আমি বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। চোখ না খুলেই আমি বুঝতে পারছি আজ শুক্রবার। কমফোর্টার টার ভিতরে আরো ঢুকে গেলাম। উষ্ণতার আরাম আমাকে ধরে ফেলেছে। চোখ খুলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আরেকটু ঘুমাই। আরেকটু।
শীত শেষ, তবে এখনো আবেশ আছে। কয়েকদিন আগে ফাল্গুন হল। ফাল্গুন উপলক্ষ্যে কেনা ফুল আমার টেবিলে আছে। শুকিয়েছে একটু। একটু খেয়াল করলেই হালকা সুবাশ পাওয়া যায়।
আচ্ছা!!! ফুলের পাশে যেন কি আছে? ঠিক মনে করতে পারতেছি না। হুম দুইটা স্কেচবুক। ছবি আঁকতে পছন্দ করতাম একসময়। চারকোল দিয়ে আঁকি বুকি করতাম। একসময় হঠাৎ করে সব কিছু বাদ দিয়ে দিলাম। কি যেন একটা অভাব বোধ করতেছিলাম জীবনে। এসব কিসের জন্য করতেছি, কার জন্য করতেছি?
সাতাশ বছরের জীবনে কখনো প্রেম আসেনি। একা থাকতে ভালোই লাগে। তারপরেও ইচ্ছে হয় কেউ আমার পাশে থাকুক, একটু সঙ্গ দিক। কাউকে আমার মনের কথা গুলো খুলে বলি।
ধুর!!! শুধু শুধু চিন্তা করে সময় কাটাচ্ছি এমন একটা জিনিস নিয়ে। যেটা আমার জন্য না।
কি চিন্তা করা যায়? আচ্ছা!! সিলেট ঘুরে আসলে কেমন হয়? নাজিমগড়ে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পাহাড় এবং মেঘ দেখব? লালাখালে কায়াকিং করব? করতে পারলে ভালোই হবে। মন টা রিফ্রেশ হবে।
আচ্ছা, বৃষ্টি কি থেমেছে? না, এখনো থামে নি।
মাঝে মাঝে মনে হয়, কি হইত যদি এই যাদুর শহরে না আসতাম? আমার মফস্বল শহরে থেকে জীবন টা পার করে দিতাম। একটা বই এর দোকান থাকত। সন্ধ্যায় স্কুল-কলেজের শিক্ষক দের সাথে আড্ডা হত। রাত ৯ টায় দোকান বন্ধ করে বাসায় যেতাম। রাত্রে ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। সহজ, সুন্দর জীবন।
কি হবে এত এত টার্গেট মিট করে? এত টাকা দিয়ে আমি কি করব? আচ্ছা, আমি যদি মফস্বল শহরে থাকতাম এত টাকা কি দরকার হত? ১৫ হাজার টাকায় কি চলতে পারতাম না? এই দশ রকম কার্ড এর হিসাব, বিল এর হিসাব, প্রফিট-লস নিয়ে একটা মানুষ কতদিন সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে পারে?
ছোটবেলায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। সন্ধ্যায় দাদা দাদির সাথে আব্বা আম্মা গল্প করছে আমি হয়ত পাশে বসে ছবি আঁকছি। কি দিন ছিল তখন। সহজ সুন্দর। কারোর কোন দুশ্চিন্তা নাই। হয়ত বিটিভিতে খবর চলছে। একটু পর রাতের খাবার খাওয়া হবে। তারপর ঘুম। পরদিন আবার নতুন দিন। আহা! দিন গুলো!!
আচ্ছা তখন কি আমি চিন্তা করতাম, যে বড় হয়ে বড় চাকরি করব? মনে পড়ে না। আসলে আমার কোন স্বপ্ন ছিল না যে বড় হয়ে এটা হব, সেটা হব। পৃথিবীতে সবচেয়ে আরামের কাজ কি? যেটার জন্য কোন কষ্টই করা লাগবে না, কিন্তু যথেষ্ট টাকা পয়সা আসবে? খোজ নিতে হবে।
আচ্ছা মানুষ না হয়ে যদি হরিণ হইতাম? বন-জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে ঘাস খেতাম, বাঘের দৌড়ানি খাইতাম। ঘাস আর বাঘের দৌড়ানি ছাড়া আর কোন চিন্তা নাই। সহজ জীবন। নাকি, ওরাও চিন্তা করে, "আমাদের কে বড় হতে হবে, হরিণের মত হরিণ হতে হবে"। মনে হয় না।
আচ্ছা বৃষ্টি কি থামল?
থামছে মনে হয়, খিচুড়ি খেতে হবে মুরগি দিয়ে। অর্ডার দিব, নাকি যেয়ে খাব?
নাহ! আরেকটু ঘুমাই। বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাচ্ছি কমফোর্টারের মধ্য থেকে। চোখ না খুলেও জানি আজ শুক্রবার। ছুটির দিন। বেশি করে ঘুমানোর দিন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৪৭