গত একবছর ধরে দোকানদারিতে ভাইব্রাদারকে সাহায্য করছিলাম। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও দোকানদারি করা সম্ভব, এর আগে আমাকে বললে আমি হেসেই উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু মানুষ প্রয়োজনে মাটিও খায়।
যেহেতু আমি আমার ক্যারিয়ার লাইন শিফট করছি সেহেতু এম বি এর পাশাপাশি হালকা পাতলা অভিজ্ঞতার দরকার আছে। তাহলে আমি সিভি তে এইটাকে কাজের অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখাতে পারব।
তো দাকানদারিতে ঢোকার সময় ভাইব্রাদার আমাকে বলেছিল যে তুমি তোমার যত বিদ্যা আছে আমার এখানে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারবা কোন অসুবিধা নাই, শুধু একবার আমার সাথে আলোচনা কইর, তাতেই হবে। আমিও খুশি মনে কাজ করা শুরু করলাম।
প্রথম যে সমস্যায় পড়েছিলাম সেটা হল দোকানের কর্মচারি। এরা আসলে আমাকে ঐভাবে মেনে নিতে পারে নি। চরম ভাবে অসহযোগীতা ও আমার নামে কুৎসা রটানো ছিল এদের প্রধান কাজ। কিন্তু এদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে করতে এরাই হয়ে গেল আমার ভালো ধরনের সহযোগী। মোবাইল চালাতে না পারলে আমার কাছ থেকে দেখে নিত। তাদের গ্রামের বাড়ির জমিজমা সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে আলোচনা করত। এমন কি বাদাম কিনে আমাকে খাওয়াইছে।
আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট একটা ছেলে আছে যার কাজ হল প্যাকেজিং করা। মাঝে মাঝে চা বানিয়ে দিত। একেও আমি ভাই ও আপনি বলে সম্বোধন করতাম। দোকানের অন্যকর্মচারির হাতে হেনস্তা হয়ে আমার কাছে নালিশ করতে আসত। আমিও তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করতাম।
তবে দোকানের কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন দেশি ও বাংলাদেশে থাকা বিদেশি কাস্টমার দের বাসায় যেয়ে কাজ বুঝে নিয়ে ও তাদেরকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার সুযোগ হয়েছে।
দেশিয় কাস্টমার ও বিদেশিদের মধ্যে কিছু পার্থক্য চোখে পড়েছে।
যেমনঃ
আমাদের দেশিয় কাস্টমার দের (বেশিরভাগ) আচরণ থাকে খুব ই কর্কশ। মানে একধরনের ভাবের মধ্যে তারা থাকেন। মনে হয় রেগেই আছেন সব সময়
অন্যদিকে বিদেশি কাস্টমার দের ব্যবহার দেখলেই মনে হয় তাদের জন্য সাধ্যের আরেকটু বেশি খাটি। বেশিরভাগ এতই অমায়িক যে বলার মত না। এবং খুব ই হাসিখুশির সাথেই কথা বলেছে তারা।
দেশিয় কাস্টমারের বাসায় ৯৯ শতাংশ সময়ে কেউ বসতেও দেয় নি।
বিদেশিদের বেশিরভাগ ই বসতে দিয়ে চা-কফির ব্যবস্থাও করেছিলেন। এবং এমন একজন ছিলেন যে তিনি একটা কাঠের কাজ নিজে করেছেন। সেটা আমাদের কাছে কেমন লাগছে সেটাও জানতে চেয়েছিলেন।
এমনও ছিলেন যে আমরা যখন কাস্টমারের বাসার বাহিরে ছিলাম তখন ফোন করে বললেন জুতা যাতে খুলে ভিতরে ঢুকি। মানে জুতা খুলেই তো ঢুকব, এটাইত নিয়ম। নাকি আমরা অ্যামাজন থেকে এসেছি?
বিদেশিদের কারোর বাসায় জুতা খুলতে হয় নাই। বরং জুতা খুললেই ওরা অবাক হত। মুভিতে আমরা যেমন দেখি না, সারাদিন কাজ শেষে জুতা পরেই বিছানায় গড়াগড়ি দেয়। বিষয়টা এখানে অনেকটা তেমনি।
দেশিয় কাস্টমারদের ফ্লাট গুলোতে এত বেশি ফার্নিচার, শো-পিস, মুর্তি আর গেজেট আছে যে দেখলেই মনে হয় দম বন্ধ হয়ে যায়। দরজা জানালা বেশিরভাগ সময় থাকে বন্ধ থাকে ও দিনের বেলায় লাইট জ্বালানো থাকে।
বিদেশি গুলার ফ্লাট বড়, আলো সবসময় ঢোকে। খুব ই লিমিটেড ধরনের গেজেট, শো-পিস নিয়ে থাকে। বলতে গেলে নিঃশ্বাস ফেলার একটা জায়গা আছে।
দেশিগুলারে সালাম দিলে বেশিরভাগ সময় উত্তর আসত না।
বিদেশিগুলার সাথে দেখা হলেই ওরাই আগে "গুড মর্নিং/ইভনিং","হাও আর ইউ?" "হ্যাভ এ নাইস ডে" বলত।
পরিশেষে বলতে চাই, যে সবাই যে একরকম এটা কিন্তু নয়। আমি যাদের সাথে দেখা করেছি, তাদের বাহিরে অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম।
দোকানের অনেক মজার ঘটনা আছে, সেগুলো শেয়ার করব সামনে।
সবাই ভালো থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:১০