পীরের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা ও মহব্বত ছাড়া শুধু যিকির, ফিকির বা রিয়াযত, মোজাহাদার মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতার নূর বা দ্যোতি হৃদয় অন্তরে প্রবিষ্ট হয় না ঠিক; কিন্তু তারও একটা সীমা রেখা বা পরিমন্ডল রয়েছে। মনে রাখতে হবে, পীর কোন সম্রাটের উত্তরসূরী শাহজাদা নয় যে, সে সিংহাসনে বসে থাকবে আর তার মুরীদ নামের প্রজাগণ তাকে প্রণাম ও কুর্ণিশ করবে। বস্তুত যে কোন খাঁটি পীর হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মীরাছ প্রাপ্ত গোলাম।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) উবুদিয়্যাত বা গোলামীর রংগে রংগীন ছিলেন। এ জন্য মিরাজের আয়াতে তাঁকে বন্ধু বা রাসূল বলে সম্বোধন না করে ‘আবদ’ বা গোলাম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ‘আবদুহু ওয়া রাসূলুহু’ এর মধ্যে আবদ বা গোলামিয়্যাত কে আগে আনা হয়েছে।
তিনিও নিজেকে গোলাম মনে করতেন বলেই দাস-দাসীর ডাকেও সাড়া দিতেন, কুষ্ঠ রোগীর সাথে খানা খেতেন, সাহাবাদের সাথে তিনিও পরিশ্রমের কাজে শরীক থাকতেন। বিবিদের কাজ-কর্ম সম্পাদন করতেন, কোন মেহমান প্রবাসীর মলমূত্র নিজ হাতে পরিস্কার করতেন। গাধার উপর সওয়ার হতে এবং মাথায় বোঝা বহন করতে সংকোচ বোধ করতেন না।
তাই পীর হতে হলে তাকে অবশ্যই আমিত্বকে বলী দেয়ার পথ বেয়েই সম্মুখে অগ্রসর হতে হবে। পীর নিজেকে একজন মেথরের চেয়েও খারাপ মনে করতে হবে। কারণ মেথরগণ পায়খানা পরিস্কার করে; আর পীরগণ মানুষের অন্তরের নাপাকি দূর করে, যা পায়খানার চেয়েও নাপাক।
একদিকে পীর নিজেকে গোলামীর লেবাসে সাজাবে। অপরদিকে মুরীদগণ এই গোলামীর কারণেই তাকে শ্রদ্ধা ভক্তি করবে।
হযরত আলী (রা.) কে বেশী ভক্তি ও মহব্বতের কারণে শিয়াদের মত; আর বিদ্বেষ রাখার কারণে খারেজীদের মত কাফের হওয়া যাবে না।
তার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে যে, তিনি শয়তান ও প্রবৃত্তির প্ররোচনা মুক্ত কোন ব্যক্তি নন। কারণ সমস্ত নবী-রাসূলগণের মধ্যেই শয়তান ও প্রবৃত্তির প্ররোচনা ছিল। এমনকি আধ্যাত্মিক জগতের বিশ্ব সম্রাট মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথেও শয়তান ছিল; যা সিহাহ সিত্তার কিতাবে বর্ণিত রয়েছে।
শয়তান ও প্রবৃত্তির কারণেই রিপুর তাড়না। এই সব তাড়নার বাস্তবায়নের নাম গোনাহ; যা আল্লাহ থেকে দূরত্বের কারণ। আর এসব দমনের নাম মোজাহাদা; যা নৈকট্যের কারণ।
শয়তান ও প্রবৃত্তির কারণেই হয় মানবের পরীক্ষা। অতএব কোন সাধনার মাধ্যমে রিপুর তাড়না মুক্ত; তাই তার আর পর্দা বিষয়ক বাহ্যিক বিধানাবলী মানার প্রয়োজন নেই; এরকম বিশ্বাসের নাম বাতুলতা ও ভন্ডামী।