ব্যাপক লেভেল এর হতাশ হলাম। এই সময় আরেক অর্গানাইজেশন এর একটা অফার আসল ক্রিয়েটিভ রোল।
সিভি দিছি।

ভাইবার ডাক আসল ৩ সপ্তাহ পর। যখন ফোন আসল তখন আমি ছুটিতে মফস্বলে বাড়িতে আমার রুমে বসে বসে আইস্ক্রিম খাচ্ছিলাম। ফোনে জানলাম ২ দিন পর ভাইভা। ঐ রাতেই ঢাকা রওনা দি।
প্রথম বার ভাইভা দিছি। ভালো হইছে। কিন্তু আমার সাথে আরো অনেক ঝানু ক্যান্ডিডেট ছিল। যাদের অভিজ্ঞতা ৫-৬ বছরের ছিল।
মোটামুটি শিওর ছিলাম আর ডাকবে না।

ঠিক এক সপ্তাহ পরে ফাইনাল ভাইভার জন্য ডাকল।
ওইখানে যেয়ে দেখলাম আমি সহ ৩ জন ফাইনাল ভাইভার জন্য সিলেক্টেড হইছে। অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট ভাইভা নিবে।
দুরু দুরু বুকে দিলাম ভাইভা। কবে ফলাফল জানাবে বলে নাই।

চলে আসলাম ভাইভা দিয়ে বাসায়। সারাদিন ডেস্কটপে মুভি দেখলাম, এনিমে দেখলাম।



একদিন বিকালে আমি রিকশা করে যাচ্ছিলাম। হঠাত মোড় ঘুরতে যেয়ে রিকশা কাত হয়ে পড়ে গেল। আমি ছিটকে পড়লাম রাস্তার পাশে নর্দমার ঠিক কর্নারে। মাথাটা ঠিক কনক্রিটের পাশে পড়ছে। ১ ফুট এদিক ওদিক হলেই মাথাটা কনক্রিটে লাগত। তখন কি হত আল্লাহ ই জানে।
এদিকে এলাকার লোকজন আমাকে ধরে তুলেছে। আর রিকশাওয়ালাকে মাইর দেওয়া শুরু করেছে। আমি তাদেরকে থামালাম। কারন মেরে লাভ নাই। যা হওয়ার হইছে। আমি কখনো গায়ে হাত তোলার পক্ষে নই। আমার দৌড় শাশানো পর্যন্ত ই। আমার সাথে আমার ইলেক্ট্রিক গিটার ছিল। সেটাও ঠিক ঠাক আছে। শুধু পা এর গোড়ালিতে হাল্কা ছিলছে।
আমি এদিকে আরেকটা রিকশা ঠিক করে আমার গন্ত্যব্যের দিকে যাচ্ছিলাম। এই সময় একটা ফোন আসল।

- আপনি কি "হাবলু" বলছেন?
-আমি "অমুক" এর এইচ আর "তমুক বলছি। আপনি "অমুক" এ ফাইনাল ভাইবা দিয়েছিলেন "এত" তারিখে। তো আপনার পার্ফর্মেন্স, পোর্টফোলিও এবং সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে যাদের নাম ছিল তাদের সাথে কথা বলে এবং সবকিছু বিবেচনা করে আপনাকে আমরা সিলেক্ট করেছি ।

একটু আগে দুর্ঘটনা থেকে বেচে গেছি, ঐ শকে আমার মধ্যে কোন অনুভুতি নাই।

আমি বললাম
-"আচ্ছা"

উনি বললেন,"আপনি কবে জয়েন করতে চান?"
আমি - ***** এর ১ তারিখ।
উনি - সমস্যা নাই। আপনি জয়েন করেন। আপনার এক্সপেক্টেড স্যালারি কত?
আমি - আমাকে স্যালারির রেঞ্জ বলেন।
উনি - ৩**** থেকে ৩****
আমি - তাহলে আমার এক্সপেক্টেড স্যালারি ৩****
উনি - ঠিকাছে। আমি আপনার মেইলে জয়েনিং ডেট এ কি কি ডকুমেন্টস আনতে হবে এটা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি কি অফার টা এক্সেপ্ট করছেন ৩**** স্যালারিতে সপ্তাহে ৫ দিন "এই পজিশন" এ জব করার ?
আমি - আমি এক্সেপ্ট করছি। থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।
উনি - ইউ আর ওয়েলকাম। আপনি ফর্মাল মেইলের রিপ্লাইতে আপনার ডিসিশন টা ২-১ দিনের মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েন।
আমি - অকে।
উনি - সি ইউ সুন।


