প্রশ্ন
বরাবর
মাননীয় মুফতী সাহেব দা.বা.
দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী।
বিষয়ঃ কবর খনন প্রসঙ্গে
প্রশ্নঃ- কবর খনন করার ও তথায় লাশ রাখার সুন্নত পদ্ধতি কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
নিবেদক
আল-আমীন
দাউদকান্দি, কুিমল্লা
ছাত্র মারকাযুল উলূম আল-ইসলামিয়া
হাজীপারা, নারায়ণগঞ্জ।
শরয়ী সমাধান
কবর খনন ও তথায় লাশ রাখার সুন্নত তরীক্বা
è কবর দু’ প্রকার (ক) বগলী (লাহাদ) কবর।
(খ) সিন্দুকী (শাক্ব) কবর।
è বগলী (লাহাদ) কবর সুন্নত এবং তা সিন্দুকী (শাক্ব) কবরের চেয়ে উত্তম। তবে মাটি বেশী নরম হলে এবং ধসে যাওয়ার আশংকা থাকলে সিন্দুকী কবরই খুঁড়বে।
(শামী- ৩/১৩৯ যাকারিয়া, আল-মাজমু- ৫/২৮৬, মিরক্বাত ৪/১৭৪)
è বগলী (লাহাদ) কবরঃ-
প্রথমে সোজা করে উত্তর-দক্ষিণে মৃতের শরীর অপেক্ষা অর্ধ হাত দীর্ঘ, প্রস্থে পৌনে দু’হাত এবং গভীরতায় দুই, আড়াই বা তিন হাত পরিমাণ একটি গর্ত খুঁড়বে, অতঃপর তার পশ্চিম দিকের দেয়ালের ভেতর সিন্দুকের ন্যায় একটি গর্ত খুঁড়বে যাতে স্বাভাবিকভাবে মায়্যিতকে সেখানে কিবলামুখী করে, কাতকরে রাখা যায়। একে বগলী (লাহাদ) কবর বলে।
(শামী- ৩/১৩৯ যাকারিয়া)
è সিন্দুকী (শাক্ব) কবরঃ-
কমপক্ষে অর্ধ লাশ বা সর্বোচ্চ পূর্ণলাশ পরিমাণ গভীর করে, দৈর্ঘে মৃতের চেয়ে সামান্য লম্বা এবং প্রস্থে দৈর্ঘের অর্ধেক করে সোজাভাবে একটি গর্ত খুঁড়বে। অতঃপর মাঝামাঝি লাশ রাখার পরিমাণ আর একটি নালার ন্যায় গর্ত খুঁড়বে যাতে সেখানে মায়্যিতকে পশ্চিমমুখী করে, কাত করে শোয়ানো যায়। এই গর্তের পরিমাণ দৈর্ঘে ও প্রস্থে এতটুকু হবে যেন প্রয়োজন সংখ্যক লোক অর্থাৎ ২/৩ জন সেখানে অবতরণ করে সহজেই লাশকে রাখতে পারে। এই গর্তের গভীরতা দেড় হাত পরিমাণ বা তার চেয়ে কিছু কম বেশী হতে পারে। গর্তের মুখ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করবে এবং উপরের গর্তটি মাটি দিয়ে ভরাট করবে। একে সিন্দুকী (শাক্ব) কবর বলে।
(আলমগীরী-১/১৬৬ যাকারিয়া, বাদায়ে’ ২/৬০ যাকারিয়া)
è মায়্যিতকে কবরে নামানোর সময় কবরের পশ্চিমদিকে জায়গা থাকলে খাটিয়া পশ্চিমদিকে রাখবে। সেদিকে জায়গার সংকুলান না হলে মায়্যিতের পায়েরদিকে রাখবে, তাও না হলে যে দিকে সম্ভব সেদিকে রাখবে। তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী মায়্যিতের নিকটাত্মীয় দ্বীনদার ২/৩ জন লোক কবরে নামবে। অতঃপর উপরের লোকদের সহায়তায় পশ্চিমদিক থেকে মায়্যিতকে কবরে নামাবে। তারপর পশ্চিমমুখী করে, কাত করে এমনভাবে শোয়াবে যেন মায়্যিতের ডান পার্শ্ব যমীনের দিকে আর বাম পার্শ্ব আসমানের দিকে থাকে। কবরের পূর্ব পার্শ্বের দেয়ালের সাথে হালকা টেক লাগিয়ে রাখবে যেন লাশ পড়ে না যায়। (আলমগীরী- ১/১৬৬, মাহমুদিয়াহ্-৯/৫৭)
è যারা লাশকে কবরে রাখবে তারা রাখার সময় এই দোয়া পড়বে, ূ’Ÿ žž¦ ¢ ˜ž¤ Ÿž¹ Ž’¢ž žž¦ লাশ রাখার পর কাফনের গিরাগুলো খুলে দিবে। (মুখতাছারুল কুদূরী- ১১২)
è মায়্যিত মহিলা হলে দাফনের সময় উপর থেকে কোন কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখবে এবং কবরে মাহরাম পুরুষ নামবে। মাহরাম পুরুষ না থাকলে গায়রে মাহরাম পুরুষ হাতে কাপড় পেচিয়ে নিয়ে কবরে নামবে।
(শামী- ২/২৩৬ সাঈদ)
è বগলী (লাহাদ) কবর হলে গর্তের মুখে, উপরে-নীচে খাড়াভাবে হালকা কাত করে আর সিন্দুকী কবর হলে গর্তের মুখে প্রস্থেরদিকে করে বাঁশ দ্বারা কবরের মুখ বন্ধ করবে। বাঁশের উপর চাটাই দেয়াও জায়েয। তবে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া পাকা ইট বা তক্তা দ্বারা কবরের মুখ বন্ধ করা মাকরুহ। তারপর বগলী (লাহাদ) কবর হলে কবরের পূর্ণ গর্তটিই মাটি ও প্রয়োজন হলে হাল্কা পানি দিয়ে মজবুত করে ভরাট করবে। আর সিন্দুকী কবর হলে বাঁশ ও চাটাই দেওয়ার পর বাকি গর্তটি পূর্বের বগলী কবরের নিয়মে ভরাট করবে। (শামী, বাদায়ে’)
è কবরে মাটি দেওয়া শুরু হলে যারা সেখানে উপস্থিত থাকবে তাদের জন্যে মুস্তাহাব হলো ৩ মুষ্টি করে মাটি ৩ বারে কবরে দিবে। মাটি দেয়া মাথার দিক থেকে শুরু করবে। প্রথমবার “Ÿ § ৗž› œŸ” দ্বিতীয়বার হ্মহ্ম¢š¤§ ˜¤‹œŸহ্নহ্ন এবং তৃতীয়বার হ্মহ্ম¢Ÿ § ৗŽেœŸ ৃŽ¹ ৗŽ¤হ্নহ্ন পড়বে। (আলমগীরী- ১/১৬৬ রশিদিয়া)
è কবরকে মাঝখানে উটের কুঁজের ন্যায় এক বিঘত পরিমাণ উচুঁ করবে। চতুর্কোণ বিশিষ্ট করবে না। কবর দেয়ার পর উপরে পানি ছিটানো জায়েয। (আলমগীরী-১/১৬৬)
è কবরকে পাকা করা জায়েয নেই। (আলমগীরী-১/১৬৬)
è কবরকে চিহ্নিত রাখার জন্যে কোন চিহ্ন দিয়ে রাখা জায়েয। তবে কবরের উপর গম্বুজ বা ঘর নির্মাণ করা জায়েয নেই। কবরে কোন জিনিষের উপর মায়্যিতের নাম, ঠিকানা লিখে রাখা কতিপয় ফক্বীহগণের মতানুযায়ী প্রয়োজনে জায়েয। তবে সেখানে ক্বোরআনের আয়াত বা শে‘র অথবা মায়্যিতের সীমাতিরিক্ত প্রশংসামূলক বাক্য লিখা মাকরূহ।
(আহ্কামে মায়্যিত-৭৮)
è কেউ ইচ্ছা করলে বরকতের নিয়তে কবরের উপর তাজা খেজুরের ডাল বা অন্য কোন গাছের ডাল পূঁতে রাখতে পারে। এতে কোন সমস্যা নেই। বরং বরকতের আশা করা যায়। (মেশকাত শরীফ-৪২, মিরক্বাত-২/৫৮)
è দাফন ও কবরের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর মায়্যিতের শিয়রে দাঁড়িয়ে একজন সূরায়ে বাক্বারাহ শুরু থেকে Ÿšžৈ¢ পর্যন্ত এবং আরেকজন পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে সূরায়ে বাক্বারার শেষে Ÿ žŽ’¢ž থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া মুস্তাহাব। (শামী- ২/২৩৭ সাঈদ)
è দাফনের পর একটি উট জবাই করে গোশ্ত কাটার সময় পরিমাণ সেখানে অপেক্ষা করা এবং মায়্যিতের জন্যে দো‘য়া, ইস্তেগফার ও তিলাওয়াতে কুরআনের মাধ্যমে ঈসালে ছওয়াব করা মুস্তাহাব। (শামী- ২/২৩৭ সাঈদ)