somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূরত্ব সে তো দূরত্ব নয়

২৭ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকালের হালকা কুয়াশা মাখা শুভ্রতায় একদিন আগমন ঘটে আন্টি আর তাহার ছানার । তখন সবেমাত্র অ আ ক খ শিখছিলাম । শহরের বদ্ধ পরিবেশে খেলার সাথী পেয়ে আমরা যেনো খুশিতে আত্নহারা । আমি ,আপু আর ওর সারা বাড়ি আর পাড়া জুড়ে ছুটাছুটি আর হাসির বন‍্যায় ভাইয়া পড়লো মহা বিপদে , পড়াশোনা চুলোয় গেলো । আম্মু কেবল বকে ক্লান্ত হতো ।
সব ধরনের খেলা আমরা খেলতাম ,সবার ছোট ছিলাম বলে আমাকে দুধভাত রাখা হতো । আমরা কখনো মেয়েলি হাড়ি পাতিল খেলা, কখনো ছেলেদের গোয়েন্দা গোয়েন্দা খেলা, কখনো আমার আর ওর লাগতো প্রতিযোগিতা । ভাইয়া বলতো দেখি কে আমাকে বেশি ভালোবাসে, শোনা মাত্রই আমি আর ও ভাইয়াকে চিপস খাওয়াতে গিয়ে প‍্যাকেট খালি করে ফেলতাম , আর ভাইয়া বিজয়ের হাসি দিতো । মুরুব্বি কেউ এলে পাকা চুল বেছে দেওয়ার প্রতিযোগিতা লাগতো ।

শুকনা হলে কি হবে, ওর ছিলো ভীষন শক্তি , মারামারি তে আমাকেই হার মানতে হতো । বরাবরই ও ছিল আন্টির আদরের ছানা ,আন্টি ওকে বকা দিয়ে নিজেই কান্না করতো । দিনে দিনে তাই ওর বজ্জাত ভাব বেড়ে গেল । এভাবেই আমি স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম , ওরা আলাদা বাসা নিলো ।

প্রায় ওদের বাসায় যাওয়া কিংবা বজ্জাত টার আমাদের বাসায় আসা ছিল দারুন আনন্দের কাজ । আপুর সাথে মাঝেমাঝে লাগতো ওর তুমুল ঝগড়া । আজ অবধি তাই আপুকে ভয় পায় । দিনভর বকবকানি করে সবার কান ঝালাপালা হতো ।

ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ভালোই চলছিল । একদিন দেখি হঠাৎ ও আমাদের বাসায় আসছে না । আমরা গেলে বই মুখে গুজে রাখতো । ভাবখানা দেখলে গা জ্বলে যেতো । আমরাও যাওয়া কমিয়ে দিলাম । আন্টি নিয়মিত ও কি করছে না করছে সব খবর আম্মু কে জানাতো । আম্মু এসে আমাকে বলতো । ও ভালো রেসাল্ট করলেও জানাতো, কোথায় এডমিট হলো, স্কুলে কি কি হচ্ছে ওর ভালো কথা শুনে শুনে আমরা ক্লান্ত হতাম । মনে মনে রাগ ঝারতাম । এমন হলো ওর নাম শুনলেই অসহ্য লাগতো । আম্মু কে বলে দিলাম ওর নাম আমার সামনে নিবা না ।

এমনভাবে চলছিল অনেক বছর । ক্লাস ফাইভ থেকে আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে । হঠাৎ খবর পেলাম ও অনেক অসুস্থ , আপু আর আমার শুনা মাত্রই মন বিষন্নতায় ভরে গেল । নীরবে চোখের জল ফেলে আমরা তখোন প্রার্থনা করছিলাম ,আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও ওকে ভালো করে দেও আল্লাহ । অপছন্দ করতাম ঠিক, কিন্তু কখনও তো খারাপ চাইনি ।

ভয়ে ভয়ে একদিন ফোন দিলাম , অবজ্ঞা ভরা গলা ,সহ‍্য হলো না । আপুকে বললাম ওকে আর জীবনেও ফোন দিবোনা ।

একদিন ফেসবুকে বজ্জাত টা রেকুয়েস্ট পাঠালো । ততোদিনে ও পুরোপুরি সুস্থ । জানতে পারলাম ক্লাস সিক্স এ থাকাকালীন কোনও এক আত্মীয় আমাদের বাসায় আসতে বারন করেছিল । আপু আর ভাইয়া যেহেতু বড় তাই আমাকেই দোষী ভাবলো । আমাকেও নাকি ও সহ‍্য করতে পারতোনা ।

দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ অবশেষে মিটলো । বছর শেষে ফিরে পেলাম ঠিক আগের আমার ছোট ভাইটি । ঠিক সেই ঝগড়া, মাঝে বাদ পড়লো খেলাগুলো আর সেই সময়গুলো । আমার অল্প তে মন খারাপ হওয়া, অল্প তে কেঁদে বুক ভাসানো ,বোকামি ,সব যেন আমার ভাইটি সহজে বুঝতে পারে আগের মতোই ।কিছুই যেন বদলায় নি । আগের মতোই ওর পাগল অভ‍্যাস গুলো আমাদের হাসির কারন হওয়া সবি আছে ।

শুধু বলবার আছে, ভাই তুই যেখানেই থাক তুই আমার আর আপুর ভীষণ প্রিয় । ভাইয়ার মতোই তোকে আমরা ভীষণ ভালোবাসি । সারাজীবন এমনই পাগল থাক ।






সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:১০
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×