টোটাল ঘটনা টা কি হইছে আমি বুঝি নাই। আমি সুন্দর মত আমার গিটার নিয়ে ব্যান্ড প্রাক্টিসে গেছি। রাত ১০ টায় বাসায় ফিরছি। ফর্মাল মেইল এর রিপ্লাই দিছি। ভালো হোটেল থেকে কাচ্চি খাইছি। আর সবশেষে আব্বা-আম্মারে জানাইছি। এবং পরদিন দোকানের ভাইব্রাদারকেও জানাইছি। তারা আমাকে মিষ্টি খাওয়াইছে।

সত্যি কথা বলতে, কোন কাজের মধ্যে কোন লজ্জা নেই। দোকানে কাজ করেছি বলেই অনেক কিছু শিখছি। মানুষ চিনতে শিখেছি। সব মিলে আমি এই দোকানের প্রতি কৃতজ্ঞ। যখন দোকানে কাজ করতাম বড়লোক আত্মীয়দের হেয় করা কথা শুনেছি। আমি তাদের কথা গুলোকে জেদে পরিণত করেছি। সুযোগের অপেক্ষা করেছি এবং তার সদ্ব্যবহার ও করেছি।
আল্লহর ইচ্ছায় একটা ভালো জব ও পেয়ে গেছি। তবে এই সুসংবাদ আমার পরিচিত আব্বা-আম্মা, দোকানের ভাই-ব্রাদার ছাড়া কাউকে বলিনি। যারা আমার দুঃসময়ে আমার পাশে ছিল না, আমার সুসময়ে তাদের কে পাশে রাখার ইচ্ছা আপাতত নেই।

আপাতত সুখ টা নিজেই উপভোগ করি। কম কষ্ট করি নি।
জব পেলাম।
মনের মত জব। যেটা করে আমি সুখি হতে পারব।
অনেক অপমান, অনেক কষ্ট, অনেক বঞ্চনা, আত্মীয়স্বজনের টিটকিরি সহ্য করেছি।

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিলাম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের প্রথম সারির।
আবেদন করেছিলাম যত জায়গায় পারি। কয়েক জায়গায় আমি ফাইনাল ভাইবা থেকে বাদ পড়েছিলাম।

সরকারি/ বিসিএস এর প্রতি আগ্রহ ছিল না। ছিল কর্পোরেট এবং প্রাইভেট জবের প্রতি।
বিডিজবস এ মোটামুটি যত জায়গায় যোগ্যতার সাথে মিল পেয়েছি সব জায়গায় এপ্লাই করেছি । কিন্তু কল আসে নি।
ব্যাচমেট রা ওইদিকে বসুন্ধরাগ্রুপ, এনার্জিপ্যাক, বাংলালিংক, নেসলে তে জব পাচ্ছিল। অবশ্যই তাদের ভালো রেফারেন্স ছিল। এটা তারা নিজেরাই বলেছে।
আমার অনেক ভার্সিটির বড়ভাই আমাকে তার কোম্পানিতে নিবে বলে সিভি নিছিল। পরে তাদেরকে নক করেও পাওয়া যায় নি। এখন দেখা হলে বলে,"কি রে !!!! এখনো চাকরি বাকরি পাস নাই?"

আমারো ভালো রেফারেন্স ছিল। আমারো মামা, চাচা, ফুফা-ফুফু ছিল। আমার আত্মীয় স্বজনের ইন্ডাস্ট্রি ছিল।
অনেক আত্মীয় তো তাদের কোম্পানির ডিপার্ট্মেন্ট এর হেড ছিল।
তাদের কোম্পানিতে ভ্যাকেন্সি থাকলে সিভি টা নেওয়া যায় কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তারা মুখের উপর বলে দেয়,"সম্ভব না"।
অথচ একি ফ্যামিলি এর অন্য মেম্বার পড়াশোনা শেষের আগেই তার জব রেডি হয়ে যায়।

কারন আমি মফস্বল থেকে আসছি আর ও ঢাকার বলে?

