somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিকতা নামের অন্ধত্ব...।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু আগে একজন আমার এক পোস্টে কমেন্টে বলেছেন- এই দেশে অভিজিৎ, নীলয় বা বিজয়ের মৃত্যুতে ওনাদের ওখানে- অর্থাৎ ভারতে থাকা মুসলমানেরা বিপদে পড়তে পারে। কারণ, "পুছলিম হুওরেরা ওদের খুন করেছে বলে ওরা এখন ভারতে হিন্দুদের কাছে হিরো"। আচ্ছা, আমাদের এখানে তো আরও ব্লগার এবং নাস্তিক মারা গেছেন। যাঁদের কেউ কেউ জন্মগতভাবে মুসলমান। তাঁদের মৃত্যুর জন্য আপনাদের দেশের বা পাকিস্তানের বা অন্য কোন দেশের হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মের মানুষজন বিপদে পড়বে না?

আমাদের এখানে মানবতাবাদী মরেছেন ধর্মান্ধদের বা একচোখাদের হাতে। সেটা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। এখানে মুক্তমনা মরেছে ধর্মান্ধদের হাতে। কিন্তু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী নামওয়ালা কোন মুক্তমনা নাস্তিক কোন জন্মগত মুসলমানের হাতে মারা গেলেই সেটা নিয়ে মুসলিমের হাতে হিন্দু খুন হিসেবে বিশাল কাণ্ড হয়ে যাবে কেন? ভাইরে, বিজয় বলেন আর নীলয় বলেন আর অভিজিৎ বা রাজিব, এরা কেউ হিন্দু না বা মুসলিম না। এরা সবাই সাধারণ ধর্মে অবিশ্বাসী নাস্তিক এবং মানবতাবাদী। নাস্তিকের মৃত্যু হওয়ায় তো ভারতেও ধর্মান্ধদের উল্লসিত হওয়ার কথা। উল্টো নাস্তিকেরা আবার চরম আস্তিকদের কাছে হিরো হয় কীভাবে? কিন্তু হচ্ছে বা হওয়ার পথে কিন্তু উল্টোটা!

উগান্ডার একজন লোক তাঁর ছেলের নাম অনন্ত রাখলেই সেই ছেলে বাঙালি হবে না। অথবা, আপনি একটা সাদা রঙের থান কিনে সেটাকে বাটিকের কাজ করে লাল-নীল রঙে রাঙিয়ে সেটা দিয়ে সুন্দর ডিজাইন করে একটা ফতুয়া বানিয়ে গায়ে পরলে কেউ যদি বলে আপনি সাদা একটা থান পড়ে আছেন, তাহলে কেমন লাগবে? একজন নাস্তিক সে নাস্তিক। বা একজন আস্তিক সে আস্তিক। সাদা কাপড় হিসেবে জন্ম নিলেই সে যে চিরদিন সাদা কাপড় থাকবে বা তাঁকে সাদা কাপড়ই মনে করতে হবে এটা কেমন কথা?

কেউ কেউ নিজেকে নাস্তিক মনে করে সারাদিন মুসলমানদের পুসলিম হুওর বলে গালি দিচ্ছে। তাদের চোখে অন্য ধর্ম পড়ে না। তারা নিজেদের মানবতাবাদী দাবি করছেন অথচ মানবতার বিপক্ষে থাকা অন্য কাউকে দেখে না। কোন ধর্মীয় সম্প্রদায় বা কোন রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী আমাদের মানবতার জন্য ক্ষতিকর বা কোন আদর্শবাদ মানবতাকে চেপে ধরেছে সেটা তাদের বিবেচনার বিষয় না। তারা বারবার খুঁজে দেখে ইসলাম জীবনের কোন কোন প্রেক্ষাপটে মানবতার ন্যূনতম ক্ষতি করেছে। আহা! আসলে কী সেটা হওয়ার কথা? আসলে কি ইসলামের ত্রুটি খোঁজার কথা? আমি তো মনে করি এমন হওয়ার কথা যে- দুনিয়ার কোথায় কার মাধ্যমে মানবতার অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে, মানুষ অধিকার হারাচ্ছে সেটা নিয়ে আলোচনা করা। সেটা সবার সামনে তুলে ধরে সবাইকে সোচ্চার করা।

