বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ,
জামিয়া গাফুরিয়া দারুসসুন্নাহ ইসলামপুর,
ঈশ্বরগঞ্জ, মোমেনশাহী।
বিষয়: স্ত্রীকে তালাক দেয়া প্রসঙ্গে ফতোয়ার আবেদন।
আমি মোঃ তোতা মিয়া। গত ০৩ আগষ্ট শনিবার সকালের ঘটনা। আমার স্ত্রী অনেক আগে থেকেই একরকম পাগলের মত। মাথা খারাপের মত বিভিন্ন রকম কার্য-কলাপ করে থাকে। ঐ দিন সাহ্রী খেয়ে আমি যখন ঘুম যাই তখন সে অকারণেই ঘরে চিল্লা-চিল্লি করতে থাকে এবং আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। আমি তাকে নিষেধ করলে সে আরো বেশি চেচামেচি করে, আমার শরীরে ধরে টানাটানি করে, দরজায় আওয়াজ করতে থাকে। আমি বার বার নিষেধ করেও যখন তাকে থামাতে পারি নাই এবং আমিও ঘুম যেতে পারি নাই তখন আমি উঠে তাকে গালিগালাজ করি। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে দা’ দিয়ে কুব মারতে আসে। আমি তখন তাকে ফিরিয়ে ফেলি। এরপর সে আবার লাঠি দিয়ে মারতে আসে। তখনও আমি তাকে ফিরিয়ে ফেলি। কিন্তু লাঠির মাথা গিয়ে আমার ছোট মেয়ের চোখের নিচে লাগে। এতে সে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তার চোখ ফুলে যায়। মেয়ের এহেন অবস্থা দেখে আমার প্রচন্ড রাগ উঠে যায়। আমি মেয়েকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে পথে সে পানি ঢালতে যায়। এতে আমার মাথা আরো খারাপ হয়ে যায়। আমি রাগের মাথায় তাকে বলি, “এক তালাক, দুই তালাক।”
অতএব জনাব মুফতী সাহেব হুজুরের কাছে আমার বিনীত নিবেদন এই যে, এখন আমি উক্ত স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার করতে আগ্রহী। তাই আমার উক্ত ঘটনার শরীয়ত সম্মত সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।
নিবেদক
মোঃ তোতা মিয়া
খৈরাটি, ঈশ্বরগঞ্জ, মোমেনশাহী।
তাং- ০৮/০৮/২০১৩ ইং
শরয়ী সমাধান
জনাব মোঃ তোতা মিয়ার লিখিত প্রশ্নের বর্ণনানুযায়ী তাঁর স্ত্রীর উপর ২তালাকে রাজয়ী পতিত হয়েছে। অতএব ঐ স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার করতে হলে ইদ্দতের মধ্যে তাকে রাজআত করে নিলেই চলবে।
রাজআত করার পদ্ধতি হলো- তিন হায়েযের ভেতর ভেতর ঐ স্ত্রীকে মৌখিকভাবে বলা যে, “আমি তোমাকে ফিরিয়ে নিলাম” অথবা তাঁর সাথে স্বামী-স্ত্রী সূলভ কোন আচরণ করা । এভাবে রাজআত করার দ্বারা তাদের ঘর-সংসার বৈধ হবে। তবে পরবর্তীতে স্বামী আর এক তালাকের মালিক থাকবে।
(আল-কুরআন, সূরায়ে বাক্বারাহ-২২৮ ও ২২৯, সূনানে নাসায়ী- হাদিস নং ৩৫০১, ফাতাওয়ায়ে শামী)
প্রামাণ্য এবারতসমূহ
(١) وَقَالَ تعالي: وَبُعُولَتُهُنَّ أَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِي ذَلِكَ إِنْ أَرَادُوا إِصْلَاحًا- (البقرة: ২২৮)
(٢) وَقَالَ تعالي: الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ- )البقرة: ২২৯(
(٣) أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ قَالَ أَنْبَأَنَا إِسْمَعِيلُ عَنْ أَيُّوبَ عَنْ نَافِعٍ قَالَ كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا سُئِلَ عَنْ الرَّجُلِ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ وَهِيَ حَائِضٌ فَيَقُولُ أَمَّا إِنْ طَلَّقَهَا وَاحِدَةً أَوْ اثْنَتَيْنِ فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَهُ أَنْ يُرَاجِعَهَا ثُمَّ يُمْسِكَهَا حَتَّى تَحِيضَ حَيْضَةً أُخْرَى ثُمَّ تَطْهُرَ ثُمَّ يُطَلِّقَهَا قَبْلَ أَنْ يَمَسَّهَا وَأَمَّا إِنْ طَلَّقَهَا ثَلَاثًا فَقَدْ عَصَيْتَ اللَّهَ فِيمَا أَمَرَكَ بِهِ مِنْ طَلَاقِ امْرَأَتِكَ وَبَانَتْ مِنْكَ امْرَأَتُكَ- (سنن النسائي- باب الرجعة - ৩৫০১)
(٤) وَتَصِحُّ اي الرجعة- ( بِنَحْوِ - رَجَعْتُكِ ) وَرَدَدْتُكِ وَمَسَكْتُكِ بِلَا نِيَّةٍ لِأَنَّهُ صَرِيحٌ ( وَ ) بِالْفِعْلِ مَعَ الْكَرَاهَةِ (بِكُلِّ مَا يُوجِبُ حُرْمَةَ الْمُصَاهَرَةِ ) كَمَسٍّ - (رد المحتار- باب الرجعة)