আমার বড়লোক আত্মীয়রা আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ব বলে বলেছিল,"এত উচ্চাশা থাকা ভালো না"
মফস্বল এর ট্যাগ থাকা ইন্ট্রোভার্ট ছেলেগুলার কপাল ভালো থাকে না। ভার্সিটির একটা ক্লাসমেট এর বিয়েতেও দাওয়াত পাইনি। এদের একজন তো আমার সাথে থিসিস ও করেছিল। এবং আমাদের পেপারও পাবলিশ হয়েছিল।
একে তো বেকার, তার উপর আত্মীয়ের খোঁচা মারা কথা। "বলেছিলাম তো ইঞ্জিনিয়ারিং পইড় না। এখন বোঝ?" [ নিজের মেয়েরে ঠিক ই নিজের পরিচিত কোম্পানিতে ঢুকাইছে]

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পাশাপাশি আমার কিছু এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিস ছিল।
যেমন মিউজিক করা ( আমার ব্যাণ্ড আছে ), গ্রাফিক ডিজাইন করা (অনেকের ফ্রি গ্রাফিক ডিজাইন করে দিছি)
তো চিন্তা করলাম আমি এইদিকে ক্যারিয়ার করব, ক্রিয়েটিভ লাইনে যাব। এডভার্টাইজিং এ যাব।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি বলে এই লাইনে যেতে পারব না এমন কোন কিছু সংবিধানে নাই। রোয়ান এটকিনসন অক্সফোর্ড এর কুইন্স কলেজ থেকে ইইই তে মাস্টার্স করা সত্ত্বেও তিনি ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন অভিনয়, যার অমর সৃষ্টি "মিস্টার বিন"।

তো এম বি এর ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করা শুরু করলাম। ৩ মাস পড়ে সরকারি একটা ভার্সিটির এম বি এ তে টিকলাম [ ডি ইউ এর সান্ধকালিন এম বি এ নয়]
আত্মীয় স্বজন থেকে কথা আসে,"ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এম বি এ কেন?" আমি হাসি।
ফ্যামিলি মিটিং এর সময়,"আমার ওই বন্ধুর ছেলে এই করছে, সেই করছে, কানাডা গেছে আর তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এম বি এ করতেছ?"
"আমার বন্ধুর মেয়ে অমুক কোম্পানির এইচ আর। ওই কোম্পানি তে এপ্লাই কর। এপ্লাই না করলে হবে কি করে?"
"আমার পরিচিত একছেলের কানাডা গেছে, মাসে এত টাকা বাসায় পাঠায়, তুমিও কানাডা যাও, এই সব এম বি এ করে কিছু হবে না, ভ্যালু নেই এইগুলোর"


এমন কি আমার আত্মীয় স্বজন রা কখনো ডেকে বলে নি "আজকে এইটা রান্না করেছি, চলে আয় দুপুরে খাবি" [ খুব ই আপন আত্মীয়]
কাজিন রা যে সব বড় জায়গায় আছে, বাংলাদেশের অনেক লোক ওই জায়গায় যাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখতেও ভয় পায়। এরা কখনো ফোন দিয়ে কেমন আছি জিজ্ঞেস করে নি। অথচ ফ্যামিলি মিটিং এ দেখা হলেই আমাকে বলে"আমারে তো ফোন দিস না, আমি কেমন আছি তা তো তুই জানতে চাস না"

অথচ আমি বেকার, অনেক দিন আছে পকেটে ১৫ টাকা নিয়ে ঘুরছি। রাতে ১০ টাকা দিয়ে ১ টা বাসি সিঙ্গারা, আর ১ টা চা খেয়ে দিন কাটিয়েছি। কেউ কোন খোঁজ নেয় নি। তবে ভার্সিটির এক বড় ভাই তার কথা না বললে আমার পাপ হবে। সেই ভাইয়ের কাছে যখনি টাকা চেয়েছি ৫০০, ১০০০, ১৫০০, ২০০০, ৩০০০ কখনোই দেরি করেন নাই। চাওয়ার দশ মিনিটের মধ্যে তিনি বিকাশ করে পাঠিয়েছেন।

এম বি এ তে ভর্তি হওয়ার পর আমি ৩ মাসের ইন্টার্নশিপে ঢুকলাম একটা এন জি ও তে । সেখানে বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট বানাতে হত বিভিন্ন প্রজেক্ট এর জন্য। এই ইন্টার্নশিপ কিন্তু এম বি এর সাথে সম্পর্ক যুক্ত না। তবে এই ইন্টার্নশিপে মাসে দশ হাজার টাকা দয়িত।
৩ মাস হওয়ার পর আমি আবার পথে বসলাম। হাতে আবার অর্থ সংকটে পড়লাম। কারন মেসের দুই জন মেস ছেড়ে দিচ্ছে। একজন কানাডা যাচ্ছে আরেকজন চাকরির সুবাদে হবিগঞ্জ যাচ্ছে। জন প্রতি ৩৫০০ টাকার মেস ভাড়া হয়ে গেলে ৬৫০০ টাকা। আমি হন্য হয়ে জব খোঁজা শুরু করলাম । রানিং এম বি এ স্টুডেন্ট হওয়ায় কল আসল না কোন জায়গা থেকে।

এমন সময় একটা অদ্ভুত প্রস্তাব আসল জব এর। সেটা হল একটা দোকানের ডিজিটাল মার্কেটিং দেখতে হবে। ফেসবুক দেখতে হবে। বেতন মাসে ১২০০০ টাকা। আমার হাতে আর অপশন নাই। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে দোকানে বসতে হবে? লজ্জার মাথা খেয়ে ২০১৮ এর জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে কাজ করা শুরু করলাম।
যেয়ে আবিষ্কার করলাম যে দোকানের ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে অর্ডার নেওয়া, মাল ডেলিভারি, বিল আদায় করাটাও করতে হবে। বিভিন্ন কর্পোরেট অফিসের অর্ডার নিতে হবে। মনে মনে বললাম, যা আছে কপালে। শুধু আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া, আমার ব্যাচমেট যেন আমাকে এই অবস্থায় না দেখে। আমার গ্রামের মানুষ যেন আমাকে এই অবস্থায় না দেখে। তাদের মনের অনেক আশা আমি ঢাকায় পড়তে গেছি, অবশ্যই ভালো কিছু করব, যা নিয়ে তারা গর্ব করবে। দোকানদারি করার জন্য আসিনি।

যাই হোক, একদিকে আমি এম বি এর ক্লাস করি। আরেকদিকে আমি দোকান দেখি। ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্লান করি। ফেসবুকের পেজ তৈরি করি। ওয়েবসাইট বানাই। দোকানের প্রডাক্ট এর ভিডিও প্রোমো বানাই। ছবি তুলি। এই কাজ করতে করতে মোটামোটি ভিডিও এডিটিং, ফটোশপ, ইলুস্ট্রেটর এবং ফটোগ্রাফি তে দক্ষ হয়ে যাই। আমি ধিরে ধিরে বিদেশি কাস্টমারদের সাথেও ডিল করা শুরু করি। আমার ইংলিশ স্পোকেন টাও উন্নত হয়।
কিন্তু এর মাঝে আমার টাইফয়েড হয়। আমি এক আত্মীয়ের বাসায় গেছিলাম থাকার জন্য বেশ কিছু দিন, কারন টাইফয়েড এর কারনে নিজে না পারছিলাম খেতে আর না পারছিলাম উঠতে। ঐ আত্মীয় আমাকে ডাক্তার দেখায় এবং ঐ ডাক্তার হাস্পাতালে ভর্তি করিয়ে নেয়। কপালে একটা এসি কেবিন জোটে। যেটাতে ছিল প্রচুর তেলাপোকার উৎপাত। আব্বা আম্মা আমার মফস্বল থেকে ছুটে আসে। ১০ দিন হাসপাতালে ছিলাম। সরকারি হাসপাতাল এত জঘন্য হয় জানতাম না। ওয়ার্বয় বলে একটা বস্তু আছে কখনো চোখে দেখি নাই। ওদের খাবারের কথা কি বলব।
আত্মীয়র বাসা থেকে খাবার আসত। তিন বেলা আম্মা আমারে খাওয়াই দিছে। আম্মা আব্বা নিচে মেঝেতে শুয়েছে কোন মতে। টাইফয়েড এর কারনে আমি প্রথম ১৫ দিন নিজে হাটতে পারি নি। যাই হোক। বাসায় দুই মাস রেস্ট নিছি। রোজার ঈদের পর আমি আবার ঢাকায় আসি। দোকানের কাজ করি। আর বাসা খুজি। কারন ওই এলাকার জন্য টাইফয়েড হইছে। ঐ এলাকায় আর থাকা যাবেই না। অনেক খুজে নিকুঞ্জে ছবির মত বাসা পাই। আমি আর আমার ফ্রেন্ড ওই বাসার ফ্লাট ভাড়া নিলাম। আমার খাওয়া থাকা বিল হাতখরচ সহ আমার মাসে খরচ হয় প্রায় ১৫০০০ টাকা। বাসা থেকে মাসে আমি ৩০০০ টাকাও নেই।
হঠাত বাসার পাশে একটা টিঊশনি পাই। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের। দোকান থেকে ফিরে পড়াতে যেতাম। চার হাজার টাকা আসত। আমি অপেক্ষা করছিলাম কবে বছর টা শেষ হবে। তাহলে ১ বছরের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে ভালো চাকরি নেওয়া যাবে।



হঠাত একটা জবের সার্কুলার আসল। জাপানি কোম্পানি।
বেতন প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
৬ টা ধাপে রিক্রুটিং প্রসেস হবে।
তারপর জব।

এই জব এর জন্য সিভি বানাতে বসে গেলাম। হাতে মোটামুটি ১৫ দিন সময় আছে।

হঠাৎ আমার কাছে ফোন আসল। আমার আব্বা স্টোক করেছে। তাকে এম্বুলেন্স এ করে পার্শ্ববর্তি বিভাগীয় শহরে নিয়ে যাওয়া হইছে।
আমার কাছে পুরো পৃথিবী যেন ভেঙে পড়তে লাগল। আমি ওই মুহুর্তে সব কিছু ছেড়ে আমি রওনা দিলাম ওই শহরে। আমি বিভাগীয় শহরে কিছুই চিনি না।
রাত ৩ টায় খবর আসল আব্বা সুস্থ আছে তবে পর্যবেক্ষনের জন্য কয়েকদিন হাস্পাতালে থাকতে হবে কিন্তু বিপদ কেটে গেছে। আমার জীবনে শোনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আব্বার সাথে ছিলাম হাস্পাতালে তিনদিন। ওইখানকার অনেক আত্মীয় আসল। দুসম্পর্কের খালা রান্না করে নিয়ে আসত।
বাড়িতে আব্বা কে নিয়ে গেলাম। বেশ কয়েকদিন থেকে চলে আসলাম ঢাকায়। আব্বা সুস্থ আছেন।

এরপর এসে সিভি বানিয়ে দিলাম কোম্পানির ওয়েবসাইটে । চার সপ্তাহ পরে ডাক আসল। ভাইভা ভালোই দিলাম। কিন্তু রানিং স্টুডেন্ট থাকার জন্য বাদ পড়েছি [ ৫ দিন পর ওরা আমাকে মেইল করে জানিয়ে দিয়েছে, এই জন্য আমি ওদের কাছে কৃতজ্ঞ ]

ব্যাপক লেভেল এর হতাশ হলাম। এই সময় আরেক অর্গানাইজেশন এর একটা অফার আসল ক্রিয়েটিভ রোল।
সিভি দিছি।

ভাইবার ডাক আসল ৩ সপ্তাহ পর। যখন ফোন আসল তখন আমি ছুটিতে মফস্বলে বাড়িতে আমার রুমে বসে বসে আইস্ক্রিম খাচ্ছিলাম। ফোনে জানলাম ২ দিন পর ভাইভা। ঐ রাতেই ঢাকা রওনা দি।
প্রথম বার ভাইভা দিছি। ভালো হইছে। কিন্তু আমার সাথে আরো অনেক ঝানু ক্যান্ডিডেট ছিল। যাদের অভিজ্ঞতা ৫-৬ বছরের ছিল।
মোটামুটি শিওর ছিলাম আর ডাকবে না।

ঠিক এক সপ্তাহ পরে ফাইনাল ভাইভার জন্য ডাকল।
ওইখানে যেয়ে দেখলাম আমি সহ ৩ জন ফাইনাল ভাইভার জন্য সিলেক্টেড হইছে। অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট ভাইভা নিবে।
দুরু দুরু বুকে দিলাম ভাইভা। কবে ফলাফল জানাবে বলে নাই।

চলে আসলাম ভাইভা দিয়ে বাসায়। সারাদিন ডেস্কটপে মুভি দেখলাম, এনিমে দেখলাম।



একদিন বিকালে আমি রিকশা করে যাচ্ছিলাম। হঠাত মোড় ঘুরতে যেয়ে রিকশা কাত হয়ে পড়ে গেল। আমি ছিটকে পড়লাম রাস্তার পাশে নর্দমার ঠিক কর্নারে। মাথাটা ঠিক কনক্রিটের পাশে পড়ছে। ১ ফুট এদিক ওদিক হলেই মাথাটা কনক্রিটে লাগত। তখন কি হত আল্লাহ ই জানে।
এদিকে এলাকার লোকজন আমাকে ধরে তুলেছে। আর রিকশাওয়ালাকে মাইর দেওয়া শুরু করেছে। আমি তাদেরকে থামালাম। কারন মেরে লাভ নাই। যা হওয়ার হইছে। আমি কখনো গায়ে হাত তোলার পক্ষে নই। আমার দৌড় শাশানো পর্যন্ত ই। আমার সাথে আমার ইলেক্ট্রিক গিটার ছিল। সেটাও ঠিক ঠাক আছে। শুধু পা এর গোড়ালিতে হাল্কা ছিলছে।
আমি এদিকে আরেকটা রিকশা ঠিক করে আমার গন্ত্যব্যের দিকে যাচ্ছিলাম। এই সময় একটা ফোন আসল।

- আপনি কি "হাবলু" বলছেন?
-আমি "অমুক" এর এইচ আর "তমুক বলছি। আপনি "অমুক" এ ফাইনাল ভাইবা দিয়েছিলেন "এত" তারিখে। তো আপনার পার্ফর্মেন্স, পোর্টফোলিও এবং সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে যাদের নাম ছিল তাদের সাথে কথা বলে এবং সবকিছু বিবেচনা করে আপনাকে আমরা সিলেক্ট করেছি ।

একটু আগে দুর্ঘটনা থেকে বেচে গেছি, ঐ শকে আমার মধ্যে কোন অনুভুতি নাই।

আমি বললাম
-"আচ্ছা"

উনি বললেন,"আপনি কবে জয়েন করতে চান?"
আমি - ***** এর ১ তারিখ।
উনি - সমস্যা নাই। আপনি জয়েন করেন। আপনার এক্সপেক্টেড স্যালারি কত?
আমি - আমাকে স্যালারির রেঞ্জ বলেন।
উনি - ৩**** থেকে ৩****
আমি - তাহলে আমার এক্সপেক্টেড স্যালারি ৩****
উনি - ঠিকাছে। আমি আপনার মেইলে জয়েনিং ডেট এ কি কি ডকুমেন্টস আনতে হবে এটা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি কি অফার টা এক্সেপ্ট করছেন ৩**** স্যালারিতে সপ্তাহে ৫ দিন "এই পজিশন" এ জব করার ?
আমি - আমি এক্সেপ্ট করছি। থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।
উনি - ইউ আর ওয়েলকাম। আপনি ফর্মাল মেইলের রিপ্লাইতে আপনার ডিসিশন টা ২-১ দিনের মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েন।
আমি - অকে।
উনি - সি ইউ সুন।


টোটাল ঘটনা টা কি হইছে আমি বুঝি নাই। আমি সুন্দর মত আমার গিটার নিয়ে ব্যান্ড প্রাক্টিসে গেছি। রাত ১০ টায় বাসায় ফিরছি। ফর্মাল মেইল এর রিপ্লাই দিছি। ভালো হোটেল থেকে কাচ্চি খাইছি। আর সবশেষে আব্বা-আম্মারে জানাইছি। এবং পরদিন দোকানের ভাইব্রাদারকেও জানাইছি। তারা আমাকে মিষ্টি খাওয়াইছে।

সত্যি কথা বলতে, কোন কাজের মধ্যে কোন লজ্জা নেই। দোকানে কাজ করেছি বলেই অনেক কিছু শিখছি। মানুষ চিনতে শিখেছি। সব মিলে আমি এই দোকানের প্রতি কৃতজ্ঞ। যখন দোকানে কাজ করতাম বড়লোক আত্মীয়দের হেয় করা কথা শুনেছি। আমি তাদের কথা গুলোকে জেদে পরিণত করেছি। সুযোগের অপেক্ষা করেছি এবং তার সদ্ব্যবহার ও করেছি।
আল্লহর ইচ্ছায় একটা ভালো জব ও পেয়ে গেছি। তবে এই সুসংবাদ আমার পরিচিত আব্বা-আম্মা, দোকানের ভাই-ব্রাদার ছাড়া কাউকে বলিনি। যারা আমার দুঃসময়ে আমার পাশে ছিল না, আমার সুসময়ে তাদের কে পাশে রাখার ইচ্ছা আপাতত নেই।

আপাতত সুখ টা নিজেই উপভোগ করি। কম কষ্ট করি নি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×