somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্পঃ নিষিদ্ধ সন্তরণ

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালটা বাসায়। সারাদিন অফিসে। বিকেলটা কফির মগে। সন্ধ্যেটা বিলিয়ার্ড টেবিলে। ক্লাব-পার্টি- টুংটাং -চিয়ার্স। কখনও বাগান বাড়ীতে মক্ষিরাণী শিখিয়ে যাচ্ছে জীবনের সংগা-''লাইফ ইজ.......''। চারপাশে রঙ্গীণ কাঁচের দেয়াল। অফিসে। বাড়ীতে। গাড়ীতে-সর্বত্র। এর মাঝেই ব্যস্ত জীবন কেটে যাচ্ছে জীবনের খোঁজে।

কর্পোরেট-সোস্যাল লাইফে আমার সময় কোথা জীবনের মানে খোঁজার! শহরের সবচেয়ে উচু দালানের অফিসে বসে রঙ্গীণ কাঁচের দেয়ালের ভিতর দিয়ে যখন পুরো শহরটাকে নিজের পায়ের নীচে দেখতে পাই-তখন ভাবি এইতো জীবন! নিজেকে সবার উঁচুতে রাখতে পেরেছি! নূহের প্লাবনের সাধ্য কোথায় আমাকে ডোবায়!

আমার হাই প্রোফেশনাল বউটা কর্পোরেট সোস্যাল লাইফের চক্করে পড়ে কখন যে ভদকার নেশায় বুঁদ হয়ে নতুন ফুলের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে কোন বাগানের দিক যে চলে গেল বুঝলাম না কিছুই। শুনেছি দ্বিতীয়বার মালা বদল করেও ফুলের গন্ধ তার জোটেনি আজও। একমাত্র সন্তান ষ্টেটসে-জানিয়েছে ফিরবেনা কোনওদিন।

মনে পড়ে শৈশবে বাবাকে দেখেছি স্যাঁতস্যাঁতে অফিসে বসে ঘর্মাক্ত শরীরে ডান হাতের মধ্যমায় থুথু ভিজিয়ে লেজারের পাতা উল্টানো আর সস্তা কলমে ক্রমাগত লিখে যাওয়া। তখনি মনে হতো ধ্যাৎ কেরাণীর আবার জীবন! জীবন হলো কলমের দু প্রান্ত দুহাতে ধরে রিভলভিং চেয়ারে বসে ক্রমাগত দোল খাওয়া। বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম-''আচ্ছা বাবা, তোমার জীবনের স্বপ্ন কি?'' বাবা বলেছিলেন-''খোকা তুই একদিন অনেক বড় হবি''। সাথে সাথে ঘরের কোণের সরিসৃপটা ''টিক টিক'' করে জানান দেয় অনাগত ভবিষ্যতের সত্যতা। আমি আবার জিজ্ঞেস করি ''আর?'' বাবা উত্তর দেয়- ''বেতনটা যদি আরেকটু বাড়ত!''

আমার বিকেলগুলো কেড়ে নেওয়া মেয়ের নাম অনুরাধা। সেই অনুরাধারা যেবার ভিটেমাটি বেচে কলকাতা চলে গেল, যাওযার সময় ওকে জিজ্ঞেস করলাম -''তোর খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না রে''। সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো ''হ্যা। খুব''। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম ''তোর জীবনের স্বপ্ন কি রে?'' সে বলল ''স্বপ্ন তো মরে গেছে!'' আমি বল্লাম ''মৃত স্বপ্নটাই না হয় বল!'' সে চোখ ভর্তি অশ্রু নিয়ে বলেছিলো ''আমার খুব শখ ছিলো কোন এক পূর্ণিমায় তোমার সাথে বসে যমুনার ঢেউ গুনবো!” বাবা মরলে চোখ সামান্য ভিজে উঠেছিলো কিন্তু সেবার কেন যেন আমি ডুকরে কেঁদেছিলাম। অনুরাধা আজ কোথায়? দু চোখে যমুনার স্বপ্ন নিয়ে ভাগীরথীর তীরে বসে কি সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলো?

বাবা, মহৎপ্রান পিতা আমার! শৈশবে তোমাকে দেখে খুব করুণা হতো। মনে হতো এক নিমিশে যদি তোমার সব অভাব ঘুচিয়ে দিতে পারতাম! সেই থেকে জীবনের উল্টো পথে আমার ডুব সাঁতার। সাঁতরাতে সাঁতরাতে কখন যে আটকা পড়ে গেলাম কাঁচের দেয়ালের মাঝে। সূর্যের নষ্ট আলো প্রতিনিয়ত এখানে ঘুরপাক খায়। পাপ আর দুঃখ বইতে বইতে আজ আমি বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধের মতো ক্লান্ত।

ভদকার পেগ এর মাত্রা বাড়তে থাকে ক্রমাগত- চার, পাঁচ, ছয়, সাত .....। এইতো এইতো দেখতে পাচ্ছি পিতার মুখ, পিতামহের ঘামের গন্ধ, ফেলে আসা গ্রাম, অনুরাধা, যমুনার ঢেউ, দিগন্তের ঐ কিনারে ওটা কে? আরে ওটাই তো আমার মা। মা! তোমার মুখ তো আমি কবেই ভুলে গেছি!

মায়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে একটা নদী। দেবনদী মন্দাকিনী। তার ওপার থেকে ভেসে আসছে অন্ধ বয়াতীর দোতারার সুর। তারও ওপাশে পুণ্যাত্না যুধিষ্ঠির। আহা যুধিষ্ঠির! আমায় কি সাথে নেবে তোমার তপোবন যাত্রায়? আমি আসছি যুধিষ্টির! মাঝে দেবনদী মন্দাকিনী। এক সন্তরণেই শেষ হয়ে যাবে! একটু দাঁড়াও যুধিষ্ঠির!

ট্রিগারটা তর্জণীতেই ছিলো। আর নলটা চিবুক বরাবর.............।


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫০
১৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×