ছোটবেলা থেকে আমরা অযু করা শিখেছি। মুসলমানদের বিভিন্ন কাজের আগে অযু করতে হয়। সবচেয়ে বেশি লাগে নামাযের আগে, কারন নামাযের আগে অযু করা অবশ্য কর্তব্য। যারা প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামায পরেন, তারা প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ বার অযু করেন। এখন আমার প্রশ্ন হল, এই গুরত্তপুর্ন কাজটি আমরা সঠিক ভাবে করছি কি না। সাধারণত আমরা যেভাবে অযু করে থাকি, তা নিম্নরূপঃ
প্রচলিত পদ্ধতিঃ
১/ দুই হাতের কব্জিসহ ৩ বার ধোয়া
২/ ৩ বার কুলি করা
৩/ ৩ বার নাকে পানি দেওয়া
৪/ সমস্ত মুখমণ্ডল ৩ বার ধোয়া
৫/দুই হাতের কনুইসহ ৩ বার ধোয়া
৬/ সমস্ত মাথা ১ বার মাসেহ করা
৭/ দুই কান মাসেহ করা
৮/ ঘাড় মাসেহ করা
৯/ দুই পায়ের টাখনু সহ ৩ বার ধোয়া
কোরআনে বর্নিত পদ্ধতিঃ
আল্লাহ কোরআনে সূরা মায়েদাহ, আয়াত ৬ এ বলেছেনঃ
“হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হইবে,তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করিবে, এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করিবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করিবে...” (৫:৬)
সুতরাং কোরআন আনুযায়ি, অযু করার নিয়ম হচ্ছেঃ
১/ মুখমন্ডল ধৌত করা
২/ হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা
৩/ মাথা মাসেহ করা
৪/ পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করা
উপরের দুই ধরনের নিয়ম অনুযায়ী, প্রচলিত নিয়মের ৪,৫,৬,৯ এর সাথে কোরআনে বর্নিত ১-৪ নম্বরের মিল আছে, যাকে অযুর ফরয বলা হয়।কিন্তু,প্রচলিত পদ্ধতিতে পাঁচটা কাজ বেশি করা হয় (১,২,৩,৭,৮)।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
১। আল্লাহ যেখানে আপনাকে অযু করার নিয়ম বলে দিয়েছেন, সেখানে অতিরিক্ত আরও ৫ টা বিষয় কিভাবে যুক্ত করা হল? কে বা কারা, এবং কি উদ্দেশ্যে এই কাজটা করেছে? তারা কি আল্লাহর চেয়ে বেশি বোঝেন?
২। আল্লাহ হাত, পা, মুখ কোথাও তিনবার ধুতে বলেনি। হাত, পা, মুখ ধোয়ার উদ্দেশ্য হল পরিষ্কার করা, এইটা যতবার লাগে ততবার। কারো একবারে হয়, কারো ৩ বারে হয় আবার অনেক সময় ৫ বারও লাগতে পারে। তাহলে এই তিনবার বলার অর্থ কি? আল্লাহর নিয়মকে পাশ কাটিয়ে কারা এইসব নিয়ম বানিয়েছেন।
আমার প্রশ্নের উত্তরে কেউ যদি বলে থাকেন যে এইগুলি হাদিস থেকে এসেছে, এবং নবী আমাদের এইভাবে শিখিয়েছেন, তার উত্তরে আমি বলব, আল্লাহ আমাদের নবীকে এই বলে সতর্ক করে দিয়েছেন যে....
“এটা বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ। সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত, তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা। তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না। এটা খোদাভীরুদের জন্যে অবশ্যই একটি উপদেশ। আমি জানি যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মিথ্যারোপ করবে।“ (৬৯:৪৩-৪৭)
এবং আল্লাহ আমাদের নবীকে বলতে বলেছেনঃ
“আর যখন তাদের কাছে আমার প্রকৃষ্ট আয়াত সমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে সমস্ত লোক বলে, যাদের আশা নেই আমার সাক্ষাতের, নিয়ে এসো কোন কোরআন এটি ছাড়া, অথবা একে পরিবর্তিত করে দাও। তাহলে বলে দাও, একে নিজের পক্ষ থেকে পরিবর্তিত করা আমার কাজ নয়। আমি সে নির্দেশেরই আনুগত্য করি, যা আমার কাছে আসে (I only follow what is revealed to me)। আমি যদি স্বীয় পরওয়ারদেগারের নাফরমানী করি, তবে কঠিন দিবসের আযাবের ভয় করি।“ (১০:১৫)
সুতরাং এই কথা বিশ্বাস করার কোন কারন নাই যে নবী আমাদেরকে ধর্ম সম্পর্কে কোরআনের বাইরে কিছু বলেছেন, শিখিয়েছেন, বা করার অনুমুতি দিয়েছেন, কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতে আমরা যে ভাবে অযু করি, সেটা যদি হাদিস থেকে আসে তাহলে আমরা কি বুঝব?