somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভৌতিক অভিজ্ঞতা-১

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাস্তব জীবনে কিছু ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে যদিও সেটা একেবারেই কাম্য ছিলনা। কেও নিশ্চই আশা করেনা নিশুতি রাতে সাদা শাড়ি পরা কোন কিম্ভুতকিমাকার অশরীরী এসে তাকে নাকি সুরে বলুক "আঁসোঁনাঁ এঁকঁটুঁ গঁল্পঁ কঁরিঁ"।

যাহোক, আরম্ভ করি।

১৯৯৬ সাল। আমার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে মাস খানেক হলো। মায়ের অনুরোধে বোনকে দেখতে গেলাম। পদ্মার চর ঘেঁষে চমৎকার পরিবেশে বাড়িটা। প্রথম দেখাতে বাড়িটাকে ভিষন ভালো লেগে গেল, কি চমৎকার নদীর উপর দিয়ে বয়ে চলা ঠান্ডা হাওয়া। শরৎ কালের কাঁশবন, চিকচিক করা বালু আর মাঝে মাঝে বয়ে চলা জেলে নৌকা।

আমাদের বাড়ির আসে পাসে কোন নদী নেই তাই হয়তো বেশি ভালো লাগছিল। বয়স কম সেটাও হয়ত কারন ছিল। ভালোলাগার একটা ঘোর নিয়ে রাতে ঘুমাতে গেলাম ।

রাত কত হবে জানিনা হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, এখনকার মত সে সময় হাতে হাতে মোবাইল ছিলনা তাই সময় জানতে পারিনি তবে আনুমানিক ২/৩ টা হবে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি উথাল পাথাল জোছনায় নদীর সৌন্দর্য যেন হাজারগুন বেড়ে গেছে, জানালা ধরে দাড়িয়ে মন ভরছিল না তাই সিদ্ধান্ত নিলাম নদীর তীর থেকে একটু ঘুরে আসার।

খুব বেশি সাহসী মানুষ আমি নই তবে সে সময়ে ভয়ের কোন ব্যাপার আমার মনে মোটেও উদয় হয়নি, যেমন ভাবা দরজা খুলে বের হয়ে আসলাম হাটতে হাটতে চলে গেলাম একদম পানির কাছাকাছি পায়ের পাতা ভেজা পানির ধার দিয়ে এগিয়ে গেলাম বেশ কিছু দুর।

ঘন্টা খানেক পর মনে হল অনেক হয়েছে এবার ফেরা যাক, আপার শ্বশুর বাড়ি বরারব নদীর তির থেকে পায়ে হাটা একটা ট্রেইল ধরে ১০/১২ পা এগিয়েছি হঠাৎ মনে হল পিছন থেকে মৃদু কোলাহলের শব্দ আসছে।

পিছনে ঘুরে বেশ আবাক হয়ে গেলাম- সাদা রংয়ের স্যান্ডো গেন্জি আর হাফ প্যান্ট পরা ৪/৫ বছরের দুটো বাচ্চা প্রায় হাটু পানিতে নেমে একজন অন্যজনের গায়ে পানি ছিটাচ্ছে হাসছে।
শতভাগ নিশ্চিত নয় তবে মনে হচ্ছিল এদের মধ্যে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে।

আমি নিশ্চিত ছিলাম পাশের বাড়ির কারো বাচ্চা এত রাতে নদীতে এসেছে, যে কোন সময় ডুবে যেতে পারে তাই ভাবলাম এগিয়ে গিয়ে ধমক দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেই।

কিছুটা এগিয়েছি এসময় লক্ষ করলাম দু`জন একসাথে আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো, একটু ধাক্কা মত খেলাম কারন তাকানোর ভংগি বলছিল আমার উপস্থিতি তাদের বিরক্ত করছে।

পাত্তা না দিয়ে আরো ৪/৫ পা এগিয়ে গেছি এমন সময় দেখলাম দু-জনে একসাথে ভয়ংকর ভাবে রাগে গজরাতে আরম্ভ করেছে, চাঁদের আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে চকচকে দাতের ফাক দিয়ে লালা ঝরছে, পাগলা কুকুর যেমন করে কামড় দেবার পূর্বে ঠিক তেমনি ভাবে, যেন বলতে চাইছে আর এক পা এগোলে পরিনাম হবে ভয়াবহ।

এক পা কি এক ইঞ্চি নড়ার ক্ষমতা তখন হারিয়ে ফেলেছি স্টাক হয়ে দাড়িয়ে গেলাম ভয়ে আতংকে কখন যে দোয়া দুরুদ পড়া আরম্ভ করেছি নিজেই টের পাইনি।

নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল, কোন রকমে ঘুরে লম্বা পায়ে রুমে ঢুকে পড়লাম, বাকি সময়টা আর ঘুম আসলোনা, জানালা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম কিন্ত কিছুই চোখে পড়লনা।

পরদিন চলে আসার আগে বোন কে প্রশ্ন করলাম- "চরে কি ভুত বা এরকম কিছু আছে কিনা"?

আপা বলল দিন পনের আগে পাশের বাড়ির দুই ভাই বোন একাকী গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল এর পর থেকে চরে কেও কেও রাতের বেলা ভয় পেয়েছে, সবচেয়ে মারাত্বক বিষয় সপ্তাহ খানেক আগে ভয় পেয়ে একজন মারাও গেছে।

"তুই হঠাৎ এই প্রশ্ন করলি কেন, কোন সমস্যা হয়েছে রাতে" ?

"আরে না কি যে বলিস, কিছু হয়নি, এমনি জানতে চাইলাম"?

এর পরে অনেকবার গেছি সেই বাড়িতে কিন্ত রাতের নদীর সৌন্দর্য জানালা দিয়ে উপভোগ করছি, কাছে যাবার সাহস হয়নি।




সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:১৮
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×