দেখুন, প্রত্যেকটা ধর্ম এর অনুসারীদের জীবন পরিচালনার বিধান হিসেবেই জন্ম নিয়েছে। হোক সেটা মানবতাবাদী অথবা গোষ্ঠীবাদী। প্রত্যেক ধর্মে বিশ্বাসী মানুষই সাধারণভাবে আস্তিক। আবার প্রত্যেক নাস্তিক বা মুক্তমনা মানুষই মানবতাবাদী হবেন এটাও ঠিক না। আমি গরু খাই না বলেই শুওর খেতে পছন্দ করি এটার কোন যুক্তি নাই। বা, আমি সাদা রঙ পছন্দ না করলেই যে বিপরিত কালো রঙ ভালোবাসি এটারও কোন ভিত্তি নেই। আপনি যদি নিজেকে মানবতার সেবক মনে করে থাকেন তবে মানবতার পক্ষে কথা বলুন; ধর্ম বিদ্বেষী হয়ে নয়।

আমার নাম হাফিজুল ইসলাম বলে আমি ইসলামের একজন সেবক বা আমি কোন হিন্দু ধর্মীয় নামধারীর হাতে মারা গেলেই হিন্দুর হাতে মুসলিম খুন বলাটা কি যৌক্তিক? বিষয়টা মানবতার। বিষয়টা আস্তিকতার বা নাস্তিকতার শুধু না। একজন নাস্তিক সে নাস্তিক। একজন আস্তিক শুধুই আস্তিক। একজন মানবতাবাদী শুধুই মানবতাবাদী আর মানবতা বিরোধীও তেমন। দেখুন, সাগরের মাঝে একজন মানুষ ডুবে মারা গেলে সে যেমন প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় মারা যাওয়া হিসেবে বিবেচ্য হবেন, তেমনি মরুভূমিতেও কেউ যদি পানির অভাবে মারা যান, সেক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাই মুখ্য। এখানে অমুক পানির দ্বারা জীবন হারিয়েছেন আর অমুকের বালুর হাতে মরণ হয়েছে বিষয়টা এমন না।

বাংলাদেশে মুসলিম বেশি বলে এখানে ধর্মীয় কোন উম্মাদনার ঘটনা ঘটলে সেটা যেমন মুসলমানেরা ঘটাবে, তেমনি ভারতের শিখ অঞ্চলে ঘটলে সেটা শিখেরা ঘটাবে সেটাই স্বাভাবিক। উভয় স্থানেই ধর্মীয় উম্মাদনার বিষয়টা হিসেবে আসা উচিৎ; ধর্মের নাম না। আমাদের এখানে একজন মুসলমান ধর্মান্ধ হলে আবার পাঞ্জাবে একজন শিখ ধর্মান্ধ হলে দুজনই সমান।

নিজেকে যদি ধর্মে বা ঈশ্বরে বিশ্বাস না থাকায় নাস্তিকই দাবি করেন, তাহলে বিশ্বাসীদের আস্তিক হিসেবে চিনতে শিখুন। আবার আস্তিক বলতেই তাঁকে মানবতাবিরোধী ভাবা থেকে বিরত থাকুন। নয়তো আপনার মাঝে আর একজন ধর্মান্ধর মাঝে কোন পার্থক্য থাকবে বলে মনে করি না। তেমনি, একজন নাস্তিককেও শুধু একজন ধর্মে অবিশ্বাসী হিসেবে মানতে শিখুন। কেউ নাস্তিক হলেই যে অন্য ধর্মের শত্রু হবেন এমন নিশ্চয়তা কোথায়? আবার কেউ নিজেকে নাস্তিক মনে করলেই সে মানবতার নবী হয়ে যাবেন এটাও বা কীভাবে হয়?

নাস্তিক নাস্তিকই আবার আস্তিকও তাই। মানবতাবাদী মানবতার পক্ষের, তাতে সে যেখানেই জন্মাক। আবার অমানবিক এবং ধর্মান্ধও তেমন। মানবতার পক্ষে কথা বলুন- কাজ করুন। নিজেকে মানবতার প্রচারক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে যেয়ে ইসলাম বিদ্বেষী হলে আপনিও একজন অন্ধ। নাস্তিকতা নামের নতুন ধর্মে অন্ধ। যেই ধর্মের কাজ শুধু ইসলামকে বাঁশ দেয়া। নাস্তিক হোলে হোন আর আস্তিক হতে চাইলেও সেটাই হোন, কিন্তু মানবতাবাদী হোন। নিজেকে অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে মুক্তি দিতে গিয়ে চোখ উপড়ে ফেলে প্রতিবন্ধী হবেন না। এটা অন্ধত্বের থেকেও কষ্টের। দৃষ্টি না থেকে শুধু চোখের উপস্থিতি থাকলেও দেখতে কিন্তু স্বাভাবিক মনে হয়। চোখ উপড়ে ফেললে কিন্তু দৃষ্টি হারানোর সাথে সাথে দেখতেও বিদঘুটে লাগে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৬:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×