একটা ঘরের মধ্যে একটা মানুষকে ঘিরে তার চারপাশে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। যারা দাঁড়িয়ে আছে, বেশিরভাগ ই আমার পরিচিত। আমার কয়েকজন চাচা আছেন তার মধ্যে, চাচাতো ভাই আছেন, আমার বাবাও আছেন। কিন্তু যাকে ঘিরে এত মানুষ উনি কে? এটা দেখার জন্য একটু উঁকিঝুকি মারার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। কারন অনেক ভিড়।
এই ঘরের সাথে দুইপাশে আরো ২ টা ঘর আছে। দুইটা ঘরের সাথে দরজা আছে, পর্দা দেওয়া। ডান পাশের ঘরটাতে মহিলা আছে। একটু কান পাতলে কান্নার আওয়াজ শোনা যায়।
তবে আমি এখন যে ঘরটাতে আছি, সেখানে সবাই পুরুষ। কিন্তু পরনে আমাদের দেশিও কাপড় না। অনেক টা পশমের আলখেল্লা ও মাথায় মখমলের টুপি। বেশিরভাগ মানুষই মুরুব্বি। সবার লম্বা দাড়ি আছে। সবাই ভিড়ের মাঝের ওই মানুষ কে দেখছে এবং কথা বলার চেষ্টা করছে।
একটা অবাক করার বিষয় হল, আমি এইখানে এই ঘরের মধ্যে কেন এলাম কিভাবে এলাম কিছুই মাথায় নেই। আমি নিজের অজান্তেই ভিড় ঠেলে সামনে এগোতে লাগলাম। হাত দিয়ে মানুষগুলোকে ঠেলে সরাতে লাগলাম। একটু একটু করে সামনে যেয়ে যে মানুষকে দেখলাম, তিনি প্রায় ১৬ বছর আগে মারা গেছেন। আমার দাদা। তার পরনে একটা সাদা পাঞ্জাবি এবং একটা লুঙ্গি। তার শরীর দিয়ে যেন একটা আভা বের হচ্ছে।
দাদা কোন কথা বলছেন না। তিনি নিজেই হয়ত একটু অবাক হয়ে আছেন। চোখ দিয়ে শুধু এদিক ওদিক করছেন। আরেকটু কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই পাশের রুম থেকে জোরে একটা কান্নার আওয়াজ আসল। কান্নার আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলাম বকুল আপা কান্না করছেন এবং কিছু একটা বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কথা স্পষ্ট না। অনেকটা পানির নিচে কথা বললে যেমন শোনায় তেমন।
আমি বকুল আপার কান্নার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু একধরনের অদৃশ্য বাধা অনুভব করলাম। কিছু একটা আমাকে যেতে দিচ্ছে না বকুল আপার কাছে। অনেকটা পা টেনে টেনে এগোতে লাগলাম। বকুল আপার কান্না আরেকটু স্পষ্ট হয়, কথা গুলাও। অনেক টা অভিযোগ ও অভিমান ধরা পড়ল তার কান্নাজড়িত কথায়। "আপনারা দাদাকে আনতে পারছেন, আমার বাবাকেও আনতে পারলেন না"
বকুল আপার বাবা, মানে আমার চাচা মারা গেছেন সেই ১৯৮৪ সালে, তখন বকুল আপার বয়স ৫/৬ হবে হয়ত। আমার জন্মের অনেক আগে। তার এমন বিলাপে আসলেও মনটা খারাপ হয়ে গেল।
হঠাৎ করে পুরুষ মানুষদের রুমে এক ধরনের কালো ধোঁয়া দেখা গেল এবং ধোঁয়া ক্রমশ বাড়তে লাগল। রুমের লোকজন ও কেমন জানি অস্থির হয়ে গেল। একসময় একটা দমকা বাতাসের ধাক্কা পিঠে এসে লাগল এবং আমার কাছে মনে হল আমি যেন একটা শূণ্যের মধ্যে ছিটকে পড়লাম। যেখানে কেউ নাই, কোন তল নাই, কোন আলো নাই। অসীম একটা জায়গা। ভয়, শূণ্যতা আমাকে গ্রাস করে ফেলল। আমি যেন পড়ে যাচ্ছি চেষ্টা করছি কিছু আঁকড়ে ধরার। কিন্তু কিছুই নাই।
নিজেকে ওই রুমের মেঝেতে আবিষ্কার করলাম। রুমের মধ্যে কোন ধোঁয়া নাই। দাদাও নাই। রুমের লোকজন গোল হয়ে আমাকে দেখছে। বেশিরভাগই আমার পরিচিত। আমার কয়েকজন চাচা আছেন তার মধ্যে, চাচাতো ভাই আছেন, আমার বাবাও আছেন। এমন সময় একজন মধ্যবয়সী মহিলা ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসে আমাকে মেঝে থেকে তোলার চেষ্টা করলেন সেই সাথে আশেপাশের লোকজন কে বলতে লাগলেন "যারা মারা গেছেন তাদেরকে তাদের মত থাকতে দেন, তাদেরকে জীবিত করার দরকার নাই, শুধু দোয়া করেন"
আমার ঘুমটা ভাঙল ঠিক এখানেই। মহিলা কে আমি চিনতে পারি নাই। স্বপ্ন টা অনেক অদ্ভুত ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